কবরের সওয়াল-জওয়াব

 

imagesCAR1WYT1

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন,তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদেরমাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোনো উপকারে আসবে না এবং তারাসাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। গুনাহগারদের জন্য এ ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদেরঅধিকাংশই তা জানে না।’ (সূরা আততুর : ৪৫-৪৭)।

উপরোল্লিখিত আয়াতে ‘এ ছাড়াও শাস্তিরয়েছে’ বলে কবরের আজাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (দেখুন : আকিদা তাহাবিয়া, পৃ:১৩৩; শরহু আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১)। আর কবরে সওয়াল-জবাবের প্রতি ইঙ্গিত করেআল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের মজবুত বাক্য দ্বারা দুনিয়া ওআখেরাতে মজবুত রাখেন এবং জালেমদের পথভ্রষ্ট করেন। আর আল্লাহ যা চান তা করেন।’ (সূরাইব্রাহিম : ২৭)। বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, এ আয়াতে আখেরাত বলতে বরজখ অর্থাৎকবরের জগৎ বুঝানো হয়েছে (দেখুন : মা’আরেফুল কুরআন, পৃ: ৭১৭; শারহুল ফিকহুল আকবর, পৃ: ১৭০)। আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের শাস্তির ব্যাপারে আরো এরশাদ করেছেন, “আমিতাদেরকে দু’বার আজাব প্রদান করব। তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে বৃহত্তম আজাবেরদিকে।” (সূরা তাওবা : ১০১)। এখানে বৃহত্তম আজাব বলতে হিসাব-নিকাশের পর জাহান্নামেরআজাব, আর প্রথম দু’বারের আজাব বলতে মুমিনদের হাতে নিহত হওয়া এবং বরজখ অর্থাৎ কবরেরআজাবের কথা বোঝানো হয়েছে। (দেখুন : আল ইবানাহ, পৃ: ৮৮)।

কবরের আজাবের বিষয়ে এতসংখ্যক হাদিস এসেছে যে, শব্দের ঈষৎ তারতম্যের কারণে শব্দের দিক থেকে মুতাওয়াতির নাহলেও মূল বক্তব্যের দিক থেকে তা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফলে এ বিষয়ে ঈমানআনা ওয়াজিব (দেখুন : আকিদা তাহাওয়িয়া, পৃ: ১৩৬ ও শারহ আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১)।তার মধ্য থেকে নিচে কিছু হাদিস উল্লেখ করা হচ্ছে বারা বিন আজেব রা: কর্তৃক বর্ণিতএকটি বিশাল হাদিসে এসেছে, নবী করিম সা: এরশাদ করেন, বাকি আল-গারকাদ অর্থাৎজান্নাতুল বাকিতে আমরা একটি জানাজায় এসেছিলাম। নবী করিম সা: আমাদের কাছে এসে বসলেন।আমরা তাঁকে ঘিরে বসলাম। সবাই এত চুপ যে মনে হয় মাথার ওপর পাখি বসে আছে। কবর খোঁড়ারকাজ চলছে। তিনি তিনবার করে বলে উঠলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয়চাই।(আহমাদ/ আবু দাউদ/ ইবনে মাজাহ/ হাকেম/ ইবনে হাব্বান/ আবু আওয়ানা)। ইবনেআব্বাস রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা: দুটো কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলছিলেন, তাদের কবর আজাব চলছে। তবে তেমন কোনো বিরাট কারণে তাদের এ আজাব হচ্ছে না। একজনপ্রস্রাব করার পর ভালো করে পবিত্র হতেন না। আর দ্বিতীয়জন চোগলখুরি করে বেড়াতেন।তারপর একটা তাজা ডাল নিয়ে দুই ভাগ করে দুই কবরে গ্রোথিত করে বললেন, আশা করছি এ দুটোডাল না শুকানো পর্যন্ত তাদের আজাব কিছুটা লঘু করা হবে। (বুখারি, মুসলিম)।

আনাসবিন মালেক রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা: এরশাদ করেছেন, যদি তোমরা দাফন-কাফন ছেড়েনা দিতে তাহলে আল্লাহর কাছে চাইতাম, তিনি যেন তোমাদেরকে সরাসরি কবর আজাব শোনারব্যবস্থা করে দেন; যা আমাকে শোনানো হয়েছে। (মুসলিম, নাসায়ি, আহমদ)।
নবী করিম সা:এরশাদ করেন, বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সাথীরা বিদায় নিয়ে চলে যায়, সে তাদের পায়েরজুতা বা স্যান্ডেলের আওয়াজও শুনতে পায়। ওই সময়েই দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন।জিজ্ঞেস করেন, ‘এ লোকটি অর্থাৎ মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? মুমিনব্যক্তি তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলাহয়, তাকিয়ে দেখো, ওই যে জাহান্নামে তোমার আসনটা, সেটার পরিবর্তে আল্লাহ তোমাকেজান্নাতের আসন বরাদ্দ করে দিয়েছেন। উভয় আসনই সে দেখতে পাবে। মুনাফিক বা কাফেরকে যখনপ্রশ্ন করা হবেতুমি কি বলতে পারো এ লোকটা সম্পর্কে? সে বলবে, আমি তো কিছু জানিনা। লোকেরা যা বলত, আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি তো জানতে চাওনি, অনুসরণও করনি। আর ওই মুহূর্তেই বিশাল এক লৌহ হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হবে।আঘাতের ফলে সে বিকট স্বরে আর্তচিৎকার করে উঠবে, যা তার আশপাশে জিন, ইনসান এ দুইসৃষ্টি ছাড়া আর সবাই শুনতে পাবে। (বুখারি)।
অন্যান্য হাদিসে এসেছে, প্রথম প্রশ্নহবে তোমার রব কে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হবে তোমার দ্বীন কি? তৃতীয় প্রশ্ন থাকবেরাসূলুল্লাহ সা: সম্পর্কে। এ ব্যাপারে এত প্রচুর সংখ্যক সহি হাদিস রয়েছে, সবগুলোরউল্লেখ এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। প্রচুর সংখ্যক সহি হাদিস এসেছে নবী করিম সা:নামাজের ভেতরে সালাম ফেরানোর আগে আল্লাহর কাছে যে কয়টা বিষয় থেকে সব সময় পানাহচাইতেন এবং উম্মতকে পানাহ চাইতে তাকিদ করে গেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কবরেরআজাব। উদাহরণ হিসেবে নিম্নোক্ত হাদিসটি উল্লেখ করা হচ্ছেরাসূলুল্লাহ সা: দোয়াকরেছেন, ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবর আজাব থেকে, জীবন-মৃত্যুকালীন সবফিতনা থেকে, আর মসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে।(বুখারি)।

কবর অর্থাৎ বরজখ সে একঅন্য জগৎ। পার্থিব জগতের সাথে তার কোনো মিল নেই। বরজখের জিন্দেগি সবার জীবনেই ঘটবে।যাকে কবর দেয়া হয়েছে, তার জীবনে যেমন বরজখের জিন্দেগি হবে, যে বাঘের পেটে হজম হয়েগেছে তার জন্যও একই বরজখের জিন্দেগি অনুষ্ঠিত হবে। সে জিন্দেগির প্রকৃত অবস্থাদুনিয়ার বস্তুগত প্রক্রিয়ার মতো হবে না। কাজেই দুনিয়ার প্রক্রিয়া ও উপায়-উপকরণহুবহু যেমন আখেরাতের জন্য প্রযোজ্য নয়, তেমনি তা বরজখের জিন্দেগির জন্যও প্রযোজ্যনয়। এ তিন জগতের প্রতিটির রয়েছে আলাদা সিস্টেম। এক জগতের সিস্টেম দিয়ে অন্য জগৎকেবিচার করাই বড় ভুল। এমনকি যাদেরকে কবর দেয়া হয়েছে, তাদের লাশও তো পচে গলে শেষ হয়েযাবে। তখন তাদের বরজখের জিন্দেগি যেভাবে হবে, যাদেরকে কবর দেয়া হয়নি; তাদের বরজখেরজিন্দেগি সে প্রক্রিয়াতেই হবে।

একজন নেক বান্দাহ আর একজন কাফের, মুনাফিক বাপাপিষ্ঠ ব্যক্তির কবর যদি একদম পাশাপাশি থাকে; তাহলে হাদিসের ভাষানুযায়ী একজনের কবরহবে জান্নাতের টুকরার মতো। অনেক প্রশস্ত করে দেয়া হবে, আলোকিত করে দেয়া হবে; বইতেথাকবে জান্নাতের সুবাতাস। আর আরেকজনের কবরকে সঙ্কুচিত করে দেয়া হবে, তা হবেজাহান্নামের গর্ত সদৃশ। সেখানে চলতে থাকবে আজাবের বিভীষিকা। পাশের কবরের এ বিভীষিকাতার প্রতিবেশীর শান্তিতে এতটুকুও বিঘতা সৃষ্টি করবে না। দুনিয়ার হিসাবে এটা কী করেসম্ভব! মৃত্যুর পরবর্তী জিন্দেগি, চাই সেটা বরজখ হোক আর আখেরাতপুরোটাই গায়েবের (অদৃশ্য) অন্তর্ভুক্ত। এসব গায়েবের খবরের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন, (তারাই প্রকৃতমুত্তাকি) যারা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস করে।’ এমন কোনো যুক্তি-প্রমাণ ও বিজ্ঞান নেইযা দিয়ে বরজখ ও আখেরাতের সব কিছুকে বুঝে তারপর ঈমান আনা যাবে, না হলে নয়। তাহলেগায়েবের ওপর ঈমান আনার দরকার কী? তবে সময়মতো সবই বুঝে আসবে যখন প্রকৃত পরিস্থিতিমোকাবেলা করতে হবে। যখন গায়েব প্রকাশিত হয়ে পড়বে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমার (চক্ষুর) পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, আজকে তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ। (সূরা ক্বাফ :২২)।

Related Post