করোনা ভাইরাস কি, কেনো, কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

করোনা ভাইরাস

করোনা ভাইরাস

বিশেষজ্ঞে আলেমদের অভিমত-চায়নার উহান শহরে করোনা ভাইরাসে আক্রমনের কারণ হলো, সে দেশের সরকার নিরীহ মুসলমানদের উপরে যে অত্যাচার করেছে, যা ভাষায় প্রকাশ করলে শরীর শিহরিয়ে উঠে। এই চরম অন্যায়কে বিশ্ববাসী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। মহান আল্লাহ এই ভাইরাস শাস্তি স্বরূপ দিয়েছেন।
আজ,আমরা শরিয়ায় দৃষ্টিকোণ থেকে করোনা ভাইরাস একটি বিপজ্জনক রোগ সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ । ইদানীং যা চীন দেশের উহান শহরে দেখা দিয়েছে। ক্রমশঃ বিভিন্ন দেশেও এর প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে।
করোনা ভাইরাস কি?
মনে করা হচ্ছে সার্স বা ইবোলার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসের ন্যায় করোনা ভাইরাস। তবে এটি নাকি সার্স বা ইবোলার চেয়েও অনেক বেশি বিপজ্জনক। করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যের সিনড্রোম রোগের মত, এটি শরীরে ছড়ায়। (সার্স)
নবাগত ভাইরাস করোনা কখন প্রকাশ পেলো?
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ ইতোপূর্বে পৃথিবীবাসী দেখে নি। এই প্রথম চায়নার উহান শহরে দেখা দিলো।
ভাইরাস করোনা সংক্রমণের লক্ষণ:
*  কাশি
*  জ্বর
*  শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
*  নিউমোনিয়া।
ভাইরাস করোনা কি একজনের দেহ থেকে অন্যদের দেহে ছড়ায়?
হ্যাঁ! এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মত করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।
এমন অজানা রোগ কেনো হয়?
এই বিষয়ে মহান আল্লাহর ঘোষণা:

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ ﴿٣٠﴾ الشورى

তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা শূরা: ৩০)
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন:

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ﴿٤١﴾ الروم

স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম: ৪১)
এই দুটি আয়াতে সরল অর্থের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার বুঝা যায়, যে পৃথিবী যেসব অঘটন ঘটে তা সবই মানুষের হাতের কামাই। সুতরাং চায়নাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যত দুর্যোগ মহামারী দেখা দেয় সবই মানুষের কর্মের ফল।
মহান আল্লাহ কোন জাতিকে শাস্তি দিতে চাইলে কেউ প্রতিরোধ করার থাকবে না:
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:

وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّـهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ ۚ يُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۚ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿١٠٧﴾

আর আল্লাহ যদি তোমার উপর কোন কষ্ট আরোপ করেন তাহলে কেউ নেই তা খন্ডাবার মত, তাঁকে ছাড়া। পক্ষান্তরে যদি তিনি কিছু কল্যাণ দান করেন, তবে তার মেহেরবানীকে রহিত করার মতও কেউ নেই। তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ দান করতে চান স্বীয় বান্দাদের মধ্যে তাকেই দান করেন; বস্তুত; তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা ইউনুস: ১০৭)
হাদীস থেকে এর কারণ:
রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন-

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أنَّها سَأَلَتْ رَسولَ اللَّهِ ﷺ عَنِ الطَّاعُونِ، فَقالَ: كانَ عَذابًا يَبْعَثُهُ اللهُ على مَن يَشاءُ، فَجَعَلَهُ اللهُ رَحْمَةً لِلْمُؤْمِنِينَ، ما مِن عَبْدٍ يَكونُ في بَلَدٍ يَكونُ فِيهِ، ويَمْكُثُ فِيهِ لا يَخْرُجُ مِنَ البَلَدِ، صابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أنَّه لا يُصِيبُهُ إِلَّا ما كَتَبَ اللهُ لَهُ، إِلَّا كانَ له مِثْلُ أجْرِ شَهِيدٍ. رواه البخاري: ٦٦١٩

‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেনঃ এটা একটা ‘আযাব। আল্লাহ্ যার উপর ইচ্ছে তা পাঠান। আল্লাহ্ এটা মুসলিমের জন্য রহমাত করে দিয়েছেন। প্লেগে আক্রান্ত শহরে কোন বান্দা যদি ধৈর্য ধরে বিশ্বাসের সাথে অবস্থান করে, সেখান থেকে বের না হয়, আল্লাহ্ তার জন্য যা লিখেছেন তা ছাড়া কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না, সে অবস্থায় সে শহীদের সাওয়াব পাবে। [বুখারী: ৬৬১৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৬)
এই হাদীস থেকে জানাগেলো যে, যখন কোন মহামারী দেখা দেয়, সেখান থেকে বের না হওয়া, এটি ইসলামের শিক্ষা। যা ১৫০০ বছর পর আজকের বিজ্ঞানীরাও বলছে যে, এমন রোগ দেখা দিলে যেনো সেখান থেকে বের না হয়। সুবহান আল্লাহ
এর চিকিৎসা কী?
ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোনও টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি কোনও চিকিৎসাও নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে।
এর থেকে বাঁচার উপায় কি?
তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস যেনো আক্রমণ করতে না পারে সে জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে-
১। নিয়মিত ভালোভাবে ২০ সেকেন্ট পর্যন্ত হাত ধোয়া।
২। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠাণ্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকা।
৩। সুরক্ষিত থাকতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
৪। গবাদি পশু থেকেও দূরত্ব বজায় রাখুন।
৫। গণপরিবহণ এড়িয়ে চলা।
প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ! মানব সমাজে এমন দূরারোগ্য অসুখ সম্পর্কে করণীয় কি এই বিষয়ে সুনানে ইবনে মাজার একটি সহীহ হাদীছে দিকনির্দেশনা খুঁজে পাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ”‏ يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا ‏.‏ وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ ‏.‏ وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ ‏.‏ وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ ‏‏

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও।
১। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।
২। যখন কোন জাতি ওযন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত।
৩। এবং যখন যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।
৪। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়।
৫। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)
এই হাদীসে পাঁচটি কুফলকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে, এর মধ্যে একটি হল- প্রকাশ্যে ব্যভিচার করা ফলে এমন রোগের জন্ম দেবে যা আগে কখনও শোনা যায় নি। বাস্তবিকই এই করোনা নামের ভাইরাস সম্পর্কে পৃথিবীবাসী ইতোপূর্বে নামও শুনেনি।এমনকি এর কোন চিকিৎসাও আবিস্কার হয় নি। ইসলামী বিদ্বানদের অভিমত হলো চায়নায় যে করোনা ভাইরাস দেখা দিয়েছে, তা তাদের অপকর্মের ফল।
এখন জানার বিষয় হলো, এমন নতুন অজানা রোগের জন্ম হলে এ ব্যাপারে ইসলামের শিক্ষা কী? আর এক্ষেত্রে একজন মুসলমানের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত? এই বিষয়ে এই প্রবন্ধের প্রয়াস – ইনশা আল্লাহ
প্রথমত, একজন মুসলমানের উচিত আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা, এবং বিশ্বাস করা যে সমস্ত বিষয়ে আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে। আল্লাহ যা চান তা হবেই এবং তিনি যা চান না কেউ তা করতে পারবে না। এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ আমাদেরকে কোনও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে এবং কোন বিপর্যয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে না। মহান আল্লাহর ঘোষণা-

مَّا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِن رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا ۖ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِن بَعْدِهِ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿٢﴾

আল্লাহ মানুষের জন্য অনুগ্রহের মধ্য থেকে যা খুলে দেন, তা ফেরাবার কেউ নেই এবং তিনি যা বারণ করেন,তা কেউ প্রেরণ করতে পারে না তিনি ব্যতীত। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা ফাতির: ২)
এই বিষয়ে রাসূল (সা.) স্বীয় চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.)-কে নসীহতস্বরূপ বলেছেন-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ كُنْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فَقَالَ: يَا غُلَامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ احْفَظْ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلْ اللهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوْكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ رُفِعَتْ الْأَقْلَامُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ .رواه الترمذي ২৫১৬

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ্ তা›আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তা›আলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ্ তা›আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ্ তা›আলাকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তা›আলার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ্ তা›আলার নিকটেই কর।
আর জেনে রাখো, যদি সকল উম্মাতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা›আলা তোমার জন্যে লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সকল ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ্ তা›আলা তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে। (তিরমিযী: ২৫১৬)
এবং হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছে যে –

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ رضي الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلَائِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ: وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ رواه مسلم (২৬৫৩)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি- মহান আল্লাহ মাখলুকের ভাগ্য আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিখে রেখেছেন। তখন আল্লাহর আরশ পানির উপর ছিলো। (মুসলিম: ২৬৫৩)
দ্বিতীয়ত: মুসলমানের দায়িত্ব আল্লাহর শপথ মান্য করা এবং নিজেকে তার পাপ থেকে বিরত রাখা, কারণ বান্দা যখন আল্লাহর আনুগত্য করে এবং নাফরমানী ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন। রাসূল (সা.) হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে পরামর্শ দিয়ে ছিলেন:-তুমি আল্লাহ্ তা›আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তা›আলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ্ তা›আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ্ তা›আলাকে তুমি কাছে পাবে।
অসুস্থদের প্রতি আল্লাহর করুণা:
অসুবিধা বা ঝামেলার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন আল্লাহর রাসূল এরশাদ করেন:

عَنْ صُهَيْبٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ

সুহায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের অবস্থা ভারি অদ্ভুত। তাঁর সমস্ত কাজই তাঁর জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য এ কল্যাণ লাভের ব্যবস্থা নেই। তাঁরা আনন্দ (সুখ শান্তি) লাভ করলে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, তা তাঁর জন্য কল্যাণকর হয়, আর দুঃখকষ্টে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারন করে, এও তাঁর জন্য কল্যাণকর হয়। (মুসলিম: ৭২২৯)
সুতরাং সুখে আনন্দ অনুভব করা, আর দুঃখের সময় সবর করার মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করা এটি একমাত্র মুমিনগণই অর্জন করতে পারেন।
তৃতীয়ত: ইসলামী শরীয়ত চিকিৎসা গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। অসুখ হলে চিকিৎসা নেওয়া কিংবা ডাক্তারের কাছে যাওয়া তাওয়াক্কুল পরিপন্থি নয়। ইসলামী শরিয়ায় চিকিৎসা সংক্রান্ত দুধরনের দিকনির্দেশনা রয়েছে- একটি হলো প্রাক-অসুস্থতা রোধ করা (অর্থাৎ অসুখ-বিসুখ হয় এমন অবস্থা হতে নিজেকে দূরে রাখা) এবং অন্যটি হলো- অসুস্থতার পরে চিকিৎসা গ্রহণ করা। কেউ যদি ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.) রচিত তিব্বে নববী অধ্যয়ন করেন, তাহলে সেখানে এ সংক্রান্ত বহু তথ্য পাবেন। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
১। সকলা বেলা খেজুর খাওয়া:

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ رضي الله عنه قَالَ سَمِعْتُ أَبِي يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏ يَقُوْلُ مَنْ اصْطَبَحَ بِسَبْعِ تَمَرَاتِ عَجْوَةٍ لَمْ يَضُرَّه ذلِكَ الْيَوْمَ سَمٌّ وَلا سِحْرٌ

আমের বিন সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ভোরবেলা সাতটি আজ্ওয়া খুরমা খেয়ে নিবে, সে দিন বিষ কিংবা যাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [বুখারী: ৫৭৭৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫১)
২। নিম্নের দুআটি সকাল-বিকাল তিনবার পাঠ করা;
এই বিষয়ে হযরত উসমান বিন আফফান (রা.) হতে হাদীস বর্ণিত

عَنْ عُثْمَانَ يَعْنِي ابْنَ عَفَّانَ رضي الله عنه يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ يَقُولُ: مَنْ قَالَ بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ، حَتَّى يُصْبِحَ، وَمَنْ قَالَهَا حِينَ يُصْبِحُ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ، لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ حَتَّى يُمْسِيَ،

তিনি বলেন আমি রাসূল (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবেঃ “বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইস্ মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম’’ সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। অর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। (আবু দাউদ: ৫০৮৮) হাদীসটি সহীহ
৩। সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা;
আবু মাসঊদ (রা.)-হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন

عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِيْ لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ.

আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি রাতে সূরাহ বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। [বুখারী ৫০০৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪২)
অর্থাৎ সূরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত নিয়মিত তেলাওয়াত করলে সকল প্রকার বালা-মুসিবত হতে নিরাপদ থাকা যায়।
৪। তিন ক্বুল পাঠ করলে প্রত্যেক অনিষ্টতা হতে নিরাপদ থাকা যায়-
এই বিষয়ে হযরত মু‘আয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রা.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত।

عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُبَيْبٍ رضي الله عنه عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ قَالَ: خَرَجْنَا فِي لَيْلَةِ مَطَرٍ، وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ، نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيُصَلِّيَ لَنَا، فَأَدْرَكْنَاهُ، فَقَالَ: أَصَلَّيْتُمْ؟ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، فَقَالَ: قُلْ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: قُلْ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: قُلْ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَقُولُ؟ قَالَ: قُلْ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي، وَحِينَ تُصْبِحُ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ

হযরত খুবাইব (রা.) বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সালাত পড়ার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরা কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরা নাস ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। (আবু দাউদ: ৫০৮২)
৫। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে নিম্নের দুআটি পাঠ করলে অজানা রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যায়-
মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় আসছে হযরত আনাস বিন মালেক (রা.)- সূত্রে বর্ণিত:

عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ ‏ ‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ ‏‏ ‏

আল্লাহর রাসূল (সা.) রোগ থেকে বাঁচার জন্য দুআ করতেন- আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনূনি, ওয়াল জুযামি ওয়ামিন সাইয়্যিল আসকাম।
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হতে। (মুসনাদে আহমদ: ১২৫৯২, আবু দাউদ: ১৫৫৪, নাসাঈ: ৫৪৯৩, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন)
৬। দূরারোগ্য ও বিভিন্ন বালা-মুসিবত হতে বেঁচে থাকার দুআ:
মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) বর্ণনা করেন- রাসূল (সা.) প্রায় এই দুআগুলো পড়তেন;

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَرضي الله عنه قَالَ كَانَ مِنْ دُعَاءِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এইঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, তোমার নিয়ামত সরে যাওয়া, তোমার ক্ষমা ওলটপালট হয়ে যাওয়া, তোমার আকস্মিক প্রতিশোধ এবং তোমার সব রকমের অসন্তুষ্টি থেকে। (মুসলিম ইসলামিক ফাউ: ৬৬৯৩)
৭। রাসূল সকাল ও সন্ধ্যায় নিম্নের দুআটি পাঠ করতেন- তিনি সর্বদা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দুআ পাঠ করতেন;

عَنْ جُبَيْرِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ رضي الله عنه يَقُولُ: لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَعُ هَؤُلَاءِ الدَّعَوَاتِ، حِينَ يُمْسِي، وَحِينَ يُصْبِحُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِي، وَقَالَ عُثْمَانُ: عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي قَالَ أَبُو دَاوُدَ: قَالَ وَكِيعٌ يَعْنِي الْخَسْفَ

জুবায়র ইবনু আবূ সুলাইমান ইবনু জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রা.)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দু‘আগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন নাঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার দোষত্রুটিগুলো ঢেকে রাখুন এবং ভীতিপ্রদ বিষয়সমূহ থেকে আমাকে নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযাত করুন আমার সম্মুখ থেকে, আমার পিছন দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপর দিক থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার মর্যাদার ওয়াসিলায় মাটিতে ধ্বসে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (আবু দাউদ: ৫০৭৪, ইবনে মাজাহ: ৩৮৭১)
আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি, কোন অসুখ হলে ডাক্তারী ব্যবস্থা গ্রহণ করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থি নয়, সুতরাং কোন প্রকারের ভাইরাস যেনো আক্রমণ করতে না পারে সে জন্য নিম্নের পরামর্শগুলো আমল করবেন-
১। নিয়মিত ভালোভাবে ২০ সেকেন্ট পর্যন্ত হাত ধোয়া।
২। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠাণ্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকা।
৩। সুরক্ষিত থাকতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
৪। গবাদি পশু থেকেও দূরত্ব বজায় রাখুন।
৫। গণপরিবহণ এড়িয়ে চলুন।
রোগ-ব্যাধিতে ঈমানদারের করণীয়
১) আল্লাহর ওপর ভরসা করা- এ বিশ্বাস রাখা যে, রোগ-ব্যাধিতে একমাত্র আরোগ্যদানকারী মহান আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
অর্থাৎ যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে সুস্থতা দান করেন।” (সূরা শুয়ারা : আয়াত ৮০) ওষুধকেই মূল আরগ্যদানকারী মনে করা শিরক।
২) সবর করা- রোগ-ব্যাধিতে আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং সবর করা ঈমানের দাবি। আল্লাহ তায়ালা বলেন
وَاصْبِرُوا إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
অর্থাৎ আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা আনফাল : আয়াত ৪৬)
তিনি আরও বলেন
: إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
অর্থাৎ “ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই।” (সূরা যুমার: ১০)
সবরের ধরণ কি?
ক. নিজেকে মনোক্ষুন্ন, হতাশা ও বিরক্তি প্রকাশ করা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা।
খ. রোগ-ব্যাধিতে মানুষের কাছে অনুযোগ-অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকা।
গ. ধৈর্য হীনতার পরিচয় বহন করে, এমন সব কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকা।
৩) চিকিৎসা করা গ্রহণ করা– কুরআন-হাদীসের দোয়ায় ঝাড়-ফুঁক করা, এলোপ্যাথিক, হোমিও, ইউনানি ইত্যাদি পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে প্রেসক্রিপশন প্রদান করেছেন।
৪) তাওবা করা- মানুষের উচিত আল্লাহর নিকট রোগ-ব্যাধিতে তওবা করা এবং সুস্থতার জন্য দোয়া করা। অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে মর্যাদা দেয়া রাসূলের সুন্নাত। ইবাদত-বন্দেগি, তাওবা-ইস্তেগফার, দোয়া-দরূদ পাঠের মাধ্যমে তাওবা করে আল্লাহ প্রিয়ভাজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করা।
পরিশেষে…
মহান আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সব রোগ-ব্যাধি আক্রান্ত মানুষকে সুস্থতা দান করেন এবং কষ্ট ও দুর্দশায় নিপতিত প্রতিটি মানুষের কষ্ট ও দূর্দশা লাঘব করে দেন। আল্লাহ-রাসূলের পথে ও মতে চলার তাওফীক দান করেন। আমিন

Related Post