. জিহবা সংযত রাখা

নুমান ইব্ন বাশীর রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু

নুমান ইব্ন বাশীর রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু

কথা-র্বাতা বলার ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করা সাফল্য লাভের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। কারণ মানুষের বলা সব কথাই আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন,মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে’ (ক্বাফ ৫০/১৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমাদের উপর রয়েছে সংরক্ষকগণ, সম্মানিত লেখকগণ (ইনফিতার ৮২/১০-১১)। আমলনামায় মানুষের কর্মকান্ড লেখা সম্পর্কে হাদীছে বিশদ বর্ণনা এসেছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ভাল ও মন্দ লিখে দিয়েছেন আর তা সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করে অথচ কাজটা করে না, আল্লাহ তাকে পূর্ণ কাজের নেকী দেন। আর যদি সে সৎ কাজের ইচ্ছা করে আর বাস্তবে তা করে ফেলে, তবে আল্লাহ তার জন্য দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত এমনকি এর চেয়েও অধিক নেকী লিখে দেন। আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু বাস্তবে তা করে না তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ (সৎ কাজের) নেকী দিবেন। পক্ষান্তরে যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করে এবং (তদনুযায়ী) কাজটা করে ফেলে, সেক্ষেত্রে আল্লাহ তার জন্য একটিই মাত্র গুনাহ লিখেন’।[বুখারী হা/৬৪৯১]
মুখ ও জিহবা সংযত করা অতি যরূরী। কেননা যে ব্যক্তি জিহবা এবং লজ্জাস্থানের অপকর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্ত্ত (জিহবা) এবং দু’পায়ের মাঝখানের বস্ত্ত (লজ্জাস্থানের) যিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হব’।[বুখারী হা/৬৪৭৪।
] মুখ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম দিক হ’ল সত্য কথা বলা এবং মিথ্যাচার পরিহার করা। সেই সাথে অশ্লীল ও অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকা। এ মর্মে হাদীছে বহু নির্দেশ রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে’।[বুখারী হা/৬৪৭৫।]
ভাল কথার মাধ্যমেই মানব জাতির ইহলোক ও পরলোক কল্যাণকর হয় এবং মন্দ কথার কারণে ইহলোক ও পরলোকে পরিণতি হয় ভয়াবহ। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা বলে অথচ সে কথা সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে, যার পরিণতি সম্পর্কে তার জানা নেই। আর সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’।[বুখারী হা/৬৪৭৮]
একে অপরের গীবত ও পরস্পরের প্রতি খারাপ ধারণা করা থেকে আমাদের সকলকে বেঁচে থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক ধারণা হ’তে বেঁচে থাক; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ। আর তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান কর না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা কর না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পসন্দ কর? বস্ত্ততঃ তোমরা এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।
কোন মানুষ সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করা এবং অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াতে হাদীছে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
তোমরা অবশ্যই ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। কারো দোষ খুঁজে বেড়াবে না, গোয়েন্দাগিরিতে লিপ্ত হবে না, ক্রয়-বিক্রয়ে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ো না, পরস্পর হিংসা কর না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ ভাব রেখ না, একজন থেকে আরেকজন বিচ্ছিন্ন হয়ে যেয়ো না। বরং তোমরা সবাই এক আল্লাহর বান্দাহ হিসাবে পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে যাও।[বুখারী হা/৬০৬৬

Related Post