জুলুমের পরিণতি ভয়াবহ

কাউকে কষ্ট দেওয়া ইসলামের শিক্ষা নয়

কাউকে কষ্ট দেওয়া ইসলামের শিক্ষা নয়

জুলুম বা অত্যাচার হলো কারও প্রতি অন্যায় আচরণ করা। এটা ব্যক্তির সম্পদ আত্মসাত্, শারীরিক আক্রমণ বা সম্মানহানির মাধ্যমেও হতে পারে। বিদায় হজের সময় মহানবী (সা.) বলেছেন, আজকের এই দিন, এই মাস এবং স্থান তোমাদের কাছে যেমন পবিত্র; তেমনি তোমাদের একের জীবন, সম্পদ এবং সম্মানও অপরের কাছে পবিত্র। পবিত্র কোরআন হাদিসের অসংখ্য স্থানে জুলুমের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরায়ে ইবরাহিমে বলা হয়েছে, জালিমদের কার্যকলাপের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে গাফেল মনে করো না। বস্তুত তিনি তাদের সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দিচ্ছেন, যেদিন দৃষ্টি স্থির হয়ে যাবে এবং তারা মাথা উপরের দিকে তুলে ছুটতে থাকবে। সেদিন তারা চোখের পাতা এক করতে পারবে না এবং তাদের অন্তরগুলো জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়বে। আর মানুষদের ভয় দেখাও সেদিনের, যেদিন তাদের ওপর আজাব এসে পড়বে এবং জালিমরা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের খানিকটা অবকাশ দিন যাতে আমরা আপনার আহ্বানে সাড়া দিতে পারি এবং রাসুলদের আনুগত্য করতে পারি। (তাদের বলা হবে) তোমরা কি এর আগে কসম করে বলোনি যে, তোমাদের কখনও পতন নেই? অথচ তোমরা সেসব জাতির বস্তিগুলোতে বসবাস করতে, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছিল এবং আমি তাদের সঙ্গে কীরূপ আচরণ করেছি, তাও তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়েছিল। তোমাদের শিক্ষার জন্য উদাহরণ পেশ করেছিলাম। তারা সব ধরনের চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু তাদের প্রতিটি চক্রান্তের উপযুক্ত জবাবের ব্যবস্থাও আল্লাহর কাছে ছিল, যদিও তাদের চক্রান্ত এতটা শক্ত ছিল যে তাতে যেন পাহাড় টলে যাবে। তোমরা কখনও এমন ধারণা পোষণ করো না যে, আল্লাহ তাঁর রাসুলের সঙ্গে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করবেন। নিশ্চয়ই পরাক্রমশালী এবং প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (আয়াত, ৪২-৪৭) আলোচ্য আয়াতগুলোতে একই সঙ্গে জুলুমের কারণে অতীত জাতিগুলোর ভয়াবহ পরিণতি এবং যারা বর্তমানে জুলুম করছে, তাদের ভবিষ্যত্ পরিণতির বর্ণনা রয়েছে। সূরা আরাফের ৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সাবধান! অত্যাচারীদের ওপর আল্লাহর লানত।’ সূরা শুরা’র ৪২ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘জালিমরা যখন আজাব দেখবে তখন তুমি দেখবে তারা বলছে, (দুনিয়াতে) ফিরে যাওয়ার কোনো পথ রয়েছে কি?’ পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই জালিমরা চিরস্থায়ী আজাবে নিমজ্জিত থাকবে।’ মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার ওপর জুলুম করতে পারে না এবং জালিমের হাতে সোপর্দও করতে পারে না।’ (বুখারি) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর না জুলুম করতে, না তাকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ করতে পারে এবং না তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। তিনি নিজের বুকের দিকে ইশারা করে বলেন, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে। কোনো লোকের নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জীবন, ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান প্রত্যেক মুসলমানের সম্মানের বস্তু। অর্থাত্ এর ওপর হস্তক্ষেপ করা হারাম।’ (মুসলিম) অপর হাদিসে এসেছে, ‘জুলুম কেয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ বুখারি শরীফের অপর একটি হাদিসে এসেছে, ‘মাজলুম বা অত্যাচারিতের বদদোয়াকে ভয় কর। কেননা তার বদদোয়া ও আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা নেই।’ (বুখারি) আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী, সে যেন আজই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয় সেই দিন আসার আগে, যেদিন তার কোনো অর্থ-সম্পদ থাকবে না। সেদিন তার কোনো নেক-আমল থাকলে তা থেকে জুলুমের দায় পরিমাণ কেটে নেয়া হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে তাহলে যার ওপর জুলুম করেছে, তার বদ আমল থেকে নিয়ে তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে।’ (বুখারি) বুখারি শরীফের অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এক আঙুল পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে কেড়ে নেবে, সাত তবক জমির শৃঙ্খল তার গলায় পরানো হবে।’ এক হাদিসে জালিমকে সাহায্য না করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বাতিলের সাহায্যে সত্যকে পরাভূত করার জন্য জালিমকে অন্যায় সাহায্য করল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জিম্মার বাইরে চলে গেল।’ (আল মুজামুসসগির)
ইসলামে জুলুম মস্ত বড় অন্যায় বলে বিবেচিত। ইসলাম সব সময় জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইসলাম বলেছে, আল্লাহর হক আদায় না করলে আল্লাহ ক্ষমা করলেও বান্দার হক বিনষ্টকারীকে আল্লাহ কখনও ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না যার ওপর জুলুম করা হয়েছে, সে ক্ষমা করে দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে জুলুম-নির্যাতন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মুসলমানরা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করছে। মিসর, সিরিয়া, ইয়েমেন প্রভৃতি মুসলিম দেশে সেই চিত্রই দেখা যায়। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ, অথচ এদেশেই এখন ইসলামের কথা বলা যায় না। দেশের ইসলামপ্রিয় ব্যক্তিদের ওপর চলছে নির্যাতনের স্টিমরোলার। মিথ্যা অজুহাতে আলেম-ওলামার ওপর যেমন শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে, তেমনি মিডিয়ায় অপপ্রচারের মাধ্যমে তাদের মানহানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে, তাদের ঈমানি দায়িত্ব হলো এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আর যারা জুলুম করছে, তাদের উচিত হবে এ অপকর্ম থেকে বিরত থাকা। অন্যথায় তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না।= সমাপ্ত

Related Post