দোয়ার গুরুত্ব ও শিষ্টাচার

দোয়ার গুরুত্ব ও শিষ্টাচার

দোয়ার গুরুত্ব ও শিষ্টাচার

সম্মানিত পাঠক! আজ আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাচনা করবো : أهمية الدعاء و آدابه তথা: দোয়ার গুরুত্ব ও শিষ্টাচার। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: الدعاء هو العبادة স্বয়ং দো‘আ  একটি ইবাদত। তাই আমাদেরকে দো‘আর  গুরুত্ব ও আদাব বা শিষ্টাচার জানা দরকার।

দুআর অর্থ :- ডাকা, আহ্বান করা, প্রার্থনা করা, দো‘আ- । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, দো‘আ-  হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত সবগুলিই আল্লাহরই জন্য পালন করতে হবে। দো‘আ-  দুই প্রকার- (১) দো‘আ-  আল-ইবাদাহ, উপাসনামূলক দো‘আ- । (২) দো‘আ-  আল-মাসআলাহ, প্রার্থনাকারী নিজের জন্য যা কল্যাণকর তা চাওয়া এবং যা ক্ষতিকর তা থেকে মুক্তি প্রার্থনা করা।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! দো‘আ-  মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি বান্দার দীনতা, হীনতা ও বিনয় প্রকাশের একটি বিশেষ মাধ্যম। এর মাধ্যমে বান্দা নিজেকে মহান স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। বস্তুত সৃষ্টিজগতের সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মুখাপেক্ষী। সকল কল্যাণ ও উপকার যেমন তার কাছ থেকে আসে তেমনি বিপদ-আপদ,দুঃখ-কষ্টও একমাত্র তিনিই দূর করতে পারেন। তাঁর হাতেই সব ক্ষমতা। তিনি সকল শক্তির আধার। এ জন্য মহামহিম সর্বময় ক্ষমতার অধিকরী আল্লাহর সামনে বিনয় ভরে নিজের অক্ষমতা কথা প্রকাশ করা এবং তার কাছে শক্তি-সামর্থ চাওয়া বান্দার জন্য পূর্ণতার পরিচায়ক। এর মাধ্যমে বান্দার নিজস্ব অবস্থান উন্নত হয়। দিল থেকে অহংকারবোধ দূর হয় এবং মর্যাদা সমুন্নত হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। বান্দা যাতে দুআর মাধ্যমে তাঁর শরণাপন্ন হয়। তাকে স্মরণে রাখে। সর্বোপরি তাঁর অসীম রহমত লাভে ধন্য হতে পারে।

প্রিয় ভাইয়েরা! আল্লাহর কাছে চাওয়ার মধ্যে কোনো লাজ-লজ্জা বা শরমের কিছু নেই। এটা হীনম্মন্যতারও বহিঃপ্রকাশ নয়। বরং এটাই হলো প্রাচুর্যের চাবিকাঠি,সব ইবাদতের সারকথা। বস্তুত ইবাদতের উদ্দেশ্য হলো নিজের অহংবোধ মিটিয়ে রাব্বুল আলামিনের কাছে সমর্পিত হওয়া। আর এতেই রয়েছে বান্দার অজস্র সম্মান ও মর্যাদা। তাই দুআ- অনুগত্য বা দাসত্বের বহিঃপ্রকাশ। আর আল্লাহ তাআলা বান্দার এমন বিনম্র মনোভাবকে খুব পছন্দ করেন। বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাঁর নিজের প্রয়োজন ও অভাবের কথা তুলে ধরে তখন আল্লাহ তাআলা খুব খুশি হন।

আবূ যর রাযি.-এর সূত্রে ইমাম মুসলিম রহ. কতৃক বর্ণিত একটি হাদীসে কুদসীতে এসেছে :

  يَا عِبَادِي: كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ، فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ، يَا عِبَادِي: كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُهُ، فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ، يَا عِبَادِي: كُلُّكُمْ عَارٍ إِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ، فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ

‘হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট, তবে যাকে আমি হিদায়েত করেছি সে ছাড়া। অতএব তোমরা আমার কাছে হিদায়েত তলব করো, আমি তোমদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত, তবে যাকে আমি অন্ন দিয়েছি সে ছাড়া। অতএব তোমরা আমার কাছেই খাদ্য চাও,আমি তোমাদেরকে খাওয়াব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন, তবে যাকে আমি বস্ত্র পরিয়েছি সে ছাড়া। এতএব আমার কাছেই তোমরা পরিধেয় তলব করো, আমি তোমাদেরকে পরিধান করাব।’ (মুসলিম)।

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ!পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিষয়ের আসবাব (মাধ্যম বা কারণ) রেখেছেন। সৌভাগ্যের জন্য তিনি আসবাব রেখেছেন। দুভার্গ্যরে জন্যও আসবাব রেখেছেন। তিনি আসবাব তৈরি করেছেন। এবং আসবাবের সাথে প্রভাব যুক্ত করে দিয়েছেন। আর দুআ- হলো সে রকম একটি আসবাব। সে উপকরণসমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত উপকরণ। অকূল সমুদ্রে নিমজ্জমান ব্যক্তি যেমন আত্মরক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। খড়কুটা যা কিছু পায় তাই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। সম্ভাব্য সব ধরনের উপকরণ অবলম্বন করে। তেমনি বান্দার জন্য যেকোনো বিপদের মূহূর্তে দুআর বর্ম আঁকড়ে ধরা আবশ্যক। এর মাধ্যমে সে দ্রুত বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। নিমজ্জমান ব্যক্তি যেমন হাত পা গুটিয়ে বসে থাকে না, তেমনি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির জন্যও বিপদমুক্তির জন্য দুআ না করে, বৈধ কোনো উপায়-উপকরণ অবলম্বন না করে নিশ্চিন্তে বসে থাকা সমীচীন নয়।

দুআ-যেহেতু বান্দার প্রকৃত অবস্থান ফুটিয়ে তোলে এবং তার আত্মঅহমিকা দূর করে তাই বান্দার দুআ- আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়। কল্যাণ অর্জন ও অকল্যাণ প্রতিহত করার ক্ষেত্রে দুআর চেয়ে কার্যকর অস্ত্র আর দ্বিতীয়টি নেই। এজন্য দুআ- হলো সবধরনের কল্যাণ,মঙ্গল ও বরকতের হাতিয়ার। আল্লাহ তাআলা কুরআনের অনেক আয়াতে বান্দাকে দুআ- করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِن الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

হে আমার বান্দারা, তোমরা আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সূরা: আল গাফের  ৬০)

দুআর তাৎপর্য হলো: ইহ ও পরলৌকিক বিভিন্ন প্রয়োজনে আল্লাহ তাআলার শরণাপন্ন হওয়া। দুআ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার বিশেষ যোগসূত্র তৈরি হয়। আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য ও তার প্রতি বিশ্বাস প্রকাশ পায়। আল্লাহর প্রতি আস্থাশীলতা এবং তার মহান শক্তির উপর নির্ভরতার প্রত্যয় বান্দার অন্তরে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয়। সারকথা হলো, দুআ এমন একটি ইবাদত যা একদিকে বান্দার দীনতা, হীনতা, অক্ষমতা ও বিনয়ের প্রকাশ ঘটায়, অপর দিকে আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ব, সর্বব্যাপী ক্ষমতা ও দয়া-মায়ার প্রতি সুগভীর বিশ্বাস গড়ে তুলে। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি দুআ করা। আমাদের কাজ হবে প্রার্থনা করতে থাকা। দেওয়া না দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহর। তাই বাহ্যিকভাবে কিছু না পেলেও, দুআ কখনো ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। কেননা দুআর মাধ্যমে আমাদের ইবাদত ও ছাওয়াব অর্জন হয়, যা আখেরাতের বিশেষ পাথেয় হবে।

আবূ দাউদ ও তিরমিযীতে সাহাবী নু‘মান ইবনে বাশীরের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে   الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ

দু‘আই হলো ইবাদত। আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে :

 لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللهِ سُبْحَانَهُ مِنَ الدُّعَاءِ  

দুআর চেয়ে আল্লাহ সুবহানাহুর কাছে উত্তম কোনো বস্তু নেই (ইবনে মাযাহ, হাসান)।

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে কুদসীতে এসেছে : أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا دَعَانِي

বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তার সঙ্গে তেমন আচরণ করি। সে আমাকে যখন ডাকে আমি তখন তার সঙ্গেই থাকি । (মুসলিম)

উবাদা ইবনে সামেত রাযি.-এর সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন :

مَا عَلَى الأَرْضِ رَجُلٌ مُسْلِمٌ يَدْعُو اللهَ تَعَالَى بِدَعْوَةٍ إِلَّا آتَاهُ اللهُ إِيَّاهَا، أَوْ كَفَّ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ

পৃথিবীর বুকে কোনো মুসলমান যখন আল্লাহর কাছে কোনো দুআ করে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে তাকে সে বস্তু দান করেন অথবা ওই বিষয়ের সমপর্যায়ের কনো বিপদ সরিয়ে নেন। তবে শর্ত হলো গোনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দুআ না হতে হবে (তাহাবী, সহীহ)।

মুহতারাম পাঠকবৃন্দ!! দো‘আ- প্রার্থনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছেই। নবী, রাসূল, ফেরেশতা, ওলি-আওলিয়া, পীর-মুর্শিদ ও মাজার ইত্যাদির কাছে দুআ করা চলবে না। বরং তা পরিষ্কার শিরক ও আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ। আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ للهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللهِ أَحَدًا

আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না (সূরা আল জিন : ১৮)।

দো`আ- প্রার্থনা ও ইবাদত-আরাধনার পাত্র একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তাই আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে কখনোই শরীক করা যাবে না। অন্য কারও কাছে দো`আ- প্রার্থনা করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ

আর যে আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে,যে বিষয়ে তার কাছে প্রমাণ নেই তার হিসাব কেবল তার রবের কাছে। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না। (সূরা আল-মুমিনূন : ১১৭)

দুআর উত্তম সময়

  • এক. সিজদা অবস্থায় অধিক পরিমাণে দুআ করা উচিত। হাদীসে এসেছে :

أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ

সেজদারত অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী থাকে। তাই সেজদারত অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করো। (মুসলিম)

অন্য এক হাদীসে এসেছে :

أَلَا وَإِنِّي نُهِيتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا، أَوْ سَاجِدًا، فَأَمَّا الرُّكُوعُ، فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ وَأَمَّا السُّجُودُ، فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ

শুনে রাখো, রুকূ বা সেজদাবস্থায় তেলাওয়াত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। তাই রুকূ অবস্থায় তোমরা তোমাদের রবের স্তুতি জ্ঞাপন করো আর সেজদাবস্থায় খুব দুআ করো। কেননা সেজদা অবস্থা দুআ কবুলের উপযুক্ত সময়’ (মুসলিম)।

  • দুই. আযান ও একামতের মধ্যবর্তী সময়ে দুআ কবুলের মুহূর্ত। আনাস রা. হতে বর্ণিত;

الدَعَاءُ بَيْنَ الْأَذَانِ وَالْإقَامَةِ لَايُرَدُّ

‘আযান ও একামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না’ (তিরমিযী)।

  • তিন. রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুআ করা। সহীহ বুখারীতে আছে :

يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ، يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ

রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। এরপর বলেন, কে আছে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে আমার কাছে প্রার্থনা করবে আমি তাকে দান করব। কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব । (বুখারী)

  • চার. শুক্রবারের বিশেষ সময়ে দুআ করা। আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার জুমার দিনের কথা আলোচনা করে বলেন :

فِيهِ سَاعَةٌ لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي يَسْأَلُ اللَّهَ تَعَالَى شَيْئًا إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ  

এদিনে এমন একটি মূহূর্ত আছে যখন নামযী বান্দা আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চায় আল্লাহ তাকে তা দেন (বুখারী ও মুসলিম)।

জুমার দিনে দুআ কবুলের এ মূহূর্তটি নির্দিষ্ট করে বলতে গিয়ে ওলামায়ে কেরাম নানা মত প্রকাশ করেছেন। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, তা আছরের পরের শেষ সময়। হাদীসগ্রন্থ সুনানে আবূ দাউদে এসেছে :

يَوْمُ الْجُمُعَةِ ثِنْتَا عَشْرَةَ يُرِيدُ سَاعَةً لَا يُوجَدُ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئًا إِلَّا أَتَاهُ اللهُ فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ سَاعَةٍ بَعْدَ الْعَصْر

‘ জুমার দিনে বারোটি প্রহর তথা সময় রয়েছে। এ সময়ে কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা জুমার দিনের শেষ প্রহর তথা আছরের শেষ সময়ে এ প্রহরটিকে অনুসন্ধান করো’ (আবূ দাউদ)।

দুআ কবুলের আরো কিছু সময় হলো লাইলাতুল কদর, আরাফার দিন, হাজরে আসওয়াদের কাছে, বৃষ্টি বর্ষণের সময় ও নামাজের পর।

দুয়া কবুলের শর্ত

  • এক. পরিশুদ্ধ বিশ্বাস অর্থাৎ নির্ভেজাল ও খালেস তাওহীদ বুকে ধারণ করে দুআ করা: আল্লাহ তাআলা বলেন : فَادْعُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ

অতঃপর তোমরা আল্লাহকে ডাকো দীনকে তার জন্যই একনিষ্ঠ করে, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে (সূরা গাফির : ১৪)।

হাদীসে কুদসীতে এসেছে :

يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً

‘হে বনী আদম! তুমি যদি যমীন ভর্তি গুনাহ নিয়েও আমার কাছে আস এবং সাক্ষাৎ করো এমতাবস্থায় যে তুমি আমার সাথে কোনো কিছু শরীক করো না, তাহলে আমিও যমীন ভর্তি মাগফিরাত নিয়ে তোমার কাছে হাজির হব’ (তিরমিযী, হাসান)।

  • দুই. খাবার-দাবার ও পোশাক পরিচ্ছদে হারাম বর্জন করে চলা : আবু হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: يَأَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ  وَقَالَ: يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ، ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ

হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, এবং পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু তিনি কবুল করেন না। আর আল্লাহ তাআলা রাসূলদেরকে যে বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র ও ভাল বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি সম্যক জ্ঞাত’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৫১)।

তিনি আরো বলেন : হে মুমিনগণ, আহার কর আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর (সূরা আল-বাকারা : ১৭২)।

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ সফর থেকে আসা ধূলায় আবৃত-এলোকেশী ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন,যে আকাশের দিকে হাত প্রলম্বিত করে বলে,ইয়া রাব্বি! ইয়া রাব্বি! অথচ তার খাবার হারাম,তার পানীয় হারাম,তার পরিচ্ছদ হারাম এবং হারামের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে তার ভরণপোষণ। এমতাবস্থায় তার দুআ কিভাবে কবুল হবে? (মুসলিম)।

  • তিন. জাগ্রত-হৃদয় ও পোক্ত-আশা নিয়ে দুআ করা:

আবু হুরাইরা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন :

ادْعُوا اللهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ لا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاهٍ

দুআ অবশ্যই কবুল হবে এর দৃঢ বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহকে ডাকো। আর জেনে রাখো, আল্লাহ তাআলা কোনো গাফেল ও উদাসীন হৃদয়ের দুআ কবুল করেন না। (তিরমিযী, হাসান)।

দুআ করার আদবসমূহ

সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! দুআ কবুলের শর্তের পাশাপাশি দুআর কিছু আদবও রয়েছে। যদি আমরা দুআর শর্ত ও আদবসমূহ রক্ষা করে দুআ করি তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের দুআ কবুল করবেন। আমাদেরকে শূন্য হাতে ফেরত দেবেন না। তাহলে এবার আসুন শুনে নেই দুআর আদবগুলো কি:

  • এক. পবিত্র অবস্থায় দুআ করা: কেননা দুআ হলো যিকর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে যে তিনি,এমনকি, সালামের উত্তর দেয়ার জন্য একটি দেয়ালে হাত রেখে তায়াম্মুম করেছেন এবং বলেছেন : إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللهَ إِلَّا عَلَى طُهْرٍ

পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহর যিকর করা আমার কাছে পছন্দনীয় নয়’(ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ)।

  • দুই. দুহাত ওঠিয়ে প্রার্থনার দুআ করা।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

إِنَّ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي مِنْ عَبْدِهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا

‘ নিশ্চয় তোমাদের রব অতি লজ্জাশীল ও মেহেরবান। তাই তাঁর বান্দারা যখন তাঁর কাছে হাত ওঠায় তিনি তাদেরকে শূন্য হাতে ফেরত দিতে লজ্জা পান’ (আবু দাউদ)।

বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে দুআ করা এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ ও তার শাস্তি থেকে বাঁচার প্রবল আগ্রহ নিয়ে দুআ করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً তোমরা তোমাদের রবকে ডাক অনুনয়-বিনয় করে ও চুপিসারে’ (সূরা আল-আরাফ : ৫৫)।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :   إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا  তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করে এবং তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে আশা ও ভীতির সঙ্গে আর তারা থাকে আমার প্রতি বিনীত’ (আল-আম্বিয়া : ৯০)।

 

  • তিন. জোরালোভাবে তাগিদের সাথে দুআ করা;

 হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلْيَعْزِمْ الْمَسْأَلَةَ، وَلَا يَقُولَنَّ اللهم إِنْ شِئْتَ فَأَعْطِنِي، فَإِنَّهُ لَا مُسْتَكْرِهَ لَهُ

তোমাদের কেউ যখন দুআ করবে দৃঢ় তাগিদের সাথে করবে। আর কখনো এরূপ বলবে না যে হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে দিন। কেননা আল্লাহকে বাধ্যকারী কেউ নেই (বুখারী)।

  • চার. দুআয় আল্লাহর হামদ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরূদ পেশ করা :

হাদীসে এসেছে :

  سَمِعَ النَّبِيُّ ﷺ رَجُلًا يَدْعُو فِي صَلَاتِهِ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: عَجِلَ هَذَا، ثُمَّ دَعَاهُ، فَقَالَ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ: إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِتَحْمِيدِ اللهِ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ لِيُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ ثُمَّ لِيَدْعُ بَعْدُ بِمَا شَاءَ  

একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) দেখলেন এক ব্যক্তি দুআ করছে কিন্তু সে দুআতে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করেনি। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে লক্ষ্য করে বললেন,সে তাড়াহুড়ো করেছে। অতঃপর সে আবার প্রার্থনা করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে অথবা অন্যকে বললেন, যখন তোমাদের কেউ নামায পড়ে তখন সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তার গুণগান দিয়ে শুরু করে। অতঃপর রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করে। এরপর যা ইচ্ছা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে (আবূ দাউদ ও তিরমিযী)।

  • পাঁচ.আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও তাঁর মহৎ গুণাবলী দ্বারা দুআ করা:

 আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : وَ للهِ لْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا

আল্লাহর রয়েছে সুন্দরতম নামসমগ্র। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নাম দিয়ে ডাকো’ (সূরা আল-আরাফ : ১৮০)।

  • ছয়. হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন দুআর শব্দমালা ব্যবহার করে দুআ করার চেষ্টা করা;

 বিশেষ করে যেগুলোতে ইসমে আজম রয়েছে বলে বর্ণনায় এসেছে। সহীহ ইবনে হাব্বানে আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে এই বলে দুআ করতে শুনলেন :

اللهم إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ، الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، فَقَالَ: لَقَدْ سَأَلْتَ اللهَ بِالِاسْمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ وَفِيْ لَفْظٍ: (لَقَدْ سَأَلْتَ اللهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি আল্লাহ। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর কেউ নেই তাঁর সমকক্ষ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, লোকটি আল্লাহর কাছে ওই নামের মাধ্যমে সওয়াল করেছে যার মাধ্যমে সওয়াল করলে আল্লাহ তাআলা দেন। যার মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকলে তিনি সাড়া দেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তুমি আল্লাহর কাছে তাঁর ইসমে আজমের মাধ্যমে প্রার্থনা করেছ (আবুদাউদ, সহীহ)।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে। আনাস রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বসা ছিলেন। এক ব্যক্তি নামাজরত ছিল, অতঃপর সে এই বলে দুআ করল :

اللهم إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ، يَا بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، إِنِّي أَسْأَلُكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ : أَتَدْرُونَ بِمَا دَعَا اللهَ؟ قَالَ: فَقَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَدْ دَعَا اللهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ، الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ، وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى  

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি- এ কথার উসীলায় যে,সকল প্রশংসা আপনার, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি দানশীল,আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা,হে মহামহিম ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব ও সর্ব সত্তার ধারক,আমি আপনার প্রার্থনা করছি। রাসূলে কারীম (সা.) এ প্রার্থনা শুনে বললেন,তোমরা কি জান,সে কিসের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দুআ করল? সাহাবীগণ বললেন,‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন’। তিনি বললেন, ‘যার হাতে আমার আত্মা তাঁর কসম। সে আল্লাহর ইসমে আজম দিয়ে দুআ করেছে। যে ব্যক্তি এ নামের মাধ্যমে দুআ করবে তার দুআ তিনি কবুল করবেন। যে ব্যক্তি এ নামের মাধ্যমে তার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে দেবেন’ (আহমদ, হাসান)।

সম্মানিত মুসাল্লিয়ানে কেরাম! শুধু বিপদাপদ বালা-মুসীবতের সময়ই নয়, বরং দুআ হবে একজন মুমিনের সব সময়ের সঙ্গী। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাযি. আনহু বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَالْكَرْبِ فَلْيُكْثِرِ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ

কঠিন অবস্থা ও শঙ্কটাপন্ন মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা যেন দুআ কবুল করেন এ আগ্রহ যার থাকবে সে যেন বিপদহীন অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করে’ (তিরমিযী, হাসান)।

প্রিয় ভাইয়েরা! দুআ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ হওয়া উচিত। অথচ আমরা দুআর প্রতি যথার্থ গুরুত্ব দিই না। এটা সত্যিই দুঃখজনক ব্যাপার। নামাযের পূর্বে,নামাযের অভ্যন্তরে, নামাযের পরে আমরা কি দুআ করতে অভ্যস্ত? বিভিন্ন অনুষ্ঠানে,বৈঠকে আমরা কি দুআ করি? দুআর মাধ্যমে কি আমাদের অনুষ্ঠানাদি শুরু এবং শেষ করি। নিভৃতে,একাকী,গভীর রাতে, ফজরের পূর্বে,রাতের শেষাংশে আমরা কি দুআ করতে অভ্যস্ত? দুআ কি কেবল বিপদাপদের জন্যই? না,কখনো না। আল্লাহর কাছে মিনতি করে দুআকারীরা আজ কোথায়? অশ্রু বিসর্জিত নয়নে দুআকারীরা আজ কোথায়?যেদিন মুসলমানদের ঈমান শক্ত ছিল, দৃঢ় ছিল যেদিন মুসলমানদের যাহের-বাতেন তাকওয়া-পরহেজগারীতে ভরপুর ছিল,সে দিন তো কবুল হওয়ার একীন নিয়ে, দৃঢ় প্রত্যাশা নিয়ে মুসলমানগণ দুআ করতেন। আর আল্লাহ তাআলা তাদের দুআ কবুল করতেন। সাহাবী সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস তো মুস্তাজাবুদ্দাওয়াহ (যার দুআ কবুল করা হয়) বলেই খ্যাতি পেয়েছিলেন।

সাঈদ ইবন যায়েদ রাযি.-এর ঘটনা শুনুন। জনৈকা মহিলা মিথ্যা দাবি করে বলল যে তিনি তার যমীনের একাংশ অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন। সাঈদ ইবনে যায়েদ রাযি.- যিনি বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবীর একজন- তাঁকে এ ব্যাপারে বলা হলে তিনি বললেন,এটা কি করে সম্ভব! আমি তো রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি না-হকভাবে এক বিঘত যমীনও আত্মসাৎ করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে সপ্ত যমীনের বেড়ি পরিয়ে দেবেন। এরপর তিনি বললেন,হে আল্লাহ! যদি এই মহিলা মিথ্যা বলে থাকে তবে তার চোখ অন্ধ করে দিন। তার ঘরেই তার কবর রচনা করুন। অতঃপর মহিলা অন্ধ হয়ে গেল এবং তার বাড়ির কূপে পড়ে মারা গেল।

প্রিয় ভাইয়েরা! এমন অনেকেই রয়েছে যারা বলে, দুআ করে কি লাভ। দুআ তো কতোই করলাম। কই, কোনোটাই তো কবুল হলো না! যারা এরূপ বলে তাদের ভেবে দেখা উচিত, তারা কি দুআ কবুলের শর্ত পূরণ করে দুআ করছে? না কি দুআ কবুলের পথে নানাবিধ আবর্জনা ও প্রতিবন্ধকতা রেখেই দুআ করে চলেছে। আসলে দুআ কবুলের শর্ত আদবসমূহ পূর্ণ করে দুআ করলে অবশ্যই তা কবুল হওয়ার কথা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যথার্থরূপে দুআ করার তাওফীক দান করুন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সকল দো‘আ- মুনাজাত কবুল করুন। আমাদের সকল বৈধ প্রয়োজনগুলো পূরণ করে দিন। যেভাবে দুআ করলে আপনি কবুল করেন সেভাবে দুআ করার তাওফীক দান করুন। দুআর সকল শর্ত ও আদব রক্ষা করে দুআ করার তাওফীক দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে শূন্য হাতে ফেরত দেবেন না। হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের রব, মাবুদ, আপনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, একমাত্র আপনিই ধনী আর আমরা গরীব, আপনার দয়া না হলে আমরা একটি নিঃশ্বাসও নিতে পারব না। তাই কেবল আপনার দরবারেই দুআর জন্য আমরা হাজির হই। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে শূন্য হাতে ফেরত দেবেন না।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক ও নেফাক থেকে রক্ষা করুন। আমাদেরকে সৎপথে চলার তাওফীক দিন। সিরাতুল মুস্তাকীমে প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দিন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।

Related Post