আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

দ্বিতীয় পর্ব

লেখকের আবেদন

সাধারণভাবে গোটা হিন্দুসমাজ এবং বিশেষভাবে উক্ত সমাজে বিদ্যমান আমার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধববৃন্দ। সুদীর্ঘ চল্লিশটি বছর ধরে আমি অনেক বারই আপনাদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত আকুলভাবে এই আবেদনটি করেছি।

আজ জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে হয়তো শেষবারের মতো আমি আবার সেই আবেদনটি করে যেতে চাই; জানি না অতীতের মতো এবারও ঘৃণা ও অবজ্ঞার সাথে আমাকে প্রত্যাখ্যাত হতে হবি কিনা।

তবে আমি যে সাধ্যানুযায়ী আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি এবং সারাটি জীবন অন্তরের সাথে আপনাদের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করেছি এতদ্বারা অনন্তত সেই সান্ত¡নাটুকু নিয়ে আমি আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো। পরম করুণাময় বিশ্বপ্রভু আমার এই প্রচেষ্টাকে সফল করুন এবং দায়িত্ব পালনের ত্রুটি থেকে আমাকে অব্যাহতি দান করুন, কায়মনোবাক্যে এই প্রার্থনা করি।

বাল্যকাল থেকই আমি যে চরিত্রবান, মেধাবী এবং চিন্তাশীল ছিলাম সে কথা আপনাদের অজানা নয়। আমার কাছে লিখিত আপনাদের অনেক চিঠিপত্রেও আপানারা উচ্ছ্বাসিতভাবে আমার চরিত্রের পশংসা করেছেন। খোঁজ করা হলে তেমন দু’চার খানা পত্র আজও আমার ঘরে পাওয়া যাবে।

চরিত্রবান হওয়া সত্ত্বেও প্রায় সারাটা জীবন আমি আপনাদের নিকট থেকে শুধু ঘৃণা, বিদ্বেষ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, ক্রোধ এবং অবজ্ঞা-অবহেলা দন্ডই পেয়ে এসেছি।

আমি জানি আপনাদের এই ঘৃণা, বিদ্বেষ প্রভৃতির একটি মাত্র কারণই রয়েছে। তাহলো আমারই ইসলাম গ্রহণ।

ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে আপনাদের অজ্ঞতা, কুসংস্কার, বিরোধী শক্তিসমূহের মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা এবং মুসলমান নামধারী কিছু সংখ্যক মানুষের আচার-ব্যবহারই যে আপনাদের মনে এই ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টির কারণ, সে কথা বেশ ভালোভাবেই আমার জানা রয়েছে। আর জানা রয়েছে বলেই আপনাদের নিষ্ঠুর ব্যবহারে আমি আপনাদের উপর কণামাত্রও রুষ্ট বা বীতশ্রদ্ধ হইনি।

এক সময়ে আমিও যে আপনাদের মতো ওসবের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করতাম সে কথা অবশ্যই আপনাদের জানা রয়েছে। সৌভাগ্যবশত আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছিলাম। কিভাবে পেরেছিলাম অতঃপর সে কথাই বলছিঃ

আমরা জানি, ধর্ম একান্তরূপেই বিশ্বাসের বিষয়; আর বিশ্বাস করা বা না করাটা হলো একান্তরূপেই মনের কাজ। বাইরে থেকে জোর করে চাপিয়ে দেয়া বা সত্যোপলব্ধি ছাড়া গতানুগতিক অথবা বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসা বিশ্বাস অর্থাৎ সাধারণতঃ যাকে বিশ্বাস বলে দাবী করা হয়ে থাকে, তা যে প্রকৃত বিশ্বাস বলে গণ্য হতে পারে না সে কথাও আমাদের জানা রয়েছে।

কথাটিকে এভাবেও বলা যেতে পারে যে, যথাযোগ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার বিবেচনার মাধ্যমে কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মনে যে বিম্বাসের সৃষ্টি হয় তাকেই ব্যতিক্রম দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারেঃ

পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মের অনুসারী অর্থাৎ অনুসারী বলে পরিচিত ব্যক্তিগণ নিজেদেরকে ধর্ম-বিশ্বাস বলে দাবী করে থাকেন। অথচ এদের অধিকাংশই ধর্ম সম্পর্কে কিছু জানেন না। অনেকে ধর্মীয় বিধি-নিষেধের ধারও ধারেন না। এমনকি অতি প্রকাশ্যে সাংঘাতিক ধরনের ধর্ম-বিরোধী কাজ চালিয়ে যান- এমন ব্যক্তিরাও নিজেরে ধর্ম-বিশ্বাসী বলে দাবী করে থাকেন।

আশ্চর্যের বিষয়, সমাজের বাকি মানুষেরা তাদেরকে ধর্ম-বিশ্বাসী বলে গ্রহণ করে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, জন্ম-সূত্রকেই এরা ধর্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্যে যথেষ্ট বলে মনে করে। দুঃখের বিষয় এদের এই মনে করার পশ্চাতে কোন কোন ধর্মগ্রন্থের সমর্থনও রয়েছে। অথচ ধর্ম হলো একটি আদর্শ; আর আদর্শকে বিশ্বাস করতে হয়, গ্রহণ করতে হয় এবং বাস্তবে রূপায়িত করতে হয়। অন্যথায় কেউ ধার্মিক বা ধর্ম বিশ্বাসী বলে গণ হতে পারে না। অতএব জন্ম-সূত্রের দাবীতে ধার্মিক বা ধর্ম-বিশ্বাসী হওয়ার দাবী যে গ্রহণযোগ্য নয় সে কথা সুস্পষ্টরূপেই বুঝতে পারা যাচ্ছে।

তবে বুঝতে পারা গেলেও জন্ম-সূত্রকেই ধর্ম-বিশ্বাসী হওয়ার জন্যে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ ধরণের মানুষেরা যে ‘অন্ধবিশ্বাসী’ অথবা ‘কপট-বিশ্বাসী’ ব্যতীত নয়, ধম সম্পকে স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে এমন ব্যক্তিরা অবশ্যই সেকথা জানেন। প্রচলিত ভাষায় এ ধরণের মানুষদেরকে যে যথাক্রমে ‘আত্ম প্রবঞ্চক’ এবং ‘ভন্ড’ অর্থাৎ প্রতারক বলা হয়ে থাকে আশা করি সেকথাও তাঁদের অজানা নয়।

অতৎপর আমার নিজের প্রসঙ্গে আসা যাক: নিজে ব্রাহ্মণ ছিলাম। বাল্যকাল থেকেই ধর্ম সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছিল, বেশ কিছু কাল পুজার্চনার কাজও চালিয়ে গিয়েছি। অথচ বহু চেষ্টা করেও হিন্দুধর্মের অনেক কিছুর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। আত্ম-প্রবঞ্চক, অন্ধবিশ্বাসী বা কপট-বিশ্বাসী অন্য কথায় ভন্ড প্রতারক হয়ে জীবন কাটানোর কথা ভাবতেই বিবেকের কষাঘাত অনুভব করেছি-মন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে।

অগত্যা গ্রহণযোগ্য ধর্মের সন্ধানে আমাকে ব্যাপৃত হতে হয়। শেষ পর্যন্ত স্বতঃস্ফুর্তভাবে আমার মনে এই বিশ্বাস সৃষ্টি হয় যে, একমাত্র ইসলামই সত্য, অভ্রান্ত, সার্বজনীন ও সর্বকালীন ; অতএব গ্রহণ-যোগ্য।

নির্দিষ্ট নিরপেক্ষ মন নিয়ে ভেবে দেখুন, আত্ম প্রবঞ্চক ভন্ড-প্রতারক হয়ে বেঁচে থাকা এবং ইসলাম গ্রহণ এ উভয়ের মধ্যে কোনটাকে বেচে নেয়া আমার জন্য সঙ্গত ও কল্যাণকর ছিল। কোন বিবেকবান ব্যক্তির জন্যই আত্ম-প্রবঞ্চক, অন্ধবিশ্বাসী বা কপট বিশ্বাসী হয়ে বেঁচে থাকা কাম্য হতে পারে না।

অতঃপর একান্ত আকুলভাবে আপনাদের উদ্দেশ্যে আমি যে আবেদনটি করতে চাই তাহলো আপনারা দয়া করে নিজেদের পিতৃ-পৈতামহিক ধর্মের সাথে সাথে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কেও গভীরভাবে অবহিত হোন। জ্ঞানের আলোক এবং বিবেকের কষ্টিপাথরে যাচই-বাছাই করুন। তার পরে আপনার মন যে ধর্মের প্রতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আস্থাশীল হয়ে উঠে তাকে গ্রহণ করুন। বিশ্ব প্রভু আপনাদেরকে অন্ধবিশ্বাস এবং কপট-বিশ্বাসের কুম্ভীপাক থেকে উদ্ধার করত তাঁর মনোনীত পথে পরিচালিত করুন, কায়মনোবাক্যে এই প্রার্থনাই করি। আমীন।

পূর্বের পর্ব এখানে:১

Related Post