আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম

ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের এই সাইটটি ভ্রমণ করুন

৪র্থ পর্ব

এই প্রশ্নের উত্তর স্বরূপ আমাকে বলতে হচ্ছে যে, ‘ঘোড়ার আগে গাড়ী জুড়ে দেয়ার মতো’ এ কাণ্ডটা আমাকে কেন করতে হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত আভাস ইতিপূর্বে আমি তুলে ধরেছি।  এ সম্পর্কে আরো কিছুটা বিস্তৃতভাবে আভাস দিতে হলে বলতে হয় যে, প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের পক্ষ থেকে কোনরূপ চেষ্টা বা উদ্যোগ গ্রহণ ব্যতিরেকে একমাত্র ইসলামের সত্যতা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং করে চলেছে।

সুতরাং কারো ইসলাম গ্রহণ মুসলমানদের কাছে মোটেই অভিনব বা কোনরূপ বিস্ময়ের ব্যাপার নয়।  বরং ইসলামের সত্যিকারের পরিচয় যাদের জানা রয়েছে তাঁদের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার হলোঃ  বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করত পৃথিবীর মানুষেরা সকলে ইসলাম গ্রহণ করছে না কেন?

উল্লেখ্য যে, ইসলাম গ্রহণকারী এই সব ব্যক্তিদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা জ্ঞানে-গুণে এবং ধনে-মানে বিশেষভাবে প্রখ্যাত ও প্রসিদ্ধ।  এমতাবস্থায় আমার মতো এমন এক অতি নগণ্য ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণে যে মুসলমানদের কাছে সামান্যতম গুরুত্বও বহন করবে না সে-সম্পর্কে আমার মনে সুস্পষ্ট ধারণা বিদ্যমান ছিল এবং আজও বিদ্যমান রয়েছে।

অতএব এই গুরুত্বহীন ঘটনাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বরং ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী  সময়ে এই ইসলাম গ্রহণের জন্যে আমাকে যে সব প্রত্যাশিত এবং অপ্রত্যাশিত দুঃখ যাতনা ও লাঞ্ছনা অপমানের সম্মুখীন হতে হয়েছে আমি সে গুলোকেই প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছি।

উপরে ‘অপ্রত্যাশিত’ দুঃখ-যাতনা ও লাঞ্ছনা অপমানের কথা বলা হয়েছে, এর কিছুটা বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।

আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে হিন্দু সমাজ যে আমার উপরে রুষ্ট এবং বিরূপ হবেন এবং তাদের মধ্যে যারা উগ্রপন্হী, পশ্চাৎপদ এবং অতিমাত্রায় সামপ্রদায়িক তাঁরা যে আমার উপরে অত্যাচার নির্যাতন ও লাঞ্ছনা অপমানের কাজ চালিয়ে যাবেন সেটা আমার কাছে মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না, বরং সেটাকে আমি স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়েছিলাম।

কিন্তু কোন মুসলমানের পক্ষ হতে তেমন কিছু ঘটা আমার কাছে ছিল একান্তরূপেই অপ্রত্যাশিত।  অপ্রত্যাশিত থাকলেও তেমনটি ঘটেছে এচবং ঘটে চলেছে।  আরো একটু খুলে বললে বলতে হয় যে, আমার এই ইসলাম গ্রহণের জন্যে শুধু হিন্দুদের দ্বারাই নয়- একশ্রেণীর মুসলমানের দ্বারাও আমাকে লাঞ্ছিত অপমানিত হতে হয়েছে, উপরন্ত এক শ্রেণীর মুসলমানের কার্যকলাপ আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে দিয়েছে- আমার সকল আশা-আকাঙক্ষা এবং শুভ প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ অথবা ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং করে চলেছে।

এসব কারণেই আমি আমার সেই অবুঝ মুসলমান ভাইদের কাছে আমার ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী  অবস্থাকে তুলে ধরার মাধ্যমে তাঁদের মনে একটা পরিবর্তন আনার আগ্রহ অনুভব করেছি।  আশা করি ‘ঘোড়ার আগে গাড়ী জুড়ে দেয়ার মতো এই কাজটি আমি কেন করছি সüদয় পাঠকবর্গের সেকথা বুঝতে আর কোন অসুবিধা হবে না।

আমার এই সুদীর্ঘ জীবনে দুঃখ-যতানা, লাঞ্ছনা অপমান এবং বাধা-বিপত্তি সে সব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সংখ্যা অনেক।  সবগুলোকে এখানে তুলে ধরা সম্ভব নয়।  তা ছাড়া পাঠকবর্গের ধৈর্য্যচ্যুতির আশংকা রয়েছে।  তাই ওসব ঘটনার কয়েকটি মাত্রকে পরবর্তী  ‘হরিষে বিষাদ’ শীর্ষক নিবন্ধ অতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হবে।

হয়তো ভীষণভাবে বেদনাহত আমার এই মনটা এ থেকে কিছুটা স্বস্তি লাভে সক্ষম হবে।  অন্তত আমার এই মনটার দিকে চেয়ে সাধারণভাবে সকল পাঠক এবং বিশেষভাবে আমার সেই অবুঝ মুসলমান ভাইগণ কিছুটা কষ্ট হলেও ধৈর্য সহকারে এই নিবন্ধটি পাঠ করবেন এবং নিজের অন্তর দিয়ে আমার অন্তরের এই নিদারুণ জ্বালাকে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করবেন-সকলের কাছে সকাতরে এই অনুরোধটুকু জানিয়ে রাখছি।

বিষয়বস্তুকে তুলে ধরতে গিয়ে কারো কারো কাছে প্রিয় নয় এমন কতিপয় সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে।  কারো মনে আঘাত দেয়া বা কারো অনুভূতিকে খাটো করে দেখানোর উদ্দেশ্যে এটা করা হয়নি।  সত্যকে সত্য বলে প্রকাশ করার সদিচ্ছা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যই যে এর পশ্চাতে নেই, বইখানা একটু মনোযোগ দিয়ে পাঠ করা হলে সেখাত বুঝতে পারা যাবে বলে আশা করি।  তথাপি অজ্ঞাতসারে অথবা ভাষাজ্ঞানের অভাবে কারণে যদি কারো মনে সামান্যতম আঘাত লাগার মতও কিছু লিখে থাকি সেজন্যে গভীরভাবে দুঃখিত।  আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি দিয়ে সেগুলোকে উপেক্ষা করা হবে।

প্রয়োজনবোধে বইখানার আমূল পরিবর্তন ছাড়াও কয়েকটি নতুন বিষয়ের সন্নিবেশ ঘটাতে গিয়ে অনবরত লেখার কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে।  অন্যদিকে মুদ্রণাশুদ্ধি সংশোধন এবং মুদ্রণ ব্যয়ের সংস্থান করতেও কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি; তাছাড়া বার্ধক্যের নানা যন্ত্রণাতো রয়েছেই।  এমতাচবস্থায় বহু চেষ্টা করেও লেখার কাজে যাথযোগ্য মনোযোগ দিতে পারিনি।  ফলে অপ্রত্যাশিত হলেও বইখানাতে নানা ধরণের ভুলত্রুটি রয়ে গিয়েছে।  আশা করি আমার মনের দিকে লক্ষ্য করত সেগুলোকেও ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখা হবে।

পরিশেষে অত্যন্ত বিনময়ের সাথে আমি বলতে চাই যে, ইসলামকে সত্য, শ্বাশত এবং আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন বলে জানা পরে সকল বাঁধন এবং সকল আকর্ষণকে ছিন্ন করত যেদিন ইসলাম গ্রহণ করেছি সেদিন থেকেই অন্তরের সাথে কামনা করে এসেছি যে, সকলে এ সত্যকে জানুক এবং গ্রহণ করুক।  অন্তত মুসলমানেরা খাঁটি মুসলমান হয়ে গড়ে উঠুক-এটা আমার প্রতিটি মুহূর্তের কামনা।

জানি, কর্ম-বিহীন কামনা সফল হয় না – শুধু যাতনাই বৃদ্ধি করে।  তাই সাথে সাথে নিজের অতি নগণ্য শক্তি সামর্থটুকু দিয়ে যতটুকু সম্ভব আমি কর্ম প্রচেষ্টাও চালিয়ে আসছি।  অবশ্য সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি।  কেন হয়নি পরবর্তী  নিবন্ধে তার আভাস দেয়া হয়েছে।  আজ জীবনের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে এটাই হয়তো আমার শেষ প্রচেষ্টা।

 অন্তত বিদায়ের পূর্বে যদি জানতে পারি যে, আমার প্রচেষ্টা দ্বারা কারো সামান্য মাত্রও উপকার সাধিত হয়েছে, তাহলে স্বস্তির সাথে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো।  সর্ব প্রদাতা করুণাময় সে সৌভাগ্য আমাকে দারুন করুণ, কায়মনো বাক্যে এই প্রার্থনাই করি।

খাকছার

আবুল হোসেন ভট্টাচার্য

  ১ম পর্ব  এখানে   ২য় পর্ব এখানে ৩য় পর্ব 

Related Post