বর্তমান বিচার ব্যবস্থা ও ইসলামের নির্দেশনা

111

আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে সৃষ্টির সেরা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে যেভাবে তিনি বিবেক-বুদ্ধি, ন্যায়-অন্যায় উপলব্ধি করার যোগ্যতা দিয়েছেন, তা অন্য কোন সৃষ্টিকে দেন নাই। মানুষকে তিনি শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর বলছেনঃ “আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে এ জন্যেই সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমারই ইবাদত করবে” (সূরা: যারিয়াত: ৫৬)
মানুষের কল্যাণ করা, ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়া, ন্যায় ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ইবাদতের মধ্যে গণ্য। দুইজনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলে তা ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ নিত্তি করে দেয়া মু’মিনের আলামত। যারা সত্যবাদী ও সঠিক বিচারকার্য সম্পাদন করেন, আল্লাহপাক তাদেরকে ভালবাসেন। হাদীস শরীফের ভাষ্যানুযায়ী হাশরের ময়দানে ৭ শ্রেণীর লোক আল্লাহর ছায়াতলে স্থান পাবেন, তন্মধ্যে ন্যায়পরায়ণ বিচারক রয়েছেন। সেই কঠিন বিচারের দিন আল্লাহর আদালতে বিশেষ সম্মানের অধিকারী (আল্লাহর ছায়াতলে আশ্রয়ী) হতে হলে স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে দুনিয়াতে এর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। একদা রাসূল (সাঃ)-এর নিকট এক ইহুদী, জনৈক সাহাবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এলো। তখন সঠিক তদন্তপূর্বক মহানবী (সাঃ) যে রায় দিয়েছেন সেটা ইহুদি ব্যক্তির পক্ষে গিয়েছিল। ইসলামের নবী সেদিন স্বীয় সাহাবীর বিরুদ্ধে রায় দিতে কার্পণ্য করেননি। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সাঃ) একদা চুরির বিচারকার্য সম্পাদনের সময় বলেছেন, আমার কলিজার টুকরা ফাতেমাও (রাঃ) যদি এমন অপরাধ করতো তাহলে আমি তারও হাত কর্তনের নির্দেশ দিতাম।
আমাদের দেশে ইদানীং উচ্চ আদালত থেকে নিয়ে বিচার ব্যবস্থার ওপর নানা অভিযোগ শুনা যাচ্ছে। আমরা যদি এ ক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শ মেনে, আল্লাহর আদালতে হাজিরার কথা স্মরণ করে চলতে পারি তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে সবারই মঙ্গল বয়ে আনবে।
হযরত ওরওয়া ইবনে হেশাম ইবনে হাকীম (রাঃ)-এর বর্ণনা, আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-কে আমি এরশাদ করতে শুনেছি-দুনিয়াতে যারা মানুষকে না-হক কষ্ট দেয়, হাশরের ময়দানে আল্লাহপাক তাদের ওপর কঠোর আযাব নাযিল করবেন। হযরত আয়েশার (রাঃ) বর্ণনা, তিনি নবী করীম (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন-কোমলতার সাথে যা করা হয়, তাতে একটা স্বতন্ত্র সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়ে যায়। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়শা (রাঃ) একবার একটি উটে আরোহণ করে কোথাও যাচ্ছিলেন। উটটি কিছুতেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাচ্ছিল না। হযরত আয়েশা (রাঃ) হাতের ছড়ি দ্বারা আঘাত করে করে সেটিকে অগ্রসর করতে চেষ্টা করছিলেন। এ অবস্থা দেখে হযরত নবী করীম (সাঃ) হযরত আয়শা (রা)-কে ডেকে বলেছিলেন, আয়শা এর প্রতি কোমল ব্যবহার করো। দয়ার নবী একটি পশুর সাথে ভাল ব্যবহারের নির্দেশ দিলেন। আর আমরা মানুষ হয়ে মানুষের সাথে কতইনা দুর্ব্যবহার করে যাচ্ছি। সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে আপন ভাইকে হামলা মামলা দিয়ে কষ্ট দিচ্ছি। মিথ্যা মামলা দিয়ে, জুলুম-নির্যাতন করছি এমনকি খুন
করতেও পিছপা হচ্ছি না।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান অনূদিত ‘হাদীসে রাসূল’ গ্রন্থের ৩৪নং হাদীসে ‘সেবকগণই জাতির প্রকৃত নেতা’ বলা হয়েছে। আর বর্তমানে শাসকগণই শোষকের ভূমিকা পালন করছে। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করছে। আমাদের দেশে বর্তমানে জনতার উপর যে হারে নির্যাতন চলছে, তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। যারা জনগণের নিরাপত্তাবিধানকারী তাদের হাতেই আজ মানুষ বেশি নির্যাতনের শিকার। মানুষকে অন্যায়ভাবে যারা কষ্ট দেয়, নির্যাতন করে তাদেরও একদিন আল্লাহর আদালতে বিচার হবে।
এ জন্য আমাদের দেশের বিচারকদের উচিত বিচারকার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা। কারণ ক্ষমতা ও বিবেক আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। যারা এই নেয়ামতের অপব্যবহার করবেন, নিশ্চয় তাদেরকে জন্য আহকামুল হাকিমীন মহান আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালার মুখোমুখি হতে হবে। শাসকগোষ্ঠীর ইশারায় যারা (সত্য গোপন করে) বিচারকার্য পরিচালনা করেন তাদের সম্পর্কে নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, ক্রোধ ঈমানকে এমনভাবে বিনষ্ট করে দেয় যেমন ভয়ঙ্কর তিক্ত কোনো ফল মধুর স্বাদ বিনষ্ট করে। (বায়হাকী)
পরিশেষে আমাদের সকলের একথা মনে রাখা উচিত যে, আল্লাহপাক কাফেরের প্রতিও সদয় দৃষ্টি দেন কিন্তু আত্মম্ভরিতায় লিপ্ত (প্রশাসক-বিচারক) ব্যক্তির প্রতি কখনো সদয় হন না। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সত্য ও ন্যায়ের পথে সঠিক বিচার, সঠিক সাক্ষ্য দেয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

Related Post