বিধবা ও অনাথ শিশুদের সাহায্য করার উপকারিতা

বিধবা ও অনাথ শিশুদের সাহায্য করার উপকারিতা

বিধবা ও অনাথ শিশুদের সাহায্য করার উপকারিতা

পারস্য দেশে বলখ রাজ্যের এক সম্ভ্রান্ত লোক ছিল, তিনি বিয়ে করেন ভদ্র পরিবারের এক মহিলাকে। তাদের দাম্পত্য জীবনে কয়েকটি কন্যা সন্তান ছিলো। তাদের পারিবারিক জীবনও সচ্ছলতায় চলছিল। হঠাৎ লোকটি মারা গেল। ক্রমশ সংসারে অভাব অনটন দেখাদিল। শত্রুর ভয়ে মহিলা মেয়েদের নিয়ে অন্য দেশে চলে গেল। তখন ছিল প্রচণ্ড শীত। সে দেশে গিয়ে মেয়েদের নিয়ে একটি পরিত্যাক্ত মসজিদে আশ্রয় নিলো। এ শিশু দিকে বাচ্চারা ক্ষুধায় কাতরাচ্ছিল। উপায় অন্ত না পেয়ে মহিলাটি সাহায্যের স্থানীয় সংস্থায় গেল। সংস্থাটির পরিচালক ছিলেন এক মুসলিম শায়খ।

মহিলাটি মুসলিম শায়খের নিকট নিজের অবস্থা খুলে বর্ণনা করলো। এবং বললো আমি একজন ভদ্র মহিলা, এক সময় আমার সব ছিলো। হঠাৎ করে স্বামীর ইন্তেকালের পর আমি অসহায় হয়ে পড়ি, নিঃস্ব হয়েগেছি। আপনার এলাকার একটি পরিত্যাক্ত মসজিদে বাচ্চাদেরসহ আশ্রয় নিয়েছি। কয়েক দিন অনাহারে আছি, বাচ্চাগুলো ক্ষুধার তাড়নায় কাতরাচ্ছে; আপনার মাধ্যমে বাচ্চাদের জন্য খাবারের আবেদন করছি।

শায়খ বললেন, তুমি যে ‘ভদ্র মহিলা, প্রমাণ পেশ করো। মহিলা জাবাব দিলো: আমি একজন ভিনদেশী নারী, এখানে আমাকে কেউ চেনে না। আমি প্রমাণ পেশ করতে অক্ষম। শায়খ তাকে কোন সহযোগিতা করলো না। বললো, আমরা কোন অপরিচিত মানুষকে সহযোগিতা করতে পারি না, শায়খ তাদের কোন খুঁজ নিতেও চেষ্টা করলেন না। মহিলা ভাড়াক্রান্ত হৃদয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসলো। ক্ষুধার কারণে নিজেও দূর্বল হয়ে পড়েছেন, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও যে, হাঁটতে হবে বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। সামনে এগুতে লাগলো, দেখতে পেল আরো একটি জন কল্যাণ সংস্থা, সেটি পরিচালিত হয় দেশের প্রতিভূ বা জামিনদার অগ্নীপূজকের তত্ত্বাবধানে।

মহিলা জামিনদার অগ্নীপূজকের সংস্থার দিকে গেলো। সেখানেও বিস্তারিতভাবে নিজের অবস্থা বর্ণনা করলো, আমি একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারী। এবং তার সঙ্গে কয়েকটি অনাথ শিশুও রয়েছে, সে কথা বললো। এবং মুসলিম শায়খের ঘটনাও তার নিকট বর্ণনা করলো। অগ্নীপূজক মহিলাটির কথা সবিস্তারে শোনে সংস্থার মহিলা কর্মীদের তার সঙ্গে পাঠালেন, যে তাদেরকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাও। এবং উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করো, এবং সুন্দর ও উত্তম পোশাকের ব্যবস্থা করো, এবং যা যা প্রয়োজন সব কিছুর ব্যবস্থা করো।

এই দিকে গভীর রাতে মুসলিম শায়খ স্বপ্নে দেখছে, যে কিয়ামত সংগঠিত হয়েগেছে, এদিকে রাসূল (সা.) মুক্তির পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, আর বলছেন; ইয়াকুত ও মণি-মুক্তা দ্বারা নির্মিত বালাখানা অপেক্ষা করছে। মুসলিম শায়খ রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলো, এই বালাখানা কার জন্য? রাসূল (সা.) বললেন, তাওহীদের বিশ্বাসী মুসলিম ব্যক্তির জন্য। মুসলিম শায়খ বললেন আমি ‘তাওহীদের বিশ্বাসী মুসলিম’ রাসূল (সা.) বললেন: প্রমাণ পেশ করো, তখন শায়খ হয়রান পেরেশান হয়েগেল, আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন ভদ্র মহিলা বলেছিলো আমি ‘সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারী’ তখন তুমি তাকে বলে ছিলে, প্রমাণ পেশ করো, এখন আমি বলছি, তুমি যে, তাওহীদের বিশ্বাসী মুসলিম’ তার প্রমাণ পেশ করো। মুসলিম শায়খ অত্যন্ত চিন্তিত অবস্থায় নিদ্রা হতে জাগ্রত হলো, কারণ সে মহিলাকে নিরাশ করে প্রত্যাখ্যান করে ছিলো।

শায়খ সকালে সারা শহরে তাদেরকে খুঁজতে লাগলো, সর্বশেষ জানতে পারলো, মহিলা তার সন্তানসহ অগ্নীপূজকের বাসায় আছে। শায়খ তাকে বললো, আমি ঐ ভদ্র মহিলা ও তার সন্তানদেরকে নিয়ে যেতে এসেছি। অগ্নীপূজক বললো, না আমি কিছুতেই তোমার সাথে তাদেরকে যেতে দেবো না, কেননা আমি যে বরকত তাদের কাছ থেকে পেয়েছে, তাদেরকে আমি ছাড়তে পারবো না। শায়খ বললো, আমি তোমাকে এক হাজার দিনার দিবো, তবুও তাদেরকে ফেরত দাও। অগ্নীপূজক বললো, না আমি কিছুতেই যেতে দেবো না। তুমি যে জন্য তাদের নিতে চাচ্ছ, আমি এর বেশি হকদার।

তুমি যে বালাখানা স্বপ্নে দেখেছো, তা আমার জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে, আমি স্বপরিবারে গত রাতেই এই ভদ্র মহিলার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি। গত রাতে আমি ও আমার স্ত্রী ঘুমাইনি ততক্ষণ পর্যন্ত যে আমরা সকলে মুসলমান হই। অতঃপর আমরা ঘুমায়েছি, আর তুমি যে স্বপ্ন দেখেছো, আমিও সেই একই স্বপ্ন দেখেছি। আল্লাহর রাসূল আমাকে বললেন, ভদ্র মহিলা ও তার মেয়েরা কি তোমার নিকট? আমি বললাম হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, এই বালাখানা তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এবং তোমরা সকলে জান্নাতের অধিবাসী। আল্লাহ তোমাদেরকে তার দফতরে মুসলমান হিসেবেই লিখে রেখেছেন। মুসলিম শায়খ পেরেশান ও নিরাশ হয়ে চলে গেল। তার অবস্থা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

সম্মানিত পাঠক! এই হলো বিধবা নারী ও অনাথদের সঙ্গে উত্তম আচরণের ফল। আল্লাহু আকবার। আল্লাহ আমাদের সকলকে বিধবা ও অনাথ শিশুদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন ( আল কাবায়ের লিল ইমাম আয যাহাবী: পৃ. ৪২)

Related Post