মাহে রমযান ঃ ভালো মানুষ তৈরী করে বা মুত্তাকী বানায়

মাহে রমযান ঃ ভালো মানুষ তৈরী করে বা মুত্তাকী বানায়

মাহে রমযান ঃ ভালো মানুষ তৈরী করে বা মুত্তাকী বানায়

الحَمْدُ للهِ رَبِّ العَالَمِينَ، جَعَلَ التَّقوَى مَعْدِنَ الخَيْراتِ، ومَصْدَرَ البَركَاتِ، وحَثَّ عَلَيْهَا فِي كَثِيرٍ مِنَ الآيَاتِ، أَحْمَدُهُ سُبْحَانَهُ بِما هُوَ لَهُ أَهلٌ مِنَ الحَمْدِ وأُثْنِي عَلَيْهِ، وأُؤمِنُ بِهِ وأَتَوكَّلُ عَلَيْهِ، مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ ومَنْ يُضلِلْ فَلاَ هَادِيَ لَهُ، وَنَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، القَائمُ عَلَى كُلِّ نَفْسٍ بِما كَسَبَتْ، الرَّقِيبُ عَلَى  كُلِّ جَارِحَةٍ بِمَا اجْتَرَحَتْ، الذِي لاَ يَعْزُبُ عَنْ عِلْمِهِ مِثْقالُ ذَرَّةٍ تَحَرَّكَتْ أَو سَكَنَتْ، يَقْبَلُ طَاعَاتِ عِبَادِهِ وإِنْ قَلَّتْ، ويَتَفَضَّلُ بِالعَفْوِ عَنْ مَعاصِيْهِمْ وإِنْ كَثُرَتْ، وَنَشْهَدُ أَنَّ سَيِّدَنَا وَنَبِيَّنَا مُحَمَّداً عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ إِمَامُ المُتَّقِينَ، وقُدْوَةُ السَّابِقينَ واللاحِقينَ، اللَهُمَّ صَلِّ وَسلِّمْ وبَارِكْ عَلَيْهِ وعَلَى آلِهِ وأَصْحابِهِ الذِينَ تَسَربَلُوا بِسِرْبالِ التَّقوَى؛ فَكَانوا أَكْرَمَ وأَعَزَّ وأَقْوَى، ورَضِيَ اللهُ عَنِ التَّابِعينَ لَهُمْ بإِحْسانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ

ভালো মানুষ কাকে বলে?- যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশমত নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করে, আল্লাহর রঙে নিজেদের রঙিন করে, যারা আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করে, তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে না, তাঁর প্রীতিতে প্রীত হয়ে যারা এ বিশ্বসংসারের সকল কিছুর প্রতি প্রীতি অনুভব করে-তারাই ভালো মানুষ।
আল্লাহর পরিকল্পনা ঃ মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই তিনি ফেরেশতাদের কাছে ঘোষণা দিয়েছিলেন-

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ٣٠

“আমি অবশ্যই পৃথিবীতে খলিফা বসাতে যাচ্ছি।” তারা বলল — “তুমি কি উহাতে এমন কাউকে বসাচ্ছ যে তার মধ্যে ফসাদ সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত করবে, অথচ আমরা তোমার স্তুতির গুণগান করছি ও তোমারই পবিত্রতার জয়গান গাইছি।” উত্তরে আল্লাহ বললেন — “আমি নিঃসন্দেহে তা জানি যা তোমরা জানো না।”(সূরা বাকারা ঃ ৩০)
আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধি মানে আল্লাহ ভীতি ও প্রীতিতে সিক্ত মানুষ। যাকে এক কথায় বলা হয় মুত্তাকী। যাকে বলতে পারি ভালো মানুষ।
সিয়াম এর উদ্দেশ্য ঃ মাহে রমযানে একমাস সিয়াম সাধনাকে ফরয করার উদ্দেশ্যই হলো ভালো মানুষ তৈরি করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন;

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ١٨٣

অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। ফলে আশা করা যায় যে তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ ও বৈশিষ্ট জাগ্রত হবে।” অর্থাৎ তোমরা মুত্তাকী হতে পারবে। (সুরা বাকারা : ১৮৩)
আর তাকওয়ার পরিচয় মহান আল্লাহ সূরা বাকারার প্রথমেই তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলছেন-

الم ﴿١﴾ ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ ﴿٢﴾ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ ﴿٣﴾ وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ ٤

“ এই কিতাব আল্লাহর কিতাব, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। এটি হচ্ছে মুত্তাকীদের জন্যে হেদায়েত বা পথের দিশা। (মুত্তাকী ঐ লোকেরা) যারা গায়েব বা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত  কায়েম করে, যে রিযিক তাদেরকে দেওয়া হয়েছে তা থেকে খরচ করে। এই কিতাব এবং পূর্ববর্তী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস রাখে আর আখেরাতের উপর তাদের রয়েছে দৃঢ় বিশ্বাস।”
আল্লাহ পাক চান আল কুরআন নাযিলের মাস রমযানের সিয়াম মানুষের মধ্যে এই পাঁচটি গুণের সমাবেশ ঘটাবে। এই পাঁচটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে সর্ব প্রকারের খারাবি থেকে মুক্ত একটি মানুষ তথা ভালো মানুষ অর্থাৎ খলিফাতুল্লাহ হওয়ার যোগ্য। আর সেই যোগ্যতা অর্জন করতে রমযান সর্বোতভাবে সহযোগিতা করবে। এমনই এক কর্মসূচি রমযানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পেশ করেছেন।

কিভাবে রমযান ভালো মানুষ তৈরি করে?  প্রতিটি মানুষের মধ্যে দুইটি সত্তা আছে একটি ভালো আর একটি মন্দ। একটি তার ‘রূহ’ আর অপরটি ‘নফস’। এই দুটি সত্তারই খাদ্য আছে। সূরা বাকারায় বর্ণিত উপর্যুক্ত গুণ কয়টি রূহ’র খাদ্য, আর এর বিরোধিতা করা বা অস্বীকার করা নফসের খাদ্য। মহান আল্লাহ বলেন- ” أُولَـٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿٥﴾ (উপর্যুক্ত কথা গুলো যারা মেনে নিলো) তারাই সঠিক পথের উপর রয়েছে। এবং এরাই হচ্ছে সফলকাম।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿٦﴾ خَتَمَ اللهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْ ۖ وَعَلَىٰ أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿٧﴾
আর যারা এই কথাগুলো মানতে অস্বীকার করে তুমি তাদের সতর্ক করো বা না করো এরা কখনই ঈমান আনবে না। তাদের মন মগজ ও শ্রবণ শক্তির উপর আল্লাহ পাক মোহর মেরে দিয়েছেন। এদের দৃষ্টি শক্তির উপর আবরণ পড়ে গেছে এবং এদের জন্যে রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।” (সুরা বাকারা : ৬-৭)
সিয়াম মানুষকে মহত গুণাবলী অর্জন করার প্রশিক্ষণ দেয়;
১.গায়েবে বিশ্বাসের প্রশিক্ষণ ঃ রোযা রেখে প্রচণ্ড ক্ষুধা তৃষ্ণায় যতই কষ্ট পাক তবুও রোযাদার কিছুতেই পানাহার করে না। অথচ তার উপর কোনো পাহারাদার নিযুক্ত করা হয়নি। সে তার না দেখা রবের ভয়েই খায় না। এটা গায়েবে বিশ্বাসের প্রধান বিষয়। আমাদের ছোট একটা বাচ্চা পর্যন্ত জানে রোযা রাখলে দুনিয়াতে কিছু পাওয়া যায় না। এর প্রতিদান পাওয়া যাবে আখেরাতে। জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি, জান্নাতের শান্তি, সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি । এই প্রত্যেকটি বিষয়তো গায়েবে বিশ্বাস। রমযানে আল্লাহ তা’য়ালা এমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছেন যাতে এই গায়েবে বিশ্বাস মজবুতও দৃঢ় হয়।
২. সালাতের প্রশিক্ষণ ঃ  মুত্তাকীদের দ্বিতীয় গুণ হলো সালাত বা নামায কায়েম করা। একমাত্র রমযান মাসেই এই প্রশিক্ষণটি পরিপূর্ণভাবে হয়। তাইতো দেখা যায় সারা বছর নামায না পড়লেও এ মাস থেকে অনেকে নামায পড়তে শুরু করে। শুধু ফরয নামাযই নয় সুন্নত ও নফল নামাযও বান্দা তখন আগ্রহের সাথে পড়ে। আল্লাহ তায়ালাকে তখন সে খুব কাছে মনে করে। সারাদিন রোযার ক্লান্তির পর রাতে দীর্ঘতম তারাবীহর নামাযেও সে শৈথিল্য করে না।
মুসলমানগণ তাদের যাপিত জীবনে সর্বত্র আল্লাহর হুকুম পালন করতে প্রস্তুত কিনা এর পরীক্ষা নেয়ার জন্যেই আল্লাহ পাক তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেনা তাদের মুসলমান বলে দাবী করার কোনো অবকাশ নেই। সে যদি বলে আমি আল্লাহ এবং রাসূল সা.-কে বিশ্বাস করি তা একেবারেই অর্থহীন। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেন
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ ﴿٤٥﴾
“নিশ্চয়ই নামায বড় কঠিন কাজ, তবে তাদের জন্যে নয় যারা তাদের রবকে ভয় করে।” (সূরা বাকারা : ৪৫)
৩. দানের প্রশিক্ষণ ঃ বান্দা জানে রমযানের কর্মসূচির মধ্যে একটি প্রধান কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে খরচ করা। আরও জানে অন্য মাসের দানের চেয়ে এ মাসের দানে অনেক গুণ বেশি সওয়াব। তাইতো সে এ মাসে দাতা হয়ে যায়। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করে। রোযাদারকে ইফতার করায়, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র, দরিদ্রকে অর্থদান করে। ইয়াতিম মিসকিনের খোঁজ খবর নেয়। মাহে রমযানে আল্লাহর বান্দা যেনো গরীবের বন্ধু হয়ে যায়। প্রতিবেশীর হক আদায় করে, তাদের বাড়িতে ইফতারি পাঠায়। এই মাসেই মালদার ব্যক্তি যাকাত আদায় করে। ফেতরা আদায় করে। প্রতিদানে তারা সুনাম সুখ্যাতিও চায় না। আল্লাহর  ঘোষণা মতে-
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا ﴿٩﴾
“তারা বলে আমরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই তোমাদের খাবার দিয়েছি। তোমাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিদান বা কোনো কৃতজ্ঞতা কামনা করিনা। (সূরা দাহর: ৯)
৪. আল্লাহর কিতাব অনুশীলনের প্রশিক্ষণ ঃ পূর্ববর্তী কিতাবের উপর বিশ্বাস মানে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব গুলো আল্লাহর তরফ থেকেই নাযিল করা হয়েছে এ কথা আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের হেদায়েতের জন্যে আল কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা আমাদের পড়তে হবে, জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবনকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই কিতাবের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেকে, পরিবারকে, সমাজ ও রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে হবে। এই মাস আল-কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসে বেশি বেশি কুরআন অনুশীলন করতে হবে। পরিপূর্ণভাবে কুরআন বুঝতে হবে। তাহলে তার আমল আখ্লাক কুরআনের আলোকে গড়ে উঠবে এবং ঘরে ঘরে ভালো মানুষ তৈরী হবে।
৫.আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের প্রশিক্ষণ ঃ আখেরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস না থাকলে কুরআনের কোনো নির্দেশই পালন করা যায় না। বান্দার যদি দৃঢ় বিশ্বাস থাকে দুনিয়ার এই জান ও মালের পরিবর্তে আখেরাতে আমি জান্নাত পাবো তাহলেই সে এই পার্থিব জান ও মাল আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তুচ্ছ জ্ঞান করতে পারে। অকাতরে আল্লাহর রাহে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে। কিন্তু বিশ্বাসে সামান্যতম ত্র“টি থাকলেতো তা আর সম্ভব নয়। এই দৃঢ় বিশ্বাসের কারণেই বান্দা সর্ব প্রকারের নাফরমানিমূলক কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। মিথ্যা কথা, ফাহেশা কাজ, গীবত, চোগলখোরী, অশ্লীল কথা, কারো জিনিষ না বলে নেয়া, কাউকে অনর্থক গালি দেয়া, কষ্ট দেয়া, ঝগড়া করা, ওজনে কম দেয়া ইত্যাদি সর্ব প্রকারের পাপ কাজ থেকে নিজেকে স্বযতেœ দূরে রাখে। কারণ তাকে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি রমযানের একমাস সিয়াম পালন করল সে যেন নিষ্পাপ হয়ে গেলো।”
আবার বলা হলো-
رُبَّ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الْجُوعُ والعطش، وَرُبَّ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ قِيَامِهِ إِلَّا السَّهَرُ
“কিছু রোযাদার আছে যারা না খেয়ে থাকার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাবেনা।”পাশাপাশি কিছু তাহাজ্জুদ গুজার রয়েছে, তাদের এই রাত্রি জাগরণও কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবে না।
কি কি কারণে রোযা কবুল হবেনা তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন রাসূল সা.। বলেছেন-
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ، فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
“যে মিথ্যা কথা আর মন্দ কাজ ছাড়তে পারলো না তার রোযায় আল্লাহর কোনো দরকার নেই।”

إِذَا أَصْبَحَ أَحَدُكُمْ يَوْمًا صَائِمًا فَلا يَرْفُثْ ، وَلا يَجْهَلْ ، فَإِنْ امْرُؤٌ شَاتَمَهُ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ : إِنِّي صَائِمٌ إِنِّي صَائِمٌ) رواه البخاري (১৮৯৪) ومسلم (১১৫১)
“রোযার সময় কেউ যদি ঝগড়া করতে চায় তাকে বলে দাও আমি রোযা আছি।”
অর্থাৎ রোযাদারকে কেউ খেতে বললে সে যেমন খেতে অস্বীকার করে ঠিক ঝগড়া ফাসাদকেও রোযা রেখে তেমনি এড়িয়ে চলবে এটাই রমযানের শিক্ষা। আল-কুরআনে নির্দেশিত সকল আদেশ এবং উপদেশ অনুযায়ী পথ চলবে, কথা বলবে। নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সর্বদিকের সর্বপ্রকার সমস্যার সমাধান নেবে আল-কুরআন থেকে। তাইতো এই কুরআন নাযিলের মাসে বেশি বেশি করে কুরআন পড়তে বলেছেন মহান আল্লাহ বারী তা’য়ালা এবং কুরআন থেকে যে শিক্ষা সে পাবে তার প্রতি রাখতে বলেছেন দৃঢ় বিশ্বাস।
উপরে বর্ণিত এই পাঁচটি গুণ যার মধ্যে আছে তার নাম মুত্তাকী। এই মুত্তাকীকেই  বলে ভালো মানুষ। আল্লাহপাক আমাদের উপর এই মাহে রমযানে একমাস ব্যাপী একটা ট্রেনিং সেন্টারের ব্যবস্থা করেছেন প্রতিবছর। প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এই ট্রেনিং সেন্টার। আর এই ট্রেনিং সেন্টারে যা কিছু কর্মসূচি আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করেছেন তা সব হলো ভালো মানুষ তৈরির কর্মসূচি। এই কর্মসূচি অনুযায়ী যদি নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করতে পারি, চরিত্রে ত্র“টি বিচ্যুতি থাকলে সংশোধন করে নিতে পারি, তওবা করে ফিরে আসতে পারি আল্লাহর পথে, তাহলেই সফলতা-দুনিয়ায় শান্তি আর আখেরাতের মুক্তি। জীবন থেকে অনেক মাহে রমযান চলে গেছে। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আসুন এই মাহে রমযানের শেষ দশকে ওয়াদাবদ্ধ হই, সচেষ্ট হই, আল্লাহর কাছে তৌফিক চাই।

Related Post