গুনাহ সর্ম্পকে হাদীসের ভাষ্য

রমযানের শেষ দশকে কিয়ামের নামাযের ফযীলত

রমযানের শেষ দশকে কিয়ামের নামাযের ফযীলত

১. আল্লাহ দিনে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য রাত্রে নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন এবং রাত্রে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য দিনের নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন। কেয়ামতের আগে পশ্চিমে সূর্যোদয় পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকবে। আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফের জন্য রীতিমত অপেক্ষা করেন। বান্দা মাফ চাইলেই মাফ পেতে পারে।
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: সেই ব্যক্তির নাক ধূলামলিন হোক, যে রমযান পেয়েছে কিন্তু তার গুনাহ মাফ করাতে পারেনি। (জামে আত তিরমিযী, হাকেম)
৩. হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে : আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম! তুমি আমার কাছে যা আশা করো এবং চাও, আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম এবং এ জন্য আমি কোন পরোয়া করি না। (জামে আত তিরমিযী)
৪. হাদীসে কুদসীতে আরো এসছে : আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দা! তোমরা দিনে রাতে গুনাহ করে থাকো, আর আমি সকল গুনাহ মাফ করি। তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেব। (সহীহ মুসলিম)
গুনাহ মাফের জন্য এর চাইতে বড় প্রতিশ্রুতি আর কি হতে পারে?
৫. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম! তুমি আমার নিকট যা যা দোয়া ও প্রত্যাশা করো, আমি তোমার সকল গুনাহ মাফ করে দেবো এবং এ ব্যাপারে আমি কোন কিছুর পরোয়া করবো না। হে বনি আদম! যদি তোমার গুনাহ আকাশের মেঘমালার মতো বিপুল পরিমাণও হয়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমার সে গুনাহ মাফ করে দেবো এবং সে জন্য আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! যতি তুমি জমীন পরিমাণ বিশাল গুনাহরাশি নিয়েও আমার দিকে ফিরে আসো এবং আমার সাথে আর কাউকে শরীক না করো, তাহলে আমিও তোমার প্রতি জমীন পরিমাণ বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হবো। (জামে আত তিরমিযি)
বন্ধুগন! ক্ষমার জন্য এর চাইতে বড় আহবান আর কি হতে পারে?
৬. হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, তোমরা যদি গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে উঠিয়ে নিতেন এবং যারা গুনাহ করে এমন জাতি তৈরী করতেন। তার পর তারা আল্লাহ কাছে ক্ষমা চাইত, তিনি তাদেরকে ক্ষমা কতে দিতেন। (সহীহ মুসলিম)
গুনাহ করার পর গর্ব-অহংকার না করে আল্লাহ কাছে বিনীতভাবে গুনাহ মাফ চাওয়া ও তাওবা করা দরকার। তাওবা করলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন। বান্দা গুনাহ করবে, আল্লাহ তা জানেন।
৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি নিজ আমলনামা দেখে খুশি হতে চায় সে যেন বেশী করে গুনাহ মাফ চায়। (সুনানে বায়হাকী)
৮. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : নিশ্চয়ই শয়তান বলেছে, হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের শপথ করে বলছি, আমি আপনার বান্দাদেরকে তাদের শরীরে প্রাণ থাকা পর্যন্ত গোমরাহ করতে থাকবো। তখন রব বলেন, আমার ইজ্জত ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ করে বলছি, তারা যে পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকবো। (মুসনাদে আহমদ)
৯. মোমেনের প্রতিটি বিষয়ই কল্যানকর। ক্রুটি করাও কল্যাণকর হতে পারে যদি মানুষ এরপর তাওবা করে বিনীত হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।
১০. হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমার বান্দা যখন নেক কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমল করেনি, আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখি। আর যদি আমল করে তাহলে, ১০ থেকে ৭শ গুন সওয়াব লিখি। যদি গুনাহর কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু এখন ও তা করেনি, আমি তা লিখি না। কিন্তু যদি কাজটি করে ফেলে, তাহলে, আমি কেবল ১টি গুনাহ লিখি। (সহীহ মুসলিম)
১১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মোমেনের বিষয় আশ্চর্যজনক। তার প্রত্যেকটি জিনিসই কল্যাণকর। আর এটা মোমেন ছাড়া আর কারো জন্য নয়। সে সুখ ও আনন্দ পেলে শুকরিয়া আদায় করে, সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর দু:খ ও কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করে; সেটাও তার জন্য কল্যানকর।’ (সহীহ মুসলিম)
গুনাহ ও ক্রটি তখন কল্যাণকর হবে, যখন তা মানুষকে অধিক সওয়াবের কাজ এবং তাওবা-এস্তেগফারের জন্য উদ্ধুদ্ধ করে। এ জন্য কোন গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে তাওবার সাথে সাথে আরো কিছু নেক কাজ করা কর্তব্য। তা সেই গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে।
১২. হযরত আবু মুসা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আল আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহতায়ালার দিনের অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য রাতে এবং রাতের অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য দিনে ক্ষমার হাত প্রসারিত করে রাখেন। (সহীহ মুসলিম)
১৪. হযরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের লক্ষ্য করে বলেন, আমি যুলুমকে আমার উপর হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মাঝেও যুলুম করাকে হারাম করে দিয়েছি। অতএব, তোমরা একে অপরে উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা হেদায়াত প্রাপ্তির জন্যে দোয়া করো। আমি তোমাদেরকে হেদায়াত দান করবো হে আমার বান্দাহগণ! আমি যাকে খাদ্য দান করেছি, সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্থ। অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য প্রার্থনা করো আমি তোমাদের খাদ্য দান করব। হে আমার বান্দাহগণ! তোমাদের মধ্য হতে যাকে আমি বস্ত্র পরিধান করিয়েছি সে ছাড়া আর সকলেই উলঙ্গ। অতএব তোমরা আমার নিকট বস্ত্র পরিধানের জন্য দোয়া করো, আমি তোমাদেরকে পরিধান করাবো। হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা রাতে ও দিনে গুণাহ করে থাকো এবং আমি সকল গুণাহ ক্ষমা করতে পারি। অতএব তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবো। (সহীহ মুসলিম)
১৫. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : আল্লাহ তায়ালা বলেছেন; হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা) প্রত্যাশা করবে, তুমি যাই প্রকাশ হোক না কেন আমি তা ক্ষমা করে দেব-আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাদে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে (আখেরাতে) সাক্ষাত কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো। (জামে আত তিরমিযি)
১৬. হযরত আসরার ইবনে ইয়াসার আল মাজানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহ কাছে তাওবা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন একশত বার তাওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম)

Related Post