রাসুল (সা:) এর জীবনই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ

উত্তম আদর্শ

উত্তম আদর্শ

 রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৩ বছরের মক্কা জীবন কাটিয়েছেন সাহাবায়ে কেরামের তরবিয়ত ও জীবন গঠনের পেছনে। এরপর যখন জিহাদের হুকুম এলো, তখনও এ নির্দেশনা প্রবল ছিল  যে, সব শত্রুতা ও বৈরিতার মধ্যেও যেন ন্যায়ের নিশান হাতছাড়া না হয়। জিহাদ হচ্ছে হকের আওয়াজ ঊর্ধ্বে তুলে ধরা, প্রতিশোধের নাম জিহাদ নয়। তাওহিদের মর্ম একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া, অপর ধর্মানুসারীদের প্রভুদের গালাগাল দেয়া নয়। মানবতার প্রতি সম্মান করার শিক্ষা দিয়েছেন নবীজী। নবীজীর শিক্ষায় বর্ণ, বংশ, ভাষা ও সম্পদের ভিত্তিতে কারও মর্যাদা নির্ধারিত হয় না। মর্যাদা ও সম্মান নির্ধারিত হয় কেবল তাকওয়া, নেক আমল ও ন্যায়ানুগতার ভিত্তিতে। এটাই তাকওয়ার পথ।

নবীজীর মোবারক সীরাত মানুষকে অন্ধকার থেকে সরিয়ে আলোর পথ দেখিয়েছে। নবীজীর মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণতা সাধিত হয়েছে এবং নবুওয়তের ধারা হয়েছে সমাপ্ত। আল্লাহ তাআলা আখেরি নবী ও আখেরি কিতাবের মাধ্যমে তার ‘হুজ্জত’ (প্রমাণ) চূড়ান্ত করেছেন। এখন হেদায়েত ও গুমরাহির পথ স্পষ্টভাবে ভিন্ন, নেকি ও বদির মধ্যে পার্থক্য পরিষ্কার। এখন আর নতুন কোনো নবীর প্রয়োজন  নেই।
রাসুলে রহমত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাত অধ্যয়নে এ অনস্বীকার্য বাস্তবতা সামনে চলে আসে যে, ইসলাম হচ্ছে নিরাপত্তার ঘোষক, সততার পতাকাবাহী এবং মানবতার বার্তাবাহক। মানবজাতির প্রতিটি সদস্যই ইসলামের দৃষ্টিতে সাম্য ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে। ইসলাম বর্ণ ও  গোত্রের বিভাজনমালিন্য থেকে মুক্ত। মানবতার সব শ্রেণী ও স্তরের জন্য ইসলাম এসেছে রহমতস্বরূপ। অমুসলিম নাগরিকদেরও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি ইসলাম। ইসলামের দেয়া অধিকার ও মর্যাদায় অমুসলিমরা এতটাই সম্মানিত বোধ করেন যে, আগে এর কোনো নজির তারা পাননি।

সভ্যতা ও ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে ইসলাম এসেছে একটি পশ্চাৎপদ সমাজে। নবীজী সেই আরবদেরই পরিণত করেছেন পৃথিবীর উন্নত জাতিতে। মানবেতিহাসে তিনিই প্রথম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা পেশ করেছেন, যা আত্মিক ও বস্তুগত উভয় দিক থেকে মানুষের সঙ্কট মুক্তির দায়িত্ব নিয়েছে। ইসলাম পৃথিবীর সেই একক ও বৃহত্তম ধর্ম, যা নিঃস্ব ও দরিদ্র জীবনের মধ্যে মর্যাদা ও তাৎপর্য দান করেছে। ইসলাম বিভিন্ন গোত্রের মানুষকে পরস্পরে ভাইয়ের মতো থাকার এবং বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম পৃথিবীতে একটি উন্নত সভ্যতা দান করেছে, যার ফলে ইসলামী সমাজের রূপ সামনে এসেছে। সে সমাজে মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের অনুসারীরাও সৃজনশীলতা ও পরিতৃপ্তির সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করেছেন। ইসলাম তার আদর্শের প্রাচুর্য দিয়ে বিত্তবান বানিয়েছে পুরো পৃথিবীকে।
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার পরিধি অনেক বিস্তৃত। যে সমাজে ইসলামের সভ্যতা ও শরিয়তের প্রয়োগ হয় এবং কোরআন ও সুন্নতের অনুসরণ করা হয়, সেটিই ইসলামী সমাজরূপে গণ্য। ওই সমাজের  বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে
ক. মানবজাতির ঐক্য, খ. কল্যাণের বিকাশ ও মন্দের দ্বার রুদ্ধ করা, গ. মানবচিন্তার ঐক্য, ঘ. মানবতার সম্মান, ঙ. মানবিক সমতা ও চ. রাসুলের আনুগত্য।
আজ পৃথিবীতে যে ধর্ম ও কর্মসূচির প্রয়োজন সেটি হচ্ছে আলোকজ্জ্বল দ্বীন-ইসলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত ও তাঁর সীরাত গোটা মানবজাতির জন্য একটি সমন্বিত সম্পদ। এখানে সবারই ভাগ রয়েছে। আল্লাহ তাআলার সব বস্তুগত নেয়ামত যেমন সব মানুষের জন্য অবারিত, ঠিক তেমনই এই রুহানি নেয়ামতও সব মাখলুকের জন্য উম্মুক্ত। নবীয়ে আখেরুযযামান সম্পর্কে কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।’

ইসলামের তত্ত্বগত দর্শন সম্পর্কে সমাজের প্রতিটি সদস্যের অন্তরে থাকতে হবে দৃঢ় বিশ্বাস। মানুষকে পুরা করতে হবে আল্লাহ তাআলার বন্দেগির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। রাসূল আনিত খেলাফত ব্যবস্থা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রতিটি মুহূর্তে অনুভূতি জাগ্রত থাকতে হবে আল্লাহর আনুগত্য, সুন্নতের অনুসরণ, তাকওয়া অবলম্বন এবং আখেরাতের জবাবদিহি সম্পর্কে। হেদায়েতের উলুম তথা দ্বীনি ইলমের চর্চা থাকতে হবে। পাশাপাশি চলতে হবে বৈষয়িক, আর্থিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের চর্চা। দিতে হবে মানুষের শৈল্পিক ও পেশাভিত্তিক মেধা বিকাশের সুযোগ। যেন সে হালাল জীবিকা অর্জন করতে পারে। মানুষের অন্তরে, চরিত্রে ও জীবনে শুদ্ধি আনতে হবে। মানুষ যেন সত্যের আহ্বানকারী ও কল্যাণকর কাজের সঞ্চালক হয়, সে উদ্যোগ নিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে তাদের পরিশ্রম ও কষ্ট সহিষ্ণুতায় অভ্যস্ত করতে, ধৈর্য ও বরদাশত যোগ্যতা অর্জন করাতে এবং আত্মমর্যাদা ও আত্মপ্রত্যয়ে বলিয়ান করতে। সর্বোপরি মানুষের মধ্যে সময় ও নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এইসব ভিত্তির ওপরই একটি আদর্শ সমাজের কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। এ সমাজই পৃথিবীর সব সমাজের ওপর সর্বাত্মক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছিল।
তাই এ যুগেও একটি আদর্শ সমাজের রূপায়ণ তখনই সম্ভব হবে, যখন আমরা মানবতার ত্রাণকর্তা হজরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা ও সীরাতকে জীবনোপায় বা কর্মপন্থা হিসেবে গ্রহণ করে নেব। যখন তাঁকে অনুসরণ করব। এতেই রয়েছে মানবতার মুক্তি। এটিই কল্যাণ ও সাফল্যের অব্যর্থ মন্ত্র।

Related Post