Main Menu

রাসূলগণের প্রতি ঈমান:

Eman rasul

 নবী ও রাসূলের পরিচয় (সংজ্ঞা):

নবীর শাব্দিক অর্থ: নবী শব্দটি আরবী, যার অর্থ সংবাদ দাতা আরবী নাবাউন শব্দ হতে এর উতপত্তি। নাবাউন মানে সংবাদ, অতএব নবী হলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা বাহক। অথবা নবী শব্দটি নাবওয়াতুন হতে এসেছে, আর নাবওয়াহ বলা হয় যমীনের উঁচু অংশকে, অতএব নবী হলেন সৃষ্টির মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদান ব্যক্তি।

নবীর পারিভাষিক সংজ্ঞা:

এমন এক স্বাধীন পুরুষ মানুষ যাঁকে আল্লাহ তাঁর ওয়াহী পৌঁছানোর জন্য চয়ণ করেছেন।

রাসূল শব্দের আভিধানিক অর্থ: যিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন তিনি তার অনুগত।

রাসূলের পারিভাষিক অর্থ: এমন স্বাধীন পুরুষ মানুষ, আল্লাহ যাকে শরীয়তের মাধ্যমে নবী করে বিরোধী সম্প্রদায়ের নিকটে তা প্রচারের আদেশ দিয়েছেন।

 

নবী ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য:

রাসূল,নবী থেকে খাস। অতএব প্রত্যেক রাসূল নবী, কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসূল নন। রাসূলকে নতুন শরীয়ত দিয়ে আল্লাহ্‌ দ্রোহী অথবা যারা তাঁর দ্বীন জানেনা তাদের নিকটে তা পৌঁছানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নবী যাঁকে পূর্বের শরীয়ত মোতাবেক দাওয়াত দেওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

খ নবুওয়াতের হাকীকতঃ

নবুওয়াত হলোঃ স্রষ্টা (আল্লাহ) ও সৃষ্টজীবের (বান্দার ) মাঝে তাঁর শরিয়াত প্রচারের মাধ্যম। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা নবুওয়াতের জন্য মনোনীত করেন এবং নবুওয়াত দিয়ে সম্মানিত করেন। এতে আল্লাহ ছাড়া কারো কোন প্রকার ইখতিয়ার নেই।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلاً وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ }سورة الحج الآية:75{

অর্থঃ (আল্লাহ ফিরিশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন,নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা,সর্বদ্রষ্টা।) [সূরাহাজ্ব:৭৫]

নবুওয়াত (আল্লাহ কতৃর্ক) প্রদত্ত,কারো অর্জিত নয়,অধিক ইবাদাত বা আনুগত্যের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। কোন নবীর ইচ্ছায় বা তাঁর চাওয়ার মাধ্যমে ও আসেনা। ইহা শুধু মাত্র মহান আল্লাহর নির্বাচন ও মনোনয়ন।

 

 

 

 

রাসূল প্রেরণের হিকমত বা রহস্যঃ

রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম) প্রেরণের হিকমত বা রহস্য নিম্নরূপঃ

প্রথমতঃ বান্দাদেরকে বান্দার ইবাদাত করা হতে মুক্ত করে বান্দার প্রতিপালকের (আল্লাহর) ইবাদাতে নিয়ে যাওয়া এবং সৃষ্টিজীবের দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করে স্বীয় প্রতিপালকের (আল্লাহর) স্বাধীন ইবাদাতের পথ দেখানো।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ  سورة النحل، الآية:36

অর্থঃ ((আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূত (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত) থেকে নিরাপদ থাক।)) [সূরা আন-নহল,আয়াত-৩৬]

 

দ্বিতীয়তঃ যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন, সে উদ্দেশ্যের সাথে (মানুষকে) পরিচয় করা। সে উদ্দেশ্য হলো তাঁর একত্ববাদ বিশ্বাস ও ইবাদাত করা। ইহা এক মাত্র রাসূলগণের মাধ্যমে জানা যায়। যাদেরকে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীব হতে মনোনয়ন করেছেন এবং সকলের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ  سورة النحل، الآية:36

 

অর্থঃ ((আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূত (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত) থেকে নিরাপদ থাক।)) [সূরা আন-নহল,আয়াত-৩৬]

 

তৃতীয়তঃ রাসূলগণ প্রেরণের মাধ্যমে মানুষের উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) প্রতিষ্ঠিত করা।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَّ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزاً حَكِيماً  سورة النساء، الآية:165

 

অর্থঃ ((সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে, আল্লাহ পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৫]

 

চতুর্থতঃ কিছু অদৃশ্যের বিষয় বর্ণনা করা, যা মানুষ তাদের জ্ঞান দ্বারা উপলদ্ধী করতে পারেনা। যেমন-আল্লাহর নামসমূহ ও তাঁর গুণসমূহ এবং ফিরিশ্তাদের ও শেষ দিবস সম্পর্কে জানা ইত্যাদি।

 

পঞ্চমতঃ যাতে তাঁরা (রাসূলরা) অনুসরণীয় উত্তম আদর্শ হয় কেননা আল্লাহ তাঁদেরকে উত্তম চরিত্রে পূর্ণ করেছেন। এবং তাঁদেরকে সংশয় ও প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে মুক্ত রেখেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ   لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ سورة الممتحنة، الآية:6

অর্থঃ ((তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ-রয়েছে।))

[সূরা আল-আযহাব, আয়াত-২১]

ষষ্ঠতঃ আত্মশুদ্ধি ও পবিত্র করণ এবং আত্ম বিনষ্টকারী হতে সর্তক-সাবধান করা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ * سورة الجمعة، الآية:2

অর্থঃ ((তিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠকরেন তাঁর আয়াত সমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষাদেন কিতাব ও হিকমত।)) [সূরা আল-জুমু’আহ, আয়াত-২]

সপ্তমত: যাতে তারা আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ার সমস্ত মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলছেন:

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ

অষ্টমত: পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো মানুষেরা যাতে তাদের এক মাত্র সত্য মা’বূদকে চিনতে পারে এবং রাসূলগণ তাদেরকে এক-অদ্বিতীয় লাশারীক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করেন। তাঁরা পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করতঃ তাতে ফাটল সৃষ্টি হতে নিষেধ করেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ﴾ [الشورى : 13[

অর্থ:  তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। সূরাহ আশ শুরা আয়াত ১৩।

নবমত: রাসূলগণ অনুগতদেরকে পরকালীন জান্নাত ও তার নিয়ামতের সুসংবাদ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾ [النساء : 13[

অর্থ: যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন। যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য। সূরাহ্‌ আন নিসা আয়াত ১৩।

 

দশমত: রাসূলগণ পাপী ও অবাধ্যদেরকে পরকালে শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ﴾ [النساء : 14[

 অর্থ: যে কেউ আল্লাহ্‌ ও রাসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। সূরাহ্‌ আন্‌ নিসা আয়াত ১৪।

 

একাদশ: সঠিক ও উন্নত চরিত্র এবং বিশুদ্ধ ইবাদাতের উত্তম আদর্শ-নমুনা স্থাপনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ষেত্রে বলেছেন:

﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا﴾ [الأحزاب : 21[

অর্থ: যারা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। সূরাহ্‌ আল আহ্‌যাব – ২১।

 

রাসূলগণের (আলাইহিমুস সালাম) দায়িত্ব সমূহঃ

রাসূলগণের ( আলাইহিমুস্ সালাম) অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, তা নিম্নে বর্ণিত হলঃ

(ক) শরীয়াত প্রচার করা, মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাত করতে এবং তিনি ব্যতীত অন্যের ইবাদাত হতে মুক্ত হওয়ার আহ্বান করা।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَداً إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيباً  * سورة الأحزاب، الآية:39

অর্থঃ ((তাঁরা (নবীগণ) আল্লাহর রিসালাত প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন। তাঁরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না। হিসাব গ্রহণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।)) [সূরা আল-আহযাব,আয়াত-৩৯]

 

(খ) দ্বীনের অবতীর্ণ বিধান বর্ণনা করা

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ  * سورة النحل، الآية:44

 

অর্থঃ ((আপনার কাছে আমি উপদেশ ভান্ডার (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি। যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐ সব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।)) [সূরা আন-নাহাল,আয়াত-৪৪]

 

(গ) উম্মাতকে কল্যাণের পথ প্রদর্শণ ও অকল্যাণ হতে সতর্ক সাবধান করা, এবং তাদেরকে পূণ্যের সুসংবাদ ও তাদেরকে শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন করা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ  سورة النساء، الآية:165

অর্থঃ ((সুসংবাদ্দাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৫]

(ঘ) মানুষকে কথায় ও কাজে সুন্দর চরিত্র ও উত্তম আদর্শবান করে তুলা।

 

(ঙ) আল্লাহর শরীয়াত বান্দাদের মাঝে প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ণ করা।

 

(চ) রাসূলগণের (আলাইহিস্ সালাম) স্বীয় উম্মাতের বিপক্ষে শেষ দিবসে এ স্বাক্ষ্য দেওয়া যে তাঁরা তাদের নিকট স্পষ্টভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছায়েছেন।  আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَـؤُلاء شَهِيداً  سورة النساء، الآية :41

 

অর্থঃ ((আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি প্রতিটি উম্মাতের মধ্য থেকে সাক্ষী উপস্থাপন করব এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষী উপস্থাপন করব।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত,৪১]

 

ইসলাম সকল নবীদের ধর্মঃ ইসলাম সকল নবী ও রাসূলগণের ধর্ম

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ  سورة آل عمران، الآية:19

অর্থঃ (নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য দ্বীন বা ধর্ম একমাত্র ইসলাম।) [সূরা-আলে-ইমরান,আয়াত-১৯]

 

তাঁরা সকলেই এক আল্লাহর ইবাদাত করার দিকে, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত বর্জন করার আহবান জানাতেন। যদি ও তাদের শরীয়াত ও বিধি-বিধান ভিন্ন রকম ছিল, কিন্তু তাঁরা সকলেই মূলনীতীতে একমত ছিলন, তা হলো তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।

রাসূলগণ মানুষ তাঁরা গায়েব জানেন নাঃ

ইলমে গায়েব জানা উলুহীয়াতের (আল্লাহর) বৈশিষ্ট্য, নবীগণের গুণ নয়। কারণ তাঁরা অন্যান্য মানুষের মত মানুষ। তাঁরা পানাহার করেন, বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হন, নিদ্রা যান, অসুস্থ হন ও ক্লান্ত হন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَما أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ سورة الفرقان، الآية:20

অর্থঃ (আপনার পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছি,তাঁরা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাটে বাজারে চলা ফেরা করত।) [সূরা ফুরকান,২০]

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجاً وَذُرِّيَّةً  سورة الرعد، الآية:38

অর্থঃ ((আপনার পূর্বে আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, এবং তাঁদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি।)) [সূরা আর-রা’দ,৩৮]

তাঁদেরকে ও চিন্তা, দুঃখ আনন্দ ও কর্ম প্রেরণা স্পর্শ করে যেমন-সাধারণ মানুষকে পেয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর দ্বীন প্রচার করার জন্য মনোনয়ন করেছেন। আল্লাহ তাঁদেরকে (রাসূলদেরকে ইলমে গায়েব হতে) যা অবগত করান তা ব্যতীত কোন ইলমে গায়েব জানেন না।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَداً – إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَداً سورة الجن، الآيتان 26-27

অর্থঃ ((তিনি অদৃশ্ব্যের জ্ঞানী, পরন্ত তিনি অদৃশ্যের বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রেও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন।)) [সূরা জিন,২৬-২৭]

 

রাসূলগণ মাসূম বা নিষ্পাপঃ

আল্লাহ তা’আলা তাঁর রিসালাত প্রদান ও প্রচার করার জন্য তাঁর সৃষ্টজীব হতে উত্তম জাতীকে নির্বাচন করেছেন।

যারা সৃষ্টিগত ও চরিত্র গত দিক হতে পরিপূর্ণ, আল্লাহ তাঁদেরকে কবীরাহ্ গুনাহ হতে নিরাপদে রেখেছেন। সকল ত্রুটি হতে তাঁদেরকে মুক্ত করেছেন। যাতে তাঁরা আল্লাহর ওয়াহী স্বীয় উম্মাতের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম হন। আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর (আল্লাহর) রিসালাত প্রচারের ব্যাপারে যে সংবাদ দিয়েছেন, তাতে তাঁরা যে মা’সূম তা সর্বজন সিদ্ধ।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ  سورة المائدة، الآية:67

অর্থঃ (হে রাসূল,পৌঁছে দিন আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন,তবে আপনি তাঁর রিসালাত কিছুই পৌঁছালেন না,আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে নিরাপদে রাখবেন।) [মায়িদাহ,৬৭]

তিনি আরো বলেনঃ

الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَداً إِلَّا اللَّهَ  سورة الأحزاب، الآية:39

অর্থঃ ((তাঁরা (নবীগণ) আল্লাহর রিসালাত প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন,তাঁরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না।)) [সূরা আল-আহযাব,আয়াত-৩৯]

 

 নবী ও রাসূলগণের সংখ্যা ও তাঁদের মধ্যে যারা উত্তমঃ

রাসূলগণের সংখ্যা তিন শত দশের কিছু বেশি প্রমাণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন রাসূলগণের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়; তখন তিনি বলেনঃ

ثلاثمائة وخمس عشرة جماً وغفيراً  رواه الحاكم

অর্থঃ ((তিনশত পনের জনের বিরাট এক দল।)) [হাকিম]

 

আর নবীদের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশী। আল্লাহ তাঁদের কারোও কথা তাঁর কিতাবে আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন, আর কারোও কথা বর্ণনা করেন নাই। আল্লাহ তাঁর কিতাবে পঁচিশ জন নবী ও রাসূলের নাম উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَرُسُلاً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ وَرُسُلاً لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ سورة النساء، الآية:164

অর্থঃ (আর এমন কতক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে বর্ণনা করেছি ইতি পূর্বে, এবং এমন কতক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে বর্ণনা করিনি।) [সূরা আন-নিসা,আয়াত১৬৪]

 

 

আল্লাহ নবীদের কাউকে অন্যদের উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَى بَعْضٍ سورة الإسراء، الآية:55

অর্থঃ ((আমি নবীদেরকে কতককে কতকের উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছি।)) [সূরা আল-ইসরা,আয়াত-৫৫]

 

এবং আল্লাহ রাসূলদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ سورة البقرة، الآية:253

অর্থঃ ((এ রাসূলগণ আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দান করেছি।)) [সূরা আল-বাক্বারাহ্, আয়াত-২৫৩]

রাসূলগণের মধ্যে যারা উলুলআয্ম (উচ্চ অভিলাষী) তাঁরা সর্ব উত্তম। তাঁরা হলেন নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা, ও আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

اصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُوْلُوا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ  * سورة الأحقاف، الآية:35

অর্থঃ (অতএব আপনি ধৈর্য ধরুন, যেমন উলুল আয্ম (উচ্চ অভিলাষী) রাসূলগণ ধৈর্য ধরেছেন।) [সূরাআহক্বাফ,আয়াত-৩৫]

 

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম, আদম সন্তানের সরদার।

 

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ

أنا سيد ولد آدم يوم القيامة وبيدي لواء الحمد ولا فخر. وما من نبي يومئذ آدم فمن سواه إلا تحت لوائي يوم القيامة  رواه أحمد والترمذي

অর্থঃ ((আমি কিয়ামত দিবসে আদম সন্তানের সর্দার, আমারই হাতে হামদের পতাকা থাকবে। ইহা কোন গর্ভের বিষয় নয়। কিয়ামত দিবসে আদম (আলাইহিস্ সালাম) ছাড়া সকলেই আমার পতাকার অধিনে থাকবে।)) [তিরমিযী ও আহমাদ]

মর্যাদার দিক দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে যিনি তিনি হলেন ইব্রাহীম খালীলুর রহমান (আলাইহিস্ সালাম) সুতরাং (আল্লাহর) দু’বন্ধু-মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) উলুল আযমদের সর্ব শ্রেষ্ট। অতঃপর তিন জন (নূহ, মূসা ও ঈসা) সর্ব শ্রেষ্ট (অন্য সব নবীদের চেয়ে)।

 

(ঝ) নবীদের (আলাইহিমুস্ সালাম) মুজিযাহঃ

আল্লাহ তাঁর রাসূলদের সহযোগিতা করেছেন বড় বড় নিদর্শন ও উজ্জ্বল মু’জিযার (অলৌকিক শক্তির) দ্বারা। যাতে হুজ্জাত প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা প্রয়োজন সাধন হয়। যেমন- কুরআন কারীম, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়া, লাঠি ভয়ানক সাঁপে পরিণত হওয়া, ইত্যাদি। অতঃপর মু’জিযাহ্ (স্বাভাবিক নীতি ভঙ্গকারী-অলৌকিক শক্তি) নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণের দালীল,আর কারামাহ্ (অলীদের জন্যও অলৌকিক শক্তি) নবুওয়াতের সত্যতা সাক্ষ্যকারী প্রমান স্বরূপ।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ  سورة الحديد، الآية:25 

অর্থঃ ((আমি আমার রাসূলদেরকে সুস্পষ্ট নিদর্শণাবলী সহ প্রেরণ করেছি।)) [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত-২৫]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

ما من نيي من الأنبياء إلا وقد أوتي من الآيات ما آمن على مثله البشر وإنما كان الذي أوتيته وحياً أوحاه إلي فأرجو أن أكون أكثرهم تابعاً يوم القيامة * متفق عليه 

অর্থঃ ((প্রত্যেক নবীই নিদর্শন বা মু’জিযাহ প্রাপ্ত হয়েছেন কিন্তু মু’জিযার তুলনায় মানুষ ঈমান আনে নাই। আর আমি যা প্রাপ্ত হয়েছি তা সেই ওয়াহী যা আমার নিকট (আল্লাহ) অবতীর্ণ করেছেন। ফলে আমি আশাবাদী যে,কিয়ামত দিবসে তাঁদের চেয়ে আমার অনুসারী বেশী হবে।)) [বুখারী ও মুসলিম]

 

– রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার অর্থ:

 

এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর অনেক রাসূল রয়েছে যাদেরকে তিনি তাঁর রিসালাত প্রচার করার জন্য নির্বাচন করেছেন। যারা তাঁদের অনুসরণ করবে, তারা হেদায়াত (সঠিক পথ) পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবেনা তারা পথভ্রষ্ট হবে। আল্লাহ তাদের নিকট যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তা সুস্পষ্ট ভাবে প্রচার করেছেন। আল্লাহ যে সকল রাসূলদের নাম আমাদের কাছে উল্লেখ্য করেছেন, আর যাদের নাম উল্লেখ্য করেন নাই তাদের সকলের প্রতি আমরা ঈমান আনবো।

প্রত্যেক রাসূলই তাঁর পূর্ববর্তী রাসূল আগমনের সুসংবাদ দিতেন, এবং পরবর্তী রাসূল পূর্ববতী রাসূলের সত্যায়ন করতেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

ولُواْ آمَنَّا بِاللّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالأسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ  * سورة البقرة، الآية:136 

 

অর্থঃ ((তোমরা বলঃ আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তাঁদের পালন কর্তার পক্ষ হতে যা দান করা হয়েছে, তৎসমূদয়ের উপর। আমরা তাঁদের মধ্যে পার্থক্য করিনা। আর আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।))

[সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-১৩৬]

 

রাসূলগণের প্রতি ঈমান চারটি বিষয়কে শামিল করে:

প্রথম: এ বিশ্বাস রাখা যে তাঁদের সকলের রিসালাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত এবং সত্য। অতএব, কেউ কোন একজন রাসূলের (আলাইহিমুস্‌ সালাম) রিসালাতকে অস্বীকার  করলে সে যেন সকল নবীর রিসালাতকে অস্বীকার করলো।

দ্বিতীয়: আল্লাহ যে সকল নবীর নাম উল্লেখ করেছেন তাঁদের প্রতি ঈমান আনা। যেমন: মুহাম্মাদ, ইব্‌রাহীম, মূসা, ঈসা এবং নূহ্‌ আলাইহিমুস্‌ সালাম। আর যে সকল নাবীর নাম আমরা জানিনা তাদের প্রতি সংক্ষিপ্ত বা মৌলিকভাবে ঈমান আনতে হবে।

তৃতীয়: রাসূলগণের বিশুদ্ধ সংবাদগুলোকে সত্যায়ণ করা।

চতুর্থ: আমাদের নিকটে যে রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রেরণ করা হয়েছে তাঁর শরীয়ত মোতাবেক আমল করা। তিনি হলেন, সর্বোত্তম এবং শেষ নবী ও রাসুল মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

 

 

 

ঘ- রাসূলগণের গুণাবলী এবং নিদর্শনসমূহ:

রাসূলগণের গুণাবলী: তাঁরা মানুষ,তাই মানুষের মত তাঁদেরও পানাহারের প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:﴿وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ﴾ [الأنبياء : 7[

 

অর্থ:  আপনার পূর্বে আমি মানুষই প্রেরণ করেছি, যাদের কাছে আমি ওহী পাঠাতাম। সূরাহ আল আম্বিয়া আয়াত ৭।

রাসূলগণ অন্যান্য মানুষের মত অসুস্থ হন এবং তাঁদেরও মৃত্যু আসে। তাই রব এবং ইবাদাতের দাবিদার হওয়ার ক্ষেত্রে রাসূলগণের (আলাইহিমুস্‌ সালাম) কোন অধিকার নেই।

রাসূলগণের অন্যতম গুণ হলো আল্লাহ তা‘আলা (অন্য সকল মানুষ বাদ দিয়ে কেবল মাত্র ) তাঁদের নিকটে ওহী পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ﴾ [الكهف : 110[

অর্থ:  বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ্‌। সূরাহ্‌ আল কাহাফ আয়াত ১১০।

এখান থেকে বুঝা যায় আল্লাহ্‌ সকল মানুষের মাঝ থেকে তাঁদেরকে চয়ণ করেছেন। অন্য স্থানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:[﴿اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ﴾ [الأنعام: 124

অর্থ: আল্লাহ্‌ এ বিষয়ে সুপরিজ্ঞাত যে, কোথায় স্বীয় পয়গাম প্রেরণ করতে হবে। সূরাহ্‌ আল আনআ’ম আয়াত ১২৪।

 

রাসূলদের গুণাবলী

রাসূলদের অন্যতম গুণ হলো সত্যবাদীতা, তাই রাসূলগণ তাঁদের কথা ও কাজে সত্যবাদী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: {﴿هَذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُون﴾ [يس : 52

অর্থ: রহমান আল্লাহ্‌ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্য বলেছিলেন। সূরাহ্‌ ইয়াসীন আয়াত ৫২।

রাসূলগণের আরেকটি গুণ হলো ধৈর্য ধারন করা। তাঁরা সুসংবাদদাতা এবং ভয় প্রদর্শনকারী। মানুষদেরকে আল্লাহর দ্বীনের পথে আহ্বান করেন।

( ياأيها النبي إنا أرسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا ( 45 ) وداعيا إلى الله بإذنه وسراجا منيرا ( 46 )

 

একাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে তাঁদের উপর অনেক কষ্ট, নির্যাতন নেমে এসেছে। এতদ সত্বেও তাঁরা ধৈর্য ধারন করতঃ আল্লাহর কালিমাকে উঁচু করার জন্য কাজ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ﴾ [الأحقاف : 35[

অর্থ:  অতএব, আপনি সবর করুন, যেমন উচ্চ সাহসী রাসূলগণ সবর করেছেন। সূরাহ্‌ আল আহ্‌ক্বাফ আয়াত ৩৫।

 

রাসূলগণের আলামত বা নিদর্শনসমূহ:

আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে অকাট্য প্রমাণ এবং স্পষ্ট মু’জিযা (মানুষের সাধ্যাতিত বিষয়) দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। যা তাঁদের সত্যতা এবং তাঁদের  নবূয়ত ও রিসালাতের বিশুদ্ধতার উপর প্রমাণ বহন করে। সঙ্গত কারনেই আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূলগণের সত্যতা এবং দৃঢ়তা প্রমাণে তাঁদের হাতে মানুষের সাধ্যাতীত বিষয়সমূহ সংঘটিত করেছেন।

 

রাসূলগণের আলামত ও মু’জিযার পরিচয়: তা হলো মানুষের সাধ্যাতীত অলৌকিক বিষয়াবলী যা আল্লাহ্‌ তায়ালা স্বীয় নবী ও রাসূলগণের হাতে প্রকাশ করেছেন। (অনুরূপ মু’জিযা মানুষ ঘটাতে অপারগ)।

 

এ সকল মু’জিযা ও নিদর্শনের উদাহরণ: ঈসা কর্তৃক তাঁর কাওম বা জাতি তাদের বাড়িতে কি খাবে ও কি গুদামজাত করবে, তার সংবাদ দেওয়া। মূছা u এর লাঠি সাপে রূপান্তরিত হওয়া এবং আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়া ইত্যাদী।

চ- নবী ও রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি ঈমান আনা:

আমরা বিশ্বাস করি যে মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল, তিনি পূর্বের এবং পরের সকল নবী-রাসূল ও মানুষদের সর্দার বা নেতা। তিনি সর্বশেষ নবী তাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না। তিনি তাঁর উপর অর্পিত রিসালাতের দায়িত্ব উম্মতের নিকটে সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছেন। আমানত আদায় করেছেন, উম্মাতকে নসিহত করেছেন এবং আল্লাহর রাস্তায় সত্য জিহাদ করেছেন।

তিনি যা সংবাদ দিয়েছেন তা সত্যায়ন করা, তাঁর আদেশকৃত কাজে তাঁর আনুগত্য করা, নিষেধ ও সতর্ককৃত কাজ হতে দূরে থাকা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

{وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا}[الحشر: 7].

অর্থ: আল্লাহর রাসূল যা তোমাদের আদেশ করেন, তা গ্রহণ কর এবং যা করতে নিষেধ করেন তা হতে ফিরে থাক। (সূরা হাশর:7)

 

প্রত্যেক মুসলিমের জন্য নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততী, সকল মানুষ এবং নিজের আত্মার চেয়ে মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বেশী ভালবাসা ওয়াজিব।

 

রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

﴿لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ﴾

অর্থ: আমি তোমাদের কারও নিকটে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততী এবং সকল মানুষ থেকে প্রিয় ও অধিক ভালবাসার পাত্র না হওয়া পর্যন্ত সে মু’মিন হতে পারবে না। (বুখারী ১/২৪, মুসলিম)

 

 

 

ছ- রিসালাতে মুহাম্মাদীয়ার বৈশিষ্ট্যসমূহ:

 

পূর্বের রিসালাতসমূহের তুলনায় রিসালাতে মুহাম্মাদীয়ার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রিসালাতে মুহাম্মাদীয়ার কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা নিচে তুলে ধরছি:

v রিসালাতে মুহাম্মাদীয়া পূর্বের রিসালাতগুলির সমাপ্তি বা ইতি টেনেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন:

﴿مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا﴾  [الأحزاب : 40[

অর্থ: মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ্‌ সব বিষয়ে জ্ঞাত। সূরাহ্‌ আল্‌ আহ্‌যাব আয়াত ৪০।

 

v রিসালাতে মুহাম্মাদীয়া পূর্বের রিসালাত সমূহের নাসিখ বা রহিতকারী। তাই আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্য ব্যতীত কোন দ্বীন বা ধর্ম ক্ববুল করবেন না। তাঁর পথ ব্যতীত কেউ জান্নাতে পৌঁছতে পারবে না। সঙ্গত কারণেই তিনি হলেন সবচেয়ে মর্যাদাবান রাসূল, তাঁর উম্মাত শ্রেষ্ঠ উম্মাত এবং তাঁর শরীয়ত হলো পরিপূর্ণ শরীয়ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾ [آل عمران  : 85

অর্থ: যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত। সূরাহ্‌ আল্‌ ইমরান আয়াত ৮৫। রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

 

﴿وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ﴾ (صحيح مسلم – (1 / 365(

অর্থ: সেই সত্বার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আত্মা, এ উম্মাতের যে কোন ব্যক্তি চাই সে ইয়াহুদী বা খ্রীস্টান হোক আমার কথা শুনার পর আমি যা সহকারে প্রেরিত হয়েছি তার প্রতি ঈমান না এনে মারাগেলে সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত হবে। সহীহ মুসলিম ১/৩৬৫।

 

v রিসালাতে মুহাম্মাদীয়াহ সাকালাইন বা মানুষ ও জ্বিন উভয় জাতির জন্য। আল্লাহ্‌ তায়ালা জ্বিনদের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:

﴿يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللَّهِ وَآمِنُوا بِهِ يَغْفِرْ لَكُمْ مِنْ ذُنُوبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ﴾ [الأحقاف : 31[

অর্থ: হে আমাদের সমপ্রদায়, তোমরা আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর কথা মান্য কর এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি  তোমাদের গোনাহ মার্জনা করবেন। সূরাহ আল আহক্বাফ আয়াত ৩১।

 

অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্‌ বলেন:

﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾ [سبأ : 28 [

অর্থ: আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। সূরাহ্‌ সাবা আয়াত ২৮।

রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:

﴿فُضِّلْتُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ : أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ﴾ (صحيح مسلم – (3 / 109(

অর্থ: ছয়টি জিনিসের মাধ্যমে আমাকে অন্যান্য নবীর উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে:

১- আমাকে অল্প কথায় ব্যাপক অর্থ প্রকাশের যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে।

২- শত্রুর হৃদয়ে ভয়ের মাধ্যমে আমাকে সহযোগিতা করা হয়েছে।

৩- আমার জন্য গণিমতের মাল হালাল করা হয়েছে।

৪- (পবিত্র) যমীনকে আমার জন্য পবিত্রকারী ও মাসজিদ করা হয়েছে।

৫- সকল সৃষ্টজীবের নিকটে আমাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে এবং

৬- আমার মাধ্যমে নবূয়ত সমাপ্ত করা হয়েছে। সহীহ মুসলিম ৩/১০৯।

 

ছ- রাসূগণের উপর ঈমান আনার প্রভাব:

 

রাসূলদের প্রতি ঈমান আনার বড় প্রভাব রয়েছে, তন্মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করাহল:

১- বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া ও গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন। কেননা তিনি মানুষদের প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দেন এবং তাদের নিকটে ইবাদাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেন।

কারণ মানুষের জ্ঞান এসব জানার জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা  বলেন:

﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ﴾ [الأنبياء : 107[

অর্থ: আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। সূরাহ্‌ আল আম্বিয়া আয়াত ১০৭।

২- এই বড় নিয়ামতের দরুন মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।

 

৩- রাসূলগণকে (আলাইহিমুস সলাতু ওয়াসসালাম) ভালবাসা, তাঁদেরকে সম্মান করা এবং তাঁদের উপযুক্ত প্রশংসা করা। কেননা, তাঁরা আল্লাহর ইবাদাত করেছেন, রিসালাত পৌঁছানো এবং বান্দাদেরকে নসিহতের খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।

৪- রাসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে যে রিসালাত নিয়ে এসেছেন তার অনুসরণ করতঃ সে অনুযায়ী আমল করা। এর মাধ্যমে মু’মিনগণ তাঁদের জীবনে কল্যাণ ও হিদায়াত লাভ করবেন এবং উভয় জগতে সৌভাগ্যবান হবেন।

 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى (123) وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى﴾ [طه : 123 – 124[

অর্থ: (এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে), তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।

যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সূরাহ ত্বহা আয়াত ১২৩-১২৪।

Related Post