লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলী

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলী

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলী

প্রথম শর্ত: الشرط الأول : (العلم ) ইলম বা জ্ঞান:
এ কালেমার না বাচক এবং হ্যাঁ বাচক দুটি অংশের অর্থ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা প্র্রয়োজন। অর্থ এবং উদ্দেশ্য না বুঝে শুধু মাত্র মুখে এ কালেমা উচ্চারণ করার মধ্যে কোন লাভ নেই। কেননা সে ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি এ কালেমার মর্মের উপর ঈমাান আনতে পারবে না। আর তখন এ ব্যক্তির উদাহরণ হবে ঐ লোকের মত যে লোক এমন এক অপরিচিত ভাষায় কথা বলা শুরু করল যে ভাষা সম্পর্কে তার সামান্যতম জ্ঞান নেই।
এই কালেমার অর্থ, আবেদন ও দাবী সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন করা, অজ্ঞতা পরিহার করা: বান্দাকে অবশ্যই জানতে হবে, لا إله إلا الله এই কালিমার দাবি হচ্ছে- সত্যিকারার্থে আল্লাহ ছাড়া কেউ এবাদতের উপযুক্ত নয়। এরশাদ হচ্ছে

فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِك

‘জেনে রাখুন, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমা প্র্রার্থনা করুন আপনার ত্রুটির জন্যে।’ (সূরা: মুহাম্মদ: ১৯)
রসূল সা. বলেছেন-

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ رواه مسلم

‘যে ব্যক্তি لا إله إلا الله এর তাৎপর্য ও অর্থ জানাবস্থায় মারা গেল, সে জান্নাতে প্র্রবেশ করবে।’

২. الشرط الثاني ( اليقين ) কালিমা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা: – এই কালেমার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, সংশয়-সন্দেহ পরিত্যাগ করা।
لا إله إلا الله এর অর্থ ও তাৎপর্যকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার মানে, এর ব্যাপারে কোনো ধরনের সংশয়, সন্দেহ বা কিংকর্তব্য বিমূঢ়তার বিন্ধুমাত্র শংমিশ্রন থাকতে পারবে না। এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ

‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্র্রতি ঈমাান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর রাস্তায় ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ। (সূরা আল হুযুরাত: ১৫)
রাসূল (সা.) এরশাদ করেন –

فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ ، لا يُلْقَى بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلا دَخَلَ الْجَنَّةَ . أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ

‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূূল।’ সংশয়হীনভাবে এ কালেমা পাঠকারী যদি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তবে জান্নাতের মধ্যে এবং তার মধ্যে কোনো প্র্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
৩. الشرط الثالث (القبول ) এই কালেমার আবেদন ও দাবী স্বতঃস্ফুর্ত গ্রহণ করা প্র্রত্যাখ্যান না করা: অন্তর ও অঙ্গ- প্রতঙ্গের মাধ্যমে এই কালেমার আবেদন সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি এই কালেমার আবেদনকে প্র্রত্যাখ্যান করবে, আন্তরিকভাবে মেনে না নিবে, সে কাফের। সাধারণত প্র্রত্যাখ্যান করা হয়ে থাকে অহংকার, বিরোধিতা, হিংসা, বাপ-দাদার অন্ধানুকরণ ইত্যাদি কারণে। যেমন পবিত্র কুরআনের ভাষায় অহংকার বশত لا إله إلا الله এর অর্থ ও তাৎপর্যকে প্র্রত্যাখ্যানকারী কাফেরদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ ﴿৩৫﴾ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوا آَلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ ﴿ سورة الصافات:৩৫-৩৬﴾

‘‘তাদের যখন বলা হত আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদের পরিত্যাগ করব?’ (সূরা সাফফাত: ৩৫-৩৬)
অতীত উম্মাতের ভিতর যারা এই কালেমার আহ্বান প্র্রত্যাখ্যান করেছে, আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তাদের থেকে নেয়া প্রতিশোধ চিত্র পবিত্র কুরআনে তুলে ধরা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-

وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آَبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آَثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ ﴿২৩﴾ قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِأَهْدَى مِمَّا وَجَدْتُمْ عَلَيْهِ آَبَاءَكُمْ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ ﴿২৪﴾ فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ ﴿২৫﴾ (سورة الزخرف :২৩ (

‘এমনি ভাবে আপনার পুর্বেআমি যখন কোন জনপদে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখন তাদেরই বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে চলি। সে বলত, তোমরা তোমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছ, আমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে, তারা বলত তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না। ফলে আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। অতঃপর দেখুন, মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে।’ (সূরা আয যুখরুফ: ২৩-২৫)

৪- الشرط الرابع ( الإخلاص) এই কালেমার প্রতি পূর্ণ ইখলাস প্রদর্শন করা: লৌকিকতা, সুখ্যাতি ও অংশীদারিত্ব পরিহার করা। সমস্ত ইবাদাতে একমাত্র আল্লাহর প্রতিনিবিষ্ট চিত্তে মনোনিবেশন করা। ছোট বড় সমস্ত শিরক হতে নিয়ত পরিশুদ্ধ রাখা। এরশাদ হচ্ছে-

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ.

‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্টভাবে আল্লাহ তাআলার এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সূরা আল বায়্যিনাহ-৫)
রসূল সা. বলেছেন-

عن عِتْبَانَ بْن مَالِكٍ الْأَنْصارِيَّ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : (إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ روى البخاري

আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির উপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য لا إله إلا الله বলেছে।’ বুখারী।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَنْ لَا يَسْأَلُنِي عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلَ مِنْكَ ، لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الْحَدِيثِ ، أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قِبَلِ نَفْسِه * رواه البخارىِ    “

‘আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন আমি বলেছি, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশের মাধ্যমে কে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? তিনি বললেন: হে আবু হুরায়রা! আমি নিশ্চিতভাবে ধারণা করেছিলাম যে, এ ব্যাপারে তোমার আগে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না। যেহেতু হাদীসের প্রতি তোমার অধিক আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। শুন! কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত বা সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তি বেশি লাভবান হবে যে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে নিবিষ্ট চিত্তে لا إله إلا الله বলেছে।

৫. الشرط الخامس ( الانقياد ) এই কালেমার প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করা, পরিত্যক্ত করে না রাখা: বাহ্যিক অঙ্গ- প্রতঙ্গ, আভ্যন্তরীণ মননশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই কালিমার অর্থ, আবেদন ও তাৎপর্যকে সম্পূর্ণরূপে মেনে নেয়া। যার সত্যতা প্রমাণিত হবে, আল্লাহ তাআলার আদেশ বাস্তবায়ন, তার পছন্দনীয় বস্তুগুলো গ্রহণ, অপছন্দনীয় বস্তু গুলো বর্জন এবং তার গোস্বা ও রাগান্বিত বিষয়-বস্তু গুলো পরিহার করার মাধ্যমে। এরশাদ হচ্ছে-

وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى وَإِلَى اللَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ  وَمَنْ كَفَرَ فَلَا يَحْزُنْكَ كُفْرُهُ.

‘যে ব্যক্তি সৎকর্ম পরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করে, সে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত হাতল। যাবতীয় কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। যে ব্যক্তি কুফরী করে, তার কুফরী যেন আপনাকে ক্লিষ্ট না করে। (সূরা লুকমান: ২২-২৩)

وَأَنِيبُوا إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ* الزمر

ফিরে এসো তোমারে রবের দিকে এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও, তোমাদের ওপর আযাব আসার পুর্বেই। তখন কোন দিক থেকেই আর সাহায্য পাওয়া যাবে না। (সূরা যুমার: ৫৪)

قُلْ إِنَّمَا يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ* سورة الأنبياء

এদেরকে বলো,“আমার কাছে যে অহী আসে তা হচ্ছে এই যে, কেবলমাত্র এক ইলাহই তোমাদের ইলাহ, তারপর কি তোমরা আনুগত্যের শির নত করছো ?”

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿৬৫﴾. (سورة النساء৬৫(

‘অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো ঈমাানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়, তৎপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণনা করে।’ (সূরা নিসা: ৬৪)

রাসূল সা. বলেছেন-

عن أبي محمد عبد الله بن عمرو بن العاص – رضي الله عنهما – قال :قال رسول الله لَا يُؤْمِن أَحَدكُمْ حَتَّى يَكُون هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْت بِهِ

‘ তোমাদের কেউ মুমিন বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার আনীত বিধানের প্রতি তার প্রবৃত্তি আনুগত্য প্রকাশ না করবে।’

৬- والسادس (الصدق ) এই কালেমার ব্যাপারে নিরেট সততা প্রর্দশন করা, মিথ্যা ও কপটতা পরিহার করা: বান্দার অন্তরে সুপ্ত অভিব্যক্তির সাথে মুখের উচ্চারণের এতটুকু সমন্বয় থাকতে হবে, যার দ্বারা তার অবস্থা মুনাফিক তথা কপটদের অবস্থা হতে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায়- যারা মিথ্যা ও ধোকার আশ্রায় নিয়ে মুখে এমন সব কথা উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে বিদ্যমান থাকে না।

وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ ۙ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ * الزمر

আর যে ব্যক্তি সত্য নিয়ে এসেছে এবং যারা তাকে সত্য বলে মনে নিয়েছে তারাই আযাব থেকে রক্ষা পাবে।
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার আদালতে যে মোকাদ্দমা দায়ের হবে তাতে কোন লোকেরা শাস্তি লাভ করবে তা তোমরা আজই শুনে নাও। তাতে নিশ্চিতভাবে সে লোকেরাই শাস্তি পাবে যারা এ মিথ্যা আকীদা গড়ে নিয়েছিলো যে, আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী, ইখতিয়ার এবং অধিকারে অন্য কিছু সত্তাও শরীক আছে। তাদের আরো বড় অপরাধ ছিল এই যে, তাদের সামনে সত্য পেশ করা হয়েছে কিন্তু তারা তা মানেনি। বরং যিনি সত্য পেশ করেছেন উল্টো তাকেই মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছে। পক্ষান্তরে যিনি সত্য এনেছেন আর যারা তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে আল্লাহর আদালতে তাদের শাস্তি পাওয়ার কোন প্রশ্ন ওঠে না। রাসূল সা. বলেছেন:

عن معاذ بن جبل رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم: مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صَادِقًا مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ * رواه أحمد

‘ যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে لاإله إلا الله অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এর সাক্ষ্য প্রদান করবে তার উপর আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন। (মুসনাদে আহমদ) মহান আল্লাহ এরশাদ করছেন-

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آَمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ ﴿৮﴾ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ – فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ. (سورة البقرة:

‘আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতিঈমাান এনেছি অথচ তারা আদৌ ঈমাানদার নয়। তারা আল্লাহ এবং ঈমাানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এর দ্বারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। তাদের অন্তকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।’ (সূরা আল বাক্বারা: ৮-১০)

৭. والسابع (المحبة) এই কালেমার প্রতি খাঁটি মহাব্বত প্রদর্শন করা, বিদ্বেষ পোষণ না করা: এই কালিমা ও তার আবেদনের প্রতি অগাধ ভালবাসা ও মহাব্বত রাখা। অর্থাৎ এই কালেমা অনুযায়ী আমল পছন্দ করা, যারা এর উপর আমল করে এবং এর প্রতি আহ্বান করে তাদের মহাব্বত করা। যারা এই কালেমাকে অপছন্দ করে এর সাথে প্রতারণা বা মিথ্যারোপ করে, এর থেকে পৃষ্ঠ প্রর্দশন করে ও এর প্রচার প্রসারকে বাধা গ্রস্ত করে, তাদেরকে অপছন্দ ও প্রতিহত করা। এই কালেমার প্রতি মহাব্বতের প্রমাণ দেয়ার জন্য আরো প্রয়োজন- আল্লাহ তাআলার আদেশকৃত ও পছন্দনীয় জিনিসগুলো বাস্তবায়ন করা, যদিও তা প্রবৃত্তির বিপরীত হয়। অপর পক্ষে আল্লাহ তাআলার নিষেধকৃত ও অপছন্দনীয় জিনিসগুলোর প্রতিবিদ্বেষ পোষণ করা, তা হতে দূরে থাকা, যদিও তার প্রতি অন্তর ধাবিত হয়। আল্লাহর বান্দাদের সাথে সর্ম্পক স্থাপন করা। আল্লাহর শত্রুদের সাথে সর্ম্পকচ্ছেদ করা। রাসূলের অনুকরণ করা। তার দিক নির্দেশনার অনুসরণ করা। তার আনীত বিধানকে কবুল করা। এ ছাড়া মহাব্বত শুধু একটি দাবী যার কোন বাস্তবতা নেই। এরশাদ হচ্ছে-

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ* سورة البقرة .

‘আর কোন লোক এমন রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং এদের প্রতি এমন ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতিভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশি।’ (সূরা আল বাক্বারা: ১৬৫) অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ তাদের অন্তরে ও হৃদয়ে স্থায়ীরূপ নিয়েছে। তাদের অন্তর ও হৃদয় এ কালেমা পরিপূর্ণ করে দিয়েছে, বিধায় অন্য কোনো জিনিসের জন্য তাদের অন্তর উন্মুক্ত হয় না। তাদের অন্তরে যত মহাব্বত-বিদ্বেষ দেখা যায় সব এই কালেমার অনুকরণে উৎসারিত হয়।

عن أنس رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :: ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَمَنْ أَحَبَّ عَبْدًا لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنْ يَكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ* (متفق عليه .

তিনটি গুণ যার মাঝে থাকবে সে ঈমানের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে : (১) আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূূল অন্য সবকিছু থেকে তার কাছে অধিক প্রিয় হওয়া (২) একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে মহাব্বত করা এবং (৩) ঈমান আনার পর কুফরে ফিরে যাওয়াটা আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দের। আল্লাহ তায়ালা বলে =

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴾

হে ঈমাানদারগণ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি দ্বীন থেকে ফিরে যায়, (তাহলে ফিরে যাক), আল্লাহ এমনিতে আরো বহু লোক সৃষ্টি করে দেবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারা আল্লাহকে ভালবাসবে, যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে, যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেনা। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে চান তাকে দান করেন। আল্লাহ ব্যাপক উপায় উপকরণের অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জানেন। (সূরা মায়েদা: ৫৪)

Related Post