শপথ ভঙ্গ তথা জিহ্বার ভয়াবহতা

শপথ ভঙ্গ তথা জিহ্বার ভয়াবহতা

শপথ ভঙ্গ তথা জিহ্বার ভয়াবহতা

প্রথম এখানে

(পর্ব: ২)
আবার তারা প্রকাশ্যে জনসম্মুখে আল্লাহ ও মানুষকে স্বাক্ষী রেখে খাঁটি মুসলমানের মত আল্লাহর নামে বিভিন্ন ওয়াদা পূরণ করার জন্যে সুসজ্জিত রঙ্গমঞ্চে শপথ গ্রহণও করে থাকে। যা বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি পৃথিবীর সব দেশের লোক সেই শপথের দৃশ্যগুলি  দেখতে পায়। কিন্তু পরে আর সে শপথ রক্ষা করা হয় না।
অথচ সেই মুসলমানদের প্রতি শপথ রক্ষার জন্য সুমহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ:
“তোমরা আল্লাহর (নামে কোন অঙ্গীকার করলে সেই) অঙ্গীকার পূর্ণ করো। যখন পরস্পর অঙ্গীকার করো এবং আল্লাহকে তোমাদের যামিন করে শপথ দৃঢ় করবার পর তা ভঙ্গ করো না; তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।” (নাহল: ৯১)।
সুমহান আল্লাহ আরো বলছেন:
“(তোমরা) সে নারীরমত হয়ো না, যে তার সুতা মজবুত করে পাঁকাবার পর ওর পাঁকগুলো খুলে নষ্ট করে দেয় (অর্থাৎ-কোন বিষয়ে কারো সামনে ওয়াদা করলে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের পর মেয়েলী স্বভাবের কারণে সেই ওয়াদা ভঙ্গ করে বা অস্বীকার করে বা মিথ্যা বলে মানুষকে ধোঁকা দেয়) ; তোমাদের শপথ তোমরা পরস্পরকে প্রবঞ্চনা করবার জন্যে ব্যবহার করে থাকো, যাতে একদল অন্যদল অপেক্ষা অধিক লাভবান হও; আল্লাহ তো এটা দ্বারা শুধু তোমাদের পরীক্ষা করেন; যে বিষয়ে তোমাদের মতভেদ আছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিবেন।” (সূরা নাহল: ৯২)।
আর তাই সুমহান সৃষ্টিকর্তা ও দয়াময় প্রতিপালক সমস্ত মানব জাতিকে শপথ সম্পর্কে সর্তক করে দিয়ে বলছেন:    “পরস্পরকে প্রবঞ্চনা করবার জন্যে তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যবহার করো না, করলে (তোমাদের) পা স্থির হওয়ার পর পিছলিয়ে যাবে এবং আল্লাহর পথে বাধা দেয়ার কারণে তোমরা (এ দুনিয়া ও আখেরাতে) শাস্তির আস্বাধ গ্রহণ করবে; তোমাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি।” (নাহল:৯৪)
তাহলে আমরা যারা প্রকাশ্যে আল¬াহকে স্বাক্ষী রেখে তাঁরই নামের উপর শপথ গ্রহণ করে যে ওয়াদা পালনের অঙ্গীকার করছি, সেই ওয়াদা ভঙ্গ করে উল্টা আল্লাহর সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। তাঁর ধর্মকে রক্ষার জন্যে ওয়াদা করে সেই ধর্মগ্রহন্থকে আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করছি। একজন মুমিন নর-নারীর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে তাঁর আল-কুরআনের বাণীকে সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। ৯০% মুসলমানের প্রতিনিধি বা সেবক কিংবা শাসক হয়েও মুসলমানদেরকে আল-কুরআন শুনা থেকে বঞ্চিত রাখার উদ্দেশ্যে সারা দেশে আল-কুরআনের প্রচার প্রসারে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাফসীর মাহফিল বন্ধ করে দিচ্ছি। এ ছাড়াও সাধারণভাবে কোথাও কুরআনের আলোচনা হলে সেখানেও বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছি।
যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজের নবী বা পথ প্রর্দশক হিসেবে মেনে নিচ্ছি, আবার তাঁরই উপর নাযিলকৃত পবিত্র আল-কুরআন ও তাঁর পবিত্র মূখনিসৃত বাণী হাদীস গ্রন্থগুলোকে জিহাদী বই হিসেবে জ্বালিয়ে দিচ্ছি, এটা তাহলে কোন ধরনের ওয়াদা পালন করছি? তাহলে নিজের সামান্য দুনিয়াবী স্বার্থ কি আমাদেরকে অন্ধ করে দেয় নি? আমরা শয়তানের নিকট নিজের সেচ্ছায় কৃত অঙ্গীকার গুলি কি বিক্রি করে দেইনি? আর কিভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো যায়? তার পরেও নিজেকে পরিচয় দিয়ে বলছি : আমি মুসলমান! এর পরেও কি তারা মুসলমান থাকে? আপনাদের সকলের সামনে এই মহতি বিচারের দায় দায়িত্ব উপস্থাপিত হলো। পবিত্র আল-কুরআন ও হাদীসের আলোকে অথবা যে কোন মানবতার আলোকে বিচার করে দেখুন!
আর এই অঙ্গীকার বিক্রি করার ব্যাপারেই পরাক্রমশালী আল্ল¬াহ সমস্ত দুনিয়ার মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছেন: “তোমরা আল্ল¬াহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করো না; আল্লাহর কাছে যা আছে শুধু তাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা জানতে। তোমাদের কাছে যা আছে, তা নিঃশেষ হবে এবং আল্ল¬াহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী; যারা ধর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে তারা যা করে তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবো।’’ (সূরা: নাহল: ৯৫-৯৬)।
কথায় কথায় জনসম্মুখে নিজেকে মুসলমানের সন্তান মুসলমান বলে দাবীও করছি, আবার ঈমানদার মুসলমান নর-নারীদেরকে ধরে ধরে নির্যাতনও করছি। যিনি এ জঘন্য কাজগুলি করছেন অথবা করার জন্যে নির্দেশ দিচ্ছেন, তিনি সত্যিই কি মুসলমান? না কি মুসলমান নামধারী অন্য কিছু ? আসুন তাহলে পবিত্র ইসলামের আলোকেই তাদেরকে চিনে নেয়ার চেষ্টা করি, তিনি কোন পর্যায়ে আছেন ?
প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীসের বর্ণনাঃ “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মুনাফিকের আলামত তিনটি যথাঃ
(১) সে কথা বললে মিথ্যা বলে
(২) (কোন বিষয়ে) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং
(৩) তার কাছে (কোন কিছু) আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করে, যদিও সে নামাজ পড়ে, রোযা রাখে এবং বলে যে, সে মুসলমান।” (বুখারী ও মুসলিম)।
অন্য আরো একটি হাদীসের বর্ণনা: “হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্ল¬াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তির মধ্যে চারটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে, সে পুরোপুরি মুনাফিকরূপে বিবেচিত হবে। আর যার মধ্যে (এ চারটির মধ্যে) একটি আচরণ পাওয়া যাবে, সে তা পরিহার না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে মনে করতে হবে। আর সেগুলো হচ্ছে:
(১) তার কাছে (কোন কিছু) আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করে।
(২) সে কথা বললে মিথ্যা বলে।
(৩) সে (কোন বিষয়ে) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং
(৪) সে ঝগড়া করলে (প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায়) গালমন্ধ করে।” (বুখারী ও মুসলিম) (চলবে)

Related Post