Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

যাকাতের মূলকথা

Originally posted 2013-06-20 05:54:57.

যাতাদের  মূল কথা

যাকাতে ধন বৃদ্ধি পায়

 ১ম পাঠ

নামাযের পর ইসলামের সর্বপ্রধান রুকন হচ্ছে যাকাত। আর তার গুরুত্ব এতবেশী যে, নামাযকে অস্বীকার করলে যেমন কাফের হতে হয়,অনুরূপভাবে যাকাত দিতে অস্বীকার করলে তাকে শুধু কাফেরই হতে হয় না,সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম একমত হয়ে তার রিরুদ্ধে জিহাদও করেছেন।

এখানে আমি যাকাতের প্রকৃত রূপ এবং এর অন্তনির্হিত তত্ত্ব আলোচনা করতে চেষ্টা করবো। যাকাত মূলত কি জিনিস এবং ইসলাম এর এতবেশী গুরুত্ব দেয় কেন তা আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠবে।
আমাদের মধ্যে অনেক লোকই যার তার সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। অথচ কাউকে বন্ধু বলে স্বীকার করার সময়ে সে বাস্তবিকই বন্ধুত্বের ব্যাপারে তারা প্রায়ই প্রতারিত হয়ে থাকে। পরে তাদের বড় দুঃখ এবং অনুতাপ করতে হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা বুদ্ধিমান তারা যাদের সাথে মেলামেশা করে তাদেরকে খুব ভালো করে যাচাই ও পরীক্ষা করে নেয় এবং পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাদেরকে তারা খুব ভালো লোক,নির্ভরযোগ্য,নিষ্ঠাবান ও বিশ্বাসভাজন বলে মনে করে,কেবল তাদের সাথেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে,আর অন্যান্যের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান ও সর্বাভিজ্ঞ। তিনি যাকে তাকে নিজের বন্ধু বানাবেন,নিজের দলভুক্ত করে নিবেন এবং তাঁর দরবারে সম্মান ও নৈকট্যের মর্যাদা দান করবেন তা কি করে আশা করা যেতে পারে? সধারণ বুদ্ধিমান মানুষ যখন পরীক্ষা ও যাচাই না করে কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে রাযী হয় না, তখন সকল জ্ঞান ও বুদ্ধির একচ্ছত্র অধিকারী আল্লাহ তাআলা খুব ভালভাবে যাচাই ও পরীক্ষা না করে কাউকে বন্ধু বলে স্বীকার করতে পারেন না। দুনিয়ায় এই যে কোটি কোটি মানুষ ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে, যাদের মধ্যে ভাল-মন্দ সকল প্রকার মানুষই রয়েছে, নির্বিচারে ও নির্বিশেষে এদের সকলকেই আল্লাহর দলে শামিল করে নেয়া সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তাআলা যাদেরকে দুনিয়ায় তাঁর খলীফা বানাতে এবং আখেরাতে তাঁর নৈকট্য দান করতে চান, তাদেরকে সুনির্দিষ্ট মানদন্ডে বিশেষ পরিস্থিতি ও পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাচাই করে নিতে চান। যাঁরাই সেই পরীক্ষায় যথাযথাভাবে উত্তীর্ণ হবেন, তাঁরাই আল্লাহর দলে গণ্য হতে পারবেন, আর যারা তা পারবে না তারা নিজেরাই তা থেকে দূরে সরে যাবে এবং তারা পরিষ্কাররূপে জানতে পারবে যে, তারা আল্লাহর দলে শামিল হবার যোগ্যতা প্রমাণ করতে সমর্থ হয়নি। মানুষের পরীক্ষা করার সেই কষ্টি পাথরটি কি? আল্লাহ নিজে যেহেতু সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান তাই তিনি সর্বপ্রথম মানুষের বুদ্ধি-জ্ঞানকেই পরীক্ষা করতে চান। মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমত্তা কিছু আছে কিনা, না নিরেট নির্বোধ তা তিনি বিশেষভাবে লক্ষ্য করে থাকেন। কারণ নির্বোধ লোকেরা কখনও বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের বন্ধু হতে পারে না। (আর মূর্খ ও নির্বোধ লোকেরা তো কিছুতেই এবং কখনই আল্লাহর বন্ধু হতে পারে না।) আল্লাহর অস্তিত্বের নিশানা দেখে যে বুঝতে পারে যে, তিনিই আমার মালিক ও সৃষ্টিকর্তা, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ কোনো পরোয়ারদিগার, দোয়া শ্রবণকারী এবং সাহায্যকারী আর কেউ নেই। আল্লাহর কালাম দেখ যে তাকে আল্লাহর কালাম বলেই চিনতে পারে এবং তা অন্য কারো কালাম হতে পারে না বলে দৃঢ়রূপে বিশ্বাস করে, সত্য নবী এবং মিথ্যা নবীদের জীবন চরিত, কাজ-কর্ম ও শিক্ষা-দীক্ষার মৌলিক পার্থক্য সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে এবং নবী হওয়ার দাবীদারগণের মধ্যে প্রকৃত নবীকে আল্লাহর প্রেরিত নবী এবং সত্যের পথ নির্দেশকারী নবী বলে চিনতে পারে, আর মিথ্যা নবীকে দাজ্জাল ও প্রতারক বলে চিহ্নিত করতে পারে সেই ব্যক্তিরই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাকে লক্ষ কোটি লোকের মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে নিজের দলের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে গণ্য করেন। অবশিষ্ট যারা প্রথম পরীক্ষায় ব্যর্থ হয় তাদেরকে তিনি পরিত্যাগ করেন।

এ প্রথম পরীক্ষায় যে সকল প্রার্থী উত্তীর্ণ হয় তাদেরকে অতপর দ্বিতীয় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। দ্বিতীয়বারে মানুষের বুদ্ধির সাথে সাথে তার নৈতিক চরিত্র বলেরও যাচাই করা হয়। সত্য এবং পূণ্য কাজের পরিচায় লাভ করে তা গ্রহণ করা এবং তদনুযায়ী কাজ করা এবং অন্যায় ও পাপ কাজের পরিচয় লাভ করার পর তা পরিত্যাগ করার যোগ্যতা ও শক্তি তার আছে কিনা তা জেনে নেয়া এ পরীক্ষার উদ্দেশ্য। যাচাই করে দেখা হয় যে, এ ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির দাস, পাপ-দাদার অন্ধ অনুসারী এবং পারিবারিক প্রথা এ দুনিয়ার সাধারণ রীতিনিীতির গোলাম তো নয়? একটি কাজকে আল্লাহর বিধানের বিপরীত জেনে এবং তাকে খারাপ মনে করেও তার মধ্যে লিপ্ত থাকার মত দুর্বলতা তার মধ্যে লিপ্ত থাকার মত দুর্বলতা তার মধ্যে নেই তো? পক্ষান্তরে একটি জিনিসকে আল্লাহর মনোনীত এবং সত্য জেনে তা গ্রহণ করার মনোবল আছে কিনা তাও যাচাই করা হয়। এ পরীক্ষায়ও যারা বিফল হয় তাদেরকে আল্লাহর দলভুক্ত করা হয় না। আল্লাহর দলভুক্ত কেবল তারাই হতে পারে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
অর্থাৎ আল্লাহর বিধানের বিরোধী বিধান ও পথ এবং বিধানদাতাকে যারা সাহসের সাথে পরিত্যাগ করে-সেই ব্যাপারে কারো পরোয়া করে না এবং নির্ভীকভাবে কেবল আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারেই জীবন যাপন করতে প্রস্তুত হয়-তাতে কেউ খুশী হোক আর নারায হোক সেই দিকে মাত্রই ভ্রুক্ষেপ করে না, তারা একটি মজবুত জিঞ্জির দৃঢ়তার সাথে ধারণ করে নিয়েছে যা কখনো ছিড়বে না।
এ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয় তাদেরকে তৃতীয় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। একবার পরীক্ষা হয় আল্লাহর অনুসরণ ও আনুগত্য স্বীকারের প্রবণতার। এই সময়ে হুকুম দেয়া হয় যে, আমার তরফ থেকে যখনই কোনো নির্দেশ দেয়া হবে,তখনই তোমরা নিদ্রা ত্যাগ করে আমার সামনে হাজির হবে; কাজ-কর্ম পরিত্যাগ করে,নিজের স্বার্থ ও মন:পুত কাজ ছেড়ে, আনন্দ আর খুশী ত্যাগ করে আসবে এবং নির্দিষ্ট কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবে,গ্রীষ্ম হোক,শীতহোক-যাই হোক না কেন, সকল সময়েই ডাক শোনা মাত্র হাজির হবে-সকল দু:খ-কষ্ট সহ্য করে আমার দরবারে উপস্থিত হবে এবং কর্তব্য পালন করবে। আবার যখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার না করতে বলবো এবং নফসের খাহেশ পূরণ করতে নিষেধ করবো,তখন তোমাকে এ হুকুম পুরোপুরি পালন করতে হবে,ক্ষুধা-তৃষ্ণায় যত দু:সহ কষ্টই হোক না কেন; আর যত সুমিষ্ট পানীয়, স্বুস্বাদু খাদ্য তোমার সামনে স্তুপীকৃত হোক না কেন। এই পরীক্ষায় যারা অনুত্তীর্ণ হয় তাদেরকেও বলে দেয়া হয়, তোমাদের দ্বারা আমার কাজ সম্পন্ন হতে পারে না। আর তৃতীয় পরীক্ষায়ও যারা উত্তীর্ণ হয় কেবল তাদেরকেই নির্বাচন করা হয়। কারণ এদের সম্পর্কেই এ আশা করা যেতে পারে যে, আল্লাহর তরফ থেকে যে বিধান নাযিল করা হবে তাই তারা গোপনে ও প্রকাশ্যে স্বার্থ এবং লাভ, সুখ ও দু:খ-কষ্ট সকল অবস্থায়ই যথাযথরূপে পালন করতে পারবে।
অতপর চতুর্থ পরীক্ষা নেয়া হয় মানুষের ধন-সম্পদ কুরবানী করার। তৃতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ লোকগণও আল্লাহর কর্মচারী পদে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য প্রমাণিত হতে পারেনি। কেননা তাদের দিল ছোট, সংকীর্ণ, হীন সাহস ও বীর্যহীন এবং নীচ কিনা-মুখে বন্ধুত্ব ও ভালবাসার বড় বড় দাবী করার লোক তো অসংখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বন্ধুর ও ভালবাসার বড় বড় দাবী করার লোক তো অসংখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বন্ধুর খাতিরে পকেটের পয়সা খরচ করতে প্রস্তুত কিনা, তার পরীক্ষা নেয়া এখনও বাকী রয়েছে। তারা তো সেই সকল লোকদের মত নয় যারা মুখে মুখে মা মা করে ভক্তিতে গদগদ এবং সেই মায়ের জন্য দাংগা করতেও পিছ পা নয়, কিন্তু সেই মা যখন জন্তুর বেশে শস্যক্ষেত্র প্রবেশ করে তখন লাঠি নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়-পিটিয়ে ছাল উঠিয়ে দেয়। এমন স্বার্থপর, অর্থপূজারী সংকীর্ণমনা ব্যক্তিকে কোনো সাধারণ বুদ্ধির মানুষও নিজের বন্ধু বলে গ্রহণ করতে পারে না। আর বড় উদার আত্মা বিশিষ্ট লোকও এমন ব্যক্তিকে নিজের কাচে কোনোরূপ মর্যাদা দিতেও প্রস্তুত হবে না। তাহলে যে মহান আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদ আল্লাহরই পথে খরচ করতে প্রস্তুত করতে পারেন, যে আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদ আল্লাহরই পথে খরচ করতে প্রস্তুত নয়? আর যে আল্লাহ এতবড় বুদ্ধিমান এবং বিজ্ঞ তিনি কেমন করে এমন ব্যক্তিকে নিজের দলভুক্ত করতে পারেন, যার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা মৌখিক জামা-খরচ মাত্র এবং যার ওপর কোনো কাজেই বিন্দুমাত্র ভরসা করা যায় না? কাজেই এ চতুর্থ পরীক্ষায় যারা ব্যর্থ হয় তাদেরকেও পরিষ্কার বলে দেয়া হয় যে, আল্লাহর দলে তোমাদের কোনো স্থান নেই, তোমরাও অকর্মণ্য-আল্লাহর খলীফার ওপর যে বিরাট দায়িত্ব অর্পণ করা হয় তা পালন করার যোগ্যতা তোমাদের নেই। এ দলে কেবল তাদেরকেই শামিল করা যেতে পারে যারা আল্লাহর ভালোবাসায় জীবন-প্রাণ ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, বংশ-পরিবার,দেশ-সবকিছুর ভালবাসাকে অকুন্ঠিত চিত্তে কুরবান করতে পারে:
তোমরা নিজ নিজ প্রিয় জিনিসগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর উদ্দেশ্যে ব্যয় না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পুণ্য ও মহত্বের উচ্চতম মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। সূরা আলে ইমরান : ৯২
আল্লাহর এ দলে সংকীর্ণমনা লোকদের কোনোই স্থান নেই, কেবল উদার উন্নত হৃদয়বান ব্যক্তিরাই এই দলে শামিল হতে পারে।মনের সংকীর্ণতা এবং কৃপণতাকে যারা অতিক্রম করতে পেরেছে কেবল তারাই সর্বাঙ্গীন কল্যাণ লাভ করতে পারে। সূরা আত তাগাবুন: ১৬

Related Post