১. আল্লাহ তা‘আলার নাম ও সিফাতের বিষয়ে মূল আকীদা হলো- আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম আল্লাহর জন্য যে সমস্ত নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন সেগুলোকে তুলনাহীনভাবে, সেগুলোর কোন রকম বা ধরণ নির্ধারণ না করে তাঁর জন্য তা সাব্যস্ত করা। আর যে সমস্ত নাম বা গুণাবলী আল্লাহ তাঁর জন্য নিষেধ করেছেন অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামও আল্লাহ থেকে যে সমস্ত নাম ও গুণাগুণ নিষেধ করেছেন সেগুলোকে নিষেধ করা বা আল্লাহ্র জন্য সাব্যস্ত না করা। এগুলোর কোন প্রকার বিকৃতি বা এগুলোকে অর্থশূণ্য মনে না করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ) অর্থাৎ কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয় তিনি সব শুনেন ও দেখেন। [সূরা শূরা: ১১]
তবে কু্রআন ও সুন্নায় যে সমস্ত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোর যে অর্থ আছে সে অর্থের উপর এবং এগুলোর যে যে বিষয় প্রমাণ করছে সে সব বিষয়ে পূর্ণ ঈমান থাকতে হবে।
২. আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীকে অন্য কিছুর সাথে সদৃশ মনে করা বা এগুলোকে অর্থশূণ্য মনে করা কুফরী:আর এটাকে বিকৃত করা, যাকে বিদআতী সম্প্রদায় ব্যাখ্যা বলে অভিহিত করে থাকে। এর কিছু পর্যায় রয়েছে তন্মধ্যে কোন কোন বিকৃতি কুফরির সমতুল্য। যেমনটি করে থাকে বাতেনিয়া সম্প্রদায় , আবার কোন কোন বিকৃতি বিদ‘আত ও পথভ্রষ্টতা। যেমনটি আল্লাহর গুণসমূহের অস্বীকারকারীদের ব্যাখ্যা। আর কিছু কিছু ব্যাখ্যা সাধারণ ভুল হিসেবে প্রমাণিত।
৩. ওহদাতুল ওজুদ বা আল্লাহ এবং সৃষ্টিকুল এক অভিন্ন সত্তা হিসেবে বিরাজমান মনে করা। অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কোন সৃষ্টির মধ্যে প্রবিষ্ট হন, অথবা কেউ আল্লাহর সাথে একাকার হয়ে গেছেন বলে বিশ্বাস করা। এ ধরনের যাবতীয় আকীদা-বিশ্বাস কুফরী এবং এর ফলে দ্বীনের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে।
৪. মৌলিকভাবে সকল ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনয়ন করা। আর তাঁদের নাম, গুনাবলী, কাজ ইত্যাদি বিষয় সহীহ দলীল প্রমাণ সহকারে যতটুকু বর্ণিত হয়েছে এবং যতটুকুর জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়েছে ততটুকু বিশ্বাস করা।
৫. আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সকল কিতাবের উপর ঈমান আনয়ন করা এবং এর উপরও ঈমান আনয়ন করা যে, ঐ সমস্ত আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে কুরআন শরীফ সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সেগুলোর বিধি-বিধান রহিতকারী। আর এটাও ঈমান রাখা যে, পূর্বতম সমস্ত আসমানী কিতাবে বিকৃতির অনুপ্রবেশে ঘটেছে। আর এজন্যই কেবল অনুসরণ করতে হবে একমাত্র কুরআনেরই, পূর্বেরগুলোর নয়।
৬. সকল নবী ও রাসূলগণের উপর ঈমান রাখা এবং মানুষের মধ্যে তারাই সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তিবর্গ। কেউ যদি নবীদের সম্পর্কে এর বিপরীত মত পোষণ করে তবে সে কাফের হয়ে যাবে। যে সকল নবীর ব্যাপারে নিদিষ্টভাবে কুরআন বা সহীহ হাদীসে আলোচনা হয়েছে তাদের উপর নির্দিষ্টভাবে ঈমান আনতে হবে। বাকীদের উপর সামগ্রিকভাবে ঈমান আনতে হবে। আরও ঈমান আনতে হবে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম তাঁদের সবার চেয়ে উত্তম এবং তিনি সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ তাঁকে সকল মানুষের জন্য রাসূল করে পাঠিয়েছেন।
৭. ঈমান আনতে হবে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের মাধ্যমে ওহির ধারবাহিকতা বন্ধ হয়েছে এবং তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল। অতঃপর যে ব্যক্তি এর বিপরীত আকীদা পোষণ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।
৮. শেষ দিবসের উপর ঈমান আনতে হবে। আর এ প্রসঙ্গে বর্ণিত সকল সহীহ সংবাদ ও তার পূর্বে যে সমস্ত আলামত বা নিদর্শনাবলী সংগঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাতেও ঈমান রাখতে হবে।
৯. তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান রাখা। আর তা হলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা সকল কিছুর অস্তিত্বের পূর্বেই তা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, এবং তিনি তা লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করেছেন। আর আল্লাহ যা চান তাই হয়ে থাকে, আর যা চান না, তা হয় না। সুতরাং কেবল আল্লাহ যা চাইবেন তা-ই শুধু হবে। আর আল্লাহ্ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং তিনিই সকল কিছুর স্রষ্টা। যা ইচ্ছে তা করেন।
১০. দলিল প্রমাণ ভিত্তিক গায়েবের সকল বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে। যেমন, আরশ, কুরসী, জান্নাত, জাহান্নাম, কবরের শান্তি ও শাস্তি, পুলসিরাত, মিযান ইত্যাদি। এগুলোতে কোন প্রকার অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে না।
১১. কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অন্যান্য নবীগণ, ফিরিশতা ও নেককার লোকদের সুপারিশ প্রসঙ্গে নির্ভরযোগ্য দলিল দ্বারা যা বলা হয়েছে তাতে ঈমান আনয়ন করা।
১২. [আরও ঈমান আনতে হবে যে,] কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দান ও জান্নাতে সকল মুমিন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে স্বচক্ষে দেখতে পাওয়া হক ও বাস্তব। আর যে তা অস্বীকার করবে অথবা অপব্যাখ্যা করবে সে বক্রপথের অনুসারী এবং পথভ্রষ্ট। তবে দুনিয়াতে কারও পক্ষে দীদার বা আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়।
১৩. নেক বান্দা এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের কারামত সত্য। তবে প্রত্যেক আলৌকিক ঘটনাই কারামত নয়, কখনো হতে পারে এটি প্ররোচনা মাত্র। কখনো বা এটি শয়তানের প্রভাবে বা মানুষদের যাদুর প্রতিক্রিয়ায় ঘটে থাকে। বিশেষ করে এ সব বিষয় ও কারামতের মধ্যে পার্থক্যের মানদণ্ড হলো কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হওয়া বা না হওয়া। অর্থাৎ কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক না হলে সেটাকে কারামত বলা যাবে না।
১৪. প্রত্যেক মুমিনই আল্লাহর ওলী বা বন্ধু। আর প্রত্যেক মুমিনের মধ্যে এই বেলায়েত বা বন্ধুত্বের পরিমাণ নির্ণিত হবে তার ঈমান অনুযায়ী।