ঈমান কি? ঈমানের পরিচয়

লাইলাহার মর্ম কথা

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

আল্লাহ্‌কে এক বলে জানা, মানা, ঘোষণা করা এবং আল্লাহ্‌র হুকুম মতো জীবন যাপন করা। কালেমা তাইয়্যেবার ঘোষণা দিয়ে ঈমান আনতে হয়। ‘কালেমা তাইয়্যেবা’ মানে- ‘উত্তম ও পবিত্র বাক্য’। ইসলামের পবিত্র বাক্য বা মূল কথা হলো: لاَ اِلٰهَ اِلاَّ الله  অর্থ : ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই।’  “ কালেমার ঘোষণা দিয়েই ঈমান আনতে হয়। ঘোষণা দিতে হয় এভাবে :

اَشْهَدُ اَنْ لاَ اِلٰهَ اِلاَّ اللهَ  وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ الله

অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর রসূল।’

এই ঘোষণার মূল কথা হলো, আল্লাহকে ইলাহ মেনে নেয়া এবং মুহাম্মদ (সা:)  কে তাঁর রসূল মেনে নেয়া।

ইলাহ মানে- উপাস্য, হুকুমকর্তা, ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা, দোয়া শ্রবণকারী, সাহায্যকারী এবং আইন ও বিধানদাতা। এই ঘোষণা দেয়াকে বলা হয় ‘শাহাদাহ’। ‘শাহাদাহ’ মানে- সাক্ষ্য দেয়া বা সত্য বলে ঘোষণা করা। সে জন্যে এই বাক্যটিকে বলা হয় ‘কালেমায়ে শাহাদাহ’।

এই কালেমা বা পবিত্র বাক্য উচ্চারণ করে যে ঘোষণা ও সাক্ষ্য দেয়া হয়, তার মূল কথা হলো :

আমি জেনে বুঝে স্বীকার করছি এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে: আল্লাহই আমার একমাত্র উপাস্য, হুকুমদাতা ও ত্রাণকর্তা। একমাত্র তিনিই আমার মুক্তিদাতা। শুধু তিনিই আমার প্রার্থনা শ্রবণকারী। কেবল তিনিই আমার সাহায্যকারী। আমি সারা জীবন কেবল তাঁরই হুকুম পালন করবো এবং কেবল তাঁরই দাসত্ব করে চলবো। আমি কখনো আল্লাহ্কে ছাড়া কাউকেও ইলাহ্ মানবোনা। আল্লাহর সাথে আর কাউকেও ইলাহ স্বীকার করবোনা। আর কাউকেও হুকুমদাতা ও ত্রাণকর্তা মানবোনা। আর কাউকেও মুক্তিদাতা, সাহায্যকারী এবং প্রার্থনা শ্রবণকারী মানবোনা। আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারো বিধান মানবোনা।

 আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার মর্ম :

আমাদের মাথার উপর বিশাল সূর্য। মহাবিশ্বে রয়েছে এই সূর্যের চাইতে বড় ছোট কোটি কোটি নক্ষত্র। রয়েছে গ্রহরাজি। আমাদের এই পৃথিবীও একটি গ্রহ। এছাড়া রয়েছে অনেক উপগ্রহ। আমাদের রাতের আকাশে ভেসে উঠে মিষ্টি হাসির চাঁদ। এই চাঁদ একটি উপগ্রহ।  “কে সৃষ্টি করেছেন এদের সবাইকে? হ্যাঁ, এদের সবার যিনি স্রষ্টা, তিনিই আল্লাহ। তিনিই এদের সঠিক নিয়মে এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিচালিত করেন।

কে সৃষ্টি করেছেন মানুষকে?

কে সৃষ্টি করেছেন পশু পাখি আর সব প্রাণীকে? কে মাটি থেকে গাছ গাছালি, ফল ফসল কে উৎপন্ন করেন? কে দিয়েছেন ফুলের ফলের বিচিত্র রঙ, স্বাদ?  কে সৃষ্টি করেন বীজ থেকে গাছ? এসবের যিনি স্রষ্টা, তিনিই আল্লাহ।

কে দিয়েছেন আমাদের: দেখার জন্যে চোখ? শুনার জন্যে কান?

– কথা বলা আর স্বাদ গ্রহণের জন্যে জিহ্বা? শ্বাস গ্রহণের জন্যে নাক?

– খাবার জন্যে দাঁত আর মুখ? ধরার জন্যে হাত? হাঁটার জন্যে পা?

– কে দিয়েছেন আমাদের হৃদয়? কে দিয়েছেন আমাদের মস্তিষ্ক?

– কে দিয়েছেন আমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ? কে দিয়েছেন আমাদের শক্তি-সামর্থ্য?

– কে দিয়েছেন আমাদের জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি? আমাদের বেঁচে থাকার জন্যে কে ব্যবস্থা করেছেন- আলো, বাতাস, পানির? ফল ফলাদি, শস্যবীজ আর সব ধরণের খাদ্য সামগ্রীর? এসব কিছু যিনি আমাদের দিয়েছেন, তিনিই আল্লাহ। তিনি আমাদের মহান স্রষ্টা, প্রতিপালক ও পরিচালক, পরম দয়ালু রহমানুর রহিম।

– এই মহাবিশ্ব,  ছায়াপথ, নক্ষত্ররাজি,  গ্রহমালা,  এই পৃথিবী, জীব-জানোয়ার আর সকল সৃষ্টি কোনো কিছুই এমনি এমনি হয়ে যায়নি।

এক মহাজ্ঞানী স্রষ্টার ইচ্ছাতেই এসব কিছু সৃষ্টি হয়েছে। তিনিই সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালনা করেন। মানুষকেও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সর্বশক্তিমান স্রষ্টা মহান আল্লাহ।

তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর হুকুম মতো জীবন-যাপন করার জন্য। তাঁর দাসত্ব করার জন্য। এই বিষয়গুলো জানা ও মানার নামই হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান।

Related Post