প্রত্যেক মানুষকে দাঁড়াতে হবে বিচারের কাঠগড়ায়। পালানোর কোনো সুযোগ নেই। নেইকোনো ঘুষের কারবার বা ম্যানেজ করার। সব সত্যি সেদিন প্রকাশ পাবে। ধরা পড়তেই হবে।ফিরে যেতেই হবে। প্রতিটি কর্মের জবাবদিহি করতেই হবে। লোকে অবশ্য কথাগুলো বিশ্বাসকরেন না (নাস্তিকেরা)। বেশির ভাগ মানুষই কথাগুলো বিশ্বাস করেন। কথাগুলো আমার নয়।যিনি এই পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। যাঁর ইশারায়চলছে গোটা পৃথিবীর সব কিছু।
আমরা কেন পড়ালেখা শিখি, কেন চাকরি করি, কেন বাড়িবানাই, কেন গাড়ি কিনিএসব কিছু আমাদের সুখের জন্য। যেকোনো কাজ করার আগে আমাদেরমনের ভেতর একটি উদ্দেশ্যে কাজ করে। সেই উদ্দেশ্য হলো কাজের বিনিময়ে প্রাপ্তি। যিনিআমাকে বানিয়েছেন, কেন বানিয়েছেন? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ আছে। কারণটা হলোস্র্রষ্টার ইবাদত করা। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, আমি মানব এবং জিন জাতিকেসৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য’। আমরা চাকরি করে মাস শেষে বেতন পাই, যা দিয়েআমরা ভরণ-পোষণ করি। সুখ শান্তিতে দিনাতিপাত করি। তেমনি মহান আল্লাহ রাব্বুলআলামিনের ইবাদত যারা করবে তারা পরকালে সুখে থাকবে। তাদেরকে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতদেয়া হবে। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী যারা কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত আদায়করবে এবং সমাজের সর্বস্তরে তা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবে তারাই এ পুরস্কার লাভকরবে। আর যারা অন্যায় করবে তারা শাস্তি ভোগ করবে।
পৃথিবীর শুরু থেকে আল্লাহমানুষকে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী চলার জন্য বিশেষ কিছু মানুষ পাঠিয়ে ছিলেন। তারাহলেন নবী ও রাসূল। এই নবী ও রাসূলদের মাধ্যমে গাইডলাইন তথা কিতাব পাঠিয়েছেন। সেসবকিতাবে একজন মানুষকে কিভাবে এই পৃথিবীতে বিচরণ করতে হবে এবং কিভাবে অন্যায় থেকেবেঁচে থাকতে হবে এবং কিভাবে আল্লাহর ইবাদত তথা নির্দেশনা পালন করতে হবে তার বর্ণনাদেয়া হয়েছে। যারা আল্লাহর এই নির্দেশনা পালনে অস্বীকার করবে তারা কঠিন সাজা ভোগকরবে। শেষ বিচারের দিনও তাদেরকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সব মানুষকে একই পন্থাঅবলম্বন করতে হবে। যারা পৃথিবীতে আল্লাহর কিতাব মেনে চলেছে তারা পাবে জান্নাত আরযারা মেনে চলেনি তারা পাবে জাহান্নাম।
আল্লাহর এই নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে গেলেকিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। মানুষের দ্বারে আল্লাহর বাণী পৌঁছাতে গিয়ে সবনবী-রাসূল ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নির্যাতিত হয়েছেন। একইভাবে নির্যাতিত হয়েছেনসাহাবারা।বর্তমান সময়েও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন আল্লাহর বাণী প্রচারকারীমানুষেরা। এটাই সর্ব সত্যি। আমাদের সমাজে দেখা যায়, মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে।কিন্তু তাঁর পাঠানো কিতাবের গাইডলাইন মানে না। যারা তা না মানার জন্য অনুতপ্ত হয় নাএবং মানুষের কাছে ভুল ব্যাখ্যা করে তাদের কঠিন সাজা হবে। আর যারা আল্লাহর দ্বীনপ্রচার করতে গিয়ে মারা যান তারা হবেন শহীদ। শেষ বিচারের দিন তাদের কোনো হিসাব দিতেহবে না।
একটা সময় পৃথীবিতে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। যুগটির নাম ছিলআইয়্যামে জাহেলিয়া। এ সময় কন্যাশিশু জন্মালে মানুষ অলক্ষণ বলে মনে করত। মানুষঅনাচার, ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল। এ সময় আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মানবতাকে সঠিক পথদেখানোর জন্য হজরত মুহাম্মদ সা:কে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন শেষ রাসূল হিসেবে। তিনিনিজেও আল্লাহর নির্দেশনা প্রচার করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাঁর যুগেঅনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর ইসলামী শাসনব্যবস্থা চালু হয়। নারীর মর্যাদা দেয়া হয়।অনাচার, ব্যভিচার দূরীভূত হয়। সমাজের সর্বস্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বর্তমানসময়ে মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মিথ্যা, অনাচার, ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েপড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি অনলাইনের মাধ্যমে বিকৃত সব কিছুতে অভ্যস্ত হচ্ছে। অনলাইনেভালো কিছু থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ তা গ্রহণ করছে না। পবিত্র আল কুরআনের বঙ্গানুবাদপৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনলাইনে দেয়া রয়েছে। মানুষ সেগুলো ফলো করছে না। প্রত্যেকমানুষের জীবন অতি সঙ্কীর্ণ। আল্লাহর ইবাদত এবং ভালো কাজগুলো এই সঙ্কীর্ণ সময়ে করেযেতে হবে। নচেৎ কিয়ামতের দিন বিচারের কাঠগড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
পৃথিবীরবিভিন্ন স্থানে বর্তমানে যারা ইসলাম প্রচার করছেন তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করাহচ্ছে। আলেম ওলামাদের বিভিন্ন কৌশলে পৃথিবী থেকে চির বিদায় করা হচ্ছে। জেল জুলুমদেয়া হচ্ছে। একেক দেশের সরকার একেক কায়দায় তাদেরকে বিভিন্ন অভিযোগে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।এ ছাড়া রয়েছে বিধর্মীদের গভীর ষড়যন্ত্র। এসব ঘটনার প্রতিবাদ ও অনাচারকারীদের ঘৃণাকরতে হবে। সমাজকে ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। নিজের ভাইবোনআত্মীয়স্বজনের মাঝে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। তাহলে শেষ বিচারের কাঠগড়াথেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
(সমাপ্ত)