Main Menu

রাসূল (সঃ)-এর জীবনী (জন্ম থেকে নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত )

রাসূল (সঃ)-এর জীবনী (জন্ম থেকে নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত )

রাসূল (সঃ)-এর জীবনী (জন্ম থেকে নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত )

[dropcap color=”blokc” font=”verdana” fontsize=”14″][/dropcap]
(পূর্ব প্রকাশের পর)
ইসলামের জন্যে আরব দেশের বিশেষত্ব :
আরব উপদ্বীপ তথা সমগ্র বিশ্বব্যাপী এই ঘোর অমানিশার অবসান ঘটিয়ে আল্লাহর পথভ্রষ্ট বান্দাদেরকে তাঁরই মনোনীত পথে চালিত করার জন্যে একটি শুভ প্রভাতের যে একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই শুভ প্রভাতটির সূচনার জন্যে আল্লাহ্ তা’আলা সারা দুনিয়ার মধ্যে আরব দেশকেই কেন মনোনীত করলেন, প্রসঙ্গত এ কথাটিও আমাদের ভেবে দেখা দরকার।
আল্লাহ্ তা’আলা মুহাম্মাদ (সঃ)-কে সারা দুনিয়ার জন্যে হেদায়াত ও সর্বশেষ পয়গাম সহ পাঠানোর জন্যে মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তাঁর দাওয়াত সমগ্র দুনিয়ায়ই প্রচারিত হবার প্রয়োজন ছিল। স্পষ্টতই বোঝা যায়, এই বিরাট কাজের জন্যে কোন এক ব্যক্তির জীবনই যথেষ্ট হতে পারে না। এর জন্যে প্রয়োজন ছিল আল্লাহর নবী তাঁর নিজের জীবদ্দশায়ই সৎ ও সালেহ্ লোকদের এমন একটি দল তৈরী করে যাবেন, যাঁরা তাঁর তিরোধানের পরও তাঁর মিশনকে অব্যাহত রাখবেন। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যে যে ধরনের বিশেষত্ব ও গুণাবলীর প্রয়োজন ছিল, তা একমাত্র আরব অধিবাসীদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশী উন্নত মানের এবং বিপুল পরিমাণে পাওয়া যেত। উপরন্তু আরবের ভৌগোলিক অবস্থানকে দুনিয়ার জনবসতিপূর্ণ এলাকার প্রায় কেন্দ্রস্থল বলা চলে। পবিত্র কুরআনে যাকে জনবসতী সমূহের মা বলা হয়েছে। এসব কারণে এখান থেকেই নবীর দাওয়াত চারদিকে প্রচার করা সবদিক থেকেই সুবিধাজনক ছিল।
এছাড়া আরবী ভাষারও একটি অতুলনীয় বিশেষত্ব ছিল। কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এই ভাষায় যতটা সহজে ও হৃদয়গ্রাহী করে পেশ করা যেত, দুনিয়ার অন্যান্য ভাষায় তা সম্ভবপর ছিল না। সর্বোপরি আরবদের একটা বড় সৌভাগ্য ছিল যে, তারা কোন বিদেশী শক্তির শাসনাধীন ছিল না। গোলামীর অভিশাপে মানুষের চিন্তা ও মানসিকতার যে নিদারুণ অধঃগতি সূচিত হয় এবং উন্নত মানবীয় গুণাবলীরও অপমৃত্যু ঘটে, আরবরা সে সব দোষত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিল। তাদের চারদিকে ইরান ও রোমের ন্যায় বিরাট দু’টি শক্তির রাজত্ব কায়েম ছিল; কিন্তু তাদের কেউই আরবদেরকে গোলামীর শৃংখলে আবদ্ধ করতে পারেনি। তারা ছিল দুর্ধর্ষ প্রকৃতির বীর জাতি; বিপদ-আপদকে তারা কোন দিন পরোয়া করত না। তারা ছিল স্বভাবগত বীর্যবান: যুদ্ধ-বিগ্রহকে তারা মনে করত একটা খেল-তামাসা মাত্র। তারা ছিল অটল সংকল্প আর স্বচ্ছ দিলের অধিকারী। যে কথা তাদের মনে জাগত, তা-ই তারা মুখে প্রকাশ করত। গোলাম ও নির্বোধ জাতিসমূহের কাপুরুষতা ও কপট মনোবৃত্তির অভিশাপ থেকে তারা ছিল সম্পূর্ণ মুক্ত। তাদের কা-জ্ঞান, বিবেক-বুদ্ধি ও মেধা-প্রতিভা ছিল উন্নতমানের। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কথাও তারা অতি সহজে উপলব্ধি করতে পারত। তাদের স্মরণ-শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর; এক্ষেত্রে সমকালীন দুনিয়ার কোন জাতিই তাদের সমকক্ষ ছিল না। তারা ছিল উদারপ্রাণ, স্বাবলম্বী ও আÍ-মর্যাদাবোধসম্পন্ন জাতি। কারও কাছে মাথা নত করতে তারা আদৌ অভ্যস্ত ছিল না। সর্বোপরি মরুভূমির কঠোর জীবন-যাত্রায় তারা হয়ে উঠেছিল নিরেট বাস্তববাদী মানুষ। কোন বিশেষ পয়গাম কবুল করার পর বসে বসে তার প্রশস্তি কীর্তন করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না; বরং সে পয়গামকে নিয়ে তারা মাথা তুলে দাঁড়াত এবং তার পিছনে তাদের সমগ্র শক্তি-সামর্থ্য নিয়োজিত করত। এগুলো ছিল আরবদের বিশেষত্ব।
আমরা বাংলাদেশী। জাতি হিসেবে আমাদেরও রয়েছে অনেক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা মিলে-মিশে বসবাস করছি যুগ যুগ ধরে। আমাদের মাঝে আছে øেহ, মায়া-মমতা, উদারতা, সহনশীলতা ও সহমর্মীতা। কার কোনো বিপদ দেখলে আমরা তাকে সহযোগিতার জন্যে এগিয়ে যাই। জাতিগত কোন হিংসা-বিদ্ধেষ, মারা-মারি, হানাহানি আমাদের মাঝে নেই। আমাদের এই চমৎকার সহ অবস্থানে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিদেশীরা কাল্পনিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের বহু নাটক ও প্রোপাগা-া করে এ সম্প্রীতি নষ্টের পায়তারা করেছে, সফল হতে পারেনি। বৃটিশ ঔপোনিবেশ আমাদের চিরস্থায়ীভাবে গোলামীর জিঞ্জির পরাতে চেয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রবল প্রতিরোধের সামনে টিকে থাকতে পারেনি। মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা, হৃদয়ের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছে, রক্তের বিনিময় জাতি তার মায়ের ভাষা অক্ষুন্ন রেখেছে, যা আজ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারী ”ভাষা দিবস” পালিত হচ্ছে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি যুলুম-নির্যাতন করেও আমাদের স্বাধীনতা দাবিয়ে রাখতে পারেনি। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি এক ও অভিন্ন এবং অধিকাংশই সুন্নী মুসলিম। এমনি ভাবে আরও অনেক ভাল-ভাল গুণ ও গৌরব গাথা বৈশিষ্ট্য আমাদের রয়েছে যা, আরবদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাই আমরাও পারি এবং পারব, রাসূল (সঃ)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি সুখী-সমৃদ্ধি দেশ ও জাতি গঠন করতে। যেই মহামানবের নেতৃত্বে একটি অধপতিত জনগোষ্ঠী দুনিয়ার সেরা জাতিতে পরিণত হয়ে ছিল, সেই মহামানব আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু যেই আল-কুরআনের ভিত্তিতে তিনি একদল সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি গঠন করে এক বিশাল ভূ-খন্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করলেন, সেই আল-কুরআন আজও অবিকৃতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। আমরা যদি সোনালী যুগের মানুষগুলোর মত দৃঢ়ভাবে আল-কুরআনকে ধারণ করে আমাদের জীবন গঠন করতে পারি, তাহলে আমরাও সোনালী যুগের সূচনা করতে পারি নিঃসন্দেহে। আল-কুরআনের অনুসরণই একটি জাতিকে উন্নতি ও সমৃদ্ধি দান করে। তদুপরি আখেরাতের জীবনের মহা সাফল্য এই কুরআনের ওপরই নির্ভরশীল।
আরবদের সংশোধনের পথে বাধা :
আরব দেশের ভৌগলিক অবস্থান, তার শক্তিশালী ভাষা এবং তার বাসিন্দাদের এসব বৈশিষ্ট্যের জন্যে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সর্বশেষ নবীকে এই জাতির মধ্যে পাঠালেন। কিন্তু এই বংশটিকে সংশোধন করতে গিয়ে খোদ মুহাম্মদ (সাঃ)-কে যে বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, তার গুরুত্বও কোন দিক দিয়ে কম ছিল না। আগেই বলেছি, কোন কাজের সঠিক মূল্যায়ন করতে হলে সে কাজটির চারদিকের অবস্থা ও পরিবেশের কথা বিচার করা প্রয়োজন। এই দৃষ্টিতে বিচার করলে আরব ভূমির সেই ঘনঘোর অন্ধকার যুগে ইসলামী আন্দোলনের সূচনা ও তার সাফল্যকে ইতিহাসের এক নজীরবিহীন কীর্তি বলে অভিহিত করতে হয়। আর এ কারণেই আরবদের ন্যায় একটি অদ্ভুত জাতিকে দুনিয়ার নেতৃত্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে গিয়ে মুহাম্মদ (সঃ)-কে যে সীমাহীন বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে, তাকে একটা অলৌকিক ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না।
কাজেই আরবদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো যে পর্যন্ত সামনে না রাখা হবে, সে পর্যন্ত মুহাম্মদ (সঃ)-এর নেতৃত্বে সম্পাদিত বিশাল সংস্কারকার্যকে কিছুতেই উপলব্ধি করা যাবে না। এই বংশটির সংশোধনের পথে যে সমস্ত জটিলতর অসুবিধা বর্তমান ছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষযগুলো আমরা এখানে বিবৃত করছি।
আরবরা ছিল একটা নিরেট অশিক্ষিত জাতি। আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কিত জ্ঞান, নবুয়্যাতের স্বরুপ ও গুরুত্ব , অহীর তাৎপর্য, আখিরাত সম্পর্কিত ধারণা , ইবাদতের অর্থ ইত্যাদি-কোনো বিষয়ই তারা ওয়াকিফহাল ছিল না। পরন্তু তারা বাপ-দাদার আমল থেকে প্রচলিত রীতি-নীতি ও রসম-রেওয়াজের অত্যন্ত অন্ধ অনুসারী ছিল এবং তা থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ দূরে সরতেও প্রস্তুত ছিল না। অথচ ইসলামের যাবতীয় শিক্ষাই ছিল তাদের এই পৈত্রিক ধর্মের সম্পূর্ণ বিপরীত।
অন্যদিকে শিরক থেকে উদ্ভুত সকল মানসিক ব্যাধিই তাদের মধ্যে বর্তমান ছিল। অহংকার ও আত্মভিমানের ফলে তাদের বিবেক-বুদ্ধি হয়ে পড়ে ছিল প্রায় নিষ্ক্রীয়। পারস্পরিক লড়াই-ঝগড়া তাদের একটা জাতীয় বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়ে ছিল। এ জন্যে শান্ত মস্তিষ্কে ও গভীরভাবে কোন কিছু চিন্তা করা তাদের পক্ষে সহজতর ছিল না। তারা কিছু ভাবতে হলে তা যুদ্ধ-বিগ্রহের দৃষ্টিকোণ থেকেই ভাবত, এর বাইরে তাদের আর কিছু যেন ভাববারই ছিল না। সাধারণভাবে দস্যুবৃত্তি, লুটতরাজ ইত্যাদি ছিল তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায়। এ থেকে সহজেই আন্দাজ করা চলে যে, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দাওয়াত তাদের ভিতর কী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। তিনি যখন তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানান, তখন তাদের কাছে তা মনে হয়েছিল একটি অভিনব দুর্বোধ্য ব্যাপার। তারা বাপ-দাদার আমল থেকে যে সব রসম-রেওয়াজ পালনে অভ্যস্ত, যে সব চিন্তা খেয়াল তারা মনের মধ্যে পোষণ করছিল,এ দাওয়াত ছিল তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এ দাওয়াতের মূল কথা ছিল, লড়াই-ঝগড়া বন্ধ কর, শান্তিতে বসবাস কর, দস্যুবৃত্তি ও লুটতরাজ থেকে বিরত থাক, বদভ্যাস ও ধ্বংসাত্মক চিন্তাধারা পরিহার কর, সর্বোপরি জীবিকার জন্যে হারাম পন্থা ত্যাগ কর। স্পষ্টই বোঝা যায় , এধরনের একটি সর্বাত্মক বিপ্লবী পয়গামকে কবুল করা তাদের পক্ষে কত কঠিন ব্যাপার ছিল।
আরবদের পক্ষে যা মেনে নেয়া ছিল কঠিন, আমাদের পক্ষে তা মেনে নেয়া তো কঠিন হওয়ার কথা নয় ? আমরা তো তা মেনে নিয়েছি এবং নিজেদেরকে মুসলমান বলে, রাসূল (সাঃ)-এর প্রেমিক বলে দাবী করি ? তাহলে কেন আজ রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শ ভিত্তিক সমাজ গঠনে বাধা দিচ্ছি ? শুধু বাধাই দিচ্ছি না, সেই জাহেলী মতবাদ তথা ইবলিসী মতবাদ বাস্তবায়নের জন্যে পূঁজিবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ ইত্যাদির পিছনে কাজ করছি এবং সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি ? এপথে যে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কত বড় ভয়ংকর বিপদ হতে পারে তা কি চিন্তা করি ? আমাদের বুঝতে হবে এ সমস্ত মতবাদের পিছনে রয়েছে আমাদের চিরশত্রু শয়তান ও তার দোসর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। যারা বার বার আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে আঁঘাত হেনে গোলামীর জিঞ্জির পরায়েছিল। আমাদের ঈমান-আকীদায় শিরক মিশ্রিত করে জাতিকে জাহান্নামের কিনারায় নিয়ে ছিল। সেই একই শক্তি মুখোশ পড়ে নতুন রূপে আবির্ভুত হয়েছে, তাদেরকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে কতিপয় মুসলিম পরিচয় মীর জাফর, ঘসেটি বেগমরা। দেশে অশ্লীলতা, অসভ্যতা, পাপ-পংকিলতা, অপ-সংস্কৃতি, অনাচার, রাজনৈতিক যুলুম, অর্থনৈতিক শোষণ-বৈষম্য, চাঁদাবাজী, হত্যা-ধর্ষন, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, সর্বপরি অশান্তির বিষবাষ্পে জাতির নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। সেদিকে যতটা না খেয়াল, তার চেয়ে বেশী খেয়াল ইসলাম ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের কিভাবে শেষ করা যায় তার দিকে, এটাই কি রাসূল (সাঃ)-এর প্রেমিকদের কাজ ? কেন আমরা বার বার ইতিহাস ভুলে যাই, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না ? বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের একেবারে শেষের দিকের ঘটনা-প্রবাহ খুবই বেদনাদায়ক। দেশ ও জাতির যাঁরা ছিলেন কর্ণধার তাঁরা চরম হিংসা-বিদ্বেষের শিকারে পরিণত হন। তাঁদের হিংসা পরায়ণতা এমন জঘন্য রূপ ধারণ করে যে প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করার জন্য তাঁরা বিদেশী শক্তির সাহায্য নিতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হননি। আর বিদেশী শক্তির সাহায্য নিতে গিয়ে তারা দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করে তুলছেন কিনা তা খতিয়ে দেখার মত মানসিক অবস্থাও তাদের ছিল না। দেশ ও জাতির ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব যখন এই ধরনের ব্যক্তিদের হাতে এসে পড়ে তখন সেই দেশ ও জাতির সর্বনাশ না হয়ে পারে না। সময় প্রবাহের এক অধ্যায়ে এসে নেতৃস্থানীয় একদল অপরিণামদর্শী মুসলিম এবং অর্থলিপ্সু একদল অ-মুসলিম বৃটিশ বাণিজ্য সংস্থা দি ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানীর সাথে অশুভ আঁতাত গড়ে তুলে বাংলা-বিহার উড়িষ্যার স্বাধীনতা বিনাশের নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হয়। দুঃখের বিষয় প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খান এই অশুভ শক্তির সাথে হাত মিলান।
স্বাধীনতার পতাকা সমুন্নত রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন সিরাজুদ্দৌলাহ খান। দেশীয় বিশ্বাসঘাতকদেরকে হাত করে ইংরেজ সেনাদের অধিনায়ক রবার্ট ক্লাইভ এগিয়ে আসে রাজধানী মুর্শিদাবাদ অভিমুখে। সিরাজুদ্দৌলাহ খান এদের মুকাবিলা করার জন্য পলাশী প্রান্তরে সৈন্য সমাবেশ ঘটান। যুদ্ধ শুরু হলে দেখা গেল, প্রধান সেনাপতি হাত গুঠিয়ে বসে আছেন। তখন তো মীর জাফর হাত গুঠিয়ে বসে ছিলেন, কিন্তু এখানকার মীর জাফররা নিজেদের জাতিকে হত্যা করতেও পিছপা হয় না। দেশ-প্রেমিক সৈনিকদেরকে নিয়ে যুদ্ধ চালান সিরাজুদ্দৌলাহ খান। কিন্তু সর্বগ্রাসী চক্রান্তের মুখে তিনি পরাজিত হন। ঈসায়ী ১৭৫৭ সনের ২৩ জুন পলাশী প্রান্তরে পরাজিত হন বাংলার স্বাধীন শাসক। সমৃদ্ধ ও সুবিশাল মুসলিম দেশটির শাসন কর্তৃত্ব চলে যায় ইংরেজদের হাতে। স্বার্থান্ধ, অপরিণামদর্শী এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ নেতৃবৃন্দের ভুল সিদ্ধান্ত ও ভুল পদক্ষেপের ফলে স্বাধীনতা হারিয়ে যায় এবং এই দেশের মানুষকে পরাধীন থাকতে হয় প্রায় দুই শত বছর। আরবরা তাৎক্ষণিক বিরোধীতা করলেও পরে তারা সংশোধন হয়ে যায়। আমরা ইসলামের বিরোধীতা করলে অথবা চুপ করে বসে থাকলে স্বাধীনতা হারাব এবং মেরুদন্ডহীন জাতিতে পরিণত হব। ইসলামের লক্ষ্য পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা। ইসলাম প্রতিষ্ঠার কর্মধারাও শান্তিপূর্ণ। শান্তি বিঘিœত করে এমন কর্মধারা ইসলাম সমর্থিত নয়। অতএব শান্তির পক্ষের শক্তি হিসেবে প্রত্যেক মুমিনকে অকুতভয়ে সত্যের সমর্থনে সোচ্চার হতে হবে। সোচ্চার হতে হবে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে। (চলবে….)

Related Post