রাসূল (সঃ)-এর জীবনী (জন্ম থেকে নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত )

 

রাসূল (সা.)-এর জীবনী (জন্ম থেকে নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত )
রাসূল (সা.)-এর জীবনী (জন্ম থেকে নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত )

পূর্বে প্রকাশিতের পর
 
পৃথিবীর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনার পর এবার আরব দেশের প্রতি আমরা দৃষ্টিপাত করব। কারণ, এই গুরুত্বপূর্ণ ভূ-খণ্ডেই আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী তাঁর আন্দোলনের সূত্রপাত করেন এবং এখানকার পরিস্থিতিই তাঁকে সর্বপ্রথম মুকাবিলা করতে হয়। এবার সেখানকার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং চারিত্রিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরা হচ্ছে।
সামাজিক অবস্থা
আরবের জনগণ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে বসবাস করত। প্রতিটি শ্রেণীর অবস্থা ছিলো অন্য শ্রেণীর চেয়ে আলাদা। অভিজাত শ্রেণীতে নারী-পুরুষের স¤পর্ক ছিলো সবিশেষ উন্নত। এ শ্রেণীর মহিলাদের অনেক স্বাধীনতা ছিলো। তাদের কথার মূল্য দেয়া হত। তাদের এত সম্মান এবং নিরাপত্তা বিধান করা হত যে, তাদের রক্ষার জন্যে তলোয়ার কোষ মুক্ত হয়ে পড়ত, এবং রক্তপাত হত। কেউ যখন দানশীলতা এবং বীরত্ব প্রসঙ্গে নিজের প্রশংসা করত, তখন সাধারণত মহিলাদেরই সম্বোধন করত। মহিলারা ইচ্ছা করলে কয়েকটি গোত্রকে সন্ধি-সমঝোতার জন্যে একত্রিত করত, আবার তাদের মধ্যে যুদ্ধ এবং রক্তপাতের আগুনও জ্বালিয়ে দিত। এসব কিছু সত্ত্বেও পু

রুষদেরই মনে করা হত পরিবারের প্রধান এবং গুরুত্বের সাথে মান্য করা হত। এ শ্রেণীর মধ্যে নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিয়ের মাধ্যমে হত এবং মহিলাদের অভিভাবকদের মাধ্যমে এ বিয়ে সম্পন্ন হত। অভিভাবক ছাড়া নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করার কোন অধিকার নারীদের ছিলনা। অভিজাত শ্রেণীর অবস্থা এরকম হলেও অন্যান্য শ্রেণীর অবস্থা ছিলো ভিন্নরূপ। সেসব শ্রেণীর মধ্যে নারী-পুরুষের যে সম্পর্ক ছিলো সেটাকে পাপাচার, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা এবং ব্যভিচার ছাড়া আর কিছুই বলা যায়না। গোত্রীয় যুদ্ধে বিজয়ীরা পরাজিত গোত্রের মহিলাদের বন্দী করে নিজেরা ব্যবহার করত। এ ধরনের বন্দিনীর গর্ভজাত সন্তানেরা জীবনভর বন্দিত্বের অপমান বোধ করত। জাহেলী যুগে একাধিক স্ত্রী রাখা দোষণীয় ব্যাপার ছিলনা। সহোদর দুই বোনকেও অনেকে একই সময়ে স্ত্রী হিসেবে রাখত। পিতার মৃত্যুর পর তারা (পুরুষেরা) তাদের সৎমায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হত। তালাকের অধিকার ছিল শুধুমাত্র পুরুষের এখতিয়ারে। তালাকের কোন সীমা সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না।
ব্যভিচার সমাজের সর্বস্তরে ঊর্ধ্বগামী ছিল। ধর্মীয় বিকৃতির ফলে পারস্পারিক লড়াই-ঝগড়া আরবের মধ্যে একটা সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। মামুলি বিষয়াদি নিয়ে তাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়ে তা বংশ পরম্পরায় তার জের চলতে থাকত। জুয়াখেলা ও মদ্যপানে তারা এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে, মদের প্রশংসা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট দুষ্কর্মগুলোর প্রশংসায় তারা কাব্য-সাহিত্য রচনা করত। এছাড়া সুদী কারবার, লুটপাট, চৌর্য-বৃত্তি, নৃশংসতা, রক্তপাত, ব্যভিচার, দাস ব্যবসা এবং এজাতীয় অন্যান্য দুষ্কর্ম তাদেরকে প্রায় মানবরুপী পশুতে পরিণত করেছিল। আপন কন্যা সšতানকে তারা অপয়া ভেবে জীবন্ত কবর দিত। নারী ও পুরুষ একত্রে নগ্নবস্থায় কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করত । সে সময় আরবের সামাজিক অবস্থায় মানুষ প্রবৃত্তির গোলামীর সর্বনিু স্তরে নেমে গিয়েছিল। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্পর্কের এত অবনতি হয়েছিল যে, গোত্রসমূহের সব শক্তি পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যয়িত হচ্ছিল। কিছু কিছু অবস্থায় পারস্পারিক বন্ধুত্ব সৌহার্দ্য, সাহায্য সহযোগিতা এবং তাবেদারীর মূলনীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন গোত্র ঐক্যবদ্ধও হয়ে যেত। এছাড়া হারাম মাসসমূহ (যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাসসমূহে) আরবদের জীবনে শান্তি স্থাপন এবং তাদের জীবিকা অর্জনে পুরাপুরি সহায়ক ছিল। সংক্ষিপ্ত কথায় বলতে গেলে, জাহেলিয়াত যুগের আরবের সামাজিক অবস্থা দুর্বলতা ও অদূরদর্শিতাজনিত অবনতিতে পতিত ছিল, মূর্খতা তার সমিয়ানা বিস্তার করে ছিল, পাপাচার ছিল রমরমা। মানুষ পশুর মতো জীবন যাপন করছিল। মহিলাদের বেচাকেনার নিয়ম প্রচলিত ছিল। পারস্পাররিক সম্পর্ক ছিল দুর্বল এবং ভঙ্গুর। সরকার বা প্রশাসন নামে যা কিছু ছিল তা প্রজাদের কাছ থেকে অর্থ সম্পদ সংগ্রহ করে কোষাগার পূরণ এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সৈন্যাভিযান পরিচালনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল।
জাহেলিয়াতের সেই সময়কার বর্ণনা আল্লাহ্ পাক পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা ‘আল্ ইমরানের’ ১০৩ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন এভাবে- “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে (দ্বীন) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখ। তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছ। তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে। আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন। হয়তো এ নিদর্শন গুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে।” ইসলামের আগমনের পূর্বে আরববাসীরা যেসব ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল, এখানে সেদিকেই ইংগিত করা হয়েছে। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে পারস্পারিক শত্রুতা, কথায় কথায় ঝগড়া বিবাদ এবং রাত-দিন মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে সমগ্র আরব জাতিই ধ্বংসের কবলে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। এই আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হওয়া থেকে ইসলামই তাদেরকে রক্ষা করেছিল।
ধর্মীয় বিকৃতির ফলে তাদের সামাজিক অবস্থার যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল, আজ আমাদের সামাজিক অবস্থার দিকে তাকালে মনে হয় সেই একই পথে আমরাও চলতে শুরু করেছি। অথচ আমাদের কাছে রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ। তারপরেও কেন আমাদের সমাজে দিন দিন বেড়েই চলেছে পরস্পরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি,ছুরি, ছিন্তাই, হত্যা, মদ-জুয়া, ইয়াবা, ফেনসিডিল, বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনা,  সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি-চাঁদাবাজী, নারী ও শিশু পাচার, ধর্ষণ, অবৈধ গর্ভপাত, ভ্রুণহত্যা, খাদ্যের অভাবে সন্তান হত্যা, আত্মহত্যা, কালোবাজারী, দখলদারী ইত্যাদী অপরাধ যা আমাদের সমাজে সংঘটিত হচ্ছে তা, কখনো কখনো জাহেলিয়াতের যুগকেও হার মানায়। হ্যাঁ, আমাদের সমাজে ভালো মানুষও আছে। তবে তাদের জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে নানা আশঙ্কা ও আতঙ্কের মাঝে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কত কথা, কত বাণীই না আমারা শুনছি , কিন্তু সমাজে কোথাও শান্তি দেখ্তে পাচ্ছি না। যদি আমরা আমাদের চোখ দিয়ে সত্যিকার ভাবে সমাজের দিকে তাকাই, তাহলে এই আলামতগুলো দেখে আমরা নিজেরাই আন্দাজ করতে পারব, কিসে আমাদের কল্যাণ-এই দ্বীনকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার মধ্যে, না একে পরিত্যাগ করে আবার আমাদের সেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার মধ্যে ? আমাদের আসল কল্যাণকামী কে ? আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ), না সেই ইহুদী, মুশরিক ও মুনাফিক, যারা আমাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে ?
অর্থনৈতিক অবস্থা
অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সামগ্রিক সামাজিক অবস্থার অধীন। আরবদের জীবিকার উপায় উপকরণের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যই ছিল তাদের জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের প্রধান মাধ্যম। বাণিজ্যিক আদান-প্রদান সম্ভব ছিল না। তৎকালীন আরবের অবস্থা ছিল, যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোনো সময় শান্তি ও নিরাপত্তার অস্তিত্ব ছিল না। এ কারণেই যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ মাস সমূহে আরবের বিখ্যাত বাজার যিল মাজায, ওকাজ ও মাজেন্না প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। শিল্পক্ষেত্রে আরবরা ছিল বিশ্বের অন্য সকল দেশের পেছনে। কাপড় বুনন, চামড়া পাকা করা ইত্যাদি যেসব শিল্পের খবর জানা যায়, তার অধিকাংশই ইয়েমেন, হীরা ও সিরিয়া সংলগ্ন এলাকায় ছিলো। আরবের ভেতরে খেত-খামার এবং ফসল উৎপাদনের কিছুটা রেওয়াজ প্রথা ছিলো। সমগ্র আরবে মহিলারা সূতা কাটার কাজ করত, কিন্তু মুশকিল ছিল তাদের সব উপায় উপকরণ যুদ্ধের আশংকা কবলিত হয়ে থাকত। দারিদ্রতা ছিল এক সাধারণ সমস্যা। মানুষ প্রায়ই প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য এবং পোশাক থেকে বঞ্চিত থাকত।
চারিত্রিক অবস্থা
 জাহেলিয়াত যুগের লোকদের মধ্যে হীন নিু এবং মানবীয় অনুভব অনুভূতি ও সুস্থ জ্ঞান বিবেকের পরিপন্থী অভ্যাস সমূহ পাওয়া যেত, তারা এমন সব কাজ করত যা বিবেক বুদ্ধি মোটেই অনুমোদন করত না। তবে তাদের মধ্যে এমন কিছু পছন্দনীয় উত্তম চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য ছিল, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। তৎকালীন পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বিশেষ করে সে সময়কার পরাশক্তিদ্বয় রোম ও ইরানের পাশবিক সভ্যতা যেসব ধ্বংসাত্মক রোগের জন্ম দিয়েছিল, আরবরা তা থেকে তখনো মুক্ত ছিল। তাদের মধ্যে হিংস্র জীবন যাপন পদ্ধতি জনিত দোষত্রুটি বিদ্যমান থাকলেও তাদের ভাল গুণাবলীও নেহায়েত কম ছিলনা।
   গরম আবহাওয়া, মরুঝড়ের ঝাপটা, রাত দিনের কষ্টকর সফর, ক্ষুধা ও পিপাসার অভিজ্ঞতা  থেকে তাদের বীরত্বের প্রেরণা উজ্জীবিত করার কাজে সহায়ক হত। তাদের মধ্যে দয়ার্দ্রতা, দানশীলতা ও সরলতা বিদ্যমান ছিল। এটা জাহেলিয়াত যুগের লোকদের এমন এক বৈশিষ্ট্য ছিল, যা অর্জনে তারা একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব লক্ষ্য করা যেত। সরলতা, সত্যবাদিতা এবং আমানতদারী তাদের মধ্যে পাওয়া যেত। তারা ঘৃণাভরে প্রতারণা ও অংগীকার ভঙ্গ করা থেকে দূরে অবস্থান করত। আরবদের বিবেক-বুদ্ধি, মেধা-প্রতিভা ও স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কথাও তারা অতি সহজে উপলব্ধি করতে পারত। তাদের স্মরণ-শক্তি ছিলো অত্যন্ত প্রখর: এক্ষেত্রে সমকালীন দুনিয়ার কোনো জাতিই তাদের সমকক্ষ ছিল না। তাদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ পুরোমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। যুলুম নির্যাতন সহ্য করেও  নিজের মর্যাদা বজায় রাখা ছিল জাহেলী যুগের লোকদের একটি পরিচিত চারিত্রিক গুণ। ফলে তাদের বীরত্ব বাহাদুরী এবং আত্মমর্যাদাবোধ ছিল অসীম। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও স্বচ্ছতা-এটাও ছিল আরবদের প্রশংসাযোগ্য চারিত্রিক সৌন্দর্য্য। অসীম বীরত্ব এবং যুদ্ধের জন্যে সব সময় যুদ্ধাংদেহী অভ্যাসের কারণে তাদের মাঝে এ গুণবৈশিষ্ট্য ছিল বিরল। সংকল্প বাস্তবায়নে তারা কোনো কাজকে সম্মান মর্যাদা এবং গর্ব অহংকারের নিমিত্ত মনে করে সেটা করতে উদ্যত হলে কোনো বাধাই সে কাজ থেকে তাদের বিরত রাখতে পারত না। জীবন বিপন্ন করে হলেও তারা সেটা সম্পাদন করত। তাদের ভাষাও ছিল উচ্চমানের, অলংকারপূর্ণ, বিশাল ও বিকাশমান। এ ধরনের আরো অনেক বৈশিষ্ট্য তাদের ছিল। জাযিরাতুল আরবের সাথে সমগ্র বিশ্বের যে ভৌগোলিক সম্পর্ক ছিল, সেটা ছাড়া উল্লেখিত মূল্যবান চারিত্রিক গুণাবলীর কারণেই আরববাসীকে মানব জাতির নেতৃত্বে এবং নবুয়তের জন্যে মনোনীত করা হয়েছিল। কেননা, এসব যদিও কখনো কখনো ভয়ংকর অনিষ্টের কারণ হয়ে দেখা দিত এবং দুঃখজনক দুর্ঘটনা সংঘটিত হত, তবু এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, এসব স্বীয় সত্তায় অনেক মূল্যবান স্বভাব বৈশিষ্ট্য ছিলো। সম্ভবত উল্লেখিত চারিত্রিক গুণাবলীর মধ্যে অংগীকার পালনের পর আত্মমর্যাদাবোধ এবং সংকল্পের দৃঢ়তা ছিল সবচেয়ে মূল্যবান এবং কল্যাণকর উপকরণ। এ সব দুর্দমনীয় শক্তি এবং দৃঢ় সংকল্প ব্যতীত বিশৃংখলা, অশান্তি ও অকল্যাণ দূর করে ন্যায়নীতি ও সুবিচারমূলক ব্যবস্থার বাস্তবায়ন অসম্ভব। সামান্য সংশোধনের পর এসব গুণ মানবসমাজের জন্যে মহাকল্যাণকর প্রমাণিত হতে পারে। ইসলাম সে কাজটিই সম্পাদন করেছে। জাহেলিয়াতের সমস্ত অন্ধকার দূর করে আলোকিত করেছিল জাজিরাতুল আরবের ভূখ-কে। আর সেই আলোয় আলোকিত করেছিল সমস্ত দুনিয়াকে। অন্ধকার যুগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিল সোনালী যুগের।
আজ আমাদেরকে পূণরায় গভীর ভাবে অনুধাবণ করতে হবে যে, দ্বীন ইসলাম আবির্ভুত হয়েছে- মহান আল্লাহর নিকট থেকে এবং তা পরিপূর্ণভাবে প্রচারিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে মুহাম্মদ (সঃ)-এর মাধ্যমে। তাই দীন ইসলামকে জানতে হলে, বুঝতে হলে, একমাত্র রাসূল (সঃ)-এর শিক্ষা থেকেই জানতে হবে, বুঝতে হবে। আল্লাহর বাণী ও রাসূল (সঃ)-এর শিক্ষা যথাক্রমে কুরআন ও হাদীসের মধ্যে সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে। ইসলাম এসেছে যাবতীয় পাপ-পংকিলতায় নিমজ্জিত মানুষকে তাওহীদের পবিত্র ঝর্ণাধারায় নির্মল করতে: যাবতীয় গোলামীর বাঁধন ছিন্ন করে মানুষকে কেবল মাত্র আল্লাহর আইনের নিয়ন্ত্রণে আজাদ করে দিতে: বৈরাগ্য বাদের সংকীর্ণ ও কন্টকময় বাঁকা পথে বিভ্রান্ত পথিকের গতি ইসলামের সহজ-সরল ও প্রশস্ত পথে প্রত্যাবর্তন করাতে। (চলবে…

 

Related Post