এ অধ্যাপক সাহেব এক মজার তথ্য পরিবেশন করেছেন। তিনি বিরোধী লোকদের লেখা পড়ে এবং কিছু কথা শুনে মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন যে, মুসলমান অর্থই হল নির্দয় ও নিষ্ঠুর জাতি, যারা অমুসলিমদের দেখা মাত্র হত্যা করে। তিনি বলেন, আমার এই বিশ্বাস থাকাবস্থায় একবার আমাদের এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র বোসানিয়ায় ভ্রমণ করতে যাই। সেখানের এক রেষ্টুরেন্টে গেলাম কফি পান করতে। হঠাৎ নজর পড়ল পাজামা পরা ও পাগড়ী মাথায় দুই ব্যক্তির দিকে যারা কফি পান করছিলেন। যখন পরিচয় পেলাম যে, তাঁরা দুজন মুসলমান; তখন অন্তর ভয়ে কেঁপে উঠল। অতঃপর দেখি তাঁরা তাদের আসন ছেড়ে আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, আমি আরও ভীত হয়ে পড়লাম। তাঁরা কাছে এসেই বললেন, আসসালামু আলাইকুম। আমি আরবী বুঝতাম। আমি অবাক হলাম যে যাদেরকে দেখে আমার হৃৎপিন্ড কাঁপছে আর তাদেরই প্রথম কথা- যে, আমরা আপনার মঙ্গল কামনা করি…। আমি ভাবছিলাম এটা কি তাদের মুখের কথা না মনে কথা। আমি একজন পর দেশের লোক জেনে তারা আমাকে দাওয়াত দিলেন, আমি সাহস করে তাঁদের বাড়িতে গেলাম। তাঁরা যেভাবে আমাকে আপ্যায়ন করলেন তাতে আমার পূর্বের সব ধারণা পাল্টে গেল। অতঃপর চেষ্টা করলাম ইসলামকে বুঝার। এরপর আমি ইসলামের উপর বহু পড়া-শোনা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত বুদাপেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যক্ষ হিসবে দায়িত্বপালন করেছি। ইসলাম সম্পর্কে সর্বদাই আমার মনের মধ্যে গভীর চিন্ত-ভাবনা ছিল। অস্থিরতাও ছিল। শেষ পর্যন্ত গভীর নিদ্রায় স্বপ্নে দেখলাম হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আমাকে আরবীতে বলছেন, “তুমি কেন বিভ্রান্ত হয়েছ? তোমার সামনে তো সরল, নিরাপদ পথ সারা দুনিয়া জুড়ে রয়েছে। তুমি পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে (যা তোমার মনের বিশ্বাস) সামনে অগ্রসর হও।” আমি স্বপ্নে চিৎকার করে বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি কখন শান্তি পাব?” তিনি আমাকে গম্ভীর স্বরে সূরা নাবার কয়েকটি আয়াত পাঠ করে শুনলেন, ‘আলাম নাজয়ালিল আরদা মিহাদা… থেকে ওয়া জায়ালনা নাওমাকুম সুবাতা পর্যন্ত। অর্থাৎ আমি কি পৃথিবীকে বিছানার মত তোমাদের জন্যে পেতে দেইনি? আর পর্বত শ্রেণীকে কি খুঁটি স্বরূপ বানাইনি, আর তেমাদেরকে কি আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করিনি। আর তোমাদের বিশ্রামের জন্যে কি তোমাদের নিদ্রার ব্যবস্থা করিনি?” এভাবে শুনতে শুনতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এর এক সপ্তাহ পরে দিল্লীর জামে মসজিদে শুক্রবারে আমি সর্বপ্রথম মুসলমান হয়ে হাজার হাজার মুসলমানের সঙ্গে নামায আদায় করি। সে দিন হাজার হাজার জনতাকে লক্ষ্য করে ভাষণ দেই যা আমাদের সদ্য পাওয়া মুসলমান ভাইয়েরা দলে দলে জমায়েত হয়ে শুনেছিলেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি আমাকে আলিঙ্গণ করলেন।
তিনি পেলেন এক নতুন জীবন, নতুন সমাজ ও নতুন পরিবেশ। আর পেলেন এক নতুন আলো।
এ অধ্যাপক সাহেবের ন্যায় এ যুগের লোকও যে মুসলমানদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখে না তা নয়। এই মাত্র গত বছররের কথা। যশোরের এক নওমুসলিম মেয়ে ১৫ মাস আমাদের নওমুসলিম আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার পর তার মা বাবার কাছে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে আমি নিজে তাকে তার পিত্রালয়ে নিয়ে যাই। ১৫ মাস পূর্বে হারিয়ে যাওয়া নিখোঁজ মেয়েকে হঠাৎ এক সকাল ৮টার দিকে বাড়ীর আঙ্গিনায় বোরকা পরিহিতা অবস্থায় আমার সঙ্গে দেখে প্রায় ৫ মিনিট পর্যন্ত তার মা বাবা যেন কাঠের পুতুলের ন্যায় অনড়চড় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইল। মেয়ে তাদেরকে মুসলমানি কায়দায় সালাম জানাল দোয়া করল যেন আল্লাহ তাদের ঈমান দান করেন। মেয়ের নিকট তার মা বাবা ও আত্মীয় স্বজনরা তার ইতিহাস শুনে অবাক হল। শেষ পর্যন্ত তার মা মেয়ের সঙ্গে ঢাকায় আসল নওমুসলিম মহিলা আশ্রয় কেন্দ্র দেখতে। এক সাপ্তাহ পরে ফিরে যাওয়ার সময় মন্তব্য করল “আমরা ধারণাই করতে পারিনি যে, আমাদের যুবতী মেয়ে দীর্ঘ ১৫ মাস পর্যন্ত এমন হেফাযতে থাকতে পারে” আরো মন্তব্য করল, “মুসলমানদের সম্পর্কে আমার এতদিন যে ধারণা ছিল তা সম্পূর্ণ পালটে গেল।” আরও অনেক কিছুই মন্তব্য করেছে বেচারী যা তার মুখে শোভা পাবে আমার কলমে নয়। যাওয়ার সময় মেয়ের মা যা স্বীকার করে গেছে তার স্বামী ও ছেলে মেয়ে আছে বলেই তা প্রকাশ করতে এখনও বাধা রয়েছে। হয়ত বা ভবিষ্যতে তা প্রকাশিত হয়ে পড়বে।
এভাবে উল্টা পালটা ধারণার কারণে ইসলামকে যে নজরে দেখা উচিৎ মানুষ সে নজরে দেখতে পারছে না। এতদসত্ত্বেও অনেকেই মনে মনে মুসলমান হয়ে যাচ্ছে এবং কেউ কেউ বিশ্বাস গতভাবে মুসলমান হয়ে গেছে বহু পূর্বেই, কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি তাকে তার বিশ্বাসের কথা প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। এমন কি এ পর্যন্ত যারাই আমাদের নিকট ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের অধিকাংশই মন্তব্য করেছেন যে, আমরা মনে মনে বেশ কিছু দিন পূর্ব হতেই মুসলমান হয়ে রয়েছি।