দুনিয়ার বুকে প্রায় ১৫০ কোটি মুসলমান। কিন্তু ইসলামের শত্রুগণ কি তাদের কাউকে শক্তিরূপে গণ্য করে? তাদের মতামতের কি গুরুত্ব আছে? জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কত বিষয়ে কত বৈঠক বসে। কোনো সময় কি ১৫০ কোটি মুসলমানের কাউকে ডেকে কিছু জিজ্ঞেসা করা হয়? অথচ সোয়া ৬ কোটি ব্রিটিশ বা সাড়ে ৬ কোটি ফরাসির মতামত না নিয়ে জাতিসংঘে কোনো সিদ্ধান্তই হয় না। এমন এক প্রেক্ষাপটে ইরাক ও সিরিয়ার ১০ থেকে ১২ হাজার মোজাহিদ রাতারাতি বিশাল শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ঝাঁকুনি দিয়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র ধরে। ইরাকের সরকার তাদের মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে ডাকছে শুধু মার্কিনিদের নয়,সব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে। জিহাদীরা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে খেলাফত,শরিয়ত ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে একতাবদ্ধ করার লক্ষ্যে জিহাদ ঘোষণা করে। আজকের মধ্যপ্রাচ্যের বিভক্ত মানচিত্রটি গড়া হয়েছিল পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকে পাহারা দেয়ার জন্য। লক্ষ্য,তেল-গ্যাস লুণ্ঠন ও ইসরাইলের নিরাপত্তা বিধান। এ বিভক্ত মানচিত্রে মুসলমানদের অকল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই। মুসলমানদের বিরুদ্ধে শয়তানের কৌশল বহু। কৌশল শুধু ইসলাম থেকে দূরে সরানো নয়,মূল কৌশলটি হলো,নানা বর্ণ,নানা ভাষা ও নানা ভৌগোলিকতার নামে বিভক্ত করে তাদের শক্তিহীন রাখা। ইরাক,সিরিয়া,লেবানন,ফিলিস্তিন,জর্দান ও সৌদি আরবের মাঝে কোনোকালেই বিভক্তির সীমারেখা ছিল না। জনগণের চলাচলে কোনো কালেই কোনো বাধা ছিল না। উমাইয়া খলিফাদের আমলে যেমন ছিল না, আব্বাসীয় খলিফাদের আমলেও ছিল না। ছিল না উসমানিয়া খলিফাদের আমলেও। সে সময় খেলাফত ছিল, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ছিল এবং মুসলিম উম্মাহর একতাও ছিল। একারণেই মুসলমানেরা তখন বিশ্বশক্তি ছিল। বিশ্বজুড়ে ইজ্জতও ছিল। এখন কোনোটাই নেই।
কারণ বহু! মুসলমান হয়ে মুসলমানদের হেয় প্রতিপন্ন করতে যেমন দ্বিধা করে না। তেমনি তাদেরকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। কোথাও মুসলমানদের উত্থান হতে দেখলেই প্রথমে নামধারী মুসলমানরা তাদের বিরোধিতা করে, তাদের এই সুযোগ কাজে লাগায় মুসলমানদের চির শত্রু অমুসলিমরা। অর্থের লোভ দেখিয়ে নামধারী মুসলমানদেরকে খাঁটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। তারা এতই নির্বোধ যে তাদের মাথায় কাঁঠাল রেখে ওরা কোষ খায় সে টের পায় না। তাদের কর্ম-কাণ্ডে মনে হয়, যে তারা মুসলমান না। সত্যিই বিস্মিত হই, যখন দেখি, প্রকৃত মুসলমানরা নিজেদের জীবন ও চরিত্র সংশোধনের জন্য কুরআন ও হাদীসের দারসের আয়োজন করে,এবং সাধারণ মুসলমানদেরকেও তারা প্রকৃত জীবনের সন্ধানের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে, তখন তাদেরকে গোপন সূত্রের ভিত্তিতে আটক করা হয়!
বাংলাদেশে কুরআন, হাদীস কি নিষিদ্ধ!!! ঘরের মধ্যে কুরআন, হাদীস রাখা, একসাথে সবাই বসে চর্চা করা কি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেল পর্দা/ হিজাব ও কি নিষিদ্ধ!!! শুধুমাত্র ঘরের মধ্যে সবাই বসে কুরআন চর্চা করার সময় এই পর্দানশীন মা,বোনদের ও ইসলাম পালনকারী ভাইদের জঙ্গী- সন্ত্রাসী,জিহাদী বিভিন্ন পদবীতে সমাসীন করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ইসলামী বই-প্রস্তককে সন্ত্রাসী বই বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে। ইসলামী বই কুরআনের তাফসীরকে জেহাদী বই প্রচার করে জিহাদকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে। প্রকারান্তে জিহাদের ফরযিয়তকে অস্বীকার করা হচ্ছে। তারা কুরআনের বিরোধিতা করে,আবার তাদের কেউ মারা গেলে কুরআনের খানী করে। বিশেষ দিবসে লোক দেখানো নামাযও পড়ে। এসব ভাওতাবাজী আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
কুরআনকে সর্বক্ষেত্রে মানতে হবে। জীবনভর কুরআনের বিরোধীতা করে মরার পর লাশটাকে কবরে রাখার সময় “ বিস্মিল্লাহী ওয়ালা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ” বলা, কুরআন খানী করা কোন উপকারে আসবে না। যার স্পষ্ট উদাহরণ পবিত্র কুরআনে রয়েছে;রাসূলে কারীম (সা.)-এর যুগে মুনাফিকরা আল্লাহর রাসূলের পেছনে নামায পড়েছে,রাসূলের মুখের উপদেশ শুনেছে,কিন্তু এরা পেছনে মুসলমানদের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে;এই প্রকৃতির মুনাফিকরা মরার পর আল্লাহর রাসূল যখন জানাযার নামায পড়ানোর জন্য ইমামের স্থানে অগ্রসর হচ্ছিলেন,তখন পেছন থেকে হযরত উমর কাপড় টেনে ধরলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি করছেন? তবুও তিনি জানাযা পড়ালেন। তখন আল্লাহর পক্ষ হতে হযরত উমরের পক্ষে পবিত্র কুরআনে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়: ‘হে নবী! তুমি এ ধরনের লোকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো বা না করো, তুমি যদি এদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তাহলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসেকদেরকে মুক্তির পথ দেখান না।’ (সূরা তাওবা: ৮০)
আমাদের কেউ যদি দশটি টাকা হারিয়ে ফেলে কিংবা চুরি হয়, তখন কিন্তু আফসোসের শেষ থাকে না। অথচ মুসলমানদের যে এত কিছু ডাকাতি হয়ে গেল, তা নিয়ে মাতম কই? কোনো ঈমানদার ব্যক্তি কি এত কিছু হারানোর বেদনা নিয়ে স্থির থাকতে পারে? আনন্দচিত্তে কি ঘুমোতে পারে? মৃত ব্যক্তির হাত-পা কেটে নিলেও তা নিয়ে ব্যথা-বেদনা থাকে না। তেমনি ঈমানের মৃত্যু হলে,খেলাফত,শরিয়ত বা ইসলামী রাষ্ট্র বিলুপ্ত হলেও তা নিয়ে দুঃখ হয় না। ঈমান যে বেঁচে আছে তার আলামত স্রেফ নামায-রোযা নয়। বহু নামায-রোযা তো মুনাফিকের জীবনেও থাকে। বরং ঈমানের পরিচয় হলো,এত কিছু হারানোর মর্মবেদনা নিয়ে মাতম করা,ইসলামের পরাজয় নিয়ে প্রচণ্ড দুঃখবোধ প্রকাশ করা। তবে মু’মিন শুধু মাতম ও দুঃখবোধ নিয়ে বাঁচে না। বাঁচে হারানো গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জিহাদ নিয়ে। মাতম ও দুঃখবোধ তখন প্রচণ্ড শক্তিতে পরিণত হয়। মুসলমানদের হারানো গৌরব ফিরে ঐক্যের বিকল্প নেই। ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেই বিজয় সুনিশ্চিত। তাই আসুন পরস্পর ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নাস্তিক,মুরতাদ তথা ইসলামের শত্রুদের মুকাবিলা করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার বিজয় পতাকা উড্ডয়ন করি। অতএব,“হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সকল ভাইদেরকে ক্ষমা করে দিন,যারা আমাদের অগ্রে ঈমান এনেছেন। আর আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! আপনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু।” আমীন ॥