আল্লাহর পরিচায়

 পূর্বে প্রকাশিতের পর

মানবীয় শরীর একটি ক্ষুদ্র জগৎ

মূলত: মানুষকে এ ব্যাপারে অতি সামান্যই জ্ঞান দান করাহয়েছে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি-ইত্যাদি ছোট ছোট মাত্রকয়েকটির খবর তারা জানে, যা সমুদ্র হতে পাখির ঠোঁটে করে উঠানো এক ফোটা পানির চেয়েওনগণ্য। আজ বৈজ্ঞানিকগণ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা সত্যই বলেছেন وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا(الإسراء: 85

  তোমাদের খুব সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। (সুরা বনী ইসরাইল: ৮৫)বিশ্বচরাচর ও ব্যক্তিসত্তা উভয়ের মধ্যে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাবলী রয়েছে।বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে কুদরতের অনেক নিদর্শন আছে এবং আছে তোমাদের মধ্যেও। তোমরাকি অনুধাবন করবে না ? (সূরা যারিয়াত আয়াত ২০/২১) এখানে নিদর্শনাবলীর বর্ণনায় আকাশ ওসৌরজগতের সৃষ্টির কথা বাদ দিয়ে কেবল ভূপৃষ্ঠের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, এটামানুষের খুব নিকটবর্তী এবং মানুষ এর উপর বসবাস ও চলাফেরা করে। আলোচ্য আয়াতে এরচাইতেও নিকটবর্তী খোদ মানুষের ব্যক্তিসত্তার প্রতি তার দৃষ্টি আকৃষ্ট করা হয়েছে এবংবলা হয়েছে ভূ-পৃষ্ঠে ও ভূ-পৃষ্ঠের সৃষ্ট বস্তু বাদ দাও, খোদ তোমাদের অস্তিত্ব, তোমাদের দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে চিন্তা- ভাবনা করলে তোমরা এক একটি অঙ্গকেআল্লাহ তা‘আলার কুদরতের এক একটি পূর্ণাঙ্গ পুস্তক হিসাবে দেখতে পাবে। তোমরা সহজেইহৃদয়ংগম করতে সক্ষম হবে যে, সমগ্র বিশ্বে কুদরতের যে নিদর্শন রয়েছে, সেইসব যেনমানুষের ক্ষুদ্র অস্তিত্বের মধ্যে সংকুচিত হয়ে রয়েছে। এ কারণেই মানুষের। অস্তিত্বকেক্ষুদ্র একটি জগৎ বলা হয়। সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টান্ত মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে এসেস্থান লাভ করেছে। মানুষ যদি তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমগ্র অবস্থা পর্যালোচনাকরে, তবে সে দৃষ্টির সামনে আল্লাহ তা‘আলাকে সদা উপস্থিত দেখতে পাবে। আসুন এবার তাহলে বেশি দুরে নয় একেবারেই নিজ দেহটার প্রতি দৃষ্টি দেয়া যাক। “প্রজন্মের প্রহসন”থেকে এ প্রসঙ্গের আর একটি উদ্ধৃতি এখানে পেশ করা গেল।

মানব শরীর সত্যিই এক অভূতপূর্ব মেশিন। এমন এক মেশিন যারযথার্থ বর্ণনা পেশ করা কোন দিনই কোন মানব সন্তানের পক্ষে সম্ভব নয়। আর সম্ভব হবেইবা কি করে, এই শরীর তো কোন মানুষ নিজে বানায়নি যে, সে তার নিজস্ব সৃষ্টির যাবতীয়তথ্য ও তত্ত্ব আপনাকে বলে দেবে।এই দেহের অভ্যন্তরীণ পরিশীলনের কথাই ধরুন নাকেন, আমাদের হার্ট প্রতি মিনিটে ১০ পাউন্ড রক্ত সঞ্চালন করে, ব্যায়ামের সময় হার্টেরএই রক্ত- সঞ্চালনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ পাউন্ডে। আমাদের শরীরে যতো রগ, শিরা-উপশিরারয়েছে তার সবগুলোকে বাইরে এনে একটার সাথে জড়িয়ে লম্বা করতে থাকলে এর পরিমাণ হবে ৬০হাজার মাইল। অর্থাৎ একটি মানুষের শরীরে শিরা-উপশিরা দিয়ে একজন মানুষ গোটা পৃথিবীপ্রায় ৩ বার ঘুরে আসতে পারবে। সাধারণত: মানুষের শরীরে ৬ থেকে ১০ পাউন্ড রক্ত সর্বদামওজুদ থাকে। রক্তের আবার দু,ধরনের রক্ত-কণিকা। কিছু আছে রেড সেল (লাল কণিকা) যাশরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বহন করে। কিছু আছে হোয়াইট সেল (সাদা কণিকা) যার কাজহচ্ছে অভ্যন্তরীণ রোগের প্রতিরোধ করা। তা নিম্নরূপ :—

এক একজন মানুষের রক্তে রেড সেলের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটিআর হোয়াইট সেল হচ্ছে আড়াই শত কোটি। অধিকাংশ হোয়াইট সেলের জীবনকাল হচ্ছে মাত্র ১২ঘণ্টা, রেড সেলগুলো পরিমাণে একটু বেশিই বাঁচে, কোন কোন সেল ১২০ দিন পর্যন্ত বেঁচেথাকে। একজন মানুষের শরীরে রক্ত চলাচলের জন্য যে শিরা বানানো হয়েছে, তার সবগুলোকেপাশাপাশি সাজালে দেড় একর জমির প্রয়োজন হবে। এর সব শিরাগুলো কিন্তু আবার একত্রে খোলারাখা হয় না। তা হলে এক সেকেন্ডের চেয়েও কম সময়ের মধ্যে সমস্ত রক্ত শরীর থেকে বেরিয়েআসবে। এই শরীরের একটি অংশ যেখানে সর্বদাই রক্তের প্রয়োজন, তা হচ্ছে ফুসফুস।তারউপশিরাগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সেখানকার রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। গড়ে একজন মানুষসারা জীবনে ৫০ কোটি বার শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। এই যে রক্তের কথা বললাম তা কী? রক্ত হচ্ছে পনির চেয়ে ঘন একটি পদার্থ, যদিও মানুষের শরীরের ৬০ ভাগই হচ্ছে পনি। এরপরিমাণ গড়ে ১০ গ্যালন। সেই হিসেবে রক্তের পরিমাণ হচ্ছে শতকরা ১০ ভাগ। মানুষের শরীরেআরো বহু ধরনের উপাদান রয়েছে। যেমন মানব দেহে এতো চর্বি আছে, যা দিয়ে ৭টি বড়ো জাতেরকেক বানানো যাবে। এই পরিমাণ কার্বন, আছে যে, তা দিয়ে ২৮ পাউন্ড ওজনের এক ব্যাগ কেকবানানো যাবে। এত পরিমাণ ফসফরাস আছে যে, তা দিয়ে ২২ শত ম্যাচ বনানো যাবে। এই সব মিলেমানুষ্য শরীরটা হচ্ছে এক বিচিত্র সংগ্রহ-শালা। এখানে সব কেমিক্যাল আবার একত্রে নাথাকলে তাতে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

যেমন মানুষের খাবারে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়োডিন না থাকে, তাহলে তার গলদেশের নিম্ন-ভাগ আস্তে আস্তে বড় হতে থাকবে, পরে এতে মারাত্মক ধরনের রোগ (goitre) দেখা দেবে। একটি শিশুর যখন জন্ম হয় তখন তার শরীরে হাড়ের পরিমাণ থাকে৩০০৫টি। পরে অবশ্য এক দুটো মিশে পরিমাণ কমে তা ২০৬ এ দাঁড়ায়। ৬৫০টি পেশির দ্বারাহাড়গুলো বেঁধে রাখা হয়। গিরার পরিমাণ একশত। পেশির সাথে যেখানে হাড়ের সম্মিলন ঘটে, তা থাকে অত্যন্ত শক্তিশালী। তার প্রতি বর্গইঞ্চি পরিমাণ জায়গার উপর কমপক্ষে ৮ হাজারকেজির মতো বোঝা সহজেই চাপানো যেতে পারে। এই আশ্চর্যজনক মেশিনটাকে ঢেকে রাখা হয়েছেএকটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পোশাক দ্বারা, যার নাম হচ্ছে চামড়া। গড়ে একজন মানুষের শরীরেএই চামড়ার পরিমাণ হচ্ছে ২০ বর্গফুট। এর উপরিভাগে আবার রয়েছে এক কোটি লোমকূপ। আমাদেররুচিবোধের জন্য কোনটা আমরা পছন্দ করি, কোনটা আমরা অপছন্দ করি-এটা বলে দেয়ার জন্যরয়েছে ৯ হাজার ছোট সেল। এগুলোকে যথারীতি সাহায্য করার জন্য রয়েছে আরো ১ কোটি ৩০লক্ষ নার্ভ সেল। শরীরের বাইরের বস্তুগুলোর অনুভূতির জন্য দিয়ে রাখা হয়েছে ৪০ লক্ষবহুমুখী সেল। এগুলোই আমাদের বলে দেয় কোনটা গরম, কোনটা ঠান্ডা, কোনটাতে কষ্ট লাগে, কোনটাতে আরাম অনুভূত হয়। এসব মেশিনপত্র সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মানবদেহের প্রয়োজনপর্যাপ্ত জ্বালানি শক্তির। একজন স্বাস্থ্যবান লোক গোটা জীবনে ৫০ হাজার কেজি পরিমাণখাবার সংগ্রহ করে। পানীয়ের পরিমাণ হচ্ছে ১১ হাজার গ্যালন। যদি সে শহরের অধিবাসী হয়, তা হলে তার হাঁটার পরিমাণ হবে গড়ে সাত হাজার মাইল। আর যদি সে গ্রামের মানুষ হয় তাহলে তার হাঁটার পরিমাণ হবে ২৮ হাজার মাইল। এ লক্ষ-কোটি সেল, নার্ভ ও জটিলমেশিনপত্রের সমন্বয়ে তৈরি করা মানুষের শরীর। তার জন্য দুটো মূল্যবান বস্তু রয়েছে।একটি হচ্ছে এর কন্ট্রোল রুম বা নিয়ন্ত্রণ-কক্ষ, আরেকটি হচ্ছে জেনারেটর বা শক্তিউৎপাদন-যন্ত্র।  (চলবে)

Related Post