উম্মুল মু‘মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)

আয়েশা

উম্মুল মু‘মেনীন হযরত আয়েশা, ডাক নাম উম্মে আব্দুল্লাহ বা আব্দুল্লাহর মা। সিদ্দিকা লকব বা উপাধী। পিতৃকুল আবু বকর ইবনে আবু কুহাফা ইবনে ওসমান ইবনে আমের ইবনে ওমর ইবনে কা‘ব ইবনে সা‘আদ ইবনে তাইম এবং মাতৃকুল উম্মে রোমান ইবনেতে ‘আমের ইবনে উয়াইমের ইবনে আবদে শামস ইবনে ইতাব ইবনে আযীনা ইবনে সাবী’ ইবনে ওয়াহমান ইবনে হারেস ইবনে গানাম ইবনে মালেক ইবনে কেনানা।

মূল: নিয়াজ ফতেহপুরী। অনুবাদ: গোলাম সোবহান সিদ্দিকী
পর্ব: ১
উম্মুল মু‘মেনীন হযরত আয়েশা, ডাক নাম উম্মে আব্দুল্লাহ বা আব্দুল্লাহর মা। সিদ্দিকা লকব বা উপাধী। পিতৃকুল আবু বকর ইবনে আবু কুহাফা ইবনে ওসমান ইবনে আমের ইবনে ওমর ইবনে কা‘ব ইবনে সা‘আদ ইবনে তাইম এবং মাতৃকুল উম্মে রোমান ইবনেতে ‘আমের ইবনে উয়াইমের ইবনে আবদে শামস ইবনে ইতাব ইবনে আযীনা ইবনে সাবী’ ইবনে ওয়াহমান ইবনে হারেস ইবনে গানাম ইবনে মালেক ইবনে কেনানা। অর্থাৎ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) পিতৃকুলের দিক থেকে তাইম বংশের এবং মাতৃকুলের দিক থেকে কেনানা গোত্রের ছিলেন।
হযরত আয়েশার কোন সন্তানাদি ছিলো না। এ জন্য তাঁর কোন কুনিয়তও (উপনাম) ছিল না। আরবে কুনিয়ত বা ডাক নামকে মনে করা হতো শারাফতের প্রতীক। এ কারণে একদা তিনি নবীজীকে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অন্যান্য নারীরা কুনিয়াত দ্বারা মাশহুর। তাই আপনি আমার জন্যও একটা কুনিয়ত প্রস্তাব করুন। নবীজী বললেন, তুমি আব্দুল্লাহর নামে কুনিয়ত গ্রহণ কর অর্থাৎ উম্মে আব্দুল্লাহ কুনিয়াত ধারন কর। আব্দুল্লাহ ছিল হযরত আয়েশার বোনের ছেলের নাম।
জন্ম:
ইতিহাস গ্রন্থে হযরত আয়েশার জন্ম সাল উপেক্ষিত হয়েছে। কিন্তু যেহেতু হিজরতের তিন বৎসর পূর্বে রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে এবং বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৬ বছর। এ ব্যাপারে গবেষকরা একমত। তাই দেখা যায় হিজরতের ৯ বছর আগে তাঁর জন্ম হয়েছে।
শিশুকাল:
শিশুকালে তিনি ছিলেন অন্যান্য শিশুদের চেয়ে স্বতন্ত্র। শৈশব থেকে তাঁর মধ্যে এমন সব গুণাবলীর লক্ষ্য করা যায়, যদ্বারা তাঁর প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা সম্পর্কে ধারণা করা মোটেই কঠিন নয়। শৈশবের স্মৃতি সাধারণত বিস্মৃতির প্রতিটি কথা তাঁর স্মরণ ছিল। রাসূল (সা.) যখন হিজরত করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৯ বৎসর। কিন্তু হিজরতের ঘটনা পরস্পরা যতটা হযরত আয়েশা স্মৃতি শক্তি দিয়ে ধরে রাখতে পেরেছিলেন। অতটা অন্য কোন সাহাবী পারেন নি। ইমাম বুখারী সূরা কামার এর তাফসীরে লিখেছেন: বরং কিয়ামত তাদের প্রতিশ্রুত সময়। আর কিয়ামত অতি ভয়ঙ্কর  ও তিক্ততর।

এ আয়াতটি যখন নাযিল হয়, তখন হযরত আয়েশা খেলা করছিলেন। ইমাম বুখারী এর রেওয়াতটিও গ্রহণ করেছেন হযরত আয়েশার কাছ থেকে। একদা হযরত আয়েশা গুটি খেলছিলেন। এমন সময় রাসূলে কারীম (সা.) উপস্থিত হন। একটি গুটি ছিল ঘোড়া মার্কা, এর উপর দিকে পালক লেগেছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আয়েশা! এটা কী? আয়েশা জবাব দেন, ঘোড়া। তিনি (রাসূল) বললেন, ঘোড়ার তো পালক থাকে না। হযরত আয়েশা এতটুকু চিন্তা না করে বললেন, কেন? হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার তো পালক ছিল। তাঁর এ জবাব শুনে আল্লাহর রাসূল হাসলেন।
সহপাঠিদের কাছে তার খেলাধুলার ঘটনা নানাভাবে অনেক রিওয়াতে বর্ণিত হয়েছে এবং এটা অনেক প্রসিদ্ধও লাভ করেছে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করা আমরা তেমন জরুরি মনে করি না। যাই হোক, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের শৈশবকালও বৈশিষ্টমণ্ডিত, এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হযরত আয়েশার উপর্যুক্ত ঘটনাই আমরা যথেষ্ট মনে করি।
বিবাহ: হযরত সাওদা অধ্যায়ে উল্লেখিত হয়েছে যে বিবি খাদীজার ইনতেকালের পর নবীজীকে বিষণ্ন দেখে হযরত ওসমান ইবনে মাযউনের স্ত্রী খাওলা তাঁকে বিবাহের অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে ইচ্ছা করে এ কথা উল্লেখ করা হয়নি যে, নবীজী খাওলাকে জিজ্ঞেস করেন, কাকে বিয়ে করবো? জবাবে তিনি আরয করেন, কুমারী এবং বিধবা দু’রকম নারীই বর্তমান রয়েছে। সাওদা বিনতে যাম‘আ বিধবা এবং আয়েশা বিনতে আবি বকর কুমারী। যার সম্পর্কে হুকুম হয় চেষ্টা করে দেখবো। যাই হোক, অবশেষে নবীজীর ইঙ্গিত পেয়ে খাওলা হযরত আবু বকরের নিকট গমন করেন এবং তাঁর সাথে আলাপ করেন। তখন মুখ ডাকা ভাইয়ের মর্যাদা সৎ ভাই এর চেয়ে কম ছিল না। জাহিলিয়াতের যুগ থেকে এ প্রথা চলে আসছিল। হযরত আবু বকর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ভাইয়ের মেয়েকে কী বিয়ে করা যায়? খাওলা নবীজীকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। হযরত বলেন, আবু বকর আমার দ্বীনী ভাই। এমন ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করা জায়েয।
ইতোপূর্বে যুবাইর ইবনে মুতইম (রা.)-এর পুত্রের সঙ্গে হযরত আয়েশার বিয়ের প্রস্তাব আসে। তাই হযরত আবু বকর যুবাইরকে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু যুবাইরের খান্দান তখনও ইসলাম সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিল না। তাই যুবাইরের মা এ বলে প্রত্যাখ্যান করেন যে, এমন মেয়ে আমার ঘরে এলে আমার ছেলে বেদ্বীন হয়ে যাবে। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ৬ বছর বয়সে নবুওয়াতের দশম বর্ষে হিজরতে তিন বছর পূর্বে হযরত আয়েশার সঙ্গে নবীজীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। শাওয়াল মাসে ৫শ দিরহাম মহরানার বিনিময়ে বিয়ে হয়। নবী সহধর্মিনীদের মোহরানা সাধারণত পাঁচশত দিরহাম।
যতো সাদাসিধেভাবে হযরত আয়েশার বিয়ে হয়েছে, স্বয়ং তাঁর বর্ণনা থেকে সে সম্পর্কে অনুমান করা যায়। তিনি বলেন যে, নবীজীর সঙ্গে যখন আমার আকদ হয়, আমি তখন অন্য মেয়েদের সঙ্গে খেলা করছি। পিতা আমাকে ঘরের বাইরে যেতে বারণ করার পর পর্যন্ত বিয়ে সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। নবীজী পূর্ব থেকেই এ বিয়ের সুসংবাদ লাভ করেন। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, জনৈক ব্যক্তি তাঁকে রেশমে মোড়া কোন জিনিস দেখাচ্ছে আর বলছে, এটা আপনার জন্য। তিনি খুলে দেখেন তাতে রয়েছে হযরত আয়েশা। (চলবে…)

Related Post