অমুসলিমদের প্রতি ব্যবহার

images[9]ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে একশ্রেণীর মানুষ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এতে কিছু নাদান মুসলমানও জড়িত। এ যে আত্মহত্যা, তা-ও তারা বুঝতে অক্ষম।আমরা জানি, অনেক পাশ্চাত্য পণ্ডিত ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে বিষোদগার করেন। তবে লামারটাইন, টমাস কার্লাইন, ডেভেনপোর্ট, লেনপুল প্রমুখ বিদ্বান ইসলামের ব্যাপারে নিরপেক্ষভাবে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন তাদের মহান গ্রন্থগুলোতে। তবে প্রচারের অভাবে এসব ভালো কথাও আমরা ছড়িয়ে দিতে পারছি না। অথচ এর দায়িত্ব মুসলমানদেরই ছিল। নবী সা: বলেছিলেন, তাঁর একটি বাক্য হলেও তা যেন অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। আমরা যেন এই মহান দায়িত্ব ভুলে গেছি।

অমুসলমানদের ব্যাপারে ইসলামের আদর্শে রয়েছে ইনসাফপূর্ণ ব্যবস্থা। আবদুল্লাহ মামুন আরিফ আল মান্নান তার চমৎকার লেখা ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ভুল ধারণা। বইটিতে ইসলামে অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফের বহু উদাহরণ তুলে ধরেছেন। আমরা তার কিছু পেশ করছি।মদিনার ইহুদিদের ধর্মীয় অধিকার : মদিনার ইহুদিরা সব সময় বিরোধিতা করত তথাপি তাদেরকে ধর্ম পালনের অধিকার থেকে হজরত মুহাম্মদ সা: বঞ্চিত করেননি। (বালাজুরি : ফতুহুল বুলদান ৭১ পৃ:)

ধর্মে বল প্রয়োগ নেই : বারবার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ইহুদি বনি নজির গোষ্ঠীকে মদিনা শরিফ থেকে বহিষ্কৃত করে দেয়ার আদেশ প্রদত্ত হয়। তখন মদিনাবাসী মুসলমানদের যেসব সন্তান ইহুদি ধর্মে ছিল, তাদের পিতামাতা জোর করে তাদের মুসলমান করতে চেয়েছিল। কিন্তু নবী করিম সা: এরূপ করতে নিষেধ করে বলেছিলেন ধর্মে বল প্রয়োগ নাই (আবু দাউদ শরিফ)।একজন মুসলমানের দুই ছেলে খ্রিষ্টান ছিল। সে ছেলেদের বলপূর্বক মুসলমান করতে হজরত নবী করিম সা:-এর কাছে অনুমতি চেয়েছিল। তাতে তিনি বলেছিলেন ‘ধর্মে বল প্রয়োগ নাই।(তফসির ইবনে জরির)।

বিশ্বাসঘাতক ইহুদিদের সাথে ব্যবহার : খায়বারের ইহুদিদের সাথে মদিনার বনি কাইনোকা ও বনি নজির গোত্রের ইহুদিরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে মদিনা আক্রমণের আয়োজন করেছিল। ইসলামের চির শত্রু গাৎফান গোত্রও তাদের সাথে মিলিত হয়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে মুসলমান নিধনে অগ্রসর হয়েছিল। মুসলিম সৈন্যদের কাছে ইহুদিদের বিশাল বাহিনী সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছিল। নিরুপায় হয়ে ইহুদিরা হজরত নবী করিম সা:-এর কাছে আত্মসমর্পণ করল।
সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী বিধর্মী বিশ্বাসঘাতক মারাত্মক শত্রুকে একেবারে নির্মূল করা হলো না। জোর করে মুসলমান করা হলো না। হজরত মুহাম্মদ সা: তাদেরকে নিম্নলিখিত শর্তে ক্ষমা করলেনÑ হ ইহুদিরা আগের মতো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ তাতে বাধা দিতে পারবে না। হ মুসলমানদের মতো তাদেরকে যুদ্ধ করার জন্য বাধ্য করা হবে না। হ তাদের ঘরবাড়ি ও ধনসম্পদ আগের মতোই তাদেরই স্বত্বাধিকারে থাকবে। হ উৎপন্ন দ্রব্যের অর্ধাংশ রাজস্বস্বরূপ মদিনায় পাঠাতে হবে। হ অন্য কোনো কর তাদের দিতে হবে না। (আল : নাজির ৩৩৯)
নাজরানের খ্রিষ্টান :নাজরানের খ্রিষ্টানদের একটি ডিপোটেশন পাঠিয়েছিলেন হজরত নবী করিম সা:-এর কাছে। তিনি তাদের মেহমানদারি করেন এবং মসজিদে নববীর মধ্যে খ্রিষ্টধর্মের প্রথামতো উপাসনা করতে দেন।
নাজরানের খ্রিষ্টানদের প্রতি হজরত মুহাম্মদ সা:-এর সনদ হ আল্লাহতায়ালার রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা: এই প্রতিজ্ঞা করছেন যে, সর্বপ্রকার সম্ভবপর চেষ্টা দ্বারা তাদেরকে নিরাপদে রাখা হবে। হ তাদের দেশ, জীবন ও ধনসম্পদ অুণœ রাখা হবে। হ তাদের ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হবে না।  কোনো ধর্মযাজক বা পুরোহিতকে পদচ্যুত করা হবে না। হ কোনো সন্ন্যাসীর ধর্মকার্যের ব্যাঘাত ঘটানো হবে না। তাদের দেশের মধ্য দিয়ে সৈন্য চালনা করা হবে না। হ যে পর্যন্ত তারা শান্তি ও ন্যায়ের মর্যাদা রক্ষা করে চলবে, সে পর্যন্ত এই সনদের শর্ত সমানভাবে বলবৎ থাকবে। (বালজুরি ফতুহুল বুলদান : ৭১ পৃষ্ঠা)।

সৈন্যবাহিনীর প্রতি নবীজী সা:-এর নির্দেশ : সিরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠানোর সময় হজরত মুহাম্মদ সা: সৈন্যদের নির্দেশ দেন বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। (২) ইহুদি, খ্রিষ্টানদের শিশু, মহিলা, ধর্মস্থানে বসবাসকারী লোকদের হত্যা করবে না, (৩) কোনো ফলবান বৃক্ষ বা দালান ধ্বংস করবে না। (সিরাতুন নবী)। ইসলামের এসব উদারতার তুলনা খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের ধর্মীয় ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

হজরত আবুবকর সিদ্দিক রা:-এর নির্দেশখলিফা হজরত আবু বকর রা: সিরিয়ার প্রথম অভিযানের সময় সৈন্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন  ন্যায়পরায়ণতার সাথে চলবে, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে হত্যা করবে না, খেজুর গাছের কোনো ক্ষতি করবে না, খাদ্যের জন্য ছাড়া গৃহপালিত পশু বা উট হত্যা করবে না। যারা মঠ,মন্দির,গির্জাতে নির্জন জীবনযাপন করে তাদেরকে শান্তিতে ধর্মের কাজ করতে দিবে।ইসলামের ইতিহাসে অমুসলিমদের সাথে এমনই ইনসাফপূর্ণ ব্যবহারের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।

===========

 

Related Post