حَتَّى إِذَا جَاء أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
হে আল্লাহর বান্দা! মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় বরযখ।
আর আপনি অবশ্যই জানেন যে, আখেরাতের প্রথম মনযিল হল কবর। মৃত্যু বরণ করার পরপরই মৃত ব্যক্তির উপর ছোট কিয়ামত কায়েম হয়ে যায়। মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার পর প্রতি সকালে ও প্রতি বিকালে তাকে তার ঠিকানা দেখানো হয়। যদি সে জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নাম দেখানো হয়। যদি জান্নাতী হয়, তাহলে জান্নাত দেখানো হয়। ঈমানদারের কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হয়। উত্থান দিবস পর্যন্ত এভাবে তাকে সুখ-শান্তিতে রাখা হয়। আর যে কাফের তার কবরকে সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়। হাতুরী দিয়ে পিটানো হয়। কবর থেকে উত্থিত না হওয়া পর্যন্ত এ সময়টা হল বরযখী জীবন।
মৃত্যুকালীন অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা
আল্লাহ তাআলা বলেন :
حَتَّى إِذَا جَاء أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, হে আমার রব! আমাকে ফেরত পাঠান, যেন আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। কখনো নয়, এটি একটি বাক্য যা সে বলবে। যেদিন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বরযখ। সূরা মুমিনূন, ৯৯-১০০
এ আয়াত থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম :
১- যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন মানুষের চোখ খুলে যাবে। সে তখন ভাল কাজ সম্পাদন করার জন্য আরো সময় কামনা করবে। কিন্তু তাকে আর সময় দেয়া হবে না।
২- মৃত্যুর সময় এ ধরনের প্রার্থনা অনর্থক। এতে কোন ফল বয়ে আনে না।
৩- বরযখ এর প্রমাণ পাওয়া গেল।
৪- বরযখী জীবন শুরু হয় মৃত্যু থেকে আর শেষ হবে পুনরুত্থান দিবসে।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
فَوَقَاهُ اللَّهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوا وَحَاقَ بِآَلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ (45) النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آَلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
অতঃপর তাদের ষড়যন্ত্রের অশুভ পরিণাম থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করলেন আর ফিরআউনের অনুসারীদেরকে ঘিরে ফেলল কঠিন আযাব। সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে আগুন উপস্থিত করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ফিরআউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও। (সূরা গাফির, ৪৫-৪৬)
এ আয়াত থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম :
১. মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারীদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফেরাউনের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করলেন।
২. ফেরআউনের অনুসারীদের পতন হল।
৩. প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় তাদের দোযখ দেখানো হয়। এ কথা দিয়ে বরযখ ও তার শাস্তির বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হল।
৪. কেয়ামেতর পর অপরাধীদের যে শাস্তি হবে সেটা বরযখের শাস্তির চেয়ে কঠোরতম হবে।
কাফেরের আত্মাটি নিয়ে যখন উপরে উঠে তখন ফেরেশতারা বলতে থাকে কে এই পাপিষ্ট আত্মা? তাদের উত্তরে তার নাম উল্লেখ করে বলা হয় অমুক, অমুকের ছেলে। প্রথম আসমানে গেলে তার জন্য দরজা খোলার অনুরোধ করা হলে দরজা খোলা হয় না।
এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন
لاَ تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلاَ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الجَمَلُ فِي سَمِّ الخِيَاطِ
এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (সা) এ আয়াতটি পাঠ করেন
وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
অর্থ আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিংবা বাতাস তাকে দূরের কোন জায়গায় নিক্ষেপ করল। সূরা হজ: ৩১
দুই ফেরেশতার প্রশ্নপর্ব
হাদীসে এসেছে :
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال نبي الله صلى الله عليه وسلم :إن الْعَبْد إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتُوُلِّيَ وَذَهَبَ أَصْحَابُهُ حَتَّى إِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَأَقْعَدَاهُ فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُ: أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، فَيُقَالُ: انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنْ النَّارِ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنْ الْجَنَّةِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا، وَأَمَّا الْكَافِرُ أَوْ الْمُنَافِقُ فَيَقُولُ: لَا أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ، فَيُقَالُ: لَا دَرَيْتَ وَلَا تَلَيْتَ ثُمَّ يُضْرَبُ بِمِطْرَقَةٍ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً بَيْنَ أُذُنَيْهِ فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ إِلَّا الثَّقَلَيْنِ. رواه البخاري
আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষকে যখন তার কবরে রাখা হয় আর তার সাথিরা চলে যায়, তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়ায শুনতে পায়। এমন সময় দু জন ফেরেশ্তা এসে তাকে বসায়। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী ধারনা রাখতে? তখন ব্যক্তি যদি ঈমানদার হয়, সে উত্তর দেবে, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। তাকে বলা হবে জাহান্নামে তোমার যেখানে অবস্থান ছিল সে দিকে তাকাও। আল্লাহ জাহান্নামের এ অবস্থানকে তোমার জন্য জান্নাত দিয়ে পরিবর্তন করেছেন। নবী করীম (সা) বলেনে, সে উভয় অবস্থানকেই দেখবে।
আর ব্যক্তি যদি মুনাফেক বা কাফের হয়, যখন তাকে প্রশ্ন করা হবে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী ধারনা রাখতে? তখন উত্তরে সে বলবে, আমি জানি না। মানুষ যা বলত আমি তাই বলতাম। তাকে ফেরেশতাদ্বয় বলবে, তুমি জানলে না ও তাকে অনুসরণ করলে না। তখন তাকে লোহার হাতুরী দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করা হয়। ফলে এমন চিৎকার দেয় যা মানুষ ও জিন ব্যতীত সকল প্রাণী শুনতে পায়। বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম
এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম :
১. মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার সাথে সাথে তার আত্মাকে তার দেহে ফিরিয়ে আনা হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব সম্পন্ন করার জন্য।
২. কোন কোন হাদীসে একটি প্রশ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণনাকারী নিজ বর্ণনা সংক্ষেপ করার জন্য এটা করেছেন। এটা তার অধিকারের মধ্যে গণ্য। আসলে প্রশ্ন করা হবে তিনটি বিষয় সম্পর্কে। একটি বিষয় উল্লেখ করার অর্থ বাকী দুটো বিষয় অস্বীকার করা নয়।
৩. তিনটি প্রশ্নের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে চেনা ও তার অনুসরণ সম্পর্কে প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যে ব্যক্তি রাসূল (সা)কে আল্লাহর রাসূল বলে স্বাক্ষ্য দিয়েছে, সে প্রভূ হিসাবে আল্লাহ ও ধর্ম হিসাবে ইসলামকে স্বীকার করে নিয়েছে। তাই যে এ একটি প্রশ্নের উত্তর দেবে এর মধ্যে বাকী দুটোর উত্তর এমনিতেই এসে যাবে।
৪. মৃত্যুর পর ঈমানদারকে জাহান্নাম দেখানো হবে। সে যে কত বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছে এটি তাকে বুঝাবার জন্য।
৫. রাসূলুল্লাহ (সা)-কে গভীরভাবে জানতে হবে। কাফের ও মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে যথাযথভাবে জানে না ও জানতে চায় না।
মুনকার ও নাকীর প্রসঙ্গ
হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إِذَا قُبِرَ الْمَيِّتُ أَوْ قَالَ أَحَدُكُمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ أَسْوَدَانِ أَزْرَقَانِ يُقَالُ لأَحَدِهِمَا الْمُنْكَرُ وَالآخَرُ النَّكِيرُ ، فَيَقُولَانِ : مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ ؟ فَيَقُولُ مَا كَانَ يَقُولُ : هُوَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ . فَيَقُولانِ : قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هَذَا ، ثُمَّ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ ، ثُمَّ يُنَوَّرُ لَهُ فِيهِ ، ثُمَّ يُقَالُ لَهُ : نَمْ ، فَيَقُولُ : أَرْجِعُ إِلَى أَهْلِي فَأُخْبِرُهُمْ ، فَيَقُولَانِ : نَمْ كَنَوْمَةِ الْعَرُوسِ الَّذِي لا يُوقِظُهُ إِلا أَحَبُّ أَهْلِهِ إِلَيْهِ حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ
وَإِنْ كَانَ مُنَافِقًا قَالَ : سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ فَقُلْتُ مِثْلَهُ لا أَدْرِي . فَيَقُولَانِ : قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ ذَلِكَ ، فَيُقَالُ لِلأَرْضِ : الْتَئِمِي عَلَيْهِ ، فَتَلْتَئِمُ عَلَيْهِ ، فَتَخْتَلِفُ فِيهَا أَضْلاعُهُ ، فَلا يَزَالُ فِيهَا مُعَذَّبًا حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: যখন তোমাদের মধ্য হতে কোন মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয় তখন কালো ও নীল বর্ণের দু জন ফেরেশতা আগমন করে। একজনের নাম মুনকার অন্যজনের নাম হল নাকীর। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কী বলতে? সে বলবে, সে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তখন ফেরেশতাদ্বয় বলবে, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দেবে। এরপর তার কবরকে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাকে বলা হয়, এখন তুমি নিদ্রা যাও। সে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবো, তাদেরকে (আমার অবস্থা সম্পর্কে) এ সংবাদ দেব। তখন ফেরেশতাদ্বয় তাকে বলে, তুমি ঘুমাও সেই নব বধুর মত যাকে তার প্রিয়জন ব্যতীত কেহ জাগ্রত করে না। এমনিভাবে একদিন আল্লাহ তাকে জাগ্রত করবেন।
আর যদি সে ব্যক্তি মুনাফেক হয়, সে উত্তর দেবে আমি তাঁর (রাসূলুল্লাহ) সম্পর্কে মানুষকে যা বলতে শুনেছি তাই বলতাম। বাস্তব অবস্থা আমি জানি না। তাকে ফেরেশ্তাদ্বয় বলবে, আমরা জানতাম, তুমি এই উত্তরই দেবে। তখন মাটিকে বলা হবে তার উপর চাপ সৃষ্টি করো। মাটি এমন চাপ সৃষ্টি করবে যে, তার হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যাবে। কেয়ামত সংঘটনের সময় তার উত্থান পর্যন্ত এ শাস্তি অব্যাহত থাকবে।
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- কবরে প্রশ্নকারী ফেরেশতাদের নাম ও তাদের বর্ণ আলোচনা হল।
২- ঈমানদারদের জন্য কবর প্রশস্ত করা হবে। কবরের অন্ধকার দূর করতে আলোর ব্যবস্থা করা হবে।
৩- ঈমানদার কবরের প্রশ্নোত্তর পর্বের পর পরিবারের কাছে ফিরে আসতে চাবে তার নিজের সফলতার সুসংবাদ শুনানোর জন্য ও পরিবারের লোকেরা যেন এ সফলতা অর্জনের জন্য সৎকর্ম করে সে ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য।
৪- ঈমানদার ব্যক্তি বরযখের জীবনে সুখ-নিদ্রায় বিভোর থাকবে। যখন কেয়ামত সংঘটিত হবে তখন তার নিদ্রা ভেঙ্গে যাবে ফলে সে অনেকটা বিরক্তির স্বরে বলবে:
قَالُوا يَا وَيْلَنَا مَنْ بَعَثَنَا مِنْ مَرْقَدِنَا هَذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ(52
হায়! কে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? (তাদের বলা হবে) এটা তো তা যার ওয়াদা পরম করুণাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫২)
৫- কাফের ও মুনাফেকরা কবরে শাস্তি ভোগ করবে।
কেয়ামতের ভয়াবহতা
যখন মানুষ কবর থেকে উঠে দাঁড়াবে তাদের বলা হবে, তোমরা আসো তোমাদের প্রতিপালকের কাছে, আর থামো, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তখন সকল মানুষ হতাশায় আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। পরাক্রমশালী এক অদ্বিতীয় প্রভূর সামনে সকলে মাথা নত করে দেবে। তারা সেদিন এ আহবানে সাড়া দিতে দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন
يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا
সেদিন তারা আহ্বানকারীর (ফেরেশতার) অনুসরণ করবে। এর কোন এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। (সূরা তা-হা, আয়াত ১০৮)
وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا * وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَلَا هَضْمًا
আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে সকলেই অবনত হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে যে যুলম বহন করবে। এবং যে মুমিন অবস্থায় ভাল কাজ করবে সে কোন জুলুম বা ক্ষতির আশংকা করবে না। (সূরা তা-হা আয়াত ১১১-১১২)
فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّى يُلاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ
يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الأَجْدَاثِ سِرَاعًا كَأَنَّهُمْ إِلَى نُصُبٍ يُوفِضُونَ
خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَانُوا يُوعَدُونَ
অতএব তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা (বেহুদা কথায়) মত্ত থাকুক আর খেল-তামাশা করুক যতক্ষণ না তারা দেখা পায় সেদিনের, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে। যেদিন দ্রুতবেগে তারা কবর থেকে বের হয়ে আসবে, যেন তারা কোন লক্ষ্যের দিকে ছুটছে অবনত চোখে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে! এটিই সেদিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা মাআরিজ ৪২-৪৪)
পরকাল অস্বীকারকারীদের দুর্দিন
আমাদের মানব সমাজে বহু মানুষ আছে যারা পরকালকে অস্বীকার করে থাকে। তারা বলে থাকে দুনিয়ার জীবনই জীবন। যা দেখি না তা বিশ্বাস করি না। পরকাল অস্বীকার করার ফলে তারা যে পরকালের শিকার হবে না তা কিন্তু নয়। কেউ আগুনের দাহ্য শক্তি অস্বীকার করলেও আগুন তাকে পেলে দগ্ধ করবেই।
আল্লাহ তাআলা এদের সম্পর্কে বলেন :
وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِينَ
الَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوْمِ الدِّينِ
وَمَا يُكَذِّبُ بِهِ إِلاَّ كُلُّ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ
إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِ آيَاتُنَا قَالَ أَسَاطِيرُ الأَوَّلِينَ
كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ
كَلاَّ إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُونَ
ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُوا الْجَحِيمِ
ثُمَّ يُقَالُ هَذَا الَّذِي كُنتُم بِهِ تُكَذِّبُونَ
সেদিন ধ্বংস অস্বীকারকারীদের জন্য। যারা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করে। আর সকল সীমালঙ্ঘনকারী পাপাচারী ছাড়া কেউ তা অস্বীকার করে না। যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, পূর্ববর্তীদের রূপকথা। কখনো নয়, বরং তারা যা অর্জন করত তা-ই তাদের অন্তরসমূহকে ঢেকে দিয়েছে। কখনো নয়, নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। তারপর নিশ্চয় তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা অস্বীকার করতে। (সূরা আল মুতাফফিফিন, আয়াত ১০-১৭)
হাশরের ময়দানের অবস্থা
عن سهل بن سعد رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يحشر الناس يوم القيامة على أرض بيضاء ، عفراء ، كقرصة النقي ، ليس فيها علم لأحد. (رواه مسلم2150)
সাহল ইবনে সাআদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: কেয়ামতের দিবসে মানুষকে সাদা পোড়ামাটি রংয়ের উদ্ভিদহীন একটি যমীনে একত্র করা হবে। যেখানে কারো জন্য কোন আলামত থাকবে না। (বর্ণনায়: মুসলিম, হাদীস নং ২১৫০)
عن عائشة رضي الله عنها قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : يحشر الناس يوم القيامة حفاة عراة غرلا . قلت : يا رسول الله ! النساء والرجال جميعا ، ينظر بعضهم إلى بعض ؟ قال صلى الله عليه وسلم : يا عائشة ! الأمر أشد من أن ينظر بعضهم إلى بعض. (متفق عليه)
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন: কেয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন: হে আয়েশা! সেদিন অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
কাফেররা অন্ধ ও চেহারার উপর ভর করে উপস্থিত হবে :
((وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى * قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنتُ بَصِيرًا * قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنسَى))
আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। (সূরা ত্বা-হা, আয়াত ১২৪-১২৬)
তিনি আরো বলেন:
وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا
আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব। (সূরা ইসরা, ৯৭)
যারা সে দিন আল্লাহ তাআলার ছায়াতে আশ্রয় পাবে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله : إن الله يقول يوم القيامة : أين المتحابون بجلالي . اليوم أظلهم في ظلي . يوم لا ظل إلا ظلي. (رواه مسلم 1988)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লা (সা) বলেছেন: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে আমারই জন্য তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। (বর্ণনায় : মুসলিম ১৯৮৮)
হিসাব নিকাশ যেভাবে শুরু
এরপর আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের থেকে হিসাব নিতে শুরু করবেন। যার হিসাবে কঠোরতা করবেন সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। হিসাব নিকাশের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
আর তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ দিবস সম্পর্কে যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাব, অথচ তারা রয়েছে উদাসীনতায় বিভোর এবং তারা ঈমান আনছে না। (সূরা মারইয়াম, আয়াত ৩৯)
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ
যেদিন প্রত্যেকে উপস্থিত পাবে যে ভাল আমল সে করেছে এবং যে মন্দ আমল সে করেছে তা। তখন সে কামনা করবে, যদি মন্দ কাজ ও তার মধ্যে বহুদূর ব্যবধান হত! আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার নিজের ব্যাপারে সাবধান করছেন এবং আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। (সূরা আলে ইমরান. আয়াত ৩০
সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে
পুলসিরাত সম্পর্কিত একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে এসেছে : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত
وَيَبْقَى رَجُلٌ مُقْبِلٌ بِوَجْهِهِ عَلَى النَّارِ، وَهُوَ آخِرُ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولاً الْجَنَّةَ.فَيَقُولُ: أَيْ! رَبِّ اصْرِفْ وَجْهِي عَنِ النَّارِ، فَإِنَّهُ قَدْ قَشَبَنِي رِيحُهَا وَأَحْرَقَنِي ذَكَاؤُهَا، فَيَدْعُو اللهَ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَدْعُوَهُ.ثُمَّ يَقُولُ الله تَبَارَكَ وَتَعَالَى: هَلْ عَسَيْتَ إِنْ فَعَلْتُ ذَلِكَ بِكَ أَنْ تَسْأَلَ غَيْرَهُ!فَيَقُولُ: لاَ أَسْأَلُكَ غَيْرَهُ.وَيُعْطِي رَبَّهُ مِنْ عُهُودٍ وَمَوَاثِيقَ مَا شَاءَ الله، فَيَصْرِفُ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّار، فَإِذَا أَقْبَلَ عَلَى الْجَنَّةِ وَرَآهَا، سَكَتَ مَا شَاءَ الله أَنْ يَسْكُتَ، ثُمَّ يَقُولُ:أَيْ رَبِّ قَدِّمْنِي إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ.فَيَقُولُ الله لَهُ: أَلَيْسَ قَدْ أَعْطَيْتَ عُهُودَكَ وَمَوَاثِيقَكَ، لاَ تَسْأَلُنِي غَيْرَ الَّذِي أَعْطَيْتُكَ، وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْدَرَكَ.فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ! وَيَدْعُو الله حَتَّى يَقُولَ لَهُ: فَهَلْ عَسَيْتَ إِنْ أَعْطَيْتُكَ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَ غَيْرَهُ، فَيَقُولُ: لاَ وَعِزَّتِكَ فَيُعطِي رَبَّهُ مَا شَاءَ اللهُ مِنْ عُهُودٍ وَمَوَاثِيقَ، فَيُقَدِّمُهُ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ.فَإِذَا قَامَ عَلَى بَابِ الْجَنَّةِ انْفَهَقَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، فَرَأَى مَا فِيهَا مِنَ الْخَيْرِ وَالسُّرُورِ، فَيَسْكُتُ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَسْكُتَ، ثُمَّ يَقُولُ: أَيْ رَبِّ! أَدْخِلْنِي الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ الله تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَهُ: أَلَيْسَ قَدْ أَعْطَيْتَ عَهُودَكَ وَمَوَاثِيقَكَ أَنْ لاَ تَسْأَلَ غَيْرَ مَا أُعْطِيتَ، وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ! مَا أَغْدَرَكَ!فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ! لاَ أَكُونُ أَشْقىَ خَلْقِكَ، فَلاَ يَزَالُ يَدْعُو الله حَتَّى يَضْحَكَ الله تَبَارَكَ وَتَعَالَى مِنْهُ، فَإِذَا ضَحِكَ اللهُ مِنْهُ، قَالَ: ادْخُلِ الْجَنَّةَ.فَإِذَا دَخَلَهَا قَالَ الله لَهُ: تَمَنَّهْ، فَيَسْأَلُ رَبَّهُ وَيَتَمَنَّى، حَتَّى إِنَّ الله لَيُذَكِّرُهُ مِنْ كَذَا وَكَذَا، حَتَّى إِذَا انْقَطَعَتْ بِهِ الأَمَانِيُّ، قَالَ الله تَعَالَى: ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ
. رواه البخاري ومسلم
এক ব্যক্তি জাহান্নামের দিকে মুখ করা অবস্থায় থাকবে। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভূ! জাহান্নামের গরম বায়ু আমাকে শেষ করে দিল। আমার চেহারাটা আপনি জাহান্নাম থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দিন। সে এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে বার বার প্রার্থনা করতে থাকবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার এ প্রার্থনা কবুল হলে এরপর তুমি যেন আর কিছু না চাও। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাইবো না। তখন জাহান্নামের দিক থেকে তার চেহারা ফিরিয়ে দেয়া হবে। তারপর সে আবার বলতে শুরু করবে, হে আমার প্রভূ! আমাকে একটু জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। কিন্তু এ ব্যক্তি প্রার্থনা করতেই থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার তো মনে হয় তোমার এ দাবী পুরণ করা হলে আবার অন্য কিছু চাইবে। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাইবো না। সে আর কিছু চাইবে না এ শর্তে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের গেটের নিকটবর্তী করে দিবেন। যখন সে জান্নাতে গেটের দিকে তাকিয়ে জান্নাতের সূখ শান্তি দেখবে তখন কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রার্থনা করতে শুরু করবে, হে আমার প্রভূ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক হে মানব সন্তান! তুমি কোন কথা রাখো না। সে বলবে, হে আমার প্রভূ! আমাকে আপনার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা করে রাখবেন না। এভাবে সে প্রার্থনা করতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ হাসি দিবেন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আল্লাহ বলবেন; ঠিক আছে তুমি আরো কিছু চাও, সুতরাং সে আল্লাহর নিকট চাইবে, আল্লাহও তাকে বিভিন্ন বিষয় চাওয়ার জন্য স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ বলবেন এই সবই তোমার জন্য। এবং সাথে আরো সেই পরিমাণ দেওয়া হলো। (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)