চোখ ও কানের হেফাজত প্রয়োজন

চোখ ও কান

চোখ ও কান আল্লাহর বড় নেয়ামত

সুন্দর অবয়ব দিয়ে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যেই কুশলী স্রষ্টার অসাধারণ নৈপুণ্য পরিলক্ষিত হয়। চোখ-কান এ দু টি অঙ্গেও আল্লাহর কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আল্লাহর সৃষ্ট মানুষের প্রতিটি অঙ্গই অতীব প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে মানুষের দুটি অঙ্গ চোখ ও কানের গুরুত্ব একটু বেশিই। মানুষের বোধ ও উপলব্ধির মাপকাঠি এ দুটি অঙ্গ। দেখা এবং শোনার মাধ্যমেই মানুষ তাদের সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটেছে চোখ ও কানের মাধ্যমে। সূরা নাহালে আছে, “আল্লাহ তোমাদের তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের চোখ, কান ও আত্মা দিয়েছেন যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর।” এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তারা মূলত কিছুই ছিল না। নিজের ভালো-মন্দের খবর পর্যন্ত রাখতে পারত না। তাই তাকে দিয়েছেন চোখ, কান ও আত্মা, যেন এগুলো দ্বারা বুঝতে ও জানতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অলঙ্কারসমৃদ্ধ ভাষায় বারবার চোখ ও কানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। এর উপকারিতার কথা বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করেছেন। সেই উপকারিতা হচ্ছে, হেদায়াত ও ঈমান গ্রহণ করা, উপদেশ ও শিক্ষা হাসিল করা। চোখ-কান আল্লাহ তাআলার সেরা দানসমূহের অন্যতম। অন্ধ ও বধিরই কেবল এ নেয়ামতের যথার্থ মূল্য বুঝে। আল্লাহ তাআলা মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুণের মধ্যে চোখ ও কানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। কারণ ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে এ দুটো অঙ্গের অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। আত্মা, চোখ ও কান,এই তিনটি বস্তু সৃষ্টি করে মানুষের ওপর যে অসীম করুণা বর্ষণ করেছেন তা আল্লাহ তায়ালা এভাবে উল্লেখ করেছেন “এবং সৃষ্টি করেছেন তোমাদের কান, চোখ ও আত্মা, সামান্যই তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।” এ দুটি নেয়ামত সম্পর্কে মানুষ আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হবে। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই চোখ-কান ও আত্মা এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” সূরা বানী ইসরাইল

অতি মূল্যবান এ দুটি অঙ্গের নেয়ামতমান সম্পর্কে আজ অধিকাংশ মানুষ উদাসীন। আল্লাহর পবিত্র সত্তার পরিচয় লাভ, তার সৃষ্টিরাজি সম্পর্কে যথার্থ চিন্তা ও গবেষণা, তার নিদর্শনসমূহ অনুধাবন করা থেকে বঞ্চিত। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান জাগতিকভাবে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও মূল্যবান এ দুটি অঙ্গ দ্বারা প্রকৃত উপকারিতা ও সার্থকতা উপলব্ধি করতে পারেনি। উপরন্তু আল্লাহপ্রদত্ত এ গুণ ব্যয় করা হচ্ছে অপাত্রে। নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তিকে অকেজো-নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। জ্ঞানের ওপর তারা মূর্খতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। ফলে তারা চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চোখ, কান ও অন্তর দান করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান প্রভূর আনুগত্য। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্র বিন্দু থেকে এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব। অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।” (সূরা দাহার:২) এখানে দৃষ্টি ও শ্রবণ বোঝাতে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধিক ও সার্বক্ষণিক অর্থ বোঝায়। এতে বোঝা যায়, মানুষের শ্রবণ ও দর্শন অন্য যে কোনো প্রাণীর তুলনায় অধিক শক্তিশালী। কারণ মানুষ শ্রবণশক্তি দ্বারা শরিয়ত ও রাসূলগণের দাওয়াত কবুল করে। দৃষ্টিশক্তি দ্বারা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণসমূহ ও তার সৃষ্টির অপূর্ব কলাকৌশল অবলোকন করে।

এ দু’শক্তির মাধ্যমেই মানুষ এই মহাজগতের বিস্ময় সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছে। এজন্য এ দু’টি অঙ্গের গুরুত্ব, ব্যবহারবিধি, প্রয়োগস্থল এবং সৃষ্টিগত তাৎপর্য অনেক বেশি। আমাদের এই বস্তুগত জীবনে চোখ-কান যে কত জরুরি অঙ্গ এবং কত মহামূল্যবান নেয়ামত তা শুধু টের পাই তাদের দেখে যারা এ দু‘টি অঙ্গের অভাবে অন্ধ নয় তো বধির। সৃষ্টির রূপ, রস, এর মোহিত সৌরভ উপভোগ করার অন্যতম উপকরণ এ দুটি অঙ্গ। মূল্যায়ন বিচারে এর কোনো বিকল্প কিংবা অনুরূপ কোনো বস্তু হতে পারে না। এজন্য আমরা যারা সুস্থ ও নিখুঁত দেহের অধিকারী তাদের জন্য উচিত অঙ্গদ্বয়ের শোকর আদায় করা। এগুলোর প্রয়োগ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা। গোনাহের সম্ভাবনা থেকে পর্যন্ত যথাসম্ভব হেফাজত থাকা। আমাদের জীবন চলায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গোনাহের মধ্যে চোখ ও কানের একটি বিশাল অংশ রয়েছে। রাসূল (সা.) হাদিসে বার বার এ দুটি অঙ্গের গোনাহ সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা চোখ ও কানের গোনাহ থেকে বেঁচে থাক। বর্তমান সমাজে সংঘটিত গোনাহসমূহের মূল হিসেবে এ দু’টি অঙ্গকে দায়ী করা যায়। স্রষ্টার কৃপা ও দান হিসেবে অঙ্গদ্বয়ের যথাযথ হেফাজত আমাদের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। ক্ষণিকের স্বাদ পেতে গিয়ে অনন্তকালের দুর্ভোগে পড়ার মতো যাবতীয় কর্ম থেকে বেঁচে থাকাই বুদ্ধিমান ও সফল মানুষের পরিচয়।

Related Post