Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

গুনাহর ক্ষতিসমূহ

Originally posted 2013-04-01 01:10:41.

123ভাষান্তরে; হুসাইন মুহাম্মদ শাহ জাহান

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক মানবতার মহান শিক্ষক মহানবী মুহাম্মদ মুস্তাফা (সঃ), তাঁর পরিবারবর্গ, তাঁর সকল সাহাবায়ে কেরাম, এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তাঁর পদংক অনুসরণ করবে তাঁদের উপর। অতঃপর:-

 গুনাহর কারণে বিভিন্ন ক্ষতি রয়েছে, তন্মধ্যে আত্মার ক্ষতি, শারীরিক ক্ষতিসহ ইহকাল ও পরকালের অসংখ্য ক্ষতি রয়েছে। যা একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কেউই অবগতশীল নন।

গুনাহর ক্ষতিসমূহ থেকে আংশিক নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ

১. ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া: গুনাহ করার কারণে মানুষ (মানবজাতি) ধর্মীয় ইলম থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। কেননা ইলম হচ্ছে নূর বা আলো, যে নূর আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির অন্তরে দিয়ে থাকেন, কিন্তু গুনাহ করার কারণে অন্তরে সে নূর নিভে যায়। যেমন- ইমাম শাফী (রঃ) জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললেন; আমি দেখছি যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমার অন্তরে নূর দিয়েছেন, অতএব সে নূরকে গুনাহ দ্বারা নিভিয়ে দিওনা।

২. রিয্ক- জীবিকা হতে বঞ্চিত হওয়া: যেমন হাদীস শরীফে এসেছে যে, নিশ্চয় মানুষ কৃত গুনাহের কারণে রিয্ক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যেমন তাকওয়া (আল্লাহ ভীতির) কারণে রিয্কের মধ্যে প্রাচুর্যতা আসে।

৩. অন্তরে ভীতি অনুভব হওয়া: গুনাহগার গুনাহর কারণে অন্তরের মধ্যে আল্লাহ ও তার মধ্যে ভয়-ভীতি অনুভব করে।

৪. গুনাহগারের জন্য কাজসমূহ কঠিন হয়ে যাওয়া: গুনাহকারী গুনাহ করার কারণে যে দিকে যায়, সে দিকে তার সকল কাজসমূহ কঠিন হয়ে যায়। গুনাহকারী যেদিকে যাক না কেন, তার প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ( আল্লাহ তা’আলা সকলকে হেফাজত করুন, আমীন)

৫. ইবাদত করার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া: অনেক গুনাহগার ব্যক্তি স্বীয় গুনাহর কারণে ভালোকাজ ও আনুগত্য করার তাওফীকে ধন্য হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যে ভালো কাজ গুলি দুনিয়া ও তার মধ্যবর্তী সবচেয়ে সর্বোত্তম হতো।

৬. গুনাহের কারণে আল্লাহর নিকট লাঞ্ছিত হওয়া: যেমন- হাসান বসরী (রঃ) বলেন; গুনাহগার আল্লাহর নিকট লাঞ্ছিত বলেই গুনাহ করে থাকে। আর যারা আনুগত্যশীল ইবাদতকারী আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে গুনাহ থেকে হেফাজতে রাখেন।

৭. গুনাহ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ধ্বংস করে দেয়: কেননা আকল (বিবেক-বুদ্ধি) এর জন্য রয়েছে একটি আলো, গুনাহ জ্ঞানের আলোকে নিভিয়ে দেয়। যখন জ্ঞানের আলো নিভে যায়, তখন তার বিবেক-বুদ্ধি দুর্বল ও অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। যেমন- সালফে সালেহীনদের থেকে কেউ সুন্দর বলেছেন; বিবেকহীন না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার নাফরমানী করে না। কেননা এ কথা সূর্যের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, যখন বিবেক-বুদ্ধি থাকবে তখন তার বিবেক-বুদ্ধি তাকে নাফরমানী করা থেকে বাঁধা প্রদান করবে।

৮. নিশ্চয় যখন গুনাহ বেশী হয় তখন আল্লাহ তা’আলা গুনাহগারের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন:

সালফে সালেহীনদের মধ্য থেকে কেউ সূরা মুতাফফেফীনের ১৪ নম্বর আয়াত দ্বারা প্রমাণ করেছেন; যার অর্থ; “না এটা সত্য নয় বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের উপর মরিচারূপে জমে গেছে” অর্থাৎ গুনাহকারী তার কৃত অবিরাম গুনাহের কারণে তার অন্তরে গুনাহর পর মরিচা লেগে গেছে।

৯. গুনাহর কারণে আয়ু হ্রাস পায়, এবং হায়াতের বরকত কমে যায়: কেননা সৎ আমলের ওসীলায় আয়ু বৃদ্ধি হয় এবং নাফরমানীর কারণে আয়ু হ্রাস পায়। অতএব বান্দা যখন আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য থেকে দূরে সরে যাবে এবং একের পর এক নাফরমানী করতে থাকে তখন তার জীবন তার জন্য ধ্বংসাক্তকতায় পরিণত হয়।

১০. জনৈক ব্যক্তির জন্য ইবরাহীম বিন আদহামের (রঃ) নসীহত:

  গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?

এক ব্যক্তি ইবরাহীম বিন আদহামের (রঃ) নিকট এসে বললো; হে আবু ইসহাক (উপনাম) আমি পাপের দ্বারা নিজের উপর জুলুম করেছি। অতএব আমাকে নসীহত করুন। ইবরাহীম বিন আদহাম (রঃ) বললেন; যদি আমার নিকট থেকে পাঁচটি জিনিস তুমি গ্রহণ করে নাও এবং উহার বাস্তবায়ন করতে পারো তবে কোন পাপ কখনো তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। সে ব্যক্তি তখন বললো, জিনিসগুলো কি কি ? ইবরাহীম বিন আদহাম বললেন; তা হলো: (প্রথমটি)  যখন তুমি আল্লাহ তা’আলার নাফরমানী করতে ইচ্ছা করবে, তখন তাঁর প্রদত্ত জীবিকা ভক্ষণ করবে না। লোকটি তা শুনে বললো যে, তাহলে আমি খাব কোথা থেকে? যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবইতো তাঁর দেওয়া জীবিকা। তখন ইবরাহীম বিন আদহাম বললেন; এটা কি ঠিক, যে তুমি আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা খাবে এবং তাঁরই অবাধ্যতা করবে? সে বললো না।

দ্বিতীয়টি বলুন! ইবরাহীম (রঃ) বললেন; যখন তুমি আল্লাহর অবাধ্যতা করার ইচ্ছা করবে তখন তাঁর যমীনে বসবাস করবে না। লোকটি বললো: এটাতো প্রথমটির চেয়ে আরো কঠিন। তাহলে থাকবো কোথায়? ইবরাহীম (রঃ) বললেন, এটা কি ঠিক যে, তুমি আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা খাবে, তাঁর যমীনে বসবাস করবে, আবার তাঁরই অবাধ্যতা করবে ? লোকাটি বললো না।

তৃতীয়টি বলুন! ইবরাহীম (রঃ) বললেন; যখন তুমি আল্লাহর নাফরমানী করার ইচ্ছা করবে, তখন এমন স্থানে আত্মগোপন করবে, যেখানে তিনি তোমাকে দেখতে না পান! লোকটি বললো, কোথায় যাব? তিনি তো প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সব কিছুর খবর রাখেন। ইবরাহীম (রঃ) বললেন; এটা কি ঠিক যে, তুমি আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক খাবে, তাঁর যমীনে বসবাস করবে, আবার তাঁরই অবাধ্যতা করবে, অথচ তিনি তোমাকে দেখছেন ? লোকাটি বললো না।

  চতুর্থটি বলুন! ইবরাহীম (রঃ) বললেন; যখন মালাকুল মাউত (ফেরেশ্তা) তোমার আত্মা ছিনিয়ে নিতে আসবেন, তখন তাঁকে বলবে আমাকে তাওবা ও নেক আমল করার জন্য সুযোগ দিন। লোকটি বললো: ফেরেশ্তা আমার এ প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না এবং আমাকে সুযোগও দেবেন না। ইবরাহীম (রঃ) বললেন; তুমি যখন তাওবা করার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য মৃত্যুকে দূর করার ক্ষমতা রাখো না, তখন তার অবাধ্যতা কেমনে করো.?

  পঞ্চমটি বলুন! ইবরাহীম (রঃ) বললেন; যখন কিয়ামতের দিবসে জাহান্নামের প্রহরীরা তোমাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে চাইবেন, তখন তুমি তাঁদের সাথে যাবে না। লোকটি বললো: তাঁরাতো আমাকে ছাড়বেন না এবং আমার কোন কথাই শুনবেন না। ইবরাহীম (রঃ) বললেন; তাহলে তুমি মুক্তির আশা কেমনে করছো? লোকটি বললো, এই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি আমার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হচ্ছি। এরপর থেকে যুবকটি নিয়মিত আল্লাহর এবাদতে (আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ পালনে) নিমজ্জিত হয়ে গেল।

নাফরমানী (পাপ) সম্পর্কে পূর্বসূরী (সালাফে সালেহীনদের) মতামতঃ

১. প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন; গুনাহের দ্বারা মুখ কালো হয়ে যায়। অন্তর অন্ধকার হয়ে যায়। জীবিকার বরকত হ্রাস পায় এবং তার ব্যাপারে সৃষ্ট জীবের (আল্লাহর মাখলুকাতের) অন্তরে ঘৃণা জন্মে।

২. ফুযাইল ইবনে আয়াজ (রহঃ) বলেন; তুমি গুনাহকে যে পরিমাণ ছোট মনে করবে সে পরিমাণ গুনাহ আল্লাহর নিকট বড় হবে।

৩. ইমাম আহমদ (রহঃ) বলেন; আমি বেলাল বিন সাঈদকে বলতে শুনেছি , তিনি বলেন যে, গুনাহ ছোট হওয়ার দিকে দৃষ্টি করো না বরং যার নাফরমানী করছো তাঁর বড়ত্বের দিকে দৃষ্টিপাত কর।

৪. ইয়াহিয়া বিন মুআজ আর-রাজী (রহঃ) বলেন; আমি ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করি যে, স্বীয় দোয়ায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে থাকেন এ বলে: হে আল্লাহ! আমার দ্বারা আমার দুশমনদেরকে খুশি করবেন না। অথচ যে ব্যক্তি গুনাহ করে সে, নিজের দুশমন শয়তানকে খুশি করছে।

গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়

গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে পাঁচটি জিনিস থেকে কঠোরভাবে বাঁচতে হবে।

১. শিরক থেকে বাঁচতে হবে, কারণ শিরক মারাত্মক অপরাধ যা তাওহীদকে নষ্ট করে দেয়।

২. বেদআত থেকে বাঁচতে হবে, যা সুন্নাতকে নষ্ট করে দেয়।

৩. মনের ইচ্ছা প্রবৃত্তি থেকে বাঁচতে হবে, যা আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করতে বাধ্য করে।

৪. অলসতা থেকে বাঁচতে হবে , যা আল্লাহর স্মরণ নষ্ট করে দেয়।

৫. মনের কু-প্রবৃত্তি থেকে বাঁচতে হবে, যা আল্লাহর ইবাদতে একাগ্রতাকে নষ্ট করে দেয়।

আল্লাহর না-ফরমানী করার পূর্বে স্মরণ করুন

* যে আল্লাহ তা’আলা আপনার প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল আমলসমূহ দেখছেন। তাঁর নজর থেকে কোন কিছুই লুকায়িত নয়।

* নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলার নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণ আপনার সকল কথাবার্তা কাজ-কর্ম আপনার হিসাব খাতায় (সহিফায়) লিপিবদ্ধ করে রাখছেন। তন্মধ্যে সামান্য সংশয় ও সামান্যটুকু গরমিল হবে না।

* পাপ করার পূর্বে সে দিনকে ভয় করুন যে দিন সূর্য মাথার সন্নিকটে থাকবে তখন মানুষের শরীরের ঘাম অবিরাম ঝড়তে থাকবে।

* পাপ করার পূর্বে সে পুনরুত্থানের দিনকে ভয় করুন। যে দিন মানুষ উলঙ্গ, জুতা বিহীন হবে অর্থাৎ কিয়ামতের দিবসে।

* পাপ করার পূর্বে সে সময়কে সবর্দা স্মরণ করুন, যখন মালাকুল মাউত ফেরেশতা আপনার রুহ কবজ করে নিয়ে যাবেন।

* পাপ করার পূর্বে সে ভয়াবহ আযাব, গজব, চাপ, সংকীর্ণতা, অন্ধকারাচ্ছন্নের অবস্থার কথা স্মরণ করুন, কবর হবে জান্নাতের বাগানসমূহ থেকে একটি বাগান অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহ হতে একটি গর্ত।

* পাপ করার পূর্বে স্মরণ করুন, যে পাপ অন্ধকার আর এ অন্ধকার দ্বারা অন্তর অসুস্থ্য ও দূর্বল হয়ে পড়ে কখনো অন্তর মরে যায়। একথাও স্মরণ করা উচিত, যে গুনাহ এমন মারাত্মক অপরাধ, যার কারণে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যখানে দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়। তখন রহমত ও কল্যাণের পথ বন্ধ হয়ে যায়, আর গজব আযাব ও অকল্যাণের পথ প্রশস্ত হয়। আল্লাহ তা’আলার পাক দরবারে ফরিয়াদ জানাই তিনি আমাদের সকল প্রকার গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। আমীন ॥

Related Post