কয়েকজন নওমুসলিমের সাক্ষাৎকার

কয়েকজন নওমুসলিমের সাক্ষাৎকার

কয়েকজন নওমুসলিমের সাক্ষাৎকার

পূর্বে প্রকাশিতের পর

কেউ মুসলমান হতে চাইলে এবং অল্পদিন পূর্বে মুসলমান হয়েছেন এমন কাউকে পেলে আমি সাধারণতঃ প্রশ্ন করে থাকি যে, সে কি দেখে মুসলমান হতে চায় এবং কি দেখে মুসলমান হয়েছেন। এর জবাবে মাত্র কয়েকটি জবাবই ঘরে ফিরে আসতে থাকে। এই ধরনের কয়েকটি সাক্ষাৎকার এখানে দেয়া হলোঃ

১। অতি সম্প্রতি দিনাজপুর জেলার চরকাইয়ের একটি মেয়ে যার বর্তমান নাম ‘লায়লা বেগম’ পূর্বের নাম ‘সপ্তামী’। আমার নিকট ইসলাম গ্রহণের জন্য আসলে তাকে ইসলাম গ্রহণ করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে বললো: “হিন্দু ধর্মের কোন বিধিবিধিানই আমার কাছে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় না এবং ব্রাহ্মণদের পক্ষপাতদুষ্ট রীতি-নীতি আমার মনকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। এরই পাশাপাশি জুটে যায় ইসলাম বুঝার একটা সুযোগ। সুযোগটা হল এই যে, আমার পড়ার সময় স্কুলে কোন হিন্দু ধর্মের শিক্ষক না থাকায় আমাকে ইসলামিয়াত পড়তে হয়্ তাতে দেখি ইসলামের প্রতিটি বিধি বিধানই যুক্তিভিত্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত। এসব দেখেই আমার মন ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে।”

২। সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার নাকতাড়া গ্রামের নও মুসলিম নাসিরুদ্দীন, পূর্বে নাম ‘নিতাই চন্দ্র মন্ডল’ তাকে জিজ্ঞেস করায় সে বললো ঃ

“আমাদের কালি তলায় মনসার ভোগ দেয়া হত। আর বলা হত এসব ভোগের মিষ্টি কেউ খেলে তার গলা দিয়ে রক্ত উঠে মারা যাবে। আমি একবার লোভ সামলাতে না পেরে তার কিছু মিষ্টি খেয়ে ফেলি। পর মা’র কাছে বলায় মাতো খুবই শংকিত হয়ে পড়েন যে, আমি হয়ত মরে যাব। মায়ের ভয় দেখে আমি আরও বেশি ভীত হয়ে পড়ি এবং মরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। এরপর যখন আর মরলামই না তখন আমার মন বলে উঠল হিন্দু ধর্ম অবশ্যই কোন সত্য ধর্ম হতে পারে না এরপর হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন অযৌক্তিক নিয়ম-কানুন দেখে আমার মন নিজ ধর্মের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠে। পরে ইসলাম ধর্মকে বুঝার চেষ্টা করি। এই চেষ্টার প্রথমেই আমার চোখে ধরা পড়ে ইসলামের সাম্য। দেখি নামাযের ইমামতিতে কোন বিশেষ শ্রেণীর একচেটিয়া অধিকার নেই যেমন আছে পূজার পুরোহিত ঠাকুরদের। আর দেখি বিবাহ শাদীর ব্যাপারেও ইসলামে কোন শ্রেণী ভেদাভেদ নেই। এ সব দেখেই আমি ইসলাম গ্রহণ করি।”

৩। হাসানুল বান্না পূর্বের নাম ‘দেব দুলাল সাহা’ শরীয়তপুর। তার ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বললোঃ

“আমি কমিউনিজমের বই পড়ে ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ি। পরে দেখি কমিউনিষ্টিরা ধর্মের যে সব দুর্বল দিকগুলোর সমালোচনা করে তা হিন্দু ধর্মের মধ্যে রয়েছে। এ দেখে আমি মনে মনে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে কমিউনিষ্ট হয়ে যাই। তারপর সৌভাগ্য বশতঃ আমার প্রতিবেশীদের মধ্যে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা ছিল। তাদের নিকট থেক মিসরের শহীদ হাসানুল বান্না  মাওলানা মওদুদীর কিছু বই পড়ি। এবং আমার ধারণা পালটে যায়। আমি বুঝতে পারি হিন্দু ধর্মের তুলনায় কমিউনিজম ভাল ঠিকই কিন্তু কমিউনিজমের তুলনায় ইসলাম শত সহস্রগুণ ভাল। এ বুঝ পরিষ্কার হওয়ার পরই আমি ইসলাম গ্রহণ করি। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেকটি কমিউনিষ্ট যদি আমার মত নিরপেক্ষ মন নিয়ে ইসলামকে বুঝার চেষ্টা করে তবে হিন্দুদেরও পূর্বে তারাই হবে মুসলমান। কারণ তারা যা চায় তা যে কমিউনিজমে নেই আছে বরং একমাত্র ইসলামেই তা তারা অবশ্যই বুঝবে যদি তারা আমার ন্যায় ইসলামের বই পত্র পড়ে।”

৪। ইসমাঈল হোসেন দিনাজী এম.এ পূর্বনাম ‘শুনেন্দ্র নাথ রায়’ দিনাজপুর। তাকে ইসলাম গ্রহণের কারণ জিজ্ঞেস করলে সে জানালঃ

“স্কুল জীবনে আমি স্বরসতী ভক্ত ছিলাম। পাড়ার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উৎসাহ দিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে স্বরসতীর পূজা করতাম। আমাদের গুরুজনেরা বলতেন ‘মা’ স্বরসতী বর দিলে বড় বিদ্বান হওয়া যায়-ক্লাশে ফাষ্ট হওয়া যায়। ক্লাশে ফাষ্ট হওয়ার জন্য আমি কায়মনে স্বরসতীর পূজা করতাম। কিন্তু দেখা গেল এত পূজা অর্চনা করেও আমি ফাষ্ট হতে পারলাম না; ফাস্ট হয় মুসলমান ছেলেরা। যারা ফাষ্ট হয় তারা কখনও স্বরসতীর পূজা তো করেই না বরং মাঝে মধ্যে স্বরসতীকে আমাদের সাথে ব্যঙ্গ তামাসা করে। এতে আমার ধারণা হলো স্বরসতীতে কিছুই নেই। এভাবে গোটা পূজা পার্বনই আমার কিশোর মনে একটা ভাওতা ও মনগড়া বলে মনে হল। ক্রমান্বয়ে আমি অন্যান্য ধর্মের প্রতি কৌতুহলী  হয়ে পড়ি এবং সময় পেলেই খ্রীষ্ট ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত বই পুস্তক পাঠ করি। অবশেষে ইসলামই যে একমাত্র সত্য ধর্ম ও সঠিক জীবন ব্যবস্থা তা আমার জ্ঞান পরিস্ফুট হয়ে উঠে। অবশেষে সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আমি ইসলাম গ্রহণ করি।”

৫। শরীফ মোহাম্মদ আলী এম.এ পুর্ব নাম ‘অনন্ত কুমার দে’ গ্রাম মুন্সেফপুর, রুপদিয়া, যশোর। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বললোঃ

‘‘ইতিহাস ও বিভিন্ন গ্রন্থ  পাঠে জানতে পেলাম “ভগবানের তৈরী অনেক বিধানই মানুষ পালটে দিয়েছে। যেমন হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা সতীদাহ প্রথা বৃটিশ আমলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর তা হিন্দু ঠাকুর পুরোহিতদের সাথে সলা পরামর্শ করেই করা হয়েছে। বিভাগোত্তর ভারতেও হরিজন সংক্রান্ত ভগবানের অনেক বিধান পাল্টানো হয়েছে। এতে আমার ধারণা হয়েছে যে এ ধর্মের ভগবানের ভুল সংশোধন করে মানুষ। অথচ সে মানুষই অর্বাচীনের মত সে ভগবানকে পূজা করে। পক্ষান্তরে মানুষের ভুল সংশোধন করে মুসলমানদের আল্লাহ। এ সব চিন্তা করার পর হতে হিন্দু ধর্মের প্রতি আমি আস্থা হারাতে থাকি এবং সঠিক সত্যের সন্ধানে ইসলাম ধর্মের গ্রন্থাবলী অধ্যায়ন করে ইসলামের প্রতি ঝুঁকে পড়ি। অবশেষে সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছুড়ে ফেলে ইসলাম গ্রহণ করি।”

বহু নওমুসলিমের নিকট থেকে এ ধরনের জবাব আমরা পেয়েছি। আমি মনে করি বুদ্ধিমান জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য এর চাইতে বেশি যুক্তির কোন প্রয়োজন নেই। মনকে নিরপেক্ষ করে যারাই সঠিক চিন্তা করবেন তাদেরই জ্ঞানে যা মহাসত্য তা ধরা পড়বে। তাই আপনার প্রতি আমার অনুরোধ, আপনি চিন্তা করুন আপনার নিজের স্বার্থেই-মৃত্যুর পর আর চিন্তার সময় থাকবে না। তখন স্বচক্ষে জাহান্নাম দেখতে হবে এবং চিরদিন সেখানে বসবাসের দুঃসংবাদ শুনতে হবে। শুনতে হবে বহু মুসলমানকেও। কাজেই অমুসলমানদেরকে বলি মুসলান হতে আর মুসলমানদেরকেও বলি খাঁটি মুসলমান হতে। আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন। আমীন

Related Post