পিতা-মাতার খিদমত

imagesCAP1Z3VAপবিত্র কুরআনের সূরা বনি ইসরাঈলে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার পালনকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যববহার করো’। ইমাম কুরতুবি রহ: বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতার আদব, সম্মান ও তাদের সাথে সদ্ব্যববহার করাকে নিজের ইবাবদতের সাথে একত্র করে ফরজ করে দিয়েছেন।পিতা-মাতার আনুগত্য এবং তাদের সাথে সদাচরণকে জিহাদের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যত ধরনের বান্দার হক আছে এর মধ্যে সর্বাগ্রে পিতা-মাতার হক। এর চেয়ে সম্মানিত ও বাধ্যতামূলক হক দুনিয়াতে আর কিছুই নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতাকে মানুষ সৃষ্টির উপকরণ বানিয়েছেন। এ জন্য তাদের হকও সবচেয়ে বেশি।
উলামায়ে কেরাম লিখেছেন, পিতা-মাতার নিজ সন্তানাদির সাথে যে মহব্বত হয়, এতে কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। এ ভালোবাসায় নিজের কোনো উপকারও উদ্দেশ্য হিসেবে শামিল হয় না। এ ছাড়া কোনো ভালোবাসাই উদ্দেশ্যমুক্ত নয়। যেমন স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসায়ও উদ্দেশ্য থাকে। ভাই ভাইকে ভালোবাসে, বন্ধু বন্ধুকে ভালোবাসে  এসবের মধ্যেও উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু এক মহব্বত আছে সব উদ্দেশ্য থেকে পবিত্র। এটি পিতা-মাতার মহব্বত। অর্থাৎ পিতা-মাতা তার সন্তানকে যে মহব্বত করে, তাতে তার সত্তার কোনো উদ্দেশ্য সম্পৃক্ত হয় না। তাদের কামনা হয় যে, জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তান যেন উপকৃত হয়।

এ জন্য আল্লাহ তায়ালা হকগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থানকে সর্বোচ্চ রেখেছেন। এমনকি আল্লাহর পথে জিহাদের ওপরও তাকে অগ্রগণ্য করেছেন। মনে রাখতে হবে, যদ্দিন পিতা-মাতা জীবিত থাকেন, এটা এত বড় নেয়ামত যে, ভূপৃষ্ঠে মাটির উপরি ভাগে এর চেয়ে বড় কোনো নেয়ামত নেই। যেমন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কেউ পিতা-মাতাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও মহব্বতের নজরে দেখে, তাহলে এক হজ ও উমরার সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় লিখা হয়।
অন্য এক হাদিসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘বঞ্চিত হোক ওই ব্যক্তি যে তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়ে থাকে, তারপরও তাদের সেবা করে নিজের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমতে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করল যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গোটা দুনিয়ার মানুষের মধ্যে সদাচরণের অধিকারী কে? কার সাথে আমি সবচেয়ে বেশি ভালো ব্যবহার করব? তিনি বললেন, তোমার মাতা। অর্থাৎ সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তোমাদের সদাচরণের উপযুক্ত তোমাদের মাতা। ওই ব্যক্তি ফের প্রশ্ন করল যে, তারপর কে? তিনি দ্বিতীয়বার জবাব দিলেন, তোমার মাতা। ওই ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করল যে, তারপর কে? তিনি ফের জবাব দিলেন, তোমার মাতা। ওই লোক আবার জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তখন চতুর্থবার বললেন  তোমার পিতা।’ আল্লাহর রাসূল সা: তিনবার মায়ের নাম নিলেন, শেষে চতুর্থবার বললেন  তোমার পিতা। আল্লাহর রাসূল সা: তিনবার মায়ের নাম নিলেন, শেষে চতুর্থবার পিতার নাম নিলেন।
এ জন্য উলামায়ে কেরাম বলেছেন, যদি কোনো উপহার উপঢৌকন দিতে হয় তাহলে মাকে বেশি দেয়া উচিত। তারা আরো বলেছেন যে, তবে দু’টি জিনিস ভিন্ন ভিন্ন  একটা হলো সম্মান। এতে পিতার হক মায়ের চেয়েও বেশি। আর দ্বিতীয়টি হলো সদাচরণ এবং সেবা। এতে মায়ের হক পিতার চেয়েও অগ্রগণ্য। সম্মানের উদ্দেশ্য হলো  অন্তরে তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বেশি থাকবে। অবশ্য সম্মানের শর্তাবলি ও আদবে পিতার হক অগ্রগণ্য। কিন্তু যেখানেই সেবার সম্পর্ক আছে সেখানে মায়ের হক বা অধিকার অগ্রগণ্য। আর পিতার তুলনায় তিন-চতুর্থাংশ বেশি।
তা ছাড়া হাদিস শরিফের দ্বারা প্রমাণিত যে, পিতা-মাতার খিদমতের মাধ্যমে জান্নাতপ্রাপ্তি সহজ হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পিতা-মাতার খিদমত করার তাওফিক দান করুন।

Related Post