[dropcap font=”helvetica” fontsize=”16″][/dropcap]
পূর্বে প্রকাশিতের পর
(শেষ পর্ব)
একটি পর্যালোচনা
আমরা এ পর্যন্ত মুহাম্মদ (সঃ)-এর ‘জন্মের পর থেকে নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত’ শিরোনামে তাঁর জীবনের নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত নানা দিক সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যাকে প্রেরণের উদ্দেশ্যই ছিল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতার সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। তৎকালীন অশান্তময় পৃথিবীতে যার আগমন ছিল দুনিয়ায় বসবাসকারী মানুষের প্রতি বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহর পরম আশীর্বাদ স্বরূপ। বিপর্যস্ত মানুষের শান্তি তথা বিশ্ব শান্তির জন্য যাকে প্রেরণ করে আল্লাহ পাক নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন,“আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” যাঁর আগমনের পূর্বাভাষও শুরু হয়ে ছিল অসংখ্য কল্যাণময় দিক নিয়ে যেমন, তাঁর জন্মের ৫০ দিন পূর্বে আল্লাহ আক্রমণকারী ইয়ামানের শক্তিশালী বাদশাহ আব্রাহা তার সৈন্যসহ সমূলে ধ্বংস হয়েছিল। মক্কায় তখন মহা দুর্ভিক্ষ চলছিল, তিনি তাঁর মায়ের গর্ভে আসার সাথেই দুর্ভিক্ষ অবসান হতে লাগল। হারিয়ে যাওয়া যমযম কূপের সন্ধান পাওয়া গেল। তাঁর মা জননী আমেনা বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ তার পেটে অবস্থান নেয়ার সাথেই সারা বিশ্বে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে পড়ল, যার সাহায্যে তিনি সুদূর সিরিয়ার রাজ প্রাসাদসমূহ পরিস্কার দেখতে ছিলেন। এমনিভাবে আরও অসংখ্য ঘটনা পৃথিবীতে ঘটতে ছিল। অতঃপর তিনি যখন জন্মগ্রহণ করলেন, মক্কায় তখন ভূ-কম্প দ্বারা মূর্তি গুলো ভেঙ্গে চুরমার হতে লাগল। জ্বিনদের আসমান থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল। অপর দিকে পারস্য সম্রাটের রাজমহলে ভূ-কম্পনের আঘাতে রাজমহলের ১৪টি স্তম্ভ ধ্বসে পড়ে ছিল। এক দিকে শান্তির আগমন অপর দিকে বাতিলের মাথায় আঘাত। তাইত আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন,“ আমি সত্য দ্বারা আঘাত হানি মিথ্যার উপর ফলে সত্য মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।”( আম্বিয়া-১৮)। জন্মের পর যেখানেই তাঁর অবস্থান সেখানেই কল্যাণের জোয়ার। হালিমা সা’দিয়া বর্ণনা করেন, আমি এতটা অসহায় ছিলাম যে, আমার উটে দুধ ছিলনা। খাদ্যাভাবে খুবই দুর্বল ছিল, আমার নিজের সন্তান দুধের অভাবে হীনবল হয়ে পড়ে ছিল। এমনই এক করূণ পরিস্থিতিতে কোন ধনী লোকের সন্তান লালন-পালনের জন্য যখন কেউ আমাকে পছন্দ করলনা, তখন অনন্যপায় হয়ে এতিম শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গ্রহণ করলাম। তাঁকে গ্রহণ করার সাথে সাথেই আমার দৈন্য দশা দূর হতে লাগল। আমার উট শক্তিশালী হয়ে সবার আগে চলতে লাগল। আমার ফসলাদি থেকে আরম্ভ করে সব কিছুতেই বরকত হতে লাগল। এমন কি বনী-সা’য়াদ গোত্রের প্রত্যেকের ঘর থেকে সু-ঘ্রাণ বাহির হতে লাগল। এমনিভাবে আরও নানা ধরনের বরকত বিশ্ববাসী উপলব্ধি করতে ছিল। এসবই ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য বিশেষ রহমত ও সহযোগিতা। মানব জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত হল মানব জীবনকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গড়ে তোলা এবং সমাজ ব্যবস্থায় কার্যকরভাবে ভারসাম্য ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা। মানব জাতির ত্রাণকর্তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন সে কাজটি শুরু করেছিলেন শিশু কাল থেকেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুধ মাতা হালিমা সা’দিয়া বর্ণনা করেন, শিশুকালে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও আমার দুটি স্তন পান করাতে পারিনি। সব সময় একটি স্তন থেকে দুধ পান করেছেন, অপরটি তাঁর দুধ ভাইয়ের জন্য রেখেছেন। মানবাধিকারের প্রতি আল্লাহ পাকের যে নির্দেশ “তোমরা পরস্পরের অধিকার ক্ষুন্ন করোনা” তা যেন তিনি শিশু কাল থেকেই বাস্তবায়ন শুরু করেছিলেন। ১৭ বছর বয়সে তরুণ মুহাম্মদ ওকাজের মেলায় সংগঠিত তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। অন্যায়ভাবে এ যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল কুরাইশদের ওপর। ইতিহাসে যাকে “র্হাবে ফুজ্জার” তথা অন্যায় যুদ্ধ নামে খ্যাত। বাধ্য হয়েই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। স্বক্রিয়ভাবে তিনি আক্রমন করেননি। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এটাই তাঁর জীবনে প্রথম। সে যুগে আরবদের মধ্যে যে, নিষ্ঠুরতা ও বর্বতা লুকিয়ে ছিল তা তিনি স্বচক্ষে অবলোকন করেন। বিনা কারণে মানুষের প্রতি মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, এর আগে তাঁর জানা ছিলনা। তাইত তরুণ মুহাম্মদকে ভাবিয়ে তুলেছিল। যে করেই হোক এর অবসান করার একটা পথ বের করতেই হবে। যার ফলশ্রুতিতে তিনি আরবদের কতিপয় যুবকদের নিয়ে গঠিত “হিল্ফুল্ ফুযুল” নামে একটি সেবা সংঘের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন। সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কর্মসূচী তাঁরা গ্রহণ করেছিলেন সে গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল- (১) আমরা নিস্ব-অসহায় ও দূর্গতদের সাহায্য করব। (২) আমরা দেশ থেকে অশান্তি দূর করে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করব। (৩) পথিকের জান-মালের হেফাজত করব। (৪) বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের চেষ্টা করব। (৫) কোনো যালেমকে মক্কায় আশ্রয় দেব না ইত্যাদি।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিচালিত সেবা সংঘের (হিল্ফুল্ ফুযুল)-এর মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগলেন। কোথায়ও কোন্ অনাথ বালক ক্ষুধার জ্বালায় ক্রন্দন করছে, কোথায় কোন্ দুস্থ পীড়িত রুগ্ন ব্যক্তি আর্তনাদ করছে, কোথায় কোন্ বিধবা নারী নিরাশ্রয় হয়েছে, এগুলোই তিনি সন্ধান করতেন। এতিম শিশুকে তিনি কোলে নিয়ে আদর করতেন। কোথায়ও বা রোগীর পাসে বসে তার পরিচর্যা করতেন। প্রতিবেশীকে সাহায্য করার জন্য তিনি সদা প্রস্তুত থাকতেন। মানবতার কল্যাণের জন্য নিজের সমস্ত সহায় সম্বল অকাতরে বিলিয়ে দিলেন অথচ তার বিনিময়ে তিনি কিছুই গ্রহণ করলেন না। এমন ত্যাগের তুলনা কোথাও আছে কি? মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের লাভজনক ব্যবসা-বাণিজ্যকে কুরবানী করলেন, তা থেকে উপার্জিত সমস্ত পুঁজি এ মহৎ কাজের জন্য উৎসর্গ করলেন। এমনিভাবে তিনি মানব সেবায় ব্যস্ত থাকতেন। এই সেবা, ত্যাগ, ও মানবপ্রীতি কি কখনও বৃথা যেতে পারে ? সত্যিকার চেষ্টা ও নিঃস্বার্থ সেবা মানুষ কত দিন অস্বীকার করে চলবে ? তাইত আরবগণ দিন দিন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগলেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে একজন সত্যবাদী মানুষ, এ বিশ্বাস সকলের মনে বদ্ধমূল হয়ে গেল। অবশেষে আরবগণ এক বাক্যে তাঁকে “ আল্-আমীন” উপাধি দান করলেন। নীতি-ধর্ম বিবর্জিত, ঈর্ষা-বিদ্বেষ কলুষিত, পরশ্রী কাতর দুর্ধর্ষ আরবদের নিকট এতটুকুন সম্মান পাওয়া তখন কারও পক্ষে সহজ সাধ্য ছিলনা। অনুপম চরিত্র আর মাধুর্য, সততা আন্তরিকতা, আমানতদারী, কথায় কাজে অপূর্ব সমন্বয় ও অকৃত্রিম মানব প্রেম ছিল বলেই তাঁর পক্ষে এমনটা সম্ভব হয়েছে। তৎকালীন সময় কা’বা ঘরটি নানা কারণে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল। তাই ঘরটি সংস্কারের জন্য আরবরা সম্মিলিত ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্যে আরবদের বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা কা’বা-ঘরের বিভিন্ন অংশ ভাগ করে নিল। কিন্তু কা’বা ঘরের দেয়ালে যখন ‘হাজরে আসওয়াদ’ (কালো পাথর) বসানোর সময় এল তখন বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁেধ গেল। অবস্থা এতদূর পর্যন্ত গড়াল যে, অনেকের তলোয়ার পর্যন্ত কোষমুক্ত হল। চারদিন পর্যন্ত এ ঝগড়া চলতে থাকল। পঞ্চম দিনে আবু উমাইয়া বিন মুগীরা প্রস্তাব করেন যে, আগামীকাল সকালে যে ব্যক্তি কা’বা-ঘরে সবার আগে হাজির হবে, এর মীমাংসার দায়িত্ব তাকেই দেয়া হবে। সে যা সিদ্ধান্ত দিবে, তা-ই পালন করা হবে। সবাই এ প্রস্থাব মেনে নিল। পরদিন সকালে যার আগমন ঘটল তিনি ছিলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ফয়সালা অনুযায়ী তিনি ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন করতে ইচ্ছুক প্রতিটি গোত্রের একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে বললেন। অতঃপর একটি চাদর বিছিয়ে তিনি নিজ হাতে পাথরটিকে তার ওপর রাখলেন এবং বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধিগণকে চাদরের প্রান্ত ধরে পাথরটিকে ওপরে তুলতে বললেন। চাদরটি তার নির্দিষ্ট স্থান বরাবর পৌঁছলে তিনি পাথরটিকে যথা স্থানে নিজ হাতে স্থাপন করলেন। এতে সবাই খুশী হলেন এবং আসন্ন যুদ্ধের মহা বিপর্যয় থেকে জাতীকে রক্ষা করলেন। এখানে সাম্য-মৈত্রীর যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করলেন, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। জীবনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দিয়েও সমাজে পরিপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। অথচ তাঁর জীবনের কোন অংশেই ব্যর্থতা ছিলনা। তাহলে কোথায় ছিল সমস্যা, কিসের অভাব, এ চিন্তায় তাঁকে ব্যাকুল করে তুলল। তিনি গভীরভাবে ভাবতে লাগলেন, তাহলে কোন নীতিমালার ভিত্তিতে সমাজে শান্তি আসতে পারে। আসল কথা হল, সকল মানুষের মধ্যে দু ধরনের গুণাবলীর সমাবেশ থাকে। ভালো ও মন্দ; সুতরাং মানবের আত্মিক উৎকর্ষ সাধন ও সফলতা লাভের জন্যে প্রয়োজন তার ভাল স্বভাবের কাছে মন্দ স্বভাবের পরাজয় বশ্যতা স্বীকার। অন্যথায় মানুষের দৃষ্টিসীমার আনন্দে সজ্জিত পার্থিব বিলাস সামগ্রী, লোভ লালসার সমূহ আয়োজন, অনর্থক কামতাড়না আর বিস্মৃতির আচ্ছাদনে তার সেই প্রাকৃতিক সুস্থতা বেঁচে থাকতে পারে না। ফলে তার স্বচ্ছ অনুভব আর আবিষ্কার ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ অসুস্থতায় মানুষের রুচি নষ্ট হলে যেমন ভাল খাবারও তিক্ত বলে অনুভূত হয় তেমনি আত্মিক অনুভূতির ধ্বংস হলে, বিবেকের প্রাকৃতিক স্বচ্ছতা ও সুস্থতা হারিয়ে গেলে তার কাছে ভাল-মন্দ পার্থক্যকরণের শক্তি হারিয়ে যায়। তখন মানুষ তার পাশবিকতার কাছে পরাজয়ের মাধ্যমে মানুষের মনুষত্য, নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে পশু স্বভাবে পরিণত হয়। ফলে মানুষ তখন তার ভাল-মন্দ বিচার করতে পারে না। সুতরাং মানুষকে মানুষ হয়ে বাঁচতে হলে প্রয়োজন রিসালাতের। এটা মানুষের ভাল-মন্দ নির্ভুলভাবে বিচার করার একমাত্র মানদন্ড। মানুষকে ভাল কাজে পরস্পর সহযোগিতা আর মন্দ কাজে বাধা দান, এরই উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে বেঁচে থাকার সমূহ উপকরণ। মানব জীবনের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে কল্যাণমূলক কার্যক্ষেত্রে সংঘবদ্ধতা ও পারস্পারিক সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। পারস্পারিক এই সংঘবদ্ধতা ছাড়া মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারে না। সংরক্ষিত থাকে না মানুষের জান-মাল ইজ্জত আবরু। আসলে জীবন ধারণ ও জান মাল ইজ্জত আবরু সংরক্ষণের এই নীতিমালার নাম শরীয়ত। যা রিসালাতের অন্তর্ভূক্ত। অন্যায় কাজে বাধা দানে সু-সংহত হয় সম্পদের নিরাপত্তা ও জীবনের স্বস্তি। সুতরাং সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে বাধা দানের নীতিমালার সুস্থতা-অসুস্থতার উপর নির্ভর করে পুরো মানব জীবনের শান্তির নিশ্চয়তা। তাই এ নীতিমালা প্রণয়ন হওয়া উচিত এমন এক সত্তার হাতে যিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞাত, সকল প্রকার পক্ষপাত থেকে মুক্ত। মানুষের দ্বারা এ ধরনের নীতিমালা তৈরী করা অসম্ভব। সকল মানুষের জন্যে সমভাবে প্রযোজ্য এমন নীতিমালা কেবল ওহীয়ে ইলাহীর আলোকেই রচিত হওয়া সম্ভব। আর এটাই হল রিসালাত। আর রিসালাত যিনি পরিচালনা করবেন তার প্রয়োজন নবুওয়াত। নবুওয়াত ও রিসালাত বিহীন সমাজ ব্যবস্থায় শান্তি কোন দিনও সম্ভব নয়, যা প্রমাণিত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম থেকে নবুয়্যাতের আগ পর্যন্ত জীবনে। তাঁর মত এমন মানব দরদী, যোগ্য, নিঃস্বার্থ, চরিত্রবান, যার প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা করেছেন। তিনিই যেখানে দীর্ঘ চল্লিশটি বছর আপ্রাণ চেষ্টা করেও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি শুধু নবুওয়্যাত ও রিসালাত না থাকার কারণে। সেখানে আমরা কি করে নবুওয়্যাত ও রিসালাতের সেই আদর্শ বাদ দিয়ে নিজেদের মন গড়া আদর্শ দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা করতে পারি? মূলত: মানব জীবনের সকল সমস্যার সুন্দরতম সমাধানের মাধ্যমে অনন্ত অসীম সফলতার এক জ্যুতিময় পয়গাম হল রিসালাত। রিসালাতের অমিয় পরশে জীবন ভাস্বরিত হয় অলৌকিক প্রজ্ঞাময়তায়-অদৃশ্য শক্তিতে হয় বলীয়ান। বান্দা ও রবের মধুময় গভীর বাঁধনে জীবন হয় দেদীপ্যমান। বয়ে চলে জীবনস্রোত অনাবিল সুখ, অন্তহীন সার্থকতা ও চিরন্তন সফলতার স্বর্গপানে। বড়ই সার্থক সে জীবন রিসালাতের ছোঁয়ায় যে হয়েছে আন্দোলিত, স্পন্দিত ও অনুগত। আমরা তার বাস্তবতা উপলদ্ধি করব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়্যাতের পরবর্তী জীবনী থেকে। পরবর্তীতে নবুয়্যাতের সূচনা থেকে হিজরতের আগ পর্যন্ত ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়্যাতের মক্কী জীবন’ শিরনামে তাঁর জীবনের দ্বিতীয় পর্যায় আলোকপাত করব, ইন্শা আল্লাহ।