হাদীসের আলোকে শাবান মাসে করণীয়

হাদীসের আলোকে শাবান মাসে করণীয়

হাদীসের আলোকে শাবান মাসে করণীয়

চান্দ্র মাসের অষ্টম মাস পবিত্র শা’বান মাস। এ মাস হাদীসের আলোকে একটি ফযীলত ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। মুসলিম উম্মাহর জন্য এ মাসে কিছু করণীয় রয়েছে; যা সংক্ষেপে নিচে আলোচনা কর হলোঃ
১. দুআ করা: অর্থাৎ শা’বান মাসে কিংবা তারো আগ থেকেই রমযানের বরকত পাওয়ার জন্য আল্লাহর সমীপে দোয়া করা, মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে রমযানের বরকত পাওয়ার তাওফীক দান করেন। সালফে সালেহীন বা পূর্বসূরীগণ রমযান মাস আগমনের ছয় মাস পূর্ব থেকে রমযানের বরকতের জন্য দোয়া করতেন, এবং রমযানের পরেও আরো ছয় মাস দোয়া করতেন, যেন রমযান মাসে কৃত আমল আল্লাহ কবুল করেন।
২. সাভাবিকভাবে সকল ইবাদতই করা: যেমন এর পূর্বের মাস গুলোতে করা হয়েছে, তেমনি তা এ মাসেও করাতে শরীয়তের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই  শুধুমাত্র মধ্য শা’বানের পর হতে সিয়াম পালন ব্যতীত।  কারণ রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “শা’বান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা আর রোযা রেখ না।  (মুসনাদ আহমাদ (২/৪৪২), আবু দাউদ)
৩. হিজরী মাসের হিসাব রাখা: এই যুগে তো হিজরী মাসের হিসাব রাখার লোকের খুবই অভাব। ইংরেজি তারিখের হিসাব সকলেই জানি। কিন্তু স্মরণ রাখা দরকার যে, ইসলামের সকল আমলই হিজরী বা চান্দ্র মাসের হিসেবে হয়ে থাকে। তাই শা’বানের দিন, তারিখ গণনা করা দরকার, যেন রমযান মাসের শুরুটা সঠিকভাবে অনুধাবন করা যায়। এবং রমযানের বরকত হাসিল করা যায়। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রমযানে অধিক ইবাদতের জন্য সময়-সুযোগ বের করতেন। মানসিকভাবে তৈরি হতেন। আর এ কারণেই তিনি পবিত্র শা’বানের দিন, তারিখ গুরুত্বসহকারে হিসাব রাখতেন। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন; রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বানের (দিন, তারিখ হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন যা অন্য কোনো মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৮)
৪. বেশি বেশি নফল রোযা রাখা:  শা’বান মাসে অধিকহারে নফল রোযা রাখা উত্তম। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। উম্মে সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; আমি নবী করিম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শা’বান ও রমযান ব্যতীত দুই মাস একাধারে রোযা রাখতে দেখিনি। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন; আমি নবী করিম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শা’বান মাসের মত এত অধিক (নফল) রোযা রাখতে আর দেখিনি। এ মাসের অল্প কিছুদিন ব্যতীত বরং বলতে গেলে পুরো মাসটাই তিনি নফল রোযা রাখতেন। (জা‘মে তিরমিযী ১/১৫৫)।
তবে খুবই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ১৫ই শা’বান দিনে রোযা ও পূর্বের রাতকে বিশেষ গুরুত দিয়ে আমল করার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। তাই যারা অন্যান্য দিন বা রাতে নফল ইবাদত করেন না, তাদের জন্য শুধু এই রাতকে নির্দিষ্ট করে ইবাদত করা বিদআত হবে। কেননা রাসূল (সা.) হতে  মধ্য শা’বানের ফযীলত সম্পর্কে এবং একটি রোযা রাখার স্বপক্ষে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে  কোন সহীহ বা মারফু কিংবা মুত্তাসিল হাদীস বর্ণিত হয়নি।
৫. যারা প্রতি মাসে “আইয়ামে বীয” এর তিন দিন অর্থাৎ ১৩, ১৪ ও ১৫ তারীখে নফল সিয়ামে অভ্যস্ত তারা এ মাসেও উক্ত নিয়তেই সিয়াম পালন করবেন।
৬. যারা প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল সিয়ামে অভ্যস্ত তারা এ মাসেও উক্ত দিনগুলিতে সিয়াম পালন করবেন  যদিও তা কখনও ভাগ্যক্রমে ১৫ শাবান হলেও তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে না, যদি তা শবে বরাতের নিয়তে পালন না করা হয়।
৭. মানতের সিয়াম: কেউ যদি বৈধ কোন কাজ সম্পাদনের জন্য মানত করেন, তিনি শা’বানের পনের তারিখে মানতের নিয়তে রোযা রাখতে পারবেন।
৮. ক্বাযা সিয়াম আদায় করা:  আবু সালামা রায়িযাল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি, আমার রমযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শা’বান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না  (বুখারী, মুসলিম) ইয়াহইয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন।)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে বিদয়াত মুক্ত ইবাদত করার তাওফীক দান করুন। আমীন ॥

Related Post