ঈমান সম্পর্কে জানার পর শিরক সম্পর্কে জানা ও জরুরি তাই এবার শিরক নিয়ে আলোচনা করব ।
শিরক কী? শিরক মানে- কাউকেও আল্লাহর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা বা আত্মীয় মনে করা। কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বা অংশীদার বলে মনে করা। কাউকেও আল্লাহর সমান মর্যাদা দেয়া।
শিরকের পক্ষে কোনো দলিল-প্রমাণ এবং যুক্তি নেই। শিরক মানুষের কল্পনা প্রসূত মনগড়া এক ভিত্তিহীন মতবাদ।
তাওহীদ ও শিরক
শিরক হলো তাওহীদের বিপরীত। তাওহীদ হলো সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে এক বলে জানা ও মানা। অপরদিকে শিরক হলো সর্বক্ষেত্রে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহর অংশীদার আছে বলে মনে করা।
তাওহীদের মতো শিরকও চার প্রকার। সেগুলো হলো :
এক. আল্লাহর জাত-এর সাথে শিরক করা :
এই শিরককে বলা হয় ‘শিরক বিজ্জাত’ বা আল্লাহর সত্তার সাথে শিরক। অর্থাৎ আল্লাহর অস্তিত্বের সাথে অন্য কারো অস্তিত্ব স্বীকার করা। যেমন:
– একাধিক ইলাহ্ আছে বলে মনে করা শিরক।
– আল্লাহর স্ত্রী, বা পুত্র , বা কন্যা আছে বলে মনে করা শিরক।
– আল্লাহর পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন আছে বলে মনে করা শিরক।
– কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা শিরক।
– আল্লাহকে কারো মুখাপেক্ষী মনে করা শিরক।
– আল্লাহর সৃষ্টি ও সাম্রাজ্যে কেউ তাঁর অংশীদার আছে বলে মনে করা শিরক।
– কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির সাথে আল্লাহর বিশেষ কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে করা শিরক।
দুই. আল্লাহর গুণাবলীতে শিরক করা :
আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলীর মালিক এককভাবে আল্লাহ নিজেই। অন্য কাউকে তাঁর কোনো সিফাতের মালিক মনে করা শিরক। যেমন-
– বিশ্বজাহানের সৃষ্টি ও পরিচালনায় কাউকেও আল্লাহর সংগি-সাথি ও সাহায্যকারী মনে করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া কাউকেও জীবনদাতা মৃত্যুদাতা মনে করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গায়েব জানে বলে মনে করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে রিযিকদাতা মনে করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে বিপদদূরকারী মনে করা শিরক।
– আল্লাহ কারো সুপারিশ অবশ্যি গ্রহণ করেন বলে মনে করা শিরক।
– আল্লাহ কারো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি বান্দার প্রার্থনা শুনেন না কিংবা গ্রহণ করেননা বলে মনে করা শিরক।
তিন. আল্লাহর ক্ষমতায় শিরক করা :
সমস্ত ক্ষমতার মালিক ও উৎস আল্লাহ তায়ালা। এ ক্ষেত্রে-
– আল্লাহ ছাড়া আর কেউ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে বলে মনে করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সর্বশক্তিমান বলে মনে করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ক্ষমতার উৎস মনে করা শিরক।
– কেউ আল্লাহর ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা শিরক।
– আল্লাহর ক্ষমতায় কেউ অংশীদার আছে বলে মনে করা শিরক।
– আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতার উপর কেউ জয়ী হতে পারে বলে মনে করা শিরক।
চার. আল্লাহর অধিকারে শিরক করা :
মানুষের উপর আল্লাহর যেসব অধিকার আছে, সেগুলো বা তার কোনোটি অন্য কাউকেও প্রদান করা শিরক। যেমন-
– আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত-বন্দেগি করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কারো পূজা-উপাসনা করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে প্রার্থনা বা দু’আ করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সাজদা করা শিরক।
– কবরে, মাজারে সাজদা করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় পোষণ করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপর নিশ্চিন্ত ভরসা করা শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে বিনয় ও ভক্তিতে নত হওয়া শিরক।
– আল্লাহ ছাড়া আর কারো ধ্যান করা শিরক।
(ক)শিরক করা মহাপাপ:
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদে বলেন :
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
অর্থ : শিরক আল্লাহর প্রতি এক বিরাট যুলম’। -সূরা ৩১ লোকমান : আয়াত ১৩।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ
অর্থ : ‘আল্লাহর প্রতি শিরক করার পাপ আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না। তবে অন্য যে কোনো পাপ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করতে পারেন।’ -সূরা ৪, আ. : ৪৮।
(খ) মুশরিক কে?
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা সত্ত্বেও কোনো না কোনো দিক থেকে বিশ্বাসে ও কর্মে আল্লাহর সাথে শিরক করে, তারাই মুশরিক। মুশরিকরা চিরদিন জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহর অংশীদার বানায়, কিয়ামতের দিন তারাও মুশরিকদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে। যারা শিরক করে, তাদের পক্ষে কেউ সুপারিশ করবে না।
শিরক মুক্ত হয়ে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনাই প্রকৃত ঈমান।
আজ এ পর্যন্তই । যদি কিছুটা হলেও ভালো লাগে তো জানাবেন এবং কোন ভুল-ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন। । আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদেরকে সকল জ্বীন ও মানুষকে সত্যিকারের ঈমানের স্বাদ পাওয়ার তওফিক দান করূন। আমিন।