শিরক আরবি শব্দ। এর অর্থ অংশীদার করা, তুলনা করা বা সমতুল্য মনে করা। অর্থাৎ আল্লাহর জাত, সিফাত, মতা ও কর্মের সাথে অন্য কারো তুলনা করা, শরিক করা বা সমতুল্য মনে করা। এ ধরনের বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করা, মুখে বলা এবং কার্যে পরিণত করা সবই হারাম।
সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করতে পারেন, কিন্তু শিরকের গুনাহ আল্লাহ মাফ করেন না। সূরা লোকমানের ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন,স্মরণ করো, যখন লোকমান উপদেশ সহকারে তার পুত্রকে বলেছিল, হে বৎস! আল্লাহর কোনো শরিক করিও না। নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম। সূরা নিসার ১১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে মা করেন না, যে তার সাথে কাউকে শরিক করে। এটা ছাড়া যাকে ইচ্ছা মা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হবে।
শিরকের ব্যাপারে রাসূল সা: ও তার সাহাবিদের সতর্কতা : রাসূল সা: ও তার সাহাবিরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিরকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। হজরত আয়েশা রা: ও আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা: শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগকালীন যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় অস্থির ছিলেন সেই মুহূর্তে বললেন, ইহুদি ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক, তারা তাদের পয়গম্বরগণের কবরকে মসজিদ রূপে ব্যবহার করে। এই বলে রাসূল সা: স্বীয় উম্মতকে এ ধরনের অপকর্ম থেকে সতর্ক করেছেন ।(বুখারি ও মুসলিম)। নবী করিম সা: যে গাছটির নিচে বসে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সাহাবায়ে কেরামদের থেকে বায়াত গ্রহণ করছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা এই বায়াত সম্বন্ধে বলেন : মুমিনেরা যখন বৃক্ষতলে আপনার কাছে বায়াত হলো তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন। তাদের তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয় । হজরত উমর রা: তার খেলাফতকালে দেখতে পেলেন, লোকেরা ওই গাছটিকে খুব বেশি বরকতময় গাছ মনে করে তার কাছে খুব বেশি যাতায়াত করে থাকে। ভবিষ্যতে মানুষ শিরক ও বেদাতের মধ্যে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কায় তিনি গাছটির মূলোৎপাটন করে দিলেন, যাতে শিরকের ফেতনা উদ্ভাবিত হতে না পারে। এ ছাড়া নবী করিম সা: মক্কা-মদিনার মধ্যপথে কোনো এক স্থানে নামাজ পড়েছিলেন। হজরত উমর রা: সেই স্থানে কিছু লোককে ফজরের নামাজের পর নামাজ পড়তে দেখে তাদের ওই স্থানে নামাজ পড়তে নিষেধ করলেন। নবী করিম সা: অভিশাপ করেছেন ওই সব স্ত্রীলোককে যারা কবর জিয়ারত করে এবং ওই সব লোকের প্রতি যারা কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণ করে ও বাতি জ্বালায়। (আবু দাউদ, তিরমিজি ও নাসায়ি)।
সুতরাং এ কথা পরিষ্কার যে, কবর পূজা অর্থাৎ কবরকেন্দ্রিক ইবাদত হারাম। আমাদের কেউ কেউ কবরের কাছে গিয়ে অনেক বিনয় ও নম্র ভাবে কাকুতি-মিনতি করে সন্তান চান। মানত করে আবার অসুখ-বিসুখের জন্যও সাহায্য চান। অনেক সময় দেখা যায় যার কাছে সন্তান চাওয়া হয়েছে তার নিজেরই সন্তান নেই। অর্থাৎ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেছে। আর যার কাছে সুস্থতার জন্য সাহায্য চাওয়া হয় সে নিজেই কোনো না কোনো অসুস্থতায় মারা গেছেন। তার কবরের ওপরে আলোবাতি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়, কিন্তু তিনি তো ভেতরে; সেখানে আলো দেবে কে? তিনি যদি সত্যিকার আল্লাহর নেক বান্দা হতেন তাহলে আল্লাহ কি তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন না, অবশ্যই পারেন। আসমান ও জমিনের সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহরই। তিনি বিপদে সাহায্যকারী, তিনি সন্তান দানকারী, তিনিই আশ্রয়দানকারী এবং তিনিই রুজি-রোজগার দানকারী। সূরা ইউনুসের ১০৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো কষ্টে ফেলেন, তবে তিনি ছাড়া অন্য কোনো বিদূরনকারী নেই। আর যদি তিনি কোনো কল্যাণ দান করেন, তবে তার অনুগ্রহকে দূর করার মতো কেউ নেই।সূরা হুদের ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই।
শিরক থেকে আমাদের কেন বাঁচা দরকার :
১. আল্লাহ শিরকের গুনাহ মাফ করেন না, অন্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন।
২. শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে এবং সেখানে চিরকাল থাকবে।
৩. শিরক করা কাফের, মুশরিক ও ইহুদিদের কাজ।
৪. শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম।
৫. তাওহিদের বিপরীত হলো শিরক।
৬. শিরক সর্বপ্রকার গোমরাহি ও ভিত্তিহীন মতের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
৭. শিরককারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম জীব হিসেবে গণ্য হবে।
৮. শিরককারী ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে অভিশপ্ত সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত হয়।
৯. শিরককারীর জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়াও করা যায় না।আসুন আমরা শিরক মুক্ত আমল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি ।