Main Menu

যাকাত: কে, কাকে; কখন, কীভাবে আদায় করবে?

zakat

যাকাত- ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিধান। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা নামায আদায়ের সাথে সাথে অধিকাংশ আয়াতে যাকাত আদায়েরও নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, “নামায কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো”। [দেখুন ২:৪৩, ২:৮৩, ২:১১০, ২৪:৫৬, ৫৮:১৩ ইত্যাদি আয়াতগুলো।]

এসব আয়াতের আলোকে যাকাত ইসলামের অন্যতম অপরিহার্য ফরয দায়িত্ব বলে প্রমাণিত হয়; যার অস্বীকারকারী বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যকারী কাফির বলে গণ্য; আর অনাদায়কারী ফাসিক এবং কঠিন শাস্তির যোগ্য। অথচ এ বিধানটাকে আমরা কতই না অবহেলা করি!

পবিত্র কুরআনের একেবারে শুরুর দিকে, সূরা বাক্বারায়, হেদায়াতপ্রাপ্ত মুত্তাকীদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “…আমার দেয়া রিযক হতে যাকাত প্রদান করে”। এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর ভয় অন্তরে লালন করা ও হেদায়াতের পূর্ণতায় পৌঁছুতে যাকাত প্রদানের কোনো বিকল্প নেই। যে ব্যক্তি যাকাত ফরয হওয়ার পরও তা আদায় করে না, তার পক্ষে পূর্ণ হেদায়াত লাভ করা কখনো সম্ভব নয়।

ভাবতে পারেন, হেদায়াত না-ই পেলাম, হেদায়াত আমার কি-ই-বা দরকার। আতর লাগিয়ে শুক্রবার নামাযে যাচ্ছি; সেজেগুজে ঈদের নামাযে হাজিরা দিচ্ছি; ব্যাস.. মুসলমানের দায়িত্ব তো পালন হলোই; বেহেশত তো পাচ্ছিই; হুর-গেলমান তো থাকবেই; ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু না… যাকাত প্রদান করলে যেমন পাচ্ছেন হেদায়াত ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য, ঠিক তেমনি, না আদায় করলেও প্রস্তুত থাকছে ভয়ানক শাস্তি।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ – يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ

আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার। [৯:৩৪-৩৫]

ত্রিশতম পারার সূরা হুমাযা পুরোটাই যাকাত প্রদান না করার শাস্তির আলোচনায় উৎসর্গিত। দেখুন,

وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ – الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ – يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ – كَلَّا ۖ لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ – وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ – نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ – الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ – إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ – فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ

প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ,যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে। সে মনে করে যে,তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। কখনও না,সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। আপনি কি জানেন,পিষ্টকারী কি ? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি,যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে,লম্বালম্বি খুঁটিতে। [১০৪:১-৯]

বস্তুত, সীমিত পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানাকে ইসলাম স্বীকার করে নিলেও, এ সুযোগে যেন অশুভ পুঁজিতন্ত্র জন্ম লাভ না করতে পারে, সে বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। পুঁজিতন্ত্রের বিকাশ রোধে তাই যাকাতকে ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে অনেক বেশি।

ইসলাম মনে করে, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেয়ার পর কারো যদি ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা সমমূল্যের সম্পদ এক বৎসর কাল পর্যন্ত সঞ্চিত থাকে, তাহলে সে সম্পদশালী। এ ধরনের সম্পদশালী ব্যক্তিদের থেকে রাষ্ট্রের অন্যান্য অভাবী মানুষদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ঐ সঞ্চিত সম্পদের শতকরা ২.৫ টাকা যাকাত প্রদানের দাবি জানায় ইসলাম।

যাকাত আদায়ের বিবিধ উপকারিতা নিম্নরূপ:

১. গরীবের প্রয়োজন পূর্ণ করা; অভিশপ্ত পুঁজিতন্ত্রের মূলোৎপাটন করা; সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসিকতাকে শেষ করে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করা।

২. মুসলমানদের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করা; দারিদ্র বিমোচনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৩. চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই সহ সবরকম অভাবজনিত অপরাধের মূলোৎপাটন করা। গরীব-ধনীর মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করা।

৪. সম্পদের বরকত ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি। নবীজী স. বলেন, ما نقصت صدقة من مال যাকাতের সম্পদ কমে না। [মুসলিম:৬৭৫৭, তিরমিযী:২০২৯] অর্থাৎ, হয়ত দৃশ্যতঃ সম্পদের পরিমাণ কমবে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই স্বল্প সম্পদের মাঝেই বেশি সম্পদের কার্যকারী ক্ষমতা দিয়ে দিবেন।

৫. সম্পদের পরিধি বৃদ্ধি করা। কেননা সম্পদ যখন যাকাতের মাধ্যমে অভাবীদের মাঝে বণ্টিত হয়, তখন এর উপকারিতার পরিধি বিস্তৃত হয়। আর যখন তা ধনীর পকেটে কুক্ষিগত থাকে, তখন এর উপকারিতার পরিধিও সঙ্কীর্ণ হয়।

৬. যাকাত প্রদানকারীর দান ও দয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া; অন্তরে অভাবীর প্রতি মায়া-মমতা সৃষ্টি হওয়া।

৭. কৃপণতার ন্যায় অসৎ গুণ থেকে নিজেকে পবিত্র করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, خذ من أموالهم صدقة تطهرهم وتزكيهم بها তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করো; যেন তুমি সেগুলোকে এর মাধ্যমে পবিত্র ও বরকতময় করতে পার। [৯:১০৩]

৮. সর্বোপরি আল্লাহর বিধান পালন করার মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করা।

যাকাত কখন ফরয হয়:

৭.৫ ভরি স্বর্ণ, ৫২.৫ ভরি রূপা বা সমমূল্যের নিত্য প্রয়োজনোতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলে, এবং এ অবস্থায় এক বছর অতিক্রান্ত হলে। এ হিসাবটাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘নেসাব বলে। অতএব, কারো যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর পর্যন্ত থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

আজ (১১ই জুন, ২০০৯) -এর হিসাব অনুযায়ী:

১ ভরি রূপা= ৫০০ টাকা
.:. ৫২.৫ ভরি রূপা= ২৬,২৫০ টাকা

অতএব কেউ ২৬,২৫০ টাকার মালিক হলে এবং এ অবস্থায় এক বছর অতিক্রান্ত হলে, তার উপর যাকাত ফরয হবে। (২৬,২৫০ টাকায় শতকরা ২.৫ টাকা হিসেবে মাত্র ৬৫৬.২৫ টাকা যাকাত আসে। অতএব ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। 🙂 )

কোন কোন সম্পদে যাকাত আসে:

১. নগদ টাকা-পয়সা, ব্যাংক ব্যালেন্স, বন্ড ও অন্যান্য ফাইন্যানশিয়াল ইন্সট্রুমেন্টস

২. সোনা-রূপা; অর্নামেন্ট, বার যা-ই হোক; তা নিত্যব্যবহার্য হলেও।

৩. ব্যবসার সম্পদ; যা ব্যবসার উদ্দেশে ক্রয়কৃত; কিংবা ব্যবহারের উদ্দেশে ক্রয়ের পর বিক্রয়কৃত। ব্যবসার কাঁচামাল, উৎপাদিত বস্তু, বা, উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা বস্তু। শেয়ারও এ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত।

৪. অন্যান্য প্রয়োজনোতিরিক্ত সম্পদ। টিভিও এ কাতারে অন্তর্ভুক্ত।

কাকে যাকাত দেয়া যাবে:

১. মিসকীন: যার কোনো সম্পদ নেই, মানুষের কাছে হাত পেতে চলে।

২. অভাবী: যার সম্পদ আছে, তবে নেসাব পরিমাণ নেই, কারো কাছে হাতও পাতে না সে, অথচ সে তার প্রয়োজন পূরণে অক্ষম।

এ কাতারে ঋণ আদায়ে অক্ষম ও ভিনদেশী অভাবী মুসাফিরও পড়বে।

চিকিৎসা গ্রহণে অক্ষম ব্যক্তিও এ কাতারে শামিল। অর্থাৎ, কেউ যদি এমনিতে সচ্ছল হয়, কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে অক্ষম হয়, তাহলে তাকেও যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যেতে পারে। তবে শর্ত হলো, চিকিৎসার পর্যায়টা এমন হতে হবে যে, যা না করালেই নয়, এবং যে চিকিৎসা করালে তার সুস্থতাও অনেকটা নিশ্চিত। উদাহরণস্বরূপ, যে চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব, তা যদি সিরফ বিলাসিতা বশত বিদেশে গিয়ে করাতে চায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। কিন্তু চিকিৎসকরা যদি বলেন যে, তাকে অমুক দেশে নিতেই হবে, এ ছাড়া কোনো গতি নেই, তখন তাকে সাহায্য করা যেতে পারে। মোটকথা, চিকিৎসা যদি কারো সত্যিই প্রয়োজন হয়, এবং এ প্রয়োজন মেটাতে যদি সে সত্যিই অক্ষম হয়, তাহলে সেও এই অভাবীর পর্যায়ভুক্ত হয়ে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে।

[ ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ইনসান অনলাইন ডট নেট, ইসলাম অনলাইন ডট নেট]

তবে দুই সম্পর্কের মানুষকে যাকাত দেয়া যাবে না।

১. ঔরসজাত সম্পর্ক। যেমন- পিতা ছেলেকে, বা ছেলে পিতাকে।

২. বৈবাহিক সম্পর্ক। যেমন- স্বামী স্ত্রীকে, বা স্ত্রী স্বামী।

এ দুই গ্রুপ ছাড়া অন্য সকল অভাবীকে (উপরোক্ত সংজ্ঞানুসারে) দেয়া যাবে।

যাকাত বিষয়ক কিছু জরুরী জ্ঞাতব্য:

১. যাকাতের ক্ষেত্রে নিয়ত করা (যাকাত দিচ্ছি এই জ্ঞান করা) আবশ্যক। সেটা প্রদান করার সময়ও হতে পারে বা যাকাতের সম্পদ হিসাব করে পৃথক করার সময়ও হতে পারে।

২. প্রতিটা সম্পদের উপর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়। বরং, বছরের মাঝে যে সম্পদ অর্জিত হবে, তাতেও যাকাত আসবে।

৩. যাকাত আদায়ের তারিখে যে যে সম্পদ থাকবে, সে সে সম্পদের যাকাত আদায় করবে।

৪. যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণে মনগড়া/অনুমাননির্ভর হিসাব করবে না। বরং পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে যাকাত আদায় করবে। যেন কোনো ক্রমেই পরিমাণের চেয়ে কম আদায় না হয়।

৫. যাকাত যেদিন হিসাব করে পৃথক করবে, সেদিনের মূল্য ধর্তব্য হবে।

৬. চন্দ্র মাস হিসাব করে যাকাত দিবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি বছর রমজানের বা মুহাররমের এক তারিখ যাকাত আদায় করবে।

যাকাত সম্পর্কিত একেবারে মৌলিক কথাগুলো পোষ্টে আলোচনা করলাম। সংক্ষিপ্ত করার লক্ষে অনেক বিষয় এড়িয়ে যেতে হলো। যাকাত নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে তা মন্তব্যের ঘরে করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ ভিন্ন পোষ্টে বা সংশ্লিষ্ট মন্তব্যেই তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।

আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর বিধান মেনে চলার তাওফীক দিন। আমীন।

তথ্যসূত্র:

নিজস্ব সূত্রগুলো স্বস্থানেই উল্লেখ করেছি। এছাড়া সামগ্রিক ভাবে পোষ্টটি লিখতে যেসব আর্টিকেল বিশেষভাবে সাহায্য করেছে:

১. যাকাত ও তার উপকারিতা – শেখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন – মাউসুআতুল বুহূসি ওয়াল মাকালাতিল ইলমিয়্যাহ [আরবী]

২. যাকাতের নতুন বিধানাবলী – ফিকহী মাকালাত- মুফতী তাকী উসমানী [উর্দু]

৩. ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ – মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহা: ইয়াহয়া [বাংলা]

৪. জাদীদ ফিকহী মাসায়েল – মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী [উর্দু]

৫. এছাড়া বিভিন্ন ইংরেজি ফাতাওয়া ওয়েবসাইট যেমন: ইসলামওয়েব, ইসলাম অনলাইন, আস্ক ইমাম, দারুল ইফতা দেওবন্দ ইত্যাদি।

 

এই পোষ্টটি একই সাথে ইসলাম ডট কম ডট বিডি ও প্রথম আলো ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল। এ দুই ব্লগের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্তব্য নিচে দেয়া হলো।

প্রশ্ন: ভাল লেখা তবে কিছু মাসআলা হাদীস নির্ভর নয়। কিছু আছে মনগড়া। হাদীসকে পাশ কাটিয়ে ফতোয়া নির্ভর মাসআলা রয়েছে। যেমন, স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে না। টিভি অতিরিক্ত সম্পদ।

উত্তর: এভাবে কারো ফাতওয়াকে সরাসরি মনগড়া বলে দেওয়াটা স্কলারদের প্রতি আদবের খেলাফ বলে মনে করি। আর হাদীসকে পাশ কাটানোর কথা বলা তো আরো বড় ব্যাপার। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।

স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে কি না, এতে ইমামদের মতভেদ আছে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদ রহ. –এর এক বক্তব্য অনুযায়ী দিতে পারবে না। ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদের রহ. অপর বক্তব্যনুযায়ী দিতে পারবে। [দেখুন ফিকহুস সুন্নাহ ২/৭৫] পরবর্তীকালে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ, শাওকানী রহ. এবং বর্তমানকালের অন্যতম স্কলার ইউসুফ আল কারযাভী দা.বা. এই মত পোষণ করেন। [দেখুন ফিকহুয যাকাত ২/৭২০-২১] স্বামী যে স্ত্রীকে দিতে পারবে না, তাতে কিন্তু কোনো দ্বিমত নেই। [প্রাগুক্ত] আর যে ‘কারণে’ স্বামী তার স্ত্রীকে দিতে পারে না তার প্রায় সবটুকুই স্ত্রী তার স্বামীকে দেয়ার ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। অতএব না দেয়াটাই কিন্তু এখানে মৌল।

কিন্তু ইমাম বুখারী রহ. সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ ইবনে মাসঊদ রা. এর স্ত্রী যয়নব রা. –এঁর যে হাদীস বর্ণনা করেন, তাতেই এ মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। পূর্বোক্ত দ্বিতীয় পক্ষ হাদীসের সাদাকাত শব্দটিকে যাকাত অর্থে নিয়ে এর বৈধতার কথা বলেন। আর প্রথমোক্ত ফুকাহায়ে ক্বিরাম একে সাদাকায়ে নাফেলার অর্থে নিয়ে স্বামীকে যাকাত দেয়া অবৈধ বলেন। এর পেছনে যুক্তি-দলীলও আছে। ইমাম তাহাভী হাদীসটিকে যে সনদে বর্ণনা করেন, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, যয়নব রা. হস্তশিল্পের মাধ্যমে আয় করে তাঁর স্বামী-সংসারে খরচ করতেন। কিন্তু নবীজী স. যখন সদকা করার ফযীলত বর্ণনা করলেন, তখন তিনি আফসোস করলেন এ কারণে যে, তিনি তার সবটুকু টাকা সংসারে খরচ করে দিচ্ছেন, সদকা করতে পারছেন না। তখন নবীজীর স. কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তুমি তোমার স্বামী-সন্তান-সংসারে খরচ করলেও সদকার সওয়াব পাবে। এতে স্পষ্ট যে এ খরচটি নাফাকা বা সাদাকায়ে নাফেলা ছিল, যাকাত নয়।

দ্বিতীয়ত, তিনি যে হারটিকে সাদাকা করার কথা বলেন, তাতে যদি যাকাতই আসত, তাহলে নিশ্চয় পুরোটা আসত না। কেবল শতকরা ২.৫ ভাগ আসত। অথচ তিনি পুরো হারটিকেই সাদাকা করে দেন। এরপর হারটির মূ্ল্য আদৌ যাকাত ওয়াজীব হওয়ার পরিমাণে ছিল কিনা, তাও ভেবে দেখার বিষয়; যাক, সেটা না-ই-বা ভাবলাম।

তৃতীয়ত, হাদীসটি যখনকার, তার অনেক আগেই যাকাত ওয়াজীব হয়ে গেছে। বিধান তখন সুস্পষ্ট। স্বামী-সন্তানের উপর যাকাত দেয়া যাবে কি না, তা তখন আর সন্দেহ নয়। এজন্যই যয়নব রা. সন্দেহে ভুগছিলেন, যে, হয়ত যাকাত যেহেতু দেয়া যাবে না, সেহেতু সাদাকাও দেয়া যাবে না, ফলে আমার খরচ সওয়াবহীন থাকবে। কিন্তু নবীজী স. সে সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে বললেন, যাকাত না দিতে পারলেও নফল সদকা ঠিকই দিতে পারবে। দেখুন, যদি পূর্বে তিনি অবৈধতা জ্ঞান না করতেন, তাহলে প্রশ্নই বা করলেন কেন? তাঁর এমন প্রশ্নই বলে দেয় যে, যাকাত যে স্বামীকে দেয়া যাবে না, তা তখন সবাই জানত। [আরো বিস্তারিত দেখুন: উমদাতুল ক্বারী- বুখারী শরীফের হাদীস নং:২৬৪১ এর ব্যাখ্যায়, ইলাউস সুনান- হাদীস নং:২৪৩৬ এর ব্যাখ্যায়, তাহাভী, ফাতহুল ক্বাদীর, আল জাওহারতুন নাইয়্যিরাহ]

শেষকথা, ফকীহগণ যে ফাতওয়া দেন, তারও ভিত্তি থাকে। এত সহজে তাদের কারো মতকে ‘মনগড়া’-‘হাদীসকে পাশ কাটানো’ আখ্যা দেয়াটা মনে হয় ঠিক নয়। ইজতিহাদে ভিন্নতা থাকতেই পারে, এতে শ্রদ্ধার কমতি কেন হবে!! [এ ক্ষেত্রে মুফতি তাকী উসমানীর তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিমের শুরুতে ড: ইউসুফ আল কারযাভীর অভিমত এবং ড: ইউসুফ আল কারযাভীর জীবনীতে মুফতি তাকী উসমানীর অভিমতের ভাষা আমাদের সবার জন্য চমৎকার আদর্শ হতে পারে।]

প্রশ্ন: মুফতী ইউসূফ সাহেব সুন্দর বিশ্লষণ করেছেন। অনেক বিষয় জানা ছিল না। জানলাম তার লেখার মাধ্যমে।
এক মসজিদে জুমার নামায আদায় করছিলাম। ইমাম সাহেব একজন মুফতী। খুতবা পূর্ব বক্তব্য রাখলেন যাকাত সম্পর্কে। বক্তব্যের এক পর্যায়ে বললেন, টিভি, ভিসিআর, ফ্রিজ, লাপটপ, এসি এগুলো অতিরিক্ত সম্পদ। এগুলোর যাকাত দিতে হবে।
আমার কথা হল, কোনটা অতিরিক্ত আর কোনটা নিত্য প্রয়োজনীয় তা বলতে পারবেন এগুলোর ব্যবহার কারীরা। কেহ ল্যাপটপ বা মোবাইল ব্যবহার করেন ফালতু বিনোদনের জন্য। আবার কারো কাছে এগুলো অতি প্রয়োজনের বস্তু। যা না হলে তার জীবনই অচল। কাজেই মুফতী সাহেবদের কাজ নয় কোনটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা অতিরিক্ত তা ঢালাও ভাবে নির্দিষ্ট করে দেয়া।
উত্তর: আপনার এ বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত। জাযাকাল্লাহ। লক্ষ করবেন, আমি আপনার মন্তব্যের উত্তরে টিভি সম্পর্কে এখনো কিছু বলি নি। এ ফাতওয়াটা মুফতি তাকী উসমানী দা.বা. -এঁর। তিনি টিভিকে অতিরিক্ত সম্পদ বলেছেন, এবং যার কাছে টিভি মিলিয়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তাকে যাকাত না দেয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন, এ ক্ষেত্রে তো প্রথমে ব্যক্তি নিজের টিভি বিক্রয় করে প্রয়োজন মেটাতে পারে। কথাটায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। এমনটা আমরাও বলি, “চলতে পারে না, ঘরে টিভি, হাতে মোবাইল..”। তবে সরাসরি টিভির উপর যাকাত হিসাব করতে হবে কিনা- যা আমি তাঁর উপরোক্ত কথার ভিত্তিতে বলেছি- তা তাঁর কথায় এখনো স্পষ্ট পাই নি। খুঁজছি…

তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য, যেমন, ঘরের শোকেসের কিছু জিনিস, যা মানুষ কখনোই ব্যবহার করে না, শুধু ‘শো’ -এর জন্য রেখে দেয় – সেগুলোকে তিনি অতিরিক্ত সম্পদ বলেছেন।

এছাড়া তাঁর অন্যান্য বক্তব্য থেকে এটাই বোঝা যায় যে, এসব ব্যবহার্য নিত্য নতুন সম্পদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হওয়া-না হওয়াটা ব্যক্তি আর তাঁর আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত। আল্লাহকে ভয় করে নিজেকে প্রশ্ন করে ব্যক্তি এসব সম্পদের যাকাত আদায় করবে বা না করবে।

ফ্রিজ, ল্যাপটপ, মোবাইল এগুলো এখন মানুষের হাওয়ায়েজে আসলিয়্যার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তাই এগুলোর ব্যাপারে ঢালাও মন্তব্যটা যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে না।

শেষকথা, এটা অনেকটাই ব্যক্তির নিজস্ব স্বভাব এবং পারিপার্শিকতা (উরফ) -এর উপর নির্ভর করবে বলে মনে হয়। এ ব্যাপারটা আরো বিশদ পড়াশোনার দাবী রাখে -যেটা আমার দ্বারা এখনও সম্ভব হয় নি। তাই কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

আপনাকে আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি এভাবে গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে আমরা সহজে সমাধানে পৌঁছাতে পারব।

প্রশ্ন: কারো যদি ২৬২৫০ টাকা থাকে বা ২৬২৫০ টাকার সোনা থাকে সে ক্ষেত্রে কি যাকাত হবে?

উত্তর: এ পরিমাণ টাকা বা স্বর্ণের মালিক হওয়ার পর যদি এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে যাকাত ওয়াজীব হবে। নিয়ম হলো, যেদিন থেকে মালিক হয়েছে, সেদিনের হিসাব ধরে এক বছর পর যাকাত দেয়া। তবে কোন দিন থেকে এর মালিক হয়েছে তা মনে না থাকলে, অনুমান করে একটা দিন ঠিক করে নিয়ে প্রতিবছর সেই দিন যাকাত হিসাব করলে ইনশা’আল্লাহ তা আদায় হয়ে যাবে।

এ ক্ষেত্রে অনেকে রমজান মাসকে বেছে নেয়, বেশি সওয়াব লাভের আশায়। তবে নিয়ম হলো, যাকাত ওয়াজীব হওয়ার তারিখ আসার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করে দেয়া। কারণ কে কতদিন বাঁচবে তা শুধু আল্লাহই জানেন। পরে না আবার আদায় না করেই মৃত্যু হয়। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।

এ পরিমাণ টাকা বা স্বর্ণের মালিক হওয়ার পর যদি এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে যাকাত ওয়াজীব হবে। নিয়ম হলো, যেদিন থেকে মালিক হয়েছে, সেদিনের হিসাব ধরে এক বছর পর যাকাত দেয়া। তবে কোন দিন থেকে এর মালিক হয়েছে তা মনে না থাকলে, অনুমান করে একটা দিন ঠিক করে নিয়ে প্রতিবছর সেই দিন যাকাত হিসাব করলে ইনশা’আল্লাহ তা আদায় হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে অনেকে রমজান মাসকে বেছে নেয়, বেশি সওয়াব লাভের আশায়। তবে নিয়ম হলো, যাকাত ওয়াজীব হওয়ার তারিখ আসার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করে দেয়া। কারণ কে কতদিন বাঁচবে তা শুধু আল্লাহই জানেন। পরে না আবার আদায় না করেই মৃত্যু হয়। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।

প্রশ্ন: আমার একটি প্রশ্ন ভাইয়াঃ আমার কী হিসেব করে যাকাত দিতে হবে? মানে ধরুন ৬৫৬ টাকা ১০ পয়সা এমন?? আমি যদি হিসেব-নিকেশ না করে বেশি টাকা দেই, তবে কি গুনাহ হবে?

উত্তর: পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব করে দেয়ার কথা এজন্যই বলা হয়েছে যে, অনুমাননির্ভর হিসেবে অনেক সময় কম আদায় করা হয়। যদি অনুমান করে হিসেব নিকেশ না করে দেয়ার পর বেশি আদায় হয়, তাহলে তো আদায় হবেই; কিন্তু কম হলে হবে না। এজন্যই প্রথমে হিসেব করতে হবে। হিসেব করার পর বেশি দিলে গোনাহগার হবে না, বরং, সওয়াবের অধিকারী হবে ইনশা’আল্লাহ।
সারকথা, ওয়াজীব হওয়া পরিমাণের চেয়ে যাকাত যেন কম আদায় না হয়, বেশি হতে পারে, সমস্যা নেই।

প্রশ্ন: যাকাতের টাকা কি কোন গরীব স্টুডেন্টকে তার লেখাপড়ার খরচ বাবদ দেয়া যাবে?

উত্তর: স্টুডেন্ট যদি গরীব হয়, তাহলে তো গরীব হওয়ার কারণেই সে যাকাত পাবে; এতে তো কোনো সন্দেহ নেই।

প্রশ্ন: আরো কয়েকটা প্রশ্ন করি যাকাত বিষয়ে।

১। যাকাত হিসেব করে নিয়ে সেটা কি একবারে আদায় করতে হয় ? নাকি কয়েক ভাগে সারা বছরে আদায় করা বৈধ। আমি অনেকে দেখেছি সারা বছরের যাকাত হিসাব করে দুই ঈদে আদায় করতে।

২। ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ন – এই দুটো সেই যুগে সমান ছিল। কিন্তু এখন ৫২.৫ তোলা রূপা ৭.৫ তোলা স্বর্নের চাইতে অনেক কম দামী। সে হিসাবে ৫২.৫ তোলা রূপা পরিমান সম্পদ থাকলেই তো যাকাত ফরজ হওয়ার কথা। তবু কেন সকলে ৭.৫ তোলা স্বর্ণের হিসেব করে বলুন তো?

৩। আর একটা প্রশ্ন হলো মূল্যবান ধাতুর উপরই কি যাকাত বর্তায়? যে কোন অলংকার যেমন হীরার উপর কি যাকাত হয় না? এই বিষয়ে আমি অনেককে তর্ক করতে শুনেছি।

উত্তর: ১। যাকাত হিসাব করে সারা বছরে ভাগ ভাগ করে আদায় করা যেতে পারে, অসুবিধা নেই। তবে যাকাত ওয়াজীব হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করে দেয়াই উত্তম। অযথা বিলম্বিত করা উচিৎ না।

২। নিয়ম হলো, যে হিসাব করলে গরীব ও অভাবীদের বেশি উপকার হয়, সে হিসাবে দিবে। বর্তমানকালে যেহেতু রূপার হিসাব করলে যাকাত আদায়কারীর সংখ্যা বাড়বে এবং অভাবীদের উপকার বেশি হবে, তাই এ হিসাবেই দেয়া উচিৎ। আমি আমার লেখাতেও কেবল রূপার হিসাব দেখিয়েছি, এবং এ পরিমাণ সম্পদ কারো থাকলেই তার উপর যাকাত ওয়াজীব বলে উল্লেখ করেছি।

৩। শুধু সোনা-রূপার উপর সর্বাবস্থায় যাকাত বর্তায়। অন্যান্য ধাতুর ক্ষেত্রে যদি তা ব্যবহার্য হয়, তাহলে যাকাত বর্তায় না। আর যদি তা ব্যবসার উদ্দেশে হয়, তাহলে ব্যবসার কারণে তাতে যাকাত বর্তায়।

প্রশ্ন: ইউসুফ ভাই , মোটর সাইকেল এর জন্য কি যাকাত হিসাব করতে হবে????

উত্তর: না ভাই। ব্যবহারের মোটর সাইকেল, গাড়ি ইত্যাদিতে যাকাত আসবে না। তবে যদি সেটা ব্যবসার উদ্দেশে কেনা হয়, তাহলে তাতে যাকাত আসবে।

সচেতন বলেছেন ২০০৯/০৯/১৮ ১৭:৫১:৩২

প্রশ্নের নম্বর দিলে ভালো হতো। তাহলে আলাপ করতে সুবিধা হতো। যাই হোক, আমি জানতাম একজনের যদি ৭ ভরি সোনা থাকে তবে সে যাকাত দিবে না। বা একজনের যদি ৫২ তোলা/ভরি রুপা থাকে তার জন্যও যাকাত নয়। কারন প্রথম জনের ক্ষেত্রে ৭ ভরি ছিলো সাড়ে ৭ নয়। তেমনি ২য় জনের ক্ষেত্রে ৫২ ভরি ছিলো, সাড়ে ৫২ নয়।

এইতো সেদিন টিবিতেও শুনলাম যে, একজনের কাছে ১ লাখ টাকা ক্যাশ আছে ১ বছর ধরে ও সাথে ৫ ভরি সোনা আছে। উত্তরে আলেম বললেন যে উনাকে শুধু ১ লাখ টাকার ক্যাশ দিতে হবে। ৫ ভরি সোনার নয়। কারন সোনার যাকাত সোনা দিয়েই আদায় করতে হয়। যেহেতু সোনা সাড়ে ৭ ভরি নয়, তাই ৫ ভরির উপর যাকাত আদায় যোগ্য নয়।

আপনি একটি উত্তরে বলেছেন:
উত্তর ঃ- দশ হাজার টাকার সাথে যদি এক দুই ভরি স্বর্ণ ও থাকে তাহলে অলংকারের দাম নগদ টাকার সাথে মিলিয়ে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁিদ কেনা যায় তাহলে তার উপর যাকাত আসবে। ( আপকে মাসায়িল আওর..৩/৩৫৬)

কনফিউজ্ড আমি এখন।

প্রথমেই জমি নিয়ে যেটি বললেন। আমি যাকাত সংক্রান্ত বুখারি পড়েছি কিন্তু জমি সংক্রান্ত কোন নিয়ম পেলাম নাতো। আপনি অবশ্য সোর্স দিয়েছেন “আপকে মাসায়িল..৩/৩৭১”। এটি কতটুকু উত্তম সোর্স জানিনা।

আমি একটি বিষয়ে জানতে চাই। যদি আপনার জানা থাকে দয়া করে জানাবেন। আমার মামা শশুর গরিব। বিভিন্ন সময় তার অনেক বার চিকিৎসা করতে হয়েছে আর সেটার জন্য তাকে যাকাতের টাকা থেকে টাকা দিয়েছিলাম আমরা অনেক আত্নীয়ই। তিনি আমাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছিলেন। এবং আমি গিয়ে নিজ চোখে যা দেখলাম তাতে অবাক হলাম! কারন তার যেই পরিমান জমি (আবাদি জমি) দেখলাম তাতে তিনি আমার চাইতে ১০ গুন বেশি সম্পদের মালিক। এক একটি জমির দামও অনেক। কারন সেগুলি সড়কের সাথে লাগানো। সমস্যা হলো তার কাছে ক্যাশ টাকা হয়তো সেই পরিমান নেই। কিন্তু উনি একটি জমি বেঁচলেই আমার সমান ক্যশের মালিক হতে পারেন খুব সহজেই। আমার প্রশ্ন হয়তো এতোক্ষনে বুঝেই গেছেন। উনাকে কি যাকাত দেয়া যায় (শুধুই ক্যাশ নেই বলে, যদিও তিনি অনেক সম্পদের মালিক বাজার দর অনুযায়ী)?

ইঊসুফ বলেছেন ২০০৯/০৯/২১ ২৩:০৬:২২

আসসালামু আলাইকুম।

| ১ | যাকাত গরীবের হক। যেভাবে যাকাত হিসাব করলে গরীবের লাভ হয়, সেভাবেই তা হিসাব করা উচিৎ। ১ লাখ টাকা আর ৫ ভরি স্বর্ণ আলাদা ভাবে হিসাব করলে গরীবকে বঞ্চিত করা হয়। পক্ষান্তরে ৫ ভরি স্বর্ণকে টাকায় কনভার্ট করে ১ লাখ টাকার সাথে যোগ করে ফের পুরো টাকাকে স্বর্ণে কনভার্ট করলে ৭.৫ ভরি বা আরো বেশি হয়ে যায়; যাকাতও ফরয হয়; আর গরীবেরও লাভ হয়। কাজেই হিসাবটা ওভাবেই করা উচিৎ। মোটকথা, যদি স্বর্ণ-রূপা-ক্যাশ টাকার নির্ধারিত পরিমাণ পৃথক ভাবে পূর্ণ না হয়, তাহলে সবগুলোকে একসাথে করে হিসাব করা উচিৎ। যেন যাকাত আসে এবং গরীবের উপকার হয়।

সোনার যাকাত সোনা দিয়েই আদায় করতে হবে কথাটা ঠিক নয়। নগদ টাকা বা অন্য কিছু দিয়েও আদায় করতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও গরীবের যেটাতে বেশি উপকার হয় (অধিকাংশ ক্ষেত্রে নগদ টাকা), তা দিয়ে আদায় করা উচিৎ।

কনফিউশনের কিছু নেই ভাই। একটা হল আইন, আরেকটা হল মানবতা। আইনের অনেক ফাঁক থাকে, মানবতা সে ফাঁক বন্ধ করে দেয়।

| ২ | বুখারী শরীফে যাকাত অধ্যায়ে অল্প কিছু হাদীস রয়েছে। এর বাইরেও অনেক অনেক হাদীস রয়েছে যাকাত সংক্রান্ত। আর বুখারী শরীফ কোনো নিয়ম বর্ণনার বই/কিতাব নয়; বরং, নিয়মের উৎস তথা “হাদীসের” কিতাব। অতএব, তা পাঠ করে কোন নিয়ম না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমার পোষ্টের “কাকে যাকাত দেয়া যাবে” অংশটুকু একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন। আশা করি উত্তর পেয়ে যাবেন।

ঐ অংশটুকুর সারকথা হল, তার চিকিৎসার খুব বেশি প্রয়োজন হলে আপনি তাকে যাকাত দিতে পারবেন। কিন্তু তার জন্য নিজের জমি-জমা রেখে এভাবে যাকাত নেয়াটা উচিৎ হবে না। তিনি বরং সাময়িক ধার নিয়ে পরে জমি বিক্রয় করে তা শোধ করে দিতে পারেন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

Related Post