Originally posted 2013-02-10 13:48:08.
মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশেষত গরীব, নিঃস্ব ও অসহায় লোকদের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান নিঃসন্দেহে একটি কঠিন সমস্যা। এই সমস্যাটির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন অর্থ ব্যবস্থায় কিছু ‘কল্যাণকধর্মী’ পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সেসব পদক্ষেপ সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কোন নিশ্চয়তা বিধান করতে পারেনি। ফলে কল্যাণধর্মী বলে খ্যাত রাষ্ট্রগুলোতেও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও দারিদ্র বিমোচনের কর্মসূচী এখনো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ইসলাম আল্লাহর দেয়া এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ জীবন ব্যবস্থায় এক সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি ছাড়াও সামাজিক ন্যায় বিচারকে নিশ্চিত করার জন্যে যাকাত এর একটি চমৎকার কর্মসূচীর বিধান রাখা হয়েছে। সমাজের বিত্তবান ও স্বচ্ছল লোকদের বাড়তি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়ম মাফিক আদায় করে দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকদের মাঝে যথাযথ বণ্টন করাই এ র্কমসূচীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। দেহের সাথে সম্পর্কিত ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল নামায, আর ধন-সম্পদের সাথে সম্পর্কিত ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যাকাত। উভয়টি ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম।
আভিধানিক অর্থে ‘যাকাত’ বলা হয়, যে জিনিস ক্রমশ বৃদ্ধি পায় ও পরিমাণে বেশি হয়। আরবী ভাষায় ‘যাকা ফুলানুন’ বাক্যের অর্থ হল, অমুক ব্যক্তি যাকাত দিয়েছে। অর্থা সুস্থ ও সুসংবদ্ধ হয়েছে। অতএব ‘যাকাত’ শব্দের অর্থ হল, বরকত, পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়া, প্রবৃদ্ধি লাভ, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, শুদ্ধতা, সুসংবদ্ধতা ইত্যাদি। আর শরীয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে প্রাপ্য ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সম্পদের মালিক বানিয়ে দেয়াকে যাকাত বলে। যাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন। যাকাত ব্যয়িত হয় অভাবী ও বঞ্চিতদের জন্য। এর দ্বারা দরিদ্র ও ধনীদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হয়।
দান-সাদকার বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে একটি বিশেষ ফযীলত আলকুরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে- ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিন্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।’ {সূরা ২ বাকারা, আয়াত-২৭৬} হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা . বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন ‘একমাত্র দুই ব্যক্তি ঈর্ষণীয়। এক হল যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন। আর হক কাজে সেই সম্পদ ব্যয় করার জন্য তাকে নিযুক্ত করেছেন। আর এক ব্যক্তি হল যাকে আল্লাহ হেকমত তথা কুরআন-হাদীসের ইলম দান করেছেন অত:পর সে সেই ইলম অনুযায়ী সব কিছুর ফয়সালা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’{বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৭১} অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, দান-সাদকা সম্পদকে হ্রাস করে না, আর ক্ষমা করার দ্বারা আল্লাহ বান্দার ইজ্জত বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাওয়াজু বা বিনয় অবলম্বন করলে আল্লাহ তার মর্যাদাকে উঁচু করে দেন। {মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৪৬৮৯}
অনুরূপভাবে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা.বলেন, আল্লাহর বান্দাগণ যখনই ভোরে উঠে, আকাশ থেকে দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়। তাঁদের একজন বলেন হে আল্লাহ, দাও তুমি দাতাকে প্রতিদান এবং অপরজন বলেন, হে আল্লাহ, দাও তুমি কৃপণকে সর্বনাশ। {বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৩৫১} হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান কর, আমি তোমাকে দান করব। {বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৪৯৩৩}
অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি একটি খেজুর বরাবর সদকা করবে পবিত্র উপার্জন থেকে, আর আল্লাহ পবিত্র উপার্জন ব্যতীত কবুল করেন না। তাহলে আল্লাহ তার ঐ সাদকা কবুল করবেন। অতঃপর সেটাকে বর্ধিত করবেন। যেমন আমাদের কেউ তার অশ্ব লালন-পালন করে বড় বানাতে থাকে। এভাবে আল্লাহ তার সাদকাকে বৃদ্ধি করতে থাকেন, এমনকি তা পাহাড়ের সমান হয়ে যায়। {বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৩২১} হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, নামায, রোযা, সাদকা ও ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে বারণ (এসব আমল) মানুষের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি ও প্রতিবেশী সংক্রান্ত গুনাহ সমূহ মোচন করে দেয়। {বুখারী শলীফ, হাদীস নং-১৩৪৫} আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে মহিলাদের কাছে গেলেন এবং (তাদেরকে লক্ষ্য করে ) বললেন, হে মহিলা সমাজ! তোমরা দান কর, কেননা আমাকে দেখানো হয়েছে যে, জাহান্নামের সিংহাভাগ হল নারী। মহিলাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, তার কি কারণ ইয়া রাসূলুল্লাহ সা.! তিনি বললেন, তার কারণ হল তোমরা বেশী বেশী অভিশাপ দাও এবং স্বামীর নাফরমানী কর {বুখারী শরীফ, হাদীস নং-২৯৩}
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, একটা খেজুর দান করে হলেও তোমরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো। {বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৩২৮} রাসূলুল্লাহ সা. আরো ইরশাদ করেন, দাতা ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে, জান্নাতেরও নিকটে, মানুষেরও নিকটে; অথচ জাহান্নাম থেকে দূরে, পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর থেকেও দূরে, জান্নাত থেকেও দূরে, মানুষ থেকেও দূরে; অথচ জাহান্নামের নিকটে। নিশ্চয়ই মূর্খ দাতা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় কৃপণ ইবাদত কারীর চেয়ে। {তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১৮৮৪}
যাকাত না দেয়ার শাস্তি সম্পর্কে আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা স্বর্ণ-রূপা বা টাকা-পয়সা সঞ্চয় করে রাখে, আল্লাহর রাস্তায় সেটা ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির সু-সংবাদ দিয়ে দাও’ ‘‘ঐ স্বর্ণ-রূপা জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে এবং তা দ্বারা তার কপালে, তার পাঁজরে ও পিঠে (অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন স্থানে) শেক দেয়া হবে এবং বলা হবে, নিজেদের জন্য যেটা সঞ্চয় করে রেখেছিলে এটাতো তা-ই! এখন সেই সঞ্চয়ের স্বাদ আস্বাদন করে দেখ!’’ {সূরা ৯ তাওবা, আয়াত-৩৫} অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা কার্পণ্য করে ঐ সম্পদ নিয়ে যা নিজ অনুগ্রহে আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন, তারা যেন মনে না করে যে, সেটা তাদের জন্য কল্যাণকর । বরং সেটা তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে পরিয়ে দেয়া হবে।’ {সূরা ৩ আলে-ইমরান, আয়াত-১৮০} হাদীস শরীফেও যাকাত ও দান সাদকা না করার বিষয়ে ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন, আর সে তার যাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে তার জন্য মাথায় টাক পড়া সাপের রূপ দেয়া হবে, যার চক্ষুর উপর দুটি কাল দাগ থাকবে (অর্থাৎ প্রচন্ড বিষাক্ত হবে) ঐ সাপকে তার গলায় বেড়ি স্বরূপ করে দেয়া হবে। অত:পর ঐ সাপ তার দুই গালে দংশন করতে থাকবে। আর বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ! আমি তোমার সঞ্চয় করে রাখা সম্পদ!! {বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৩১৫}
নিম্নোক্ত শর্তাবলী পূর্ণভাবে পাওয়া গেলে যাকাত ফরজ হবে। ১. ইসলাম (অর্থাৎ মুসলমান হওয়া) কাফের ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে না, চাই যে (জন্ম থেকেই) প্রকৃত কাফের হোক বা মুরতাদ হোক। ২. স্বাধীন হওয়া। ক্রীতদাসের উপর যাকাত ফরজ নয়। ৩. বালেগ হওয়া। নাবালেগের উপর যাকাত ফরজ নয়। ৪. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া। পাগলের উপর যাকাত ফরজ নয়। ৫. সম্পদের পূর্ণ মালিকানা থাকা। পূর্ণ মালিকানা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সম্পদ তার অধিকারে থাকা এবং তার মালিকানাধীন হওয়া। সুতরাং কেউ যদি এমন কিছুর মালিক হয় যা তার অধিকারে আসেনি তবে তাতে যাকাত ফজে হবে না। যেমন, অধিকারে আসার পূর্বে স্ত্রীর মহরানা। অতএব, যে মহরানা এখনও অধিকারে আসেনি তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। অনুরূপভাবে কোন সম্পদ কোন ব্যক্তির অধিকারে আছে কিন্তু তা তার মালিকানাধীন নয়। যেমন- ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যার যিম্মায় অন্যের মাল রয়েছে তার উপর যাকাত নেই। ৬. মালিকানাধীন সম্পদ ‘নেসাব’ পরিমানে পৌঁছা। সুতরাং ঐ ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে না যার সম্পদ নেসাব পরিমানে পৌঁছেনি। যে সকল সম্পদের যাকাত প্রদান করতে হয় ঐ সকল সম্পদের ভিন্নতার কারনে নেসাবও ভিন্ন ভিন্ন হয়। (এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ কোন আলেমের নিকট থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে)। ৭. সম্পদ নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যয়ের উদ্বৃত্ত হওয়া।
সুতরাং বসবাসের ঘর সমূহ, দেহের পোষাক, গৃহের আসবাব পত্র, বাহনের জন্ত বা যে কোন যানবাহন এবং ব্যবহারের অস্ত্রশস্ত্রের উপর যাকাত ফরজ হয় না। অনুরূপভাবে যন্ত্রাংশ, যার দ্বারা উৎপাদনে সাহায্য নেয়া হয় তার উপর যাকাত ফরজ হয় না। অনুরূপভাবে জ্ঞান অর্জন করা যায় এমন কিতাবাদির উপর যাকাত ফরজ হয় না। যদি তা ব্যবসার জন্য না হয়। কারণ এসকল জিনিষ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। ৮. সম্পদ ঋণ মুক্ত হওয়া। সুতরাং যে ব্যক্তির উপর এই পরিমান ঋণ রয়েছে যে, তা নেসাবকে ঢেকে নেয়। (অর্থাৎ তার নেসাব পরিমান সম্পদ রয়েছে আবার তার এ পরিমান ঋণও রয়েছে) অথবা নেসাবকে কমিয়ে দেয় (অর্থাৎ তার এই পরিমান ঋণ রয়েছে যে, তা পরিশোধ করলে নেসাব থাকে না, নেসাবের কম হয়) তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। ৯. সম্পদ বর্ধিষ্ণু হওয়া। চাই সম্পদ প্রকৃত বর্ধিষ্ণু হোক যেমন, গৃহপালিত পশু অথবা গুণগত বর্ধিষ্ণু হোক যেমন, স্বর্ণ-রোপ্য। স্বর্ণ- রোপ্যকে বর্ধিষ্ণু ধার্য করা হয়েছে তা পাকা হোক বা কাঁচা অবস্থায় হোক। অলংকার রূপে হোক অথবা পাত্ররূপে হোক, ব্যবহারের জন্য হোক বা না হোক, তার উপর যাকাত ফরজ হবে। মণি-মানিক্য জহরতের উপর যাকাত ফরজ হবে না, যদি তা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে না হয়। যেমন, মুক্তা, হিরা, ইয়াকুত, যররযদ ইত্যাদি। যে ব্যক্তি সাড়ে বাহান্ন ভরি রোপ্য অথবা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ কিংবা তৎমূল্যের টাকার মালিক হয় এবং তার নিকট ঐ পরিমান সম্পদ পূর্ণ এক বৎসরকাল অবশিষ্ট থাকে, তার উপর যাকাত ফরজ হয়। এই পরিমানের চাইতে কম হলে যাকাত ফরজ নয়। এই পরিমানের বেশী হলেও যাকাত ফরজ হয়। উল্লেখিত (সাড়ে বাহান্ন ভরি রোপ্য বা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা এই পরিমান) সম্পদকে ‘নেসাব’ বলে এবং যে ব্যক্তি এই পরিমান সম্পদের মালিক হয়, তাকে ‘মালেবে নেসাব’ বা ‘সাহেবে নেসাব’ বলা হয়।
অনেকেই এই সাড়ে বাহান্ন ভরি রোপ্য ও সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মূল্যের তারতম্যের কারণে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। প্রকৃত অর্থে উল্লেখিত দুই পরিমাপের ব্যাখ্যা নিম্মরূপ। যদি কারো নিকট শুধু স্বর্ণ থাকে, রোপ্য, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক কিছুই না থাকে, তাহলে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা তার বেশী স্বর্ণ থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হয়। আর যদি কারো নিকট শুধু রোপ্য থাকে, স্বর্ণ, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে, তাহলে সাড়ে বাহান্ন ভরি রোপ্য থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হয়। আর যদি কারো নিকট কিছু স্বর্ণ থাকে এবং তার সাথে কিছু রূপ্য বা কিছু টাকা-পয়সা বা কিছু ব্যবসায়িক পণ্য থাকে তাহলে এ ক্ষেত্রে স্বর্ণের সাড়ে সাত ভরি বা রোপ্যের সাড়ে বাহান্ন ভরি দেখা হবে না, বরং স্বর্ণ, রোপ্য এবং টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য যা কিছু আছে সবটা মিলে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বাহান্ন ভরি রোপ্যের যে কোন একটার মূল্যের সমপরিমান হয়ে যায়, তাহলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। অনুরূপভাবে কারও নিকট স্বর্ণ, রোপ্য ও টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য রয়েছে, তাহলে টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য মিলিয়ে যদি উক্ত পরিমাণ স্বর্ণ বা রোপ্যের যে কোন একটার মূল্যর সমপরিমান হয় তাহলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
যাকার আদায় ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হল,নেসাব পরিমান সম্পদের উপর চন্দ্র বৎসর হিসাবে (৩৫৪ দিন) এক বৎসর অতিবাহিত হওয়া। অর্থাৎ, বৎসরের উভয় প্রান্তে নেসাব পরিপূর্ণ থাকা, বৎসরের মাঝে পরিপূর্ণ থাকুক বা না থাকুক। এই হিসাবে কেউ যদি সৌর বৎসর গণনা করে যাকাত দেয় তাহলে প্রকৃত তিন সৌর বর্ষে এক মাসের যাকাত বাদ পড়ে যাবে। কেননা, প্রতি সৌরবর্ষ চন্দ্র বর্ষের চাইতে ১১ দিন বেশী হয়। তাহলে ৩ বৎসরে ৩৩ দিনের যাকাত বাদ থেকে যাবে। তাই, প্রত্যেকের যেমন জন্ম তারিখ বা বিবাহ তারিখ জানা থাকে অনুরূপভাবে প্রত্যেক মুসলমানকেই খেয়াল রাখতে হবে যে, হিজরী সনের কোন তারিখে সে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে ‘সাহেবে নেসাব’ হয়েছে। কেননা সেই দিন থেকেই যাকাতের বর্ষের প্রথম তারিখ ধার্য হবে এবং এই তারিখের পূর্বের তারিখে এক বৎসর পূর্ণ হবে। যাকাত বিষয়ক মাসআলা-মাসায়িল অনেক ব্যাপক। প্রত্যেক মানুষ যেমন বিল্ডিং নির্মাণের পূর্বে ভাল ইঞ্জিনিয়র দিয়ে প্লান করিয়ে নেয়, অনুরূপভাবে প্রত্যেক মুসলমানেরই উচিৎ যাকাত বিষয়ে অভিজ্ঞ কোন আলেমের নিকট থেকে যাকাতের হিসাব করিয়ে নেয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে হিসাব করে যাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। মনে রাখবেন যাকাত আপনার অনুগ্রহ নয়, যাকাত আপনার দায়িত্ব। গরীব মানুষ আপনার যাকাত গ্রহণ করে আপনাকে কৃতজ্ঞ করল। আপনি তাকে কোন অনুগ্রহ করেননি। সেই আপনাকে যাকাত গ্রহণ করে অনুগ্রহ করেছে। – সমাপ্ত-