Main Menu

যাকাত ব্যবস্থা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে

Originally posted 2013-02-28 13:29:37.

 images (1)তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ কর, এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে, তুমি তাদেরকে দোয়া করবে।’ (৯:১০৩)

যাকাত ইসলামী জীবনাদর্শের অন্যতম খুঁটি বা স্তম্ভ। যাকাত ফরজ বা অবশ্য পালনীয় এ বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন সকল মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক। সম্পদের যে নির্ধারিত অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করা ফরজ করা হয়েছে তা-ই যাকাত। যাকাতের মাধ্যমে সম্পদ হ্রাস পায় না, বরং বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়। যাকাত মানুষের সম্পদ ও মনকে পবিত্র করে, পরিশোধিত করে, নৈতিক সমৃদ্ধি ঘটায়, সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য পাওয়া যায়, সম্পদের ক্ষতিকর উপাদান দূর করে, বিত্তবান  ও বিত্তহীনদের মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে। সর্বোপরি সমাজ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অবিচার, অনৈতিক বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনা দূর করে এবং দেশ ও জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ করে তোলে।

শরীয়তের দৃষ্টিতে যাকাত : আভিধানিক অর্থ যে জিনিস ক্রমশ বৃদ্ধি পায় ও পরিমাণে বেশি হয়। অর্থাৎ পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়া, প্রবৃদ্ধি লাভ, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা শুদ্ধতা-সুসংবদ্ধতা।

শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘যাকাত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় ধন-মালে আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ও ফরজকৃত অংশ বোঝানোর জন্য। যেমন  পাওয়ার যোগ্য অধিকারী, লোকদের নির্দিষ্ট অংশের ধনমাল দেয়াকে ‘যাকাত’ বলা হয়।

ইমাম নববী ওয়াহেদী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ধন-মাল থেকে নির্দিষ্ট অংশ বের করাকে ‘যাকাত’ বলা হয় এ জন্য যে, যে মাল থেকে তা বের করা হলো তদ্দরুণ তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। প্রকৃতপক্ষেই তার মাত্রা ও পরিমাণ বেড়ে যায়। তা বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পায়।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন  সাদকায় দানকারীর মন ও আত্মা পবিত্র হয়, তার ধন-মাল বৃদ্ধি পায়। পরিচ্ছন্ন হয় এবং প্রকৃতপক্ষে পরিমাণে বেশি হয়।

ক্রমবৃদ্ধি ও পবিত্রতা কেবল ধন-মালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং যাকাত দানকারীর মন-মানসিকতা ও ধ্যান-ধারণা পর্যন্ত তা সংক্রমিত হয়।

সর্বশেষ ধর্মমত ও সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ পদ্ধতির প্রধান এবং প্রথম নীতিই হলো নিজে বাঁচা ও অপরকে বাঁচতে দেওয়ার উৎসাহ সৃষ্টি করা। স্বভাব ধর্মের বিধান অনুযায়ী মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না, থাকবে না উঁচু নিচু, ধনী-দরিদ্র, সেদিক থেকে বিচার করলে মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনে অন্যতম উপায় হলো ধন-সাম্য বা ধন-বণ্টনের সুষম ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় একজন পেটপুরে খেয়ে আর একজনকে উপসে রাখার সুযোগ নেবে না। যাকাত এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে যেমন অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে তেমনি সামাজিক জীবনেও এর তাৎপর্য সমধিক।

যাকাত দেয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। বছরের যে কোনো সময় থেকে এক বছর পূর্ণ হলেই যাকাত দেয়া অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়ে এবং যে কোনো সময় এক বা একাধিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যেতে পারে। যাকাতের একটি বিশেষত্ব এই যে, এটি গোপনে দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহী করা হয়েছে। যা অন্তরকে উদার ও সহানুভূতিশীল করে। মানুষ নিবিড়ভাবে প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন তথা সমাজ ও দেশের কল্যাণে নিয়োজিত হবার শিক্ষা লাভ করে। পার্থিব ঐশ্বর্য ও পারলৌকিক পুরস্কার  এ দুয়ের মাঝে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা থাকাতেই সফল হয়ে ওঠে।

যাকাত যার উপর ফরজ : প্রতিটি সম্পদশালী মুসলিম, প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নর-নারীর উপর যাকাত ফরজ। নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্যবসায়ী পণ্যের উপর যাকাত ফরজ।

স্বর্ণের নিসাব সাড়ে সাত ভরি (তোলা)।

রুপার নিসাব সাড়ে বায়ান্ন ভরি (তোলা)।

স্বর্ণ-রুপার একত্র নিসাব- স্বর্ণ ও রুপা উভয় জিনিসই যদি কারও কাছে থাকে এবং এর কোনোটাই নিসাব পরিমাণ নাও হয়, তবে উভয়টি মূল্য হিসেব করে দেখতে হবে। মূল্য যদি একত্রে নিসাব পরিমাণ হয়ে যায় অর্থাৎ ৫২.৫ ভরি রুপার পরিমাণ হয়ে যায়, তবেই যাকাত আদায় করতে হবে।

নগদ টাকা পয়সার নিসাব- বাজার দর হিসেবে অন্তত ৫২.৫ ভরি রুপার মূল্যের পরিমাণ টাকা এক বছর কাল জমা থাকলে এর যাকাত আদায় করতে হবে।

আল-কুরআনে যাকাতের তাকিদ : আর তোমরা কায়েম কর নামাজ এবং যাকাত দাও। মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা যাকাতের পন্থায় কর্মতৎপর হয়।

এ প্রসঙ্গে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘তোমাদেরকে এক সঙ্গে আদেশ করা হয়েছে নামাজ কায়েম করার ও যাকাত দেয়ার জন্য। তাই কেউ যাকাত না দিলে তার নামাজও হবে না।’ইবনে জায়েদ বলেছেন, ‘নামাজ ও যাকাত এক সাথে ফরজ করা হয়েছে, এই দুটির মাঝে কোনোরূপ পার্থক্য করা হয়নি’। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু বকর (রা.) বলেছেন  আল্লাহ যে দু’টি জিনিসকে একত্র করেছেন, আমি সে দুটিকে কখনই বিচ্ছিন্ন করব না।

সূরা আত তওবায় এঁদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, ‘সন্দেহ নেই, আল্লাহর মসজিদসমূহ প্রতিষ্ঠা ও আবাদ করে সেই লোক, যে ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, পরকালের প্রতি এবং নামাজ কায়েম করেছে ও যাকাত দিয়েছে,আর আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করেনি। খুব সম্ভব এ লোকেরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।

Related Post