যে সব মালের যাকাত নেই আর যে সব মালের যাকাত আছে

Originally posted 2013-05-08 15:55:49.

Zakat

যে সব মালের যাকাত নেই আর যে সব মালের যাকাত আছে তার আলোচনা

 যাকাত বহির্ভুত সম্পদ

জমি, বাড়ী-ঘর, দালান, দোকানঘর, কারখানা, কারখানার যন্ত্রপাতি, কলকব্জা, যন্ত্রাংশ, কাজের যন্ত্র, হাতিয়ার, অফিসের আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম, যানবাহনের গাড়ী, নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ, বিমান ইত্যাদি, যানবাহন বা চলাচলের অথবা চাষাবাদের পশু, ব্যবহারিক গাড়ী, ব্যবহারিক কাপড়-চোপড়, ঘরের আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি, নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যবহার্য সামগ্রী, গৃহ-পালিত পাখি, হাঁস-মুরগী ইত্যাদির যাকাত হয় না। ঋণ পরিশোধের জন্য জমাকৃত অর্থের উপর যাকাত হয় না। শস্য ও গবাদি পশুর যাকাত পরিশোধ করার পর ঐ শস্য বা গবাদি পশু বিক্রি   করে নগদ অর্থ প্রাপ্ত হলে ঐ প্রাপ্ত অর্থের উপর একই বছরে যাকাত দিতে হবে না। কারণ একই সম্পদের একই বছরে দুইবার যাকাত হয় না।
মৌলিক প্রয়োজনীয় সম্পদ
‘মৌলিক চাহিদা’ কথাটি দ্বারা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সামাজিক সংহতি ও সম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীকে বুঝায়। একজন মুসলমান অপচয় বা কার্পণ্য ছাড়াই তার পরিবারের অন্যান্য প্রয়োজন মিটাবে। মৌলিক ও নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদের যাকাত হয় না। এ সব সম্পদ বলতে বুঝায়, বসবাসের ঘর, পেশাগত সামগ্রী, কারখানার যন্ত্রপাতি, যোগাযোগের বাহন, ঘরের আসবাবপত্র, তৈজস পত্র, খাদ্যদ্রব্য, পোষাক-পরিচ্ছদ, গৃহস্থালীয় সামগ্রী ইত্যাদি এবং নিজের উপর সরাসরি নির্ভরশীলদের ও নির্ভরশীল আত্মীয় স্বজনদের জন্য দৈনন্দিন খরচসমূহ। যাকাত ধার্য হওয়ার ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল যার উপর যাকাত আরোপিত হবে তার নিকট একান্ত চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকতে হবে। যে অর্থ বা সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলে বিবেচিত হয় এবং পরবর্তী বছরের জন্য সংরক্ষিত থাকে, তা যাকাতের নিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচিত হবে।

নগদ অর্থের যাকাত
নগদ অর্থ, টাকা-পয়সা, ব্যাংকে জমা, পোষ্টাল সেভিংস, বৈদেশিক মূদ্রা (নগদ, এফসি একাউন্ট, টিসি, ওয়েজ আর্নার বন্ড), কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, জমাকৃত মালামাল (রাখী মাল), প্রাইজবন্ড, বীমা পলিসি(জমাকৃত কিস্তি), কো-অপারেটিভ বা সমিতির শেয়ার বা জমা, পোষ্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট, ডিপোজিট পেনশন স্কীম কিংবা নিরাপত্তামূলক তহবিলে জমাকৃত অর্থের যাকাত প্রতি বছর যথা নিয়মে প্রযোজ্য হবে। প্রতিষ্ঠানের রীতি অনুযায়ী বাধ্যতামুলকভাবে চাকুরীজীবির বেতনের একটি অংশ নির্দ্দিষ্ট হারে কর্তণ করে ভবিষ্য তহবিলে জমা করা হলে ঐ অর্থের উপর যাকাত ধার্য হবে না, কারণ ঐ অর্থের উপর চাকুরীজীবির কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভবিষ্য তহবিলের অর্থ ফেরৎ পাওয়ার পর যাকাতের আওতাভুক্ত হবে। ঐচ্ছিকভাবে (অপ্শনাল) ভবিষ্য তহবিলে বেতনের একটা অংশ জমা করা হলে তার উপর যাকাত প্রযোজ্য হবে অথবা বাধ্যতামুলক হারের চাইতে বেশী হারে এই তহবিলে বেতনের একটা অংশ জমা করা হলে ঐ অতিরিক্ত জমা অর্থের উপর বছরান্তে যাকাত প্রযোজ্য হবে। চাকুরীজীবির অন্যান্য সম্পদের সাথে এই অর্থ যোগ হয়ে নিসাব পূর্ণ হলে যাকাত প্রদান করতে হবে। পেনশনের টাকাও হাতে পেলে যাকাত হিসাবে আসবে। স্ত্রীর মোহরের জমাকৃত টাকা, হজ্ব ও কুরবানীর জন্য জমাকৃত টাকার উপরেও বছরান্তে যথানিয়মে যাকাত দিতে হবে। ব্যাংক জমা বা সিকিউরিটির (ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার, বন্ড, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি) উপর অর্জিত সুদ ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ উপার্জন নয় বিধায় যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যোগ করা যাবে না। অর্জিত সুদ কোন জনহিতকর কাজে ব্যয় করতে হবে। তবে মূল জমাকৃত অর্থের বা সিকিউরিটির  ক্রয় মূল্যের উপর যাকাত প্রদান করতে হবে। ব্যাংক জমার উপর বৈধ মুনাফা প্রদান করা হলে ঐ মুনাফা মূল জমার সঙ্গে যুক্ত করে যাকাতযোগ্য অন্যান্য সম্পত্তির সাথে যোগ করতে হবে।

সারে সাত ভরি স্বর্ণ (অলংকার বা অন্য কিছু) যখন কারো কাছে শুধু স্বর্ণ থাকবে সাথে কোন টাকা বা রূপা না থাকবে, তখন সারে সাত ভরি স্বর্ণ থাকলে তার উপর যাকাত আবশ্যক হবে। কিন্তু যদি কারো স্বর্ণের সাথে টাকা কিংবা রূপা থাকে তাহলে স্বর্ণ ও রূপার বা টাকা সবগুলোর মূল্য কত হয় তা দেখতে হবে। -ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৪/৩৮

ঋণ গ্রস্তের যাকাত

সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্থ হয় তাহলে তার সম্পদের মূল্য থেকে প্রথমে ঋণ পরিমাণ টাকা বাদ দিতে হবে। অতঃপর যদি অবশিষ্ট সম্পদ সারে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য (৬৩ হাজার) বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তার উপর যাকাত আবশ্যক হবে, নতুবা হবে না। কেউ যদি কিস্তিতে কিছু ক্রয় করে থাকে বা কিস্তি করা ঋণ থাকে তাহলে এই বৎসর যে পরিমাণ কিস্তি আদায় করতে হবে কেবল মাত্র সেই পরিমাণ টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।- আদ্দুররুল মুখতার:২/২৬৩

পাওনা টাকার উপর যাকাত

যদি কারো কাছে টাকা ঋণ দেয়া থাকে বা কারো কাছে গচ্ছিত রাখা থাকে অথবা কোন কিছু বিক্রয় করেছে কিন্তু তার মূল্য এখনো হস্তগত হয়নিএবং এ টাকাগুলো পাওয়ার আশা থাকে তাহলে তা হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। -শামী: ২/৩০৫

কারো ব্যবসায় লাগিয়ে রাখা টাকা, শেয়ার, প্রাইজবন্ড ও সঞ্চয়পত্রে যাকাত

শেয়ার, বৈদেশিক মুদ্রা, প্রাইজবন্ড বা সঞ্চয়পত্রও নগদ টাকার মতই। তাই এগুলোর মূল্য হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। তবে এগুলো থেকে কেউ সুদপ্রাপ্ত হলে তার পূর্ণটাই সদকা করে দিতে হবে।-ফাতাওয়ায়ে উসমানী: ২/৪৮-৭১

ব্যাংক ও বীমার টাকায় যাকাত

ব্যাংকে রাখা টাকা এবং বীমায় দেয়া প্রিমিয়াম যা ফেরৎ পাওয়া যাবে তা হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।-ফাতাওয়ায়ে উসমানী: ২/৭১

প্রভিডেন্ট ফান্ড

ঐচ্ছিক কর্তনকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। অবশ্য বাধ্যতামূলকভাবে যে পরিমাণ টাকা কর্তন হয় তা হস্তগত হওয়ার পূর্বে যাকাত নেই।-ফাতাওয়ায়ে উসমানী: ২/৫০    সমাপ্ত

Related Post