اَلْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْداً لَا يَنْفَدُ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْوَاحِدُ الْفَرْدُ الْصَّمَدُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ سَيِّدَنَا وَنَبِيَّنَا مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ أَفْضَلُ مَنْ تَعَبَّدَ، اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَإِخْوَانِهِ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ:
فَيَا أَيُّهَا الْمُسْلِمُوْنَ، أُوْصِيْكُمْ وَنَفْسِي بِوَصِيَّةِ اللهِ جَلَّ وَعَلَا لِلْأَوَّلِيْنَ وَالْآخِرِيْنَ: وَلَقَدْ وَصَّيْنَا ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلْكِتَـٰبَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّـٰكُمْ أَنِ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ (النساء:131).
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আজকের খুতবার আলোচনার বিষয় পাপের করাল গ্রাস ও তার ভয়াবহ পরিণাম : মুক্তির পথ। বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আধুনিকতার যুগ। আর এ যুগে মুসলিম উম্মাহ এমন সব পাপে লিপ্ত যা শুনলে শরীর শিউরে ওঠে। আমরা আজকের আলোচনায় পাপের ভয়াবহ পরিণাম ও তা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে হাদীস ও কুরআনের আলোকে আলোচনা করবো।
মুহতারাম হাযেরীন! বর্তমান সময়ের মানুষ এমনসব পাপ কাজে লিপ্ত যার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। একটি জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকা এবং সুন্দরভাবে তার উন্নতি ও অগ্রগতির বিষয়টি নির্ভর করে আল্লাহর পূর্ণ ইতাআত তথা আনুগত্যের উপর। মুসলিম উম্মাহর জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হলো তার ঈমান,আখলাক ও দীনের বিধানের উপর ইস্তেকামাত বা অটল অবিচল থাকা। মানুষ যদি দীন থেকে বিচ্যুত হয়, দীনের সঠিক পথ থেকে অন্যপথে চলতে থাকে তাহলে সে শয়তানের ফাঁদে আটকে যায়। দীনী বিধানে সীমালঙ্ঘন করার ফলে মানুষ ছুটতে থাকে মরুভূমির মরিচিকার পেছনে। দৌড়াতে থাকে দুর্ভাগ্যের মাঠে উদ্ভ্রান্ত হয়ে। মানুষ যখন পাপের স্রোতে ভেসে বেড়ায় তখন বুঝতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে সে এগুচ্ছে। পার্থিব জগতে সে অশান্তির দাবানলে জ্বলতে থাকে। সে অনুভব করে পাপের উত্তাপ।
পাপের কারণে একজন মুমিনের ঈমানী শক্তি দুর্বল হয়, হৃদয় হয় পাথরসম শক্ত। পাপে লিপ্ত ব্যক্তি ভালোকে মন্দ ভাবে আর মন্দকে ভাবে ভালো। পাপের কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। জীবনে শুরু হয় অশান্তি ও অস্থিরতা। দুর্বল হতে থাকে বান্দা ও ইলাহ এর মাঝে ভালোবাসার বন্ধন। আল্লাহ তাআলা পাপের পরিণাম বিষয়ে ইরশাদ করেন : فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِيثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ وَنَسُوا حَظًّا مِمَّا ذُكَّرُوا بِهِ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَى خَائِنَةٍ مِنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ. ‘তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য আমি তাদেরকে লা’নত ও তাদের হৃদয় কঠিন করেছি। তারা শব্দগুলোর আসল অর্থ বিকৃত করে এবং তারা যা উপদিষ্ট হয়েছিল তার এক অংশ ভুলে গিয়েছে। তুমি সর্বদা তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা করো ও উপেক্ষা করো। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্ম পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন’ (মায়েদা : ১৩)।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘কখনও নয় বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের হৃদয়ে জঙ ধরিয়েছে’ (মুতাফফিফীন : ১৪)।
আরো ইরশাদ হয়েছে : وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى. قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا. قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آَيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى. وَكَذَلِكَنَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِآَيَاتِ رَبِّهِ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَى. ‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে অবশ্যই তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। তিনি বলবেন এইরূপই, আমার নিদর্শনাবলি তোমার নিকট এসেছিলো, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবে আজও তুমি বিস্মৃত হলে’। আর এভাবেই আমি প্রতিফল দেই তাকে যে বাড়াবাড়ি করে ও তার রবের নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে না। পরকালের শাস্তি তো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী’ (সূরা তাহা : ১২৪-১২৭)।
আল কুরআনুল কারীমের এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, পাপ করলে হৃদয় হয়ে যায় কঠিন, জীবন হয়ে যায় সংকীর্ণ। আর পাপের পরিণাম হলো আখেরাতে কঠোরতর শাস্তি। পাপ ও অন্যায় কাজে লিপ্ত হলে দুশমনের প্রাধান্য বিস্তার হয়। শত্র“রা অগ্রাসী হয় পাপীর উপর। শত্র“র হৃদয় থেকে ত্রাস বিদূরিত হয়। রিযকের বরকত নিঃশেষ হয়ে যায়। জীবনের ধাপে-ধাপে বরকতশূন্য মুহূর্ত আসে। পাপের একটি কুফল হলো, বান্দার সাথে আল্লাহর দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া। স্রষ্টার সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরা। পাপের কারণে আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে শিথিলতা আসে। অবাধে পাপ কাজ করলে হৃদয়ে অশান্তি ও অস্থিরতা শুরু হয়। জীবনে নেমে আসে অশান্তির দাবদাহ। আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ষিত রহমতের বারিধারা থেকে পাপিষ্ঠ বঞ্চিত হয়। অন্ধ হয় হৃদয় সঠিক বিষয় উপলব্ধি করা থেকে। সুনিশ্চিতভাবে পাপের অতল গহ্বরে পড়ে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবন বরবাদ হয়।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! মানুষের প্রকৃতজীবন হলো আল্লাহর কাছে সমর্পিত জীবন। মানুষের সুখীজীবন হলো আল্লাহর বিধানের ছায়াতলে যাপিত জীবন। মানুষের আনন্দের জীবন হলো আল্লাহর দাসত্বের পথে পরিচালিত জীবন। মানুষ যদি হৃদয়কে আল্লাহর ইতাআত ও আনুগত্যের জন্য সমর্পণ করে তাহলে সে হৃদয় হয় জীবন্ত হৃদয়, সজীব হৃদয়। আর এ ধরনের মানুষের জীবন হয় আলোকময় জীবন। আর আল্লাহর নাফরমানীর জিন্দেগী মূলত মৃত জীবন। আল্লাহ তাআলা কাফেরদের জীবনকে মৃতসম জীবন বলে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ ‘তারা মৃত, জীবন্ত নয়’ (নাহল : ২১)।
পাপের কুফল হলো, পার্থিব জগতের নানামুখী কাজে হৃদয় জড়িয়ে যাওয়া। জীবন চলতে থাকা প্রবঞ্চনাময় মরিচিকার পিছে। সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে জীবনের গাড়ি লাইনচ্যুত হয়ে বিভ্রান্তির অতল গহ্বরে নিপতিত হওয়া। শয়তানের ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া। তখন সে সত্যের শান্তিময় পথ খুঁজে পায় না।
প্রিয় ভাইয়েরা! আধুনিক যুগ হলো ফেতনা ফাসাদের যুগ। বহুমুখী ফিৎনায় বিপর্যস্ত আজ আধুনিক মানুষের জীবন। হাদীসে এসেছে হুযায়ফা রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا، فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ،وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ، حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ، عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا، فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ، وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا، لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَاأُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ ‘ফেৎনাগুলো হৃদয়সমূহের কাছে পেশ করা হবে চাটাইয়ের মতো, যাতে থাকে সাজানে পাতা। যে হৃদয় তা গ্রহণ করবে তাতে কালো তিলকের ন্যায় দাগ পড়ে যাবে। আর যে হৃদয় তা প্রত্যাখান করবে তাতে শুভ্র দাগ পড়বে। ফলে হৃদয় হবে দু’ধরনের : একটি হলো স্বচ্ছ নির্মল হৃদয়, পরিচ্ছন্ন পাথরসম যা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না যতদিন থাকবে আকাশ ও পৃথিবী। অন্যটা হবে কৃষ্ণ হৃদয় যা ধুসরিত উল্টোনো কলসীর মতো, সে হৃদয় ভালোকে ভালো মনে করবে না মন্দকে অস্বীকার করবে না। হৃদয়ের চাহিদা অনুসারে চলবে তার জীবন’ (সহীহ মুসলিম)।
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘হে মুজাহিদগণ! পাঁচটি বিষয় আছে সেগুলো দ্বারা যদি তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হয় এবং তোমাদের মাঝে তা পরিলক্ষিত হয় তাহলে তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য। আমি তোমাদের জন্য সেগুলো থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। যে জাতির মাঝে অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয় আর সে জাতি যদি এ অশ্লীল কাজে জড়িত হয় তাহলে তাদের মাঝে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং তারা এমন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয় যে রোগ তাদের পূর্বসূরীদের মাঝে ছিলো না। যদি কোন জাতি মাপে কম দেয় ও মানদণ্ডে দুর্নীতি করে তাহলে সে জাতি আক্রান্ত হয় দুর্ভিক্ষে ও শাসকের জুলুমের। যদি তারা যাকাত আদায় করতে নিষেধ করে এবং সঠিকভাবে যাকাত না দেয় তাহলে অনাবৃষ্টির দ্বারা তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়। যদি চতুষ্পদ প্রাণী না থাকতো তাহলে তাদের জন্য আকাশ থেকে এক ফোঁটা বৃষ্টিও বর্ষিত হতো না। যদি কোন জাতি আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে কৃত ওয়াদাসমূহ ভঙ্গ করে তাহলে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় তাদের শত্র“দেরকে, তারা তাদের অর্জিত সম্পদ লুটতরাজ করে। যদি কোন জাতির নেতৃবর্গ আল্লাহর কিতাব ও বিধান অনুসারে শাসনকর্ম পরিচালনা না করে তাহলে আল্লাহ তাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে তাদেরকে শাস্তি দেন’ (হাকেম, সহীহ)।
মুসল্লিয়ানে কেরাম! আমাদেরকে আবশ্যই সকল প্রকার অশ্লীলতা এবং, মাপে কম দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সঠিকভাবে যাকাত দিতে হবে এবং আল্লাহর রাসূলের সাথে কৃত ওয়াদা, কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করতে হবে। আর আমাদের শাসকদেরকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসনকর্ম পরিচালনা করতে হবে। অন্যথায় এই অন্যায়গুলোর শাস্তিতে আমাদের জাতিসত্তা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে আক্রান্ত হবে।
শাস্তি ও ধ্বংস যখন ঘনিয়ে আসে তখন সর্বব্যাপী হয়। নির্দিষ্ট কারোর জন্য আসে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন : وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوامِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ‘তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় কর, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা জালিম কেবল তাদেরকে ক্লিষ্ট করবে না। এবং জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর’ (আনফাল : ২৫)।
যয়নব বিনতে জাহশ রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন:
‘আমাদের মাঝে সৎকর্মশীল থাকাতেও কি আমরা ধ্বংস হবো? নবীজী বললেন, ‘হ্যা! যখন পাপকাজ ও অশ্লীলতা বেড়ে যাবে’ (বুখারী ও মুসলিম)।
সম্মানিত সুধী! ভৌগোলিক এ পৃথিবীতে আমাদের পূর্বে অনেক জাতি ছিলো। তাদের ছিলো আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা। তারাও নির্মাণ করেছিলো সভ্যতা। এ পৃথিবী দেখেছে আল্লাহদ্রোহী অনেক দাম্ভিককে। তাদের অস্তিত্ব আজ কোথায়? তারা হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। দাম্ভিক শাসক ফিরাআউনকে লোহিত সাগরে কে নিমজ্জিত করেছে? কে এই অহংকারী শাসকের শবদেহ আজও পৃথিবীবাসীর জন্য নিদর্শন হিসেবে রেখে দিয়েছে? এক সময়ে উন্নত সভ্যতার দাবীদার আদ-সামূদ, লূত জাতি, কারূন ও হামানরা আজ কোথায়? আবু জাহ্ল, আবু লাহাব ও উতবা শায়বা আজ কোন্ অবস্থায়? আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : وَعَادًا وَثَمُودَ وَقَدْ تَبَيَّنَ لَكُمْ مِنْ مَسَاكِنِهِمْ وَزَيَّنَ لَهُمَ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَكَانُوا مُسْتَبْصِرِينَ وَقَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَلَقَدْ جَاءَهُمْ مُوسَى بِالْبَيِّنَاتِ فَاسْتَكْبَرُوا فِي الْأَرْضِ وَمَا كَانُوا سَابِقِينَ.فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ. ‘আমি আদ ও সামূদ জাতিকে ধ্বংস করেছিলাম। তাদের বাড়ি ঘরই তোমাদের জন্য তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। শয়তান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিলো এবং তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিলো যদিও তারা ছিলো বিচক্ষণ। এবং আমি সংহার করেছিলাম কারূন, ফিরআউন ও হামানকে। মূসা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিলো, তখন তারা দেশে দম্ভ করতো কিন্তু তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। তাদের প্রত্যেককে আমি তার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম। তাদের কারোর প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচণ্ড ঝটিকা। তাদের কাউকে আঘাত করেছিলো মহানদ, কাউকে আমি প্রোথিত করেছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন জুলুম করেননি। তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিলো’ (আনকাবূত : ৩৮-৪০)।
আমাদেরকে এ আয়াত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। মহা শক্তিধর পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছে কোন দাম্ভিকের দাম্ভিকতা, কোন অহংকারীর আত্মম্ভরিতা টিকে না। বান্দা যদি আল্লাহর সমীপে নিজকে সমর্পণ করে এবং আল্লাহর বন্দেগী করে তাহলেই তারা সফল।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ, أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .
(দ্বিতীয় খুতবা)
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ وَلِيِّ الصَّالِحِيْنَ ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى أَشْرَفِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيِنَ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِيْنَ، أَمَّا بَعْدُ :
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! পাপের বহমান স্রোত থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে। আমরা যারা দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তির প্রত্যাশী, যারা দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন-যাপনে আগ্রহী আমাদেরকে পাপ থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। নফস ও শয়তানকে পরাভূত করতে হবে। আর এটা সম্ভব তখনই যখন আমরা আমাদের জীবনে আল্লাহর বিধান আল্লাহর বিধান কার্যকর করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো। নবীজীর আনুগত্য ও তার আদর্শ অনুসারে জীবন সাজাবো। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا ‘যে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে সে অবশ্যই পূর্ণ সফল হবে’ (সূরা আল আহযাব:৭১)।
আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন : فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ ‘তোমরা পালায়ন করো আল্লাহর দিকে (সূরা আয যারিয়াত:৫০)। আরো ইরশাদ হয়েছে :وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও তওবা করো অবশ্যই তোমরা সফল হবে’(সূরা আন-নুর:৩১)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন : أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি ও নির্ভেজাল তওবা করো’ (সূরা আত-তাহরীম:৮)।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : إِنِّي لَأَتُوبُ فِي الْيَوْمِ سَبْعِيْنَ مَرَّةً ‘নিশ্চয় আমি দিনে সত্তরবার তওবা করি’(ইবনে হিব্বান, আনাস রাযি. সূত্রে)।
প্রিয় মুসল্লী ভাইয়েরা! পাপ পংকিল জীবন থেকে বেরিয়ে এসে পাপমুক্ত জীবন যাপনের জন্য আল্লাহপাক আমাদেরকে তার অসীম দয়া ও অনুকম্পায় তওবার পথ বলে দিয়েছেন। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপনের জন্য তওবা ও ইস্তেগফারের বিকল্প নেই। আমাদের নবীজী সা.নিষ্পাপ ও মাসুম হওয়া সত্ত্বেও দৈনিক সত্তরবার তওবা করেছেন। নবীজীর তওবা ছিলো রফয়ে দারাজাত তথা মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য। আমাদের জীবন পাপপূর্ণ। এ জীবন সুন্দর করতে হলে খাঁটি তওবা করতে হবে। আমরা জানি তওবা শুধু মুখে উচ্চারণের নাম নয়। হুক্কুল ইবাদগুলো আদায় করতে হবে। হুক্কুল্লাহর জন্য অনুতপ্ত হতে হবে। হাদীস বিশারদগণ তওবার জন্য চারটি শর্তের কথা বলেছেন :
এক. অতীত পাপের জন্য লজ্জাবোধ ও অনুতপ্ত হওয়া।
দুই. বাকী জীবনে পাপের দিকে আর ফিরব না বলে দৃঢ় সংকল্প করা।
তিন. যে পাপে জড়িত তা পরিত্যাগ করা।
চার. পাপ যদি হক্কুল ইবাদ সংক্রান্ত হয় তবে সে হক আদায় করে দায়মুক্ত হওয়া।
উল্লিখিত শর্তে তওবা করতে হবে। আর এ তওবা করতে হবে মৃত্যুর মুহূর্ত ঘনিয়ে আসার আগে ও কিয়ামতের অন্যতম বড় আলামত পশ্চিম আকাশ থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে।
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا. اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ، وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ خُلَفَائِهِ الرَّاشِدِيْنَ أَبِيْ بَكْرٍوَعُمَرَ وَعُثْمَانَ وَعَلِيٍّ وَعَنْ الْصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ. رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ.
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে জানা অজানা সকল পাপ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। পাপের সকল পথ-পথান্তর থেকে আমাদের দূরে রাখুন। পাপকর্মের প্রতি আমরা যেন কখনো আকৃষ্ট হয়ে না পড়ি সেই তাওফীক আমাদেরকে দান করুন।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার দরবারে সকল পাপ থেকে তাওবা করছি, আপনি আমাদের তাওবা কবুল করুন। আমাদেরকে তাওবায়ে নাসূহা নসীব করুন।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার দরবারে তাওবা করছি, আমাদের তাওবা কবুল করে আমাদের পাপগুলোকে ছাওয়াবে রূপান্তরিত করে দিন। পাপের পরিণতি থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
হে দয়াময় পরম দয়ালু! আপনি আমাদের পরিবার পরিজন, দেশ ও জাতিকে পাপ থেকে দূরে রাখুন। পাপের মাঝে ও আমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله: ( إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْوَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ