Main Menu

সদকাতুল ফিতরের বিধান

সদকাতুল ফিতরের বিধান

সদকাতুল ফিতরের বিধান

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা মুসলিমদের উপর আবশ্যক করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আদেশ করেছেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক আদেশ করার সমতুল্য।

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا (الحشر: من الآية (7)

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল তোমাদের যা আদেশ করেন,তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,তা থেকে বিরত থাক। [সূরা হাশর: ৭]

রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন:

رواه الشيخان عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم زكاة الفطر صاعاً من تمر أو صاعاً من شعير على العبد والحر والذكر والأنثى والصغير والكبير من المسلمين أمر بها أن تؤدى قبل خروج الناس إلى الصلاة

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে আজাদ, গোলাম, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের উপর এক সা’ খেজুর, বা এক সা’ যব সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)

সদকাতুল ফিতরের উপকারীতা

১. দরিদ্র ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা হয়,
২. ঈদের দিনগুলোতে দরিদ্র ব্যক্তিরা ধনীদের ন্যায় স্বচ্ছলতা বোধ করে,
৩. সদকাতুল ফিতরের ফলে ধনী-গরীব সবার জন্য ঈদ আনন্দদায়ক হয়,
৪. সদকাতুল ফিতর আদায়কারী দানশীল হিসেবে পরিগণিত হয়,
৫. সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সিয়াম অবস্থায় ঘটে যাওয়া ত্রুটিগুলোর কাফ্ফারা করা হয়,
৬. সদকাতুল ফিতর দ্বারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়। তিনি নিজ অনুগ্রহে বান্দাকে পূর্ণ একমাস সিয়াম পালনের তওফিক দিয়েছেন,সাথে সাথে সদকাতুল ফিতিরের ন্যায় আরেকটি ভাল কাজের তওফিক দান করলেন।

সদকাতুল ফিতর আদায় করার কারণ

 فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنْ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنْ الصَّدَقَاتِ

যে সব জিনিস দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা যায় :

মানুষের সাধারণ খাবার জাতীয় বস্তু দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা যায়। যেমন,খেজুর,গম,চাল, পনির,ঘি, সেমাই ইত্যাদি।

দকাতুল ফিতরের পরিমাণ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের এক সা’। যার ওজন চার শত আশি মিসকাল গম। ইংরেজী ওজনে যা দুই কেজি ৪০ গ্রাম গম। যেহেতু এক মিসকাল সমান চার গ্রাম ও এক চতুর্থাংশ হয়। সুতরাং ৪৮০ মিসকাল সমান ২০৪০ গ্রাম হয়। অতএব রাসূলের যুগের সা’ জানতে ইচ্ছা করলে,তাকে দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম গম ওজন করে এমন পাত্রে রাখতে হবে, যা মুখ পর্যন্ত ভরে যাবে। অতঃপর তা পরিমাপ করতে হবে।

فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم صدقة الفطر ، صاعا من شعير أو صاعا من تمر ، على الصغير والكبير ، والحر والمملوك

ইবনে ওমর রা. বলেন,রাসূল স. সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো,এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়,স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক। (বুখারী : ১৫১২)

كنا نخرج زكاة الفطر ، صاعا من طعام ، أو صاعا من شعير ، أو صاعا من تمر ، أو صاعا من أقط ، أو صاعا من زبيب

আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য দিয়ে। তা এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনীর বা এক সা কিসমিস দিয়ে। (বুখারী : ১৫০৬)

সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব:

যে ব্যক্তির নিকট একদিন ও রাতের খাবরের অতিরিক্ত খাবার থাকবে তার উপর সাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। ইবনুল মুনযির (রহ.) বলেন: সাদকাতুল ফিতর সমস্ত লোকের উপর ওয়াজিব, তিনি নেতা হোন বা প্রজা, ছোট কিংবা বড়, মুক্ত কিংবা দাস, ধনী কিংবা মিসকীন, পুরুষ কিংবা মহিলা।

روى أحمد وأبو داود عن ثعلبة بن أبي صغير عن أبيه أن رسول الله [ قال: أدوا صدقة الفطر صاعًا من قمح -أو قال: بر- عن كل إنسان صغير أو كبير، حر أو مملوك، غني أو فقير، ذكر أو أنثى. أما غنيكم فيزكيه الله، وأما فقيركم فيرد الله عليه أكثر مما أُعْطِيَ)،  

আবু সা‘লাবা (রা.) বর্ণনা করেন: রাসূল (সা.) বলেছেন: গম দিয়ে এক সা‘ সাদকাতুল ফিতর আদায় করো, প্রত্যেক ছোট-বড়, মুক্ত ও দাস, ধনী ও গরীব, পুরুষ ও মহিলা সকলের পক্ষ থেকে। এভাবে দান করার দ্বারা আল্লাহ ধনীদেরকে পবিত্র করেন। আর গরীব লোকদের তারা যা দান করেন, তার চেয়ে বেশি বরকত দিয়ে থাকেন।

কার পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব: নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান বা অবিবাহিত মেয়ের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব। সন্তানের নামে সম্পদ থাকলে সেখান থেকে আদায় করা যাবে। প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব নয়। কোনো এতিম শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকেও আদায় করতে হবে।

কখন ওয়াজীব হয়: প্রকাশ থাকে যে, ফিতরা প্রদানের ফরয ওয়াক্ত আরম্ভ হবে ঈদের রাতে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর হতে। কাজেই সেদিন যদি কেউ সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পূর্বে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তার ফিতরা প্রদান করতে হবে না। কিন্তু সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পর মৃত্যু হলে তার ফিতরা আদায় করতে হবে। তদ্রূপ যে সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পূর্বে জন্ম নিয়েছে,বা এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে,তাকেও এই সদকা আদায় করতে হবে।

সদকাতুল ফিতর আবশ্যক হওয়ার ওয়াক্ত রমজানের শেষ দিনের সূর্যাস্তের পরবর্তী সময় নির্ধারণ করার কারণ হচ্ছে, তখন থেকে ফিতর তথা খাওয়ার মাধ্যমে রমজানের সিয়াম সমাপ্ত হয়। এ কারণেই একে রমজনের সদকাতুল ফিতর বা সিয়াম খোলার ফিতর বলা হয়। বুঝা গেল, ফিতর তথা সিয়াম শেষ হওয়ার সময়টাই সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময়।

কখন আদায় করতে হয়: ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামায পড়তে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে যাকাতের ন্যায় সেই সময়ের আগেও আদায় করা যেতে পারে।

আবার কোনো কারণে সময় মতো আদায় করতে না পারলে পরেও আদায় করবে, তবে তা সদকাতুল ফিতর হিসেবে গৃহীত হবে না, বরং সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে। কেউ আদায় না করে মৃত্যুবরণ করলে তার পক্ষ থেকে তার উত্তরাধিকারী আদায় করে দিবেন।

সদকাতুল ফিতরের হকদার :

সদকাতুল ফিতর হকদার হচ্ছে: (১) দরিদ্র (২) ঋণ আদায়ে অক্ষম (৩) ঋণগ্রস্ত,তাকে প্রয়োজন পরিমাণ দেয়া যাবে। এক সদকাতুল ফিতর অনেক ফকীরকে দেয়া যাবে এবং অনেক সদকাতুল ফিতর এক মিসকিনকেও দেয়া যাবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন,কিন্তু হকদারকে কি পরিমাণ দিতে হবে তা নির্ধারণ করেননি। সুতরাং যদি অনেক ব্যক্তি তাদের সদকাতুল ফিতর ওজন করার পর একটি পাত্রে জমা করে এবং সেখান থেকে তা পুনরায় পরিমাপ ছাড়া বণ্টন করে,তবে তা বৈধ হবে। কিন্তু ফকীরকে জানিয়ে দেয়া উচিৎ। তাকে তারা যা দিচ্ছে তার পরিমাণ তারা জানে না। ফকীরের জন্য বৈধ,কারো থেকে সদকাতুল ফিতর গ্রহণের পর নিজের পক্ষ থেকে বা পরিবারের অন্য সদস্যের পক্ষ থেকে দাতার কথায় বিশ্বাস করে পরিমাপ ছাড়াই কাউকে কিছু দেয়া।

মূল্যদিয়ে ফিতরা আদায় হবে কি?

ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) এর অনুসারীরা অধিকাংশই পণ্য না দিয়ে মূল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় অবৈধ বলেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ বলেছেন। তবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকার জন্য মূল্য না দিয়ে পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ দেশের প্রধান খাদ্য যেমন আমাদের দেশের চাল, ডাল, সেমাই ইত্যাদি। এসবের কোনো একটি দিলে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা যাবে। মাঝে মাঝে প্রয়োজনের তাগিদে মূল্য দেয়া বৈধ হবে।এটা হাদিসসম্মত। সহিহ বুখারিতে এসেছে নবী (সা.) থেকে ও একদল সাহাবি থেকে। মুয়াজ (রা.) যিনি ইয়েমেনের গভর্নর ছিলেন, তিনি বলেন, তোমরা যাকাত হিসেবে যাকাত পণ্য না দিয়ে এদের মূল্য হিসেবে কাপড় দাও- গম, যবের বদলে। এটা তোমাদের জন্য সহজ হবে। আর মদিনার সাহাবিদের জন্য উত্তম হবে। এটা প্রমাণ করে মাঝে মধ্যে মূল্য দিয়ে আদায় করা যাবে।

أمر النبي صلى الله عليه وسلم معاذاً حين خرج إلي اليمن بالتيسير على الناس فكان معاذ يأخذ الثياب مكان الذرة، لأنه أهون عليهم، فقد روي عن طاووس أن معاذ رضي الله عنه قال لأهل اليمن ائتوني بعرض ثياب  أو لبيس في الصدقة مكان الشعير والذرة، أهون عليكم وخير لأصحاب النبي صلى الله عليه وسلم في المدينة، ولا يكون ذلك إلا باعتبار القيمة، أي جواز أخذ العرض، والمراد به ما عدا النقدين، قال ابن الرشيد: وقد وافق البخاري في هذه المسألة الحنفية مع كثرة مخالفته لهم{76}. وكان عمر بن الخطاب رضي الله عنه يأخذ العروض في الصدقة من الدراهم{77}.وفي إخراج الشاة عن خمس من الإبل دليل على أن المراد قدرها من المال.

كما بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم معاذاً إلى اليمن لجمع الصدقات المفروضة قال لهم : (ائتوني بعرض ثياب خميس أو لبيس أسهل عليكم وخير لمن في المدينة من المهاجرين والأنصار) رواه البخاري معلقاً في باب العرض في الزكاة ، وقال طاوس : ( قال معاذ لأهل اليمن : ائتوني بعرض ثياب خميص أو لبيس في الصدقة مكان الشعير والذرة أهون عليكم…. ) رواه البيهقي في السنن الكبرى (4/113) والمحلى (6/25) قال الحافظ ابن حجر في تعليق التعليق (3/13) إسناده صحيح إلى طاوس ، لكنه لم يسمع من معاذ فهو منقطع ، ورواه ابن أبي شيبة في صمفنه (3/174)

 

Related Post