অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

অলী-আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

অলী-আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি (১ম পর্ব)

বর্তমান যুগে অধিকাংশ মুসলমান তাদের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তা’আলা হতে দুরে সরে থাকায় এবং তাঁর দেয়া জীবন বিধান ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান ও সঠিক ধারণা না থাকায় বিভিন্ন ধরনের শিরক, বিদ’আত ও ধর্মীয় ব্যাপারে ভিত্তিহীন কল্প-কাহিনী ও কুসংস্কার-এর প্লাবনে ডুবে আছে। তার মধ্যে যা মারাত্মক আকার ধারন করেছে তা হলো, অলী-আওলিয়া ও পীর-ফকির নামধারী কিছু মানুষের প্রতি কিছু সংখ্যক মুসলমানের অন্ধ ভক্তি। যাদের অনেকেরই ধারণা যে, ঐ সব পীর-ফকিরেরা মানুষের ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে, সুতরাং তারা বিপদে-আপদে ওদের কাছে আবেদন-নিবেদন জানিয়ে থাকে। এছাড়াও ওদের প্রতি অন্ধ-ভক্তির আতিশায্যে ওদের কবরসমূহ তাওয়াফ করে – এই ধারণা নিয়ে যে, ওদের মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য হাসিল করে সকল প্রকার বিপদ-আপদ ও দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি পাবে এবং নিজেদের সকল প্রকার প্রয়োজনও পূর্ণ হবে।
পক্ষান্তরে ঐ সকল অবুঝ লোকেরা যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর রেখে যাওয়া পবিত্র কুরআন এবং সহীহ সুন্নাহর দিকে ফিরে এসে দো’আ ও অসিলার ব্যাপারে তাতে যা কিছু বলা হয়েছে সে সম্পর্কে একটু বুঝার চেষ্টা করত তাহলে অবশ্যই তারা শরীয়ত সম্মত সঠিক অসিলার তাৎপর্য জানতে পারত।

শরীয়ত সম্মত সঠিক অসিলার বিবরণ

১. মহান আল্লাহ তা’আলা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশগুলি যথাযথভাবে পালন করে তাঁদের নিষেধকৃত সকল হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে শরীয়ত সম্মত প্রকৃত অসিলা অর্জিত হয়। অর্থাৎ নিজস্ব কোন সৎ কাজের অসিলায় আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা করা যায়।
২. মহান আল্লাহ তা’আলার সুন্দরতম গুণবাচক নামসমূহের অসিলা বা দোহাই দিয়ে তাঁর দরবারে আরয করা যায়।
৩. জীবিত কোন সৎ লোককে দিয়ে দো’আ করিয়ে, সেই দো’আর অসিলায় মহান মালিকের সমীপে আবেদন করা যায়।
উল্লেখিত তিনটি বিষয় মহান আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য, রহমত ও সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ও পন্থা। অপরদিকে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন মিটানো কিংবা বিপদ মুক্তির আশায় কবর পাকা করা, কবরে গিলাফ চড়ানো, শামিয়ানা টানানো, আলোকসজ্জা করা, আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালানো, কবরের উপরে আতর, গোলাপ ও ফুল ছিটানো, ফ্যান চালানো; এছাড়া কবরবাসীর জন্য নজর-নিয়াজ প্রদান করা, কবরে তাওয়াফ করা, কুরআন শরীফ পাঠ করা, ভীত-সন্ত্রস্ত ও নমনীয়ভাবে নামাযের কায়দায় কবরের পাশে বসা বা কবরকে সামনে নিয়ে সিজদা করা এবং কবরবাসীর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করা কোন রকমেই শরীয়ত সম্মত নয় বরং হারাম। কেননা এগুলো বিদ’আতী, শিরকী ও কুফরী কাজ। এ সকল কাজ থেকে আল্লাহ তা’আলার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাযত করন। আমীন ॥
হযরত উমর ফারূক (রাঃ) যে ‘সালাতুল এস্তেসকা’-এ হযরত আব্বাস (রাঃ)-র মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, যা দিয়ে অনেকেই মানুষের দ্বারা অসিলা গ্রহণ করার স্বপক্ষে দলীল পেশ করে থাকে; তা মোটেই ঠিক নয়। কারণ হযরত উমর ফারূক (রাঃ) কেবলমাত্র হযরত আব্বাস (রাঃ) -এর দো’আর অসিলায় বৃষ্টি চেয়েছিলেন, তাঁর ব্যক্তি সত্তার মাধ্যমে নয়।
জীবিত কোন সৎ লোকের দো’আর মাধ্যমে অসিলা গ্রহণ করা আর কোন জীবিত বা মৃত, সৎ কিংবা অসৎ মানুষের শুধু ব্যক্তি সত্তার দ্বারা অসিলা তলব করা এক কথা নয়। কারণ প্রথমটি জায়েজ ও শরীয়ত সম্মত, যা ইতিপূর্বে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি বিদ’আত ও হারাম। সুতরাং হযরত উমর ফারূক (রাঃ) শরীয়ত সম্মত পন্থায়ই অসিলা তলব করেছিলেন।
ঐসব আবেদনকারীগণ এমন সব মানুষের কাছে আবেদন করে যারা তাদের নিজেরই কোন উপকার করতে পারে না মৃত্যুবরণ করার কারণে, সুতরাং তাদের পক্ষে অপরের কোন উপকার করার প্রশ্নই ওঠে না। একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করায় তার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়, অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলিও অকেজো হয়, এরপরে সে অপরের উপকার তো দুরের কথা নিজের উপকার করতে পারে বলে কোন সুস্থ বিবেক ও জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ আদৌ মেনে নিতে পারে না। মৃত্যুর পর মানুষের কাজ করার ক্ষমতা থাকে না।

এ মর্মে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘোষণা হলোঃ “যখন আদম সন্তান মারা যায়, তখন তিন প্রকার আমল ছাড়া তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়ঃ

(১) সাদকায়ে জারিয়াহ্। ( যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল তৈরী করে যাওয়া ইত্যাদি )।

(২) অথবা জনকল্যাণমূলক এলেম বা জ্ঞান ( রেখে যাওয়া )।

(৩) অথবা এমন সুসন্তান রেখে যাওয়া, যে তার ( মৃত পিতা-মাতার ) জন্য দো’আ করে।” ( সহীহ্ মুসলিম )
উক্ত হাদীস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মৃত ব্যক্তিরা জীবিতদের দো’আর প্রতি চরমভাবে মুখাপেক্ষী, পক্ষান্তরে জীবিত মানুষেরা মৃত মানুষদের দো’আর প্রতি কোন প্রকারেই মুখাপেক্ষী নয়। কেননা উক্ত হাদীসই বলে দিচ্ছে যে, আদম সন্তানের মৃত্যুর সাথে সাথে তার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং জীবিত মানুষেরা যেভাবেই অনুনয়-বিনয় করে দীর্ঘ সময় ধরে কবরবাসীকে ডাকুক না কেন, তাদের পক্ষে ওদের ডাকে সাড়া দেয়া আদৌ সম্ভব নয়। কেননা মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “… আল্লাহ তা’আলাই হচ্ছেন তোমাদের সবার মালিক, সার্বভৌমত্ব তার জন্যেই, তাকে বাদ দিয়ে তোমরা অন্য যেসব (মাবুদ)-দের ডাকো তারা তো তুচ্ছ একটি (খেজুরের) আটির বাইরের ঝিল্লিটির মালিকও নয়। যদি তোমরা তাদের ডাকো – (প্রথমত) তারা তো শুনবেই না, যদি তারা তা শুনেও তবে তারা তোমাদের ডাকের কোনো উত্তর দেবে না (উপরন্তু) কেয়ামতের দিন তারা (নিজেরাই) তোমাদের এই শেরেক (-এর ঘটনাকে) অস্বীকার করবে, (এ সম্পর্কে) একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউই তোমাকে কিছু অবহিত করতে পারবে না।” (সূরা ফাতেরঃ আয়াত ১৩-১৪)
উপরোক্ত আয়াতে পূজনীয় দেব-দেবী ও কবর-মাযারে শায়িত পীর-ফকীরদের মালিকানা এবং শ্রবণ ক্ষমতা নাকচ করা হয়েছে। আর এটা জানা কথা যে, যে ব্যক্তি কোন কিছুর মালিক নয় সে অপরকে কিছু দিতে পারে না। আর যে কোন কিছুই শুনতে পায় না, সে জবাব দিতে পারে না এবং কোন কিছুরই খবরও রাখে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লোকদের উদ্দেশ্যে বলতে বলেন, “(আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে) আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভাল করবে না মšদও করবে না। বস্তুত: তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর আল্লাহ যদি তোমার উপর কোন কষ্ট আরোপ করেন তাহলে কেউ নেই তা খন্ডাবার মত তাঁকে ছাড়া। পক্ষান্তরে যদি তিনি কিছু কল্যাণ দান করেন, তবে তার মেহেরবানীকে রহিত করার মতও কেউ নেই। তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ দান করতে চান স্বীয় বান্দাদের মধ্যে তাকেই দান করেন; বস্তুত; তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা ইউনুসঃ আয়াত ১০৬-১০৭)
উক্ত আয়াত দু’টি দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ছাড়া দুনিয়ায় আর যে সব নামধারী ত্রানকর্তা পীর-ফকির, খাজাবাবা, দয়ালবাবা, অলী-আওলিয়া, যেমন বর্তমান বাংলাদেশের সায়দাবাদী, দেওয়ানবাগী, চরমোনাই, আটরশি, চন্দ্রপুরী, শাহজালাল; ভারতের খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী এবং ইরাকের আব্দুল কাদের জিলানী প্রমূখ যারা আছে তাদের কেহই মানুষের সামান্যতম ভাল ও মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। আর উক্ত আয়াতদ্বয় ওদেরকেও মিথ্যাবাদী প্রমাণ করছে, যারা বলেঃ ‘আমরা যে উদ্দেশ্যে পীর-ফকীর, অলী-আওলিয়াদের নামে মান্নত দিয়েছি এবং তাদের কাছে প্রার্থনা করেছি, তা হাসিল হয়েছে।’ যারা এমন কথা বলে তারা মহান আল্লাহ তা’আলার উপর মিথ্যা অপবাদই দিয়ে থাকে। [ নাউযুবিল্লাহ ]

আর যদি ধরে নেওয়া যায় যে, সত্যিই তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে, তাহলে এ ব্যাপারটা নিম্নের দুই বিষয়ের যে কোন একটির সাথে জড়িতঃ

১. মানুষের উদ্দেশ্য হাসিলের ব্যাপারটা যদি এমন বিষয়ে হয়, যার উপর মানুষ স্বভাবগত ভাবে ক্ষমতা রাখে না; তবে তা শয়তানদের সহযোগিতায় হতে পারে। কেননা মানুষেরা যখন আল্লাহ তা’আলার ইবাদত ছেড়ে দিয়ে গাইরুল্লাহ তথা দেব-দেবী অথবা কবর-মাযারের পূজা-পার্বনে লিপ্ত হয়, শয়তানেরা তখন সেখানে তাদের আড্ডাখানা বানিয়ে নেয় এবং পূজনীয় পীর-পুরোহিতদের বেশ ধরে কিছু তেলেসমাতি দেখিয়ে সরলমতি মানুষের স্বাভাবিক তাওহীদবাদী চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণাকে নষ্ট করে দিয়ে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলে। যেমনভাবে প্রাচীনকালে তারা বুজুর্গদের আকৃতি ধারণ করে লোকদেরকে প্ররোচনা দিয়ে তাওহীদ তথা ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত করে মূর্তি পূজারীতে পরিণত করেছিল। প্রথমে তারা হযরত নূহ (আলাইহিসসালাম)-এর কওমের কাছে তাদের পূর্ববর্তী শ্রদ্ধাভাজন অলী-আওলিয়াদের আকৃতি ধারণ করে এসে বিভিন্ন ধরনের আজগুবি খবর দিয়ে তাদেরকে আকৃষ্ট করে এবং তাদেরকে প্ররোচনা দেয় যে, তোমাদের পূর্ব পুরুষেরা ভাল মানুষ ছিল সুতরাং তোমরা যদি তাদের ছবি এঁকে ঝুলিয়ে রাখ আর মাঝে মাঝে তা দেখ, তাহলে তাদের অধিক ইবাদতের কথা স্মরণ করে তোমরাও বেশি বেশি ইবাদত করতে পারবে। শয়তানের এই কুমন্ত্রণা পেয়ে তারা খুব খুশী হয়ে তাদের পূর্ব পুরুষদের ছবি অংকন করে ঝুলিয়ে রাখে এবং মাঝে মাঝে ঐ ছবিগুলি দেখে তাদেরকে স্মরণ করে ইবাদতে মনোনিবেশ করে।
এ অবস্থা বহুদিন চলার পর শয়তানেরা তাদেরকে আবারও প্ররোচনা দেয় যে, তোমরা যদি এ ছবিগুলিকে বড় আকারের মূর্তি বানিয়ে দেয়ালের পার্শ্বে খাড়া করে রেখে ইবাদত কর; তাহলে তোমাদের ইবাদত খুবই ভাল হবে … ।
মোটকথা ওরা এভাবেই হযরত নূহ (আলাইহিস্সালতু ওয়াসাল্লাম)-এর কওমকে পথভ্রষ্ট করে মূর্তি পূজারীতে পরিণত করেছিল। আর এটাই হলো পৌত্তলিক ধর্ম সৃষ্টির গোড়ার কথা।
এমনিভাবে আজও ওরা গণক ও যাদুকরদেরকে দুনিয়ায় বর্তমান ঘটমান বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে দু’একটি সত্যের সাথে মিথ্যা খবর দিয়ে থাকে, আর এই সুযোগে ঐ সকল গণক, যাদুকর ও ভন্ড পীর-ফকিরেরা দুষ্ট শয়তানের সহযোগিতায় মানুষের এমন কিছু প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে আর সমস্যা দূর করে দেয় যা সাধারণত সৃষ্টজীবের পক্ষে সম্ভব। যার ফলে অসহায় মুরীদেরা মনে করে যে, এইতো আমি ডুবেই গেছিলাম আমার পীরবাবাই এসে আমাকে ভরা গাঙ থেকে তুলে নিয়ে এলো! আসলে যে ইবলীস শয়তান পীর বাবার রূপ ধারণ করে বিপদ ও অজ্ঞতার সুযোগে ওর ঈমান হরণ করে গেল তা সে বুঝতেই পারেনি। এমনিভাবে শয়তানেরা মূর্তিসমূহের ভিতর থেকে পূজকদের সাথে কথা বলে এবং তাদের কিছু কিছু প্রয়োজন মিটিয়ে তাদেরকে তাক লাগিয়ে দিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে অনেক আলেমই ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন।
২. পক্ষান্তরে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের ব্যাপারটা যদি এমন বিষয়ে হয়, যার উপর একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখে না। যেমন জীবন-মরণ, সুস্থতা, ধনাঢ্যতা ও দারিদ্রতা ইত্যাদি তাহলে তাদের ঐ দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ এসব জিনিস একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার হাতে। আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কেউ এসবের সামান্যতম কোন ক্ষমতা রাখে না। আসমান-জমিন তথা এই পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে মহান আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টির ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। কাজেই এগুলি পীর-ফকির কিংবা অলী-আওলিয়াদের কারামতিতে বা তাদের দো’আর বরকতে পাওয়া যায় না।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকে দেখতে পাওয়া যায় যে, আব্দুল কাদের জিলানী [রাহেঃ], খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী, দয়ালবাবা, খাজাবাবা, আটরশী, সায়দাবাদী ও দেওয়ানবাগী ইত্যাদি এসব পীরদের দোআর বরকতে কতক মানুষ তাদের বিবাহের ১৫/২০ বছর পরে সন্তান লাভ করেছে, কেউবা নদীতে নৌকা ডুবি থেকে বেঁচে গেছে এবং রাস্তায় যান-বাহনের দুর্ঘটনা হতে রক্ষা পেয়েছে ..। নাঊজুবিল্লাহ। এসবের প্রতি বিশ্বাস রাখা শেরেকী কাজ। কারণ কাউকে ছেলে-মেয়ে দেয়া অথবা বিপদ-আপদ থেকে বাঁচানো, একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষেই সম্ভব – অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
সুতরাং জ্ঞানবান মানুষের উচিত হবে যে, তারা যেন এসব ধর্মীয় বিষয়ে কোন প্রকার গাল-গপ্প, মিথ্যা-গুজব এবং ভিত্তিহীন কথা বিশ্বাস না করে, কেননা এগুলি মানুষকে বিপথগামী করার এবং মূর্খতায় নিমজ্জিত করার অন্যতম কারণ ও উৎস। আর এগুলি চক্ষুষ্মান ব্যক্তিদের জন্য অন্ধত্ব এবং হৃদয়বান ব্যক্তিদের জন্য মৃত্যুর সমতুল্য। কাজেই তারা যেন সর্বাবস্থায়ই তাদের অন্তকরণকে মহান আল্লাহ তা’আলার দিকে নিবিষ্ট করে এবং সকল প্রকার প্রয়োজনে একমাত্র তাঁর দিকেই ধাবিত হয়। কোন প্রকারেই যেন কোন সৃষ্টজীবের দিকে ভ্রক্ষেপ না করে। কেননা সকল সৃষ্টজীব আল্লাহ তা’আলার ক্ষমতার সামনে কিছুই না বরং দুর্বল, মিসকীন, মূর্খতা ও অপরাগতায় ভরপুর। আর ঐ কবরবাসীরা এমনই দুর্বল ও অপারগ যে, তারা কবরে তাদের দেহের উপর চাপা দেয়া মাটিগুলিকেও সরিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে না। (চলবে…)

Related Post