আক্দ কিভাবে হবে?

আক্দ কিভাবে হবে?

আক্দ কিভাবে হবে?

পূর্বে আমরা বিবাহ-বন্ধন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আজ আমরা কিভাবে বিয়ে  হবে? বা পড়াতে হয় বা আক্দ কিভাবে হবে? এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ইনশা আল্লাহ
মোহরাদি ধার্য ইত্যাদি হয়ে থাকলে কাজী বা ইমাম সাহেব সূক্ষ্মভাবে খোঁজ নেবেন যে, অলী কে এবং শরঈ কি না? বরের চার স্ত্রী বর্তমানে এটা পঞ্চম বিবাহ তো নয়? বর মুসলিম তো? পাত্রী ইদ্দতের মধ্যে নয় তো? গর্ভবতী নয় তো? পাত্রের দ্বিতীয় বিবাহ হলে পূর্বের স্ত্রী বর্তমানে এই পাত্রী তার বোন, ফুফু, বনঝি বা ভাইঝি তো নয়। এই পাত্রী সধবা হয়ে কারো স্বামীত্বে নেই তো? পাত্রীর দ্বিতীয় বিবাহ হলে তার পূর্বস্বামী যথারীতি তালাক দিয়েছে তো? পাত্রী রাজি আছে তো? পাত্রীর কোন বৈধ শর্ত তো নেই? দু’জন সঠিক ও উপযুক্ত সাক্ষী আছে কিনা?
অতঃপর সহীহ হাদীস সম্মত খুৎবা পাঠ করবেন। খুৎবায় উল্লেখিত আয়াতগুলো পাত্রকে বুঝিয়ে দেওয়া উত্তম। প্রকাশ থাকে যে, এ খুৎবা আকদরে জন্য জরুরি নয়, সুন্নত। অতঃপর অলীকে বলতে বলবেন অথবা তার তরফ থেকে ওকীল হয়ে বরের উদ্দেশ্যে একবার বলবেন ‘এত টাকা দেন মোহরের বিনিময়ে অমুক গ্রামের অমুকের কন্যা অমুকের স্পষ্ট নাম উল্লেখ করে তোমার সহিত বিবাহ দিচ্ছি।’ পাত্র বলবেন, ‘আমি এই বিবাহ কবুল করছি।’
এরপর সকলে বরের উদ্দেশ্যে একাকী এই দোয়া করবে:
بارك الله لك و بارك عليك و جمع بينكما في خير.
উচ্চারণ: বা-রাকাল্লা-হু লাকা ওয়াবা-রাকা আলাইকা ওয়াজামাআ বাইনাকুমা ফী খাইর।
অর্থাৎ আল্লাহ তোমার প্রতি বরকত বর্ষণ করুন, তোমাকে প্রাচুর্য দান করুন এবং তোমাদের উভয়কে মঙ্গলের মাঝে একত্রিত করুন। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
বাহ্যিক আড়ম্বরহীন ইসলামে এখানে বিবাহের আসল কর্ম শেষ। জ্ঞাতব্য বিষয় যে, আকদের সময় কনে মাসিকাবস্থায় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। তবে সেই সময় বাসরশয্যায় না পাঠানো উচিত।
বর বোবা হলে ইশরা ও ইঙ্গিতে কবুল গ্রহণযোগ্য। (ফিকহুস সুন্নাহ: ২/৩৫) হাতের লিখা পরিচিত হলে চিঠি আদান-প্রদান করে আক্দ সম্ভব। তবে চিঠি দেখিয়ে প্রস্তাব ও কবুলের উপর ২জন সাক্ষী রাখা জরুরি। (ফিকহুস সুন্নাহ: ২/৩৫) বর জ্ঞানশূন্য বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকলে আক্দ সহীহ নয়। (মব: ৪/৩৪২) টেলিফোনে ধোঁকার আশঙ্কা থাকার জন্য শুদ্ধ নয়। তবে দুই পক্ষ আশঙ্কামুক্ত হলে টেলিফোনেও বিবাহ বৈধ। (মব: ৪/৩৩৭০)
পাত্র-পাত্রী দেখা-দেখি না হয়ে কোন ইজতেমায় চোখ বন্ধ করে কেবল আবেগবশে বিবাহ যুক্তিযুক্ত নয়।
পাকা দলীল রাখার জন্য বিবাহের বর, কনে, অলী, সাক্ষী প্রভৃতির নাম ও স্বাক্ষর এবং মোহর, শর্ত ইত্যাদি (কাবিল বা কবুলনামা) লিখে নেওয়া দোষের নয়।
বরের দ্বিতীয় বিবাহ হলে প্রথমা স্ত্রীর অনুমতি জরুরি নয়। (মব: ২৫/৬৭)
এ ছাড়া বর্তমানে ইযন বা অনুমতি নেওয়ার অনুষ্ঠান এবং উকীল ও সাক্ষীসহ কনের ইযন আনতে যাওয়ার ঘটার সমর্থন শরীয়তে মিলে না। বিবাহ আকদের জন্য সাক্ষী জরুরি, কনের ইযনের জন্য নয়। এর জন্য কনের অভিভাবকই যথেষ্ট। অবশ্য অভিভাবকের পক্ষ থেকে ধোঁকা বা খেয়ানতের আশঙ্কা থাকলে কাজী নিজে অথবা তাঁর প্রতিনিধি পর্দার আড়ালে থেকে কনের মতামত জানবে।
এ ছাড়া কনের ইযন নেওয়ার জন্য কনেকে যেখানে বসানো হবে সেখানে লাতা দেওয়া, কনেকে উল্ট করে শাড়ি-সায়া-ব্লাউজ পরানো, কনের হাতে চুড়ি না রাখা, মাথার খোঁপা বা বেণী না বাঁধা, (অনেক এলাকায়) সুকির শাড়ি পরা জরুরি মনে করা, কনেকে পিড়ের উপর মহিলা মজলিসের মাঝে পশ্চিম-মুখে বসানো এবং পর্দার আড়ালে থেকে তিন বার ‘হু’ নেওয়া, এই সময় কাঁসার থালায় গোটা পান-সুপারি (দাঁড়া-গুয়া-পান) (!) সহ জেওর-কাপড় বিবাহ মজলিস ও কনের কাছে নিয়ে যাওয়া-আসা, বিবাহ না পড়ানো পর্যন্ত কনের মায়ের রোযা রাখা (না খাওয়া) বিদআত ও অতিরিক্ত কর্ম।
যেমন আকদের পর হাত তুলে জামাআতি (সাধারণ) দুআ। আকদের পূর্বে বা পরে মীলাদ (জামাতী দরূদ) পড়া, বরের দুই রাকাত নামায পড়া, উঠে মজলিসের উদ্দেশ্যে সালাম ও মুসাফাহা করা, নিজের হাতে ইমাম, উকীল ও সাক্ষীদেরকে ওলীমাহ (?) দেওয়া, শরবত ও পান হালাল করা, আকদের তিন-তিন বার কবুল করানো, বরকে পশ্চিমমুখে বসানো ইত্যাদি বিদআত। (ফমামু ২৮৭১৪)
বিবাহ-বন্ধনের পূর্বে বরকে কালেমা পড়ানোও বিদআত এবং বরের প্রতি কুধারণা। মুসলিম হওয়ায় সন্দেহ থাকলে পূর্বেই খবর নেওয়া দরকার। কারণ তার সহিত কোন মুসলিম মেয়ের বিবাহ বৈধই নয়। তাছাড়া মুখে কালেমা পড়িয়ে কাজে যেমনকার তেমনি থাকলে মুসলিম হয় কি করে? পক্ষান্তরে পাত্রী কালেমা জানে কিনা, তাও তো দেখার বিষয়? কিন্তু তা তো কই দেখা হয় না।
প্রকাশ থাকে যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করলে অথবা কুফরী বা রিদ্দাহ থেকে তাওবা করলে ইসলাম বা তাওবার পূর্বের বিবাহ-বন্ধন পরেও বজায় থাকবে। পক্ষান্তরে দুজনের ইসলাম বা তাওবা যদি আগে-পরে হয়, সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর আগে স্বামী ইসলাম গ্রহণ বা তাওবা করলে তার কিতাবিয়াহ (সাধ্বী ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান) স্ত্রী ছাড়া বাকী অন্য ধর্মাবলম্বিণীস্ত্রীর সাথে যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল, তা ছিন্ন হয়ে যাবে। অতঃপর (বিবাহের পর মিলন হয়ে থাকলে) সে তার ইদ্দতের মাঝে ইসলাম গ্রহণ বা তাওবা করলে আর পুনর্বিবাহের প্রয়োজন হবে না। প্রথম বন্ধনেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বজায় থাকবে। কিন্তু স্ত্রী যদি ইদ্দত পার হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ বা তাওবা করে তাহলে স্বামীর কাছে ফেরৎ যাওয়ার জন্য নতুন আকদের প্রয়োজন হবে। অন্যথায় স্ত্রী যদি স্বামীর আগে ইসলাম গ্রহণ বা তাওবা করে, তাহলে তার স্বামী যে ধর্মাবলম্বীই হোক তার পক্ষে হারাম হয়ে যাবে।
অতঃপর তার ইদ্দতকালের মধ্যে স্বামী ইসলাম গ্রহণ বা তাওবা করলে তাদের পূর্ব বিবাহ বহাল থাকবে। নচেৎ ইদ্দত পার হয়ে গেলে নতুন আকদের মাধ্যমেই স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে ফিরে পাবে।
ইমাম বা কাজীকে খুশী হয়ে আকদের পর কিছু উপহার দেওয়া যায়। এখানে দাবী ও জোরের কিছু নেই। (ইতা. ৬২৫-৬২৬) দাই-নাপিত বিদায়ের সময় জোরপূর্বক পয়সা আদায়ের প্রথা ইসলামী নয়। বিবাহরে সময় তাদের কোন কর্ম বা হক নেই। (ইতা. ৬২৫-৬২৬)
কাযায়ী গ্রহণও এক কুপ্রথা। বিশেষ করে এ নিয়ে ঝগড়া-কলহ বড় নিন্দার্হ। গ্রাম্য চাঁদা বা ভাড়া নেওয়া যায়। যেটা অন্য গ্রামে দিতে হয়, সেটা নিজ গ্রামে দিলে ঝামেলা থাকে না।
বিবাহ মজলিসে বরের বন্ধু-বান্ধবদের তরফ থেকে অশ্লীল প্রশ্নোত্তর সম্বলিত হ্যাণ্ডবিল প্রভৃতি বিতরণ করা ঈমানী পরিবেশের চিহ্ন নয়।‎

Related Post