ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব ও ফযীলত

ইসলামে আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব ও ফযীলত

ইসলামে আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব ও ফযীলত

আত্মীয়তার আরবী শব্দ রাহিম।এটি একবচন, তার বহুবচন আরহাম। আভিধানিক অর্থ: গর্ভ, গর্ভাশয়, জরায়ু, রক্তের সম্পর্ক, আত্মীয়তা-সম্পর্ক।

আর পরিভাষায় সিলাতুল আরহাম বলতে বুঝায়: নারী-পুরুষ তথা মাতা-পিতার সঙ্গে যেসব আত্মীয়ের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

সম্পর্ক দৃঢ়তা হিসেবেই তা বজায় রাখা গুরুত্ব পায়। যে যতটুকু নিকটের, তাদের সঙ্গে ততটুকু গুরুত্ব দিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া জরুরি। সব আত্মীয় সবার জন্য নিকট আত্মীয় হিসেবে গ্রহণযোগ্য না। যেমন স্ত্রীর ভাই-বোন, স্বামীর জন্য নিকট আত্মীয় না। কেননা এদের সঙ্গে স্বামীর রক্তের কোন সম্পর্ক নাই।

বিন বায (রহ.) বলেন: মাতা-পিতার সাথে রক্তের সম্পর্ক যাদের যতনিকটে তারাই হক পাওয়ার দিক থেকে অগ্রাধীকার রাখে। সুতরাং হক পাওয়ার দিক থেকে সর্বপ্রথম মা, বাবা, দাদা, সন্তানাদি, এরপর যারা যারা বেশি কাছের তাদের হকের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যেমন ভাই-বোন, চাচা, ফুফি, মামা, খালা এবং তাদের সন্তানাদি।

 যেমন জনৈক সাহাবী রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম ব্যবহার পাওয়ার হকদার কে? রাসূল (রা.) বলেছিলেন, তোমার ‘মা’। এভাবে তিনবার বলার পর বলেছিলেন তোমার ‘বাবা’। (মুসলিম)

নিকটাত্মীয়ের কোন সীমা-রেখা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়নি। এটি সমাজের প্রচলন বা প্রথার উপর নির্ভর করে। ইমাম নববী (রহ.) মুসলিম শরীফের ব্যাখায় বলেন: সিলাতুর রাহিম বা আত্মীয়তার সম্পর্ক হলো; তাদের সঙ্গে অনুগ্রহ প্রকাশ করা। এটি কখনও সম্পদ দ্বারা হতে পারে, কখনও শারীরিক খাটুনির মাধ্যমে হতে পারে, আবার কখনও বেড়ানোর মাধ্যমে আবার কখনও সালাম বা টেলিফোনের মাধ্যমেও হতে পারে।

ইমাম ইবনু উসাইমীন (রহ.) বলেন; সামাজিক প্রথা-প্রচলন ও নিয়ম মেনেই নিকটাত্মীয়ের সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। সে সমাজে যাকে নিকটাত্মীয় বলে চালু রয়েছে, তাদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করতে হবে। কেননা ইসলামী শরীয়ার এর কোন সীমা-রেখা বলা হয়নি।

আত্মীয়ের উত্তম আচরণের ফযীলত:

১। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ঈমানদারের লক্ষণ:

হযরত  আবু হুরায়রা সূত্রে বর্ণিত; রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাসী, তার উচিত,  মেহমানের আপ্যায়ন করা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাসী, তার উচিত, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাসী, তার উচিত- ভালো কথা বলা, নচেত চুপ থাকা।  (বুখারী)

২। রোজী রোজগারে বরকত হয় হায়াত বৃদ্ধি পায়:

আমরা সকলে কামনা করি, রোজী রোজগারে সচ্ছলতা হোক। কেননা টাকা পায়সা সম্পদের মুহাব্বত সকলের অন্তরে কম-বেশ রয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি চায় তার রোজীতে বরকত হোক, তার উচিত; আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।

হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত: রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি চায় যে, তার সম্পদে বরকত হোক, এবং দীর্ঘজীবি হোক, তার উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। (বুখারী)

৩। আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম:

হযরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি রাসূলে কারীম (সা.) হতে বর্ণনা করেন; আল্লাহর রাসূল বলেন, আত্মীয়তা বিষয়টি আল্লাহর আরশের সাথে স্থাপিত।  সে বলতে থাকে, যে আমাকে আপন করে নিলো, আল্লাহ তাকে আপন করে নিবেন, আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহও তাকে বিচ্ছিন্ন করবেন। (মুসলিম)

৪। আত্মীয়তার সম্পর্ক জান্নাতে প্রবেশের কারণ:

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল! (দরিদ্রকে) খাদ্য দান কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ, এবং উচ্চ শব্দে সালাম কর আর রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন উঠে নামায পড়। নিরাপত্তা সহকারে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন ॥

Related Post