কিছু খারাপ গুণ তা পরিহার করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জরুরি

খারাপ অভ্যাস ত্যগ করা

খারাপ অভ্যাস ত্যগ করা

 কোন ব্যক্তিকে গালি না দেওয়া: মুমিনের যবান সংযত থাকা একান্ত কাম্য। অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে পরিবেশ দূষিত করা তার জন্য শোভা পায় না। আচার-ব্যবহার ও ভাষার সৌন্দর্য পারস্পরিক বন্ধুত্ব সৃষ্টি ও তা স্থায়ীকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সেজন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوْقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী ও হত্যা করা কুফরী’। মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৮১৪।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, اَلْمُسْتَبَّانِ مَا قَالاَ فَعَلَى الْبَادِىْ مِنْهُمَا مَالَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُوْمُ ‘মাযলূম যদি সীমালংঘন না করে তাহলে দু’জন গালিগালাজকারী ব্যক্তির মধ্যে প্রথম যে সূচনাকারী তার উপর উভয়ের পাপ বর্তাবে’। (তিরমিযী হা/১৯৮১, হাদীস সহীহ) আরেকটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, اَلْمُسْتَبَّانِ شَيْطَانَانِ يَتَهَاتَرَانِ، وَيَتَكَاذَبَانِ. ‘যারা একে অপরকে গালি দেয় তারা উভয়েই শয়তান। উভয়েই কটু কথা বলে এবং উভয়েই মিথ্যুক’। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪২৭)
১৭নং উপায় হলো আমানতের খেয়ানত না করা: আমানতদারী একটি মহৎ গুণ। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে আমানত রক্ষায় ইসলামী শরী‘আত বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার প্রকৃত হক্বদারকে প্রত্যর্পণ করতে’। (সূরা নিসা: ৫৮) পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ নিজেই প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তির পরিচয় ও গুণাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘আর যারা নিজেদের আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে’ (সূরা মুমিনূন: ৮; সূরা মা‘আরিজ: ৩২)। মুনাফিকের লক্ষণের মধ্যে একটি অন্যতম লক্ষণ হল, وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ. ‘তার কাছে আমানত রাখলে খিয়ানত করে’। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫ )
রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেন, إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ. ‘যখন আমানতের খেয়ানত করা হবে তখন ক্বিয়ামতের প্রতীক্ষায় থেক’। আবূ হুরায়রা (রা.) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) জবাবে বললেন,إِذَا أُسْنِدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ  ‘যখন অযোগ্য-অদক্ষ ব্যক্তিদের কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে, তখন তোমরা ক্বিয়ামতের প্রতীক্ষায় থেক’। (বুখারী হা/৬৪৯৬)
আমানতের মূল ভিত্তি হল বিশ্বাস। কেউ যখন আমানতের খিয়ানত করে, তখন সে তার বিশ্বস্ততা হারায়। যার ফলে সে জনবিচ্ছিন্নি হয়ে পড়ে।
ওয়াদা খেলাপ না করা: আমানতের খেয়ানত করা, ওয়াদা খেলাপ করা এবং মিথ্যা বলা মুনাফেকীর লক্ষণ। আর  মুনাফিকের  শেষ ঠিকানা হল  জাহান্নামের  সর্বনিম্ন  স্তরে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম  স্তরে থাকবে এবং তুমি তাদের কখনো কোন সহায় পাবে না’ (সূরা নি(সা.) ১৪৫)। প্রকৃতপক্ষে যারা মুনাফিক তাদের বাহ্যিকভাবে চেনা কষ্টসাধ্য। কিন্তু পবিত্র কুরআনের ঘোষণা, ‘আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা ঈমানদার এবং অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা মুনাফিক’। (সূরা আনকাবূত: ১১) শুধু প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হবেন না ক্বিয়ামতে তাদের কঠিন শাস্তি দিবেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী- যারা আল্লাহ সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, তাদেরকে শাস্তি দিবেন’ (সূরা ফাত্হ: ৬)। ওয়াদা খেলাপকারীরা ক্বিয়ামতের দিন যেমন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে, তেমন দুনিয়াবী জীবনেও তারা চরমভাবে অপমানিত হয়ে থাকে। তাই কোন মুসলমানের চরিত্রে ওয়াদা খেলাপের মত ঘৃণ্য দোষ থাকা উচিত নয়।
১৯নং উপায় হলো  কোন ব্যক্তিকে অপমান না করা: প্রত্যেক মানুষেরই আত্মসম্মানবোধ আছে। কেউ যখন কারো আত্মমর্যাদাহানি ঘটায়, তখন সে তার থেকে দূরে সরে যায়। তাছাড়া মুসলমান হিসাবে কারো মর্যাদাহানি ঘটানো ঠিক নয়। এ মর্মে রাসূল (সা.) বলেন, كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ. ‘একজন মুসলমানের জন্য অন্য মুসলমানকে খুন করা, তার মাল গ্রাস করা ও তার সম্মানে আঘাত করা অর্থাৎ অপমান করা হারাম’। (রিয়াদুছ ছালেহীন, হা/১৫২৮)
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যখন আমাকে মি‘রাজে গমন করানো হয়েছিল, তখন আমি এমন এক কওমের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখসমূহ ছিল তামার। তারা নখ দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশ খামচাচ্ছে। আমি বললাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা মানুষের গোশত খেত (গীবত করত) এবং তাদের মান-সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলত’। (আবূদাউদ, হা/৪৮৭৮)
অন্য হাদীসে তিনি বলেন, مَنْ رَمَىَ مُسْلِمًا بِشَىْءٍ يُرِيْدُ شَيْنَهُ بِهِ حَبَسَهُ اللهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يُخْرِجَ مِمَّا قَالَ ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে কোন অপবাদ দিয়ে তার মর্যাদাহানি করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের সেতুতে আটকে দিবেন। যতক্ষণ না সে যা বলেছিল তা বের করে দেয়’। (আবুদাঊদ হা/৪৮৮৩)
পক্ষন্তরে প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব হল, তার অপর ভাইয়ের মান-সম্মান রক্ষা করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيْهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের মান-সম্মান রক্ষা করল, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন’। (তিরমিযী, হা/১৯৩১)
কোন ব্যক্তির  দোষ তালাশ না করা: মানুষ মাত্রই কোন না কোন দোষে দোষী। শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে কোন ব্যক্তি যখন কোন অপরাধ করে, পরক্ষণে তার বিবেক জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে সে সারাক্ষণ উক্ত অপরাধের জন্য বিবেকের দংশনে জর্জরিত হতে থাকে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সে মহান আল্লাহর নিকটে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। এহেন দোষত্রুটি খুঁজে বের করাকে ‘ছিদ্রান্বেষণ’ বলে। এটি কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَجَسَّسُوْا ‘তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান কর না’। (সূরা হুজুরাত: ১২)
২১নং উপায় হলো কোন ব্যক্তিকে উপহাস না করা:  কোন ব্যক্তিকে উপহাস বা তিরস্কার করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে প্রত্যেক মুসলমানকে এসব বদঅভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। কোন মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার কোন দোষ এমনভাবে উল্লেখ করা, যাতে শ্রোতাদের মধ্যে হাসির খোরাক হয়। উপহাস কথায়, ভাবভঙ্গিমায় বা আকার-ইঙ্গিতেও হতে পারে। এরূপ কাজে উপহাসকারী অন্যকে অপমানিত, লাঞ্ছিত ও হেয় করার মধ্য দিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে থাকে। ইসলামী শরী‘আতে এটি ঘৃণ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর কোন নারীও যেন অপর কোন নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে’। (সূরা হুজুরাত: ১১)
মানুষের বাহ্যিক চালচলন ও আচার-আচরণ দেখে তাকে ভাল বা মন্দ বলা কঠিন। তাই দৃশ্যমান কার্যকলাপের মূল্যায়নে কাউকে ভাল বা মন্দ বলা ঠিক হবে না। এ ধরনের উপহাসকারীকে কেউ পসন্দ করে না।

Related Post