নয়টি শর্ত না মানলে নামাজ কখনোই কবুল হবে না

নয়টি শর্ত না মানলে নামাজ কখনোই কবুল হবে না

নয়টি শর্ত না মানলে নামাজ কখনোই কবুল হবে না

ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের জন্য নামাজকে ফরয করা হয়েছে। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা নিয়মিত দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই নামাজের শর্তগুলো জানেন না। তাই নামাজ আদায় করার পূর্বে অবশ্যই নিচে বর্ণিত নামাজের ৯টি শর্ত পড়ে নিন। এবং উল্লেখিত এই ৯টি শর্ত মেনে নিয়মিত সালাত আদায় করুণ।

সালাতের শর্তসমূহ:

১। মুসলমান হওয়া

সালাত ছাড়াও অন্যান্য যে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রেই মুসলমান হওয়া পূর্বশর্ত। মুসলমান বলতে উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে রাসূল বলে স্বীকৃতি প্রদান, আর ইসলামকে একমাত্র দ্বীন বলে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে। অবিশ্বাসীর যাবতীয় ইবাদত প্রত্যাখ্যাত । অবিশ্বাসীদের কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, যদিও তারা জমিনভর স্বর্ণ কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

আমি তাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলি-কণায় পরিণত করব। (সূরা আল-ফুরকান : ২৩)

২। বুঝার বয়সে উপনীত হওয়া

বুঝার মত বয়সে উপনীত হওয়া হল শরীয়তের বিধানাবলী উপলব্ধি ও গ্রহণ করার একমাত্র উপায়। জ্ঞানহীন ব্যক্তির উপর শরীয়তের কোন বিধানই ওয়াজিব নয়। প্রমাণ :রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

অর্থ: তিন ব্যক্তি দায়মুক্ত, তাদের কোন গুনাহ লিখা হয় না। ক-ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত। খ-পাগল সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।গ-ছোট বাচ্চা বড় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (তিরমিযি:১৩৪৩)

৩। ভাল মন্দের বিচার করা

ভাল মন্দ বিচারের উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়া। অবুঝ বা ছোট শিশু, যে নিজের জন্য কোন রূপ ভাল মন্দ চিণ্হিত করতে সক্ষম নয়, তার উপর সালাত ওয়াজিব নয়। শিশু যখন ভাল মন্দের পার্থক্য করতে পারে এবং সুন্দর ও অসুন্দর চিনতে পারে, তখন বুঝতে হবে যে, সে বিচার বিশ্লে­ষণ বা তাময়ীয করার মত বয়সে পৌঁছে গেছে। সাধারণত সাত বছর বয়সে বাচ্চারা ভাল-মন্দ বুঝতে পারে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

অর্থ: তোমর সাত বছর বয়সে তোমাদের বাচ্চাদের সালাতের আদেশ দাও। আর সালাত না পড়লে দশ বছর বয়সে তাদের হালকা মার-ধর কর। আর তাদের বিছানা আলাদা করে দাও। (আহমাদ:৬৪৬৭)

৪। পবিত্রতা

নির্দিষ্ট বিধান অনুযায়ী ওযু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন হয়। আল্লাহ বলেন :

অর্থ: হে মুমিনগণ ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হও তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ কর এবং পা-গুলোকে টাখনু অবধি ধুয়ে ফেল। (মায়েদাহ:৬)

হে ঈমানদার সকল ! তোমরা যখন সালাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমণ্ডল ধৌত কর, তোমাদের হাত-দ্বয় ধৌত কর, মাথা মাছেহ কর এবং উভয় পায়ের গোড়ালিসহ ধৌত কর।

৫। নাপাকী দুর করা

তিনটি স্থান হতে সালাতের পূর্বে না-পাকী দূর করতে হবে।

শরীর পাক হতে হবে। পোশাক পাক হতে হবে।

আল্লাহ বলেন : অর্থ: তুমি তোমার কাপড় পাক কর। (সূরা মুদ্দাছ্ছির : ৪)

সালাতের স্থান পাক হতে হবে।

রাসূল বলেন : নিশ্চয় মসজিদ গুলোতে পেশাব পায়খানা করা কোন ক্রমেই সঙ্গত নয়। ( মুসলিম:৪২৯)

৬। সতর ঢাকা

পুরুষের সতর নাভি হতে হাটুর নীচ পর্যন্ত। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে শুধু চেহারা ও দু-হাতের কবজি ছাড়া সবই সতর। তবে অপরিচিত লোকের সামনে পড়লে চেহারা ও হাতের কবজিও ঢেকে রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন : হে আদম সন্তান ! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছেদ গ্রহণ কর কর। (আরাফ:৩১)

৭। সময় হওয়া

দিবারাত্রের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় নির্ধারিত আছে। এবং সময়ের শুরু আছে এবং শেষও আছে।

সময়ের বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ :

ফযরের সালাতের সময় : সুবহে সাদেক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত।

যোহরের ওয়াক্ত: সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলা থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।

আছরের সালাতের সময় : প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া থেকে আরম্ভ করে দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।

মাগরিবের সময় : সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে পশ্চিম আকাশের লালিমা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত।

এশার সালাতের সময় : লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর অর্ধরাত্রি পর্যন্ত।

ওয়াক্ত শর্ত হওয়ার প্রমাণ, আল্লাহ বলেন:

নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার প্রমাণ : হাদিসে এসেছে –

রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে প্রথম দিন সালাত পড়ান প্রত্যেক সালাতের শুরু ওয়াক্তে আর পরের দিন সালাত পড়ান প্রত্যেক সালাতের শেষ ওয়াক্তে। তারপর তিনি বলেন: হে মুহাম্মদ! এ সময়ের মধ্যবর্তী সময়ই হল সালাতের সময়। (মুসলিম:৯৭১)

৮। কিবলামুখী হওয়

ক্বিবলা বা কাবা শরীফকে সামনে রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা একজন নামাযির উপর ওয়াজিব। কাবা শরীফ যদি সরাসরি সামনে হয় তবে তাকে অবশ্যই পুরো শরীর দ্বারা কিবলা-মুখ হতে হবে। আর যদি দূরে হয় তবে ক্বিবলার দিককে সামনে রাখা তার উপর ওয়াজিব। বিভিন্নভাবেই ক্বিবলা চেনা যেতে পারে।

  • সূর্য উদয় হওয়ার দিক।
  • রাত্রের বেলা সূর্য অস্ত যাওয়ার দিক। রাত্রে ধ্রুবতারা দ্বারা, মসজিদের মেহরাব, কম্পাস দ্বারা অথবা কাউকে জিজ্ঞাসা করার দ্বারা। ক্বিবলা নির্ধারণের চেষ্টা করা নামাযির উপর ওয়াজিব।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

অর্থ: নিশ্চয় আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমণ্ডল উত্তোলন অবলোকন করছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলামুখীই করব যা তুমি কামনা করছ। অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও। এবং তোমরা যেখানেই আছ তোমাদের মুখ সে দিকেই প্রত্যাবর্তিত কর।

৯। নিয়্যত করা

নিয়ত হল, কোন কাজ করার উদ্দেশ্যে দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া, মুখে কোন কথা না বলা। ফরজ সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে তার মন ও অন্তর উপস্থিত থাকবে। প্রমাণ রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

বান্দার সমস্ত আমল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিয়্যত অনুসারেই তার বিনিময় পাবে।

Related Post