ভাস্কর্য, প্রতিমা ও স্মৃতিসৌধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বিধান

ভাস্কর্য, প্রতিমা ও স্মৃতিসৌধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বিধান

ভাস্কর্য, প্রতিমা ও স্মৃতিসৌধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বিধান

বিশিষ্ট মূর্তি। আর স্মৃতিসৌধ (যার আরবী প্রতিশব্দ نصب) নিশানা ও পাথর। মুশরিকগণ তাদের কোন নেতা বা সম্মানিত ব্যক্তির স্মৃতিচারণায় এসব স্মৃতিসৌধের কাছে কুরবানী করত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন প্রাণীর ছবি বানাতে নিষেধ করেছে, বিশেষ করে মানুষের মধ্যে যারা সম্মানিত, যেমন  আলেম, বাদশাহ, ইবাদাত গুজার ব্যক্তি, নেতা ও রাষ্ট্রপতি প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের ছবি। চাই এ ছবি কোন বোর্ড বা কাগজ কিংবা দেয়াল বা কাপড়ের ভাস্কর্য ও প্রতিমা (যাকে আরবীতে এক বচনে تمثال ও বহুবচনে تماثيل বলা হয়) হচ্ছে মানুষ, জীব-জন্তু বা অন্য কোন প্রাণীর আকৃতি উপর হাতে আঁকার মাধ্যমে তৈরি করা হোক অথবা এ যুগে প্রচলিত আলোকযন্ত্র (অর্থাৎ ক্যামেরা) এর মাধ্যমে নেয়া হোক কিংবা প্রতিমার আকৃতিতে খোদাই করে তা তৈরি করা । অনুরূপভাবে তিনি দেয়াল ইত্যাদিতে ছবি টাঙ্গানো, কোথাও ভাস্কর্য ও প্রতিমা স্থাপন এবং স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা থেকে নিষেধ করেছেন। কেননা এগুলো শিরকী কাজে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যম।
পৃথিবীতে শিরকের প্রথম ঘটনা ছবি তৈরি ও মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমেই ঘটেছিল। ঘটনাটি ছিল এমন যে, নূহ আলাইহিস সালামের কওমে কতেক নেককার লোক ছিল। তাদের মৃত্যু হলে লোকেরা খুবই দুঃখ পেল। তখন শয়তান তাদের অন্তরে একথার উদ্রেক করল যে, এসব নেককার লোকেরা যেখানে বসত, তোমরা সেখানে তাদের প্রতিমা স্থাপন কর এবং সেগুলোকে তাদের নামে অভিহিত কর। তাই তারা এ কাজ করে। তবে সে সময় প্রতিমাগুলোর পূজা-অর্চনা হয়নি। এরপর যখন সে প্রজন্মের লোকদের তিরোধান হল এবং তাদের পরবর্তীরা সে প্রতিমা ও সৌধের প্রকৃত ইতিহাস ভুলে গেল, তখন সেগুলোর প্জূা-অর্চনা হতে লাগল। অতঃপর আল্লাহ যখন নূহ আলাইহি সালামকে প্রেরণ করলেন এবং তিনি স্বজাতিকে মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে অর্জিত শিরক থেকে নিষেধ করলেন, তারা তার আহবান মেনে নিতে অস্বীকার করল। আর সেই সব মূর্তির ইবাদাতে তারা ডুবে থাকল যেগুলো পরবর্তীতে দেবতায় পরিণত হল। আল্লাহ বলেন:

23 وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آَلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا – نوح

‘এবং তারা বলল, তোমরা তোমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না, এবং ত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুয়াআ, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকে’ (সূরা  নূহ: ২৩)
এগুলো হল সেই সব লোকদের নাম যাদের আকৃতিতে ঐ সকল মূর্তি বানিয়ে রাখা হয়েছিলো, যাতে তাদের স্মৃতি জাগরুক রাখা যায় এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা যায়।
এখন দেখুন, স্মৃতিচারণার উদ্দেশ্যে স্থাপিত এই সব মূর্তির ফলে অবস্থা শেষ পর্যন্ত এই-ই দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ আল্লাহর সাথে শিরক করল এবং নবী রাসূলগণের শত্র“তায় অবতীর্ণ হল। এর ফলে তারা ঝড়-তুফানে ধ্বংস হল এবং আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টিকুলের ক্রোধের শিকারে পরিণত হল। এসব কিছু ছবি তৈরি ও প্রতিমা স্থাপনের ভয়াবহতা প্রমাণ করে। এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবি প্রস্তুত কারীদের লা’নত দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, কিয়ামতের দিন এদেরকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাই তিনি ছবি মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, যে ঘরে ছবি আছে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। মূলত: ছবি তৈরির অনেক ক্ষতিকর দিক এবং মুসলিম উম্মার আকীদা ও বিশ্বাসে এর ভয়াবহতার প্রতি লক্ষ্য করেই এসকল কথা বলা হয়েছে। কেননা প্রতিমার ছবি স্থাপনের মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রথম শিরকের উদ্ভব ঘটেছিল। আর এ ধরনের প্রতিকৃতি ও ভাস্কর্য চাই বসার স্থানে কিংবা কোন মাঠে অথবা পার্কে যেখানেই স্থাপন করা হোক না কেন, শরীয়তে তা পুরোপুরি হারাম। কেননা এটা হল শিরকে লিপ্ত হওয়া, আকীদা বিনষ্ট হওয়ার একটি কারণ।
আর আজকের যুগে যদি কাফিররা এ কাজ কারে থাকে  কেননা তাদের এমন বিশেষ আকীদা নেই, যে আকীদার তারা হেফাজত করে থাকে  তাহলে মুসলমানদের জন্যে কিন্তু কাফিরদের অনুরূপ উক্ত কাজে অংশ গ্রহণ জায়েজ নয়। উদ্দেশ্য হল  মুসলমানরা যাতে তাদের স্বীয় আকীদার হেফাজত ও সংরক্ষণ করতে পারে, যা তাদের শক্তি ও শান্তির উৎস।

Related Post