মানুষই মানুষের সর্বোত্তম বন্ধু, সাথী, সহকর্মী, পৃষ্ঠপোষক, হিতাকাক্সক্ষী সাহায্যকারী, স্ত্রী বাচ্যে বান্ধবী, সঙ্গিনী, পৃষ্ঠপোষকারিনী, সাহায্যকারিনী, ইত্যাদি। মানুষ তাই পরস্পর পরস্পরের শান্তি, কল্যাণ ও উন্নতি কামনা করে। অথচ সে কাউকে শান্তি দিতে পারে না। পারে না এক বিন্দু উপকার করতে। এসব পারেন আল্লাহ তা‘আলা। আর এ জন্যই দ্বীন ইসলাম পরস্পর শান্তি ও কল্যাণ ইত্যাদির জন্য পরম প্রভু আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে শিক্ষা দেয়। অবশ্য তোমরা যখন ঘরে প্রবেশ করবে তখন নিজেদের লোকজনকে সালাম করবে। কল্যাণের জন্য দোয়া আল্লাহর নিকট হতে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা খুবই বরকতপূর্ণ ও পবিত্র। সূরা নুর আয়াত (৬১)
মহানবী (সাঃ) বলেন “তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পরকে ভাল না বাসা পর্যন্ত তোমাদের ঈমান পূর্ণ হবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা বলব না যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে? সে কাজটি হচ্ছে তোমরা নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সালামের প্রচলন কর।’ (মুসলিম) শরীয়তের বিধান হচ্ছে সালাম দেয়া সুন্নাত, কিন্তু জবাব দেয়া ওয়াজিব। কি বলে সালাম দিতে হবে? মহানবীর (সাঃ) এর শিক্ষা হল পরস্পর দেখা হলে বলবে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহ ‘তোমাদের সবার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক, এবং জবাবে ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু (তোমাদের সবার উপর ও আল্লাহর শান্তি, রহমত বরকত ও ক্ষমা বর্ষিত হোক) এ সালাম দেবার জন্য আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় নবী (সাঃ) কে বলেন, “আর যখন তারা তোমাদের নিকট আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহকে (আদেশ নিষেধের এ আয়াত) বিশ্বাস করে তখন তুমি বল-তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। সূরা আনয়াম আয়াত (৫৪)। সামগ্রিকভাবে আল্লাহ নির্দেশ দেন, “আর যখন কেউ তোমাদের শরয়ী বিধান মোতাবেক সালাম দেয়, তোমরাও ভাল কথায় তাদেরকে সালাম দাও অথবা সেই কথাগুলোই বলে দাও। (সূরা নিসা আয়াত (৮৬)
বিনা অনুমতিতে ও সালাম ব্যতীত অন্যের ঘরে প্রবেশ করা নিষেধ:
‘হে ঈমানদার নর-নারী তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তার বাসিন্দাদের থেকে অনুমতি নাও এবং তাদের সালাম কর। (সূরা নূর-২৭) অনুমতি না নিয়ে অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করা অনুচিত এবং যেখানেই যাবেন, সেস্থানের বাসিন্দাদের কল্যাণের জন্য দোয়া করতে হবে। অর্থাৎ এ দোয়া কি শুধু ঈমানদারদের জন্যই? না আল্লাহ পাক বলেন, ‘রহমানের প্রকৃত বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করা এবং মুর্খরা (ভিন্নধর্মী) যখন কথা বলতে আসে তখন তারা বলে সালাম (সূরা ফুরকান আয়াত-৬৩) পবিত্র এ আয়াতে কারিম ও প্রিয় রাসূল (সাঃ) এর হাদীস সামনে রেখেই সিদ্ধান্ত হয়েছে ভিন্নধর্মীদেরকে আসসালামু আলা মানিত্তাবা‘আল হুদা (হিদায়াতের নিমিত্তে তোমার উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) বলে সালাম দিতে হবে। সূরা নিসার-৮৬ নম্বর আয়াতে সে কথা বলা হয়েছে এভাবে যে ‘আর যখন কেউ তোমাদের শরয়ী বিধান মোতাবেক সালাম দেয়, তখন তোমরা ও ভাল কথায় তাদেরকে সালাম দাও। কেউ যদি আদাব, জয় বাংলা, আকবর যিল্লুল্লাহ, লাল সালাম, শুভেচ্ছা, শুভরাত্রি, গুডমর্নিং, গুড ইভনিং ইত্যাদি অথবা গায়রুল্লাহের উদ্দেশ্যে সালাম দেয় তাহলে তার সালামের জবাব দেয়া হারাম। সালাম হতে হবে শরয়ী বিধান মোতাবেক শান্তি প্রার্থনা করতে হবে আল্লাহর নিকট এবং নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্তভাবে। সালাম আজ সমাজে নেই বললেই চলে। যা আছে তাও নামমাত্র। নাম সর্বস্ব আমি এ জন্য বলছি যে, সালামের প্রকৃত শিক্ষা ও তাৎপর্য অর্থাৎ ব্যবহারিক দিক থেকে আমরা এখন বঞ্চিত প্রায়। বাপ-বেটা, মা-ঝিয়ে ভাই-ভাইয়ে স্বামী-স্ত্রী যারা হর-হামেশা এক সাথে এক পরিবারে বাস করে তারা সাধারণত পরস্পর সালাম বিনিময় করে না। যদি দূর দারাজে বাস করে তাহল হয়তো দেখা সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় হয়। নইলে হয় না। অর্থাৎ আমাদের ব্যবহার দিয়ে আমরা এটাই প্রমাণ করি যে, আমরা পরিবারের সদস্যরা পরস্পর কেউ কারো কল্যাণ, উন্নতি ও শান্তি কামনা করি না। এ যে কত বড় দুর্ভাগোর, বিষয় তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? আজ কোন পরিবারে বাপ-বেটা, ভাই-বোন, মা-মেয়ের মধ্যে জান্নাতী সুসম্পর্ক বিদ্যমান? প্রতিটি পরিবার জাহান্নামের এক একটি জ্বলন্ত ইউনিট। সালাম দেয় ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা তাদেরকে জ্ঞানের আলো দান করেছেন? কোন আলো? চরিত্র হীনতার অভদ্রতার, অমানবিকতার, অসামাজিকতার, পশুত্বের ! কেন তা দিচ্ছেন? তা দিচ্ছেন এ কারণে যে, তাদের নিকট মানব রচিত শিক্ষা ব্যবস্থা, বর্তমান, ওহী সুন্নাহ ইত্যাদির প্রকৃতি ও সত্য জ্ঞান তাদের নিকট নেই। সে জ্ঞান দান করার সুবাদে তাঁরা সালাম পাবেন তাই, ছাত্র-ছাত্রীরা তাদেরকে সালাম দেয়। তাঁরা জবাব দেন কেন? অমানুষ গড়ছেন তাদের ক্ষতি ও অপকারিতা থেকে বাঁচবার জন্যে তারা জবাব দিয়ে তাদেরকে বেশ রাখেন। আল্লাহর নিকট তাদেরকে ভদ্র হতে প্রার্থনা করেন যেন তারা অভদ্রাচরণ না করে। কিন্তু তারা কি পান? প্রজ্জ্বলিত আগুনের প্রচণ্ড তাপ- কখনো বা পুড়ে ছারখার হয়ে যান। শিক্ষক-শিক্ষিকার অতীত মান আজ স্বপ্নের বিষয়। দোকানী সালাম দেয় খরিদ্দারকে কেন? যে সে তাকে ভেজাল, চুরি, সুদের টাকায় আমদানী, মজুতদারী, কালো বাজারের হারাম মাল সরবরাহ করছে। সালাম দেয় অফিসারবৃন্দ, মহাজান, ধনীরা এ কারণে যে তারা দেশবাসী গরীব মানুষের যে টাকাটা রক্ত চুষে খাচ্ছে তা যেন গলায় আটকে না যায়। অধিকাংশ ধনীদেরই আজ তা আটকে যাচ্ছে, হার্ডফেল করে মারা যাচ্ছে। নিজের বাপকে সালাম না দিলেও শ্বাশুরকে সালাম দেয় এ জন্য যে সে তাকে যৌতুক বাবদ একটা মোটা অংকের টাকা দিয়েছে। সে হারাম পয়সা দিয়ে আজ তার ব্যবসা জম-জমাট। সত্যি কথা বলতে কি শুধু আত্মস্বার্থ হাসিলের জন্য সালাম বিনিময় হবার ফলে কিংবা সালামের অপব্যবাহারের কারণে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অশান্তি, হিংসা, দ্বেষ দ্বন্দ্ব কলহের সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। সালাম বিনিময় করে চরিত্রহীন, ডাকাত, হাইজ্যাকার, অধিকারহরণকারী, জালিম, ও মজলুমের তাদের অত্যাচারী নেতারা। নির্বাচনের সময়তো সালমের হিড়িক পড়ে যায়। নির্বাচনোত্তর কালে যে হারাম ও হারামী করবে তা লুকাবার সাইনবোর্ড হিসেবে বিড়ি সিগারেটের মতই সালাম ছুড়ে মারে। সালাম দাতা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেয় হে আমার প্রিয়জন! তোমাদেরও আমাদের সমস্ত শান্তি ও কল্যাণের মালিক হলেন মহান আল্লাহ। আমরা সবাই তাঁকেই ভয় করি এবং তাঁরই নিকট পরস্পরের শান্তি ও কল্যাণ প্রার্থনা করি। আমার পক্ষ থেকে সেই রবের উপস্থিতির কারণে তোমার জন্য কোন ক্ষতি লোকসান ও কোন রূপ অপকারিতার কোন আশঙ্কামাত্র নেই। তোমার যাবতীয় অসুবিধা, বিপদ-আপদ, অভাব, দুঃখে সমস্যা সংকটে আমি আমার জানমাল নিয়ে সদা তোমার জন্যে প্রস্তুত আছি। তুমি পূর্ণ নিরাপদ। মহানবী (সাঃ) বলেন, যার হাতেও মুখের অত্যাচার থেকে প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয় সে মুসলমান নয়। যে রাতে পেট ভরে খেয়ে ঘুমায় কিন্তু অভুক্ত প্রতিবেশীর খোঁজ নেয় না সে বেঈমান। আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয় (তিনবার) যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী পাশের জন নিরাপদ নয়। প্রত্যেক মুসলমানের মান-ইজ্জত ধন-সম্পদ ও রক্ত অন্য সব মুসলমানের জন্য হারাম ভিন্নধর্মী মানুষের উপর জুলুমকারীর বিরুদ্ধে মহাবিচারের দিন আমি মজলুমের পক্ষে আল্লাহর নিকট মামলা দায়ের করব। আল্লাহর ইবাদতের পরেই পিতা-মাতার হক। হারাম খানে ওয়ালা ও করনে ওয়ালার জন্যে জান্নতে কোন স্থান নেই ইত্যাদি। কথাগুলো চিন্তা করে দেখুন। সালাম কি চায় আর আমরা সমাজে কি চালু রেখেছি। বাংলাদেশ তথা তামাম বিশ্বের সমস্ত মানব সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম নর-নারীকে যথার্থ রূপে সালাম বিনিময় করতে আকুল আবেদন পেশ করছি। আল্লাহ পাক বিশ্ববাসী সবাইকে হিদায়ত করুন এবং সালামের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের তৌফিক দান করুন। হে আমার রব! হে আমার রব!! তোমার সমস্ত প্রিয় বান্দা-বান্দীকে আমার সালাম পৌঁছে দাও। আমিন।