মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দনের বিধান

কান্নাকটি, কাঁদা, ক্রন্দন করা, রোনাজারি করা

মৃত ব্যকির জন্য ক্রন্দেনের শরঈ বিধান

মৃত ব্যক্তির জন্য অশ্রু বিসর্জন দেওয়া নিষিধ্য নয়। তবে চিৎকার করে রোদন করা, বিলাপ করা ও অস্থিরতা প্রকাশ করা নিষেধ। কারো মৃত্যুতে বা কোন রকমের বিপদে আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট প্রকাশ করা কুফরী।

মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি তা‘যিয়া বা শোকপ্রকাশ করা মুস্তাহাব ও মানবতার পরিচায়ক। এ সময় তাদেরকে সবর ও ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে হয় এবং আল্লাহর কাজের প্রতি রাজি থাকতে বলতে হয়। এমন উপদেশ দেওয়ার নামই তা‘যিয়া বা আযা। আর এই তা‘যিয়ার সময় সীমা হলো তিন দিন।

 দাফনের পর লোকজনের পক্ষে আপন আপন কাজে চলে যাওয়া উচিৎ। তাদের নিকট জড় হয়ে মৃত ব্যক্তির বিষয় আলোচনা করতে থাকলে তাদের শোক বৃদ্ধি পায়, শোক প্রশমিত হওয়ার সুযোগ পায় না। তাদের পক্ষেও শোককে চেপে রেখে ব্যক্তি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করা এবং আপন কাজে লেগে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে ভাবতে থাকলে মনোবেদনা বৃদ্ধি পায়। কারও পক্ষে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনকে এমন কথা বলতে নাই, যাতে তাদের শোক তাজা হয় এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য তিন দিন পর্যন্ত খানা প্রেরণ করা মুস্তাহাব।

 মৃতের জন্য অশ্রুনির্গত করা নিষেধ নয় বরং তা অন্তরের দোয়া:

এ ব্যাপারে হযরত আনাস (রাঃ) বলেন: রাসূল (সাঃ) এর পুত্র ইবরাহীম প্রাণ ত্যাগ করতে ছিল, এ সময় রাসূলের চোখ অশ্রু নির্গত করছিল, এ অবস্থা দেখে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন; ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনিও…? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন: হে ইবনে আওফ! এটা হলো দয়া। অতঃপর রাসূল (সাঃ) আবার অশ্রু নির্গত করলেন আর বললেন: চোখ অশ্রু নির্গত করছে এবং অন্তর দুঃখিত হচ্ছে। তথাপি আমি শোক প্রকাশ করছি, যাতে আমার পরওয়ারদেগার খুশি থাকেন। অতঃপর বললেন: হে ইবরাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকার্ত। (বুখারী ও মুসলিম)

উল্লেখিত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে আল্লাহর প্রতি নারায না হয়ে অন্তরে দুঃখিত হওয়া এবং চক্ষুতে অশ্রু বিসর্জন দেয়া নবীগণের পক্ষেও অশোভন নহে; বরং দুঃখিত হওয়ার স্থলে দুঃখিত না হওয়া দয়ার বিপরীত ও নির্মমতার পরিচায়ক।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত উমামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূল (সাঃ)-এর কন্যা যয়নব (রাঃ)-এর একটি শিশুর প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন হযরত যয়নব (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে বললেন যে, আব্বাজান! আপনি আমাদের এখানে আসুন। উত্তরে রাসূল (সাঃ) লোক মারফত সালাম পাঠিয়ে বললেনঃ আল্লাহ যা গ্রহণ করেন তা তাঁরই। আর যা দান করেন তা তাঁরই, এবং প্রত্যেকে দুনিয়ায় থাকবে তাঁর নিকট নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। সুতরাং সবর করবে এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা রাখবে। অতঃপর যয়নব (রাঃ) আবার সংবাদ বাহককে কসম দিয়ে পাঠালেন যে, তিনি যেন অবশ্যই তাদের নিকট যান, এবার রাসূল (সাঃ) গেলেন এবং সাথে সা‘দ ইবনে উবাদা, মুয়াজ ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা‘ব, যায়েদ ইবনে ছাবেত এবং আরো কতেক সাহাবীও তাঁকে অনুসরণ করলেন। তাঁরা সেখানে পৌঁছলে শিশুটিকে রাসূল (সাঃ) এর নিকট আনা হলো, তখন তার প্রাণ ছটফট করছিল, তা দেখে রাসূল (সাঃ) এর দু‘চোখ অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলো। তখন সা‘দ (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ কি? রাসূল (সাঃ) জবাব দিলেন; এটা দয়া। আল্লাহ তা‘আলা ইহা তাঁর বান্দাদের অন্তরে স্থাপন করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ দয়া করেন তাঁর বান্দাদের মধ্যে দয়াবানদেরকে।
অপর আরেকটি হাদীসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:  সাদ ইবনে উবাদা কোন এক রোগে ভুগতেছিলেন। রাসূল (সাঃ) তাঁকে দেখতে গেলেন। তিনি যখন তাঁর নিকট পৌঁছান, তখন তাঁকে সজ্ঞাহীন অবস্থায় পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সাদ কী ইন্তেকাল করেছে? উপস্থিত সাহাবাগণ উত্তর দিলেন, না ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন রাসূল (সাঃ) কাঁদতে লাগলেন। এ সময় রাসূল (সাঃ) বললেন; ওহে তোমরা শুনে রাখ! আল্লাহ তা‘আলা চোখের অশ্রু বিসর্জন দ্বারা কাউকে শান্তি দেন না এবং অন্তরের শোক দ্বারাও নয়। (বুখারী ও মুসলিম)

 উল্লেখিত হাদীস দ্বারা জানা গেল, মৃত ব্যক্তির জন্য নীরবে অশ্রু বিসর্জন দেওয়া ও শোক প্রকাশ করা নিষেধ নয়, বরং তা হচ্ছে দয়া, মুহাব্বত ও ভালবাসার পরিচয় যা আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের অন্তরে স্থাপন করে দিয়েছেন।
কিন্তু হাদীসে বর্ণিত অশ্রু বিসর্জনের সীমা-রেখা অতিক্রম করে যদি কেউ চিৎকার করে কান্নাকাটি বা বিলাপ করে অস্থিরতা প্রকাশ করে, তবে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন: চোখের অশ্রু বিসর্জন ও অন্তরের শোক দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা কাউকে শাস্তি দেন না কিন্তু শাস্তি দেন বা রহম করেন এর দ্বারা, এ কথার বলার সময় তিনি জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করলেন। অতঃপর বললেন: মৃত ব্যক্তিকে নিশ্চয় শাস্তি দেওয়া তার হয় পরিবারের লোকজন, তার জন্য কান্নাকাটি করার কারণে (বুখারী ও মুসলিম)

 উল্লেখিত হাদীসে শব্দ করে কান্নাকাটি করলে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়, আর নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিলে রহম করা হয়, এ কথাই বোঝা যায়।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা হবে, কিয়ামতের দিন তাকে বিলাপে যা বলা হয়েছে তা দিয়ে শাস্তি দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

 অর্থাৎ বিলাপে তার যে সকল গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; কিয়ামতের দিন সে সকল গুণ উল্লেখ করে বলা হবে; তুমি না দুনিয়াতে এত গুণের অধিকারী ছিলে? শাস্তি দেওয়া হবে যদি এমন বিলাপে সে রাজি থাকে, অর্থাৎ এমন বিলাপ করার জন্য বলে গিয়ে থাকে।

 আবু মূসা আশআরী (রাঃ) বলেন: আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি; যে খান্দানের লোক মারা যায় আর তার খান্দানের রোদনকারীরা তার জন্য রোদন করে এবং বলে যে, হে আমার পর্বততুল্য অমুক! হে আমার মুরব্বী অমুক! অথবা এমন অন্য কোন কিছু, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দুজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন, যারা তার বুকে ঘুসি মারে এবং বলে যে, তুমি এইরূপ বলেছিলে নাকি? (তিরমিযী)
 রাসূল (সাঃ) অভিশাপ দিয়েছেন বিলাপকারিনীকে ও উহার শ্রবণকারিনীকে। (আবু দাউদ)

অর্থাৎ সাধারণত নারীরাই বিলাপ করে কান্নাকাটি ও তা শ্রবণ করে থাকে। এই জন্য হাদীসে নারীদের কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় পুরুষগণও যদি এরূপ বিলাপ করে কান্নাকাটি করে তবে তাদের জন্যও অভিশাপ রয়েছে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন; রাসূল (সাঃ) বলেছেন: সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে মৃতের শোকে স্বীয় মুখমণ্ডলে করাঘাত করে, জামার গলা ফাঁড়ে এবং জাহিলিয়াত যুগের হাহুতাশের ন্যায় হাহুতাশ করে। (বুখারী ও মুসলিম)

 মুসলিম শরীফের অন্য এক হাদীসে এসেছে; রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি মাথার চুল ছিঁড়ে উচ্চ স্বরে বিলাপ করে এবং জামার গলা ছিঁড়ে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।

 সুতরাং বুঝা গেল মৃত ব্যক্তির জন্য চিৎকার করে অথবা বুকে মাথায় আঘাত করে বিলাপ করে কান্নাকাটি করা জায়েয নেই। যারা এরূপ করে তারা রাসূল (সাঃ)-এর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি করা জায়েজ নাই, তবে নীরবে অশ্রু ঝড়ানো জায়েয আছে।

রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেন; আমার উম্মতের মধ্যে জাহিলিয়াত যুগের চারটি বিষয় রয়েগেছে:

১।  নিজের গুণের গর্ব

২। অন্য বংশকে নিন্দা করা

৩। গ্রহ-নক্ষত্র যোগে বৃষ্টি চাওয়া এবং

৪। বিলাপ করে কান্নাকাটি করা।

অতঃপর তিনি বলেন: বিলাপকারিণী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, কিয়ামতের দিন তাকে এমন অবস্থায় উঠানো হবে যে, তার গায়ে থাকবে আলকাতরার পোশাক ও ক্ষতের পিরান। (মুসলিম)

অর্থাৎ শোকে সে স্বীয় মুখমণ্ডল ক্ষত করেছিল বিধায় তার শরীরে ক্ষত থাকবে এবং এর উপর তৈলাক্ত জামা পড়িয়ে দেওয়া হবে, যাতে ক্ষত অধিক জ্বলতে থাকে। কারণ জাহিলিয়াত যুগে শোকে মুখমণ্ডল ক্ষত করার নিয়ম ছিল। আর গ্রহ-নক্ষত্র যোগে বৃষ্টি চাওয়ার অর্থ হলো: কোন গ্রহ বা নক্ষত্র কোন নির্দিষ্ট কক্ষে গেলে নিশ্চয়ই বৃষ্টি হবে, এই বিশ্বাস করা। অথচ বৃষ্টি হওয়া না হওয়া আল্লাহর ইচ্ছাধীন। অতএব উল্লেখিত হাদীসে বর্ণিত বিষয়গুলি পরিহার করা আমাদের সকলের কর্তব্য। রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে লাশের সাথে কোন বিলাপকারিণী থাকে সেই লাশের সাথে গমন কর না। (আহমদ ও ইবনে মাজাহ)

উল্লেখিত হাদীস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা উচিৎ। প্রিয় পাঠক! আমরা সবাই জানি প্রত্যেক সত্ত্বার মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু তা হতে হবে ভাল মৃত্যু। ভাল মৃত্যুর জন্য আমাদের ঈমান ও আমলকে কুরআন ও হাদীসের আলোকে গড়ে তুলতে হবে এবং পরিবার পরিজনকে অবশ্যই অসিয়ত করতে হবে যেন মৃত্যুর পর শরীয়তের সীমা অতিক্রত করে শোক পালন না করে এবং মৃত্যুসহ যে কোন বিপদে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকে। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন। আমীন

এ ব্যাপারে হযরত আবু মূছা আশআরী (রাঃ) বলেন; রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা কী আমার বান্দার সন্তানটি উঠিয়ে নিলে? ফেরেশতাগণ উত্তর দিবেন, হে আল্লাহ! উঠিয়ে নিলাম, তিনি আবার জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কী আমার বান্দার অন্তরের ধনকে কেড়ে নিলে? ফেরেশতাগণ উত্তর দিবেন, হে আল্লাহ! উঠিয়ে নিলাম। আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করবেন আমার বান্দা কী বললো? ফেরেশতাগণ জবাব দিবে, হে আল্লাহ! তোমার বান্দা তোমার প্রশংসা করেছে ও ইন্না-লিল্লাহ বলেছে। তখন আল্লাহ বলবেন; আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং উহার নাম রাখ বায়তুল হামদ। (আহমদ ও তিরমিযী)

উল্লেখিত হাদীসে হামদ অর্থ প্রশংসা করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কারো সন্তান মারা গেলে উহার বিনিময় তাকে জান্নাত দান করা হবে। যদি সে সবর করে এবং আল্লাহ কর্তৃক ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকে। আর কুরআনে রয়েছে; যখন মুমিনদের প্রতি কোন মুসিবত আসে, তখন তারা বলে: ইন্না-লিল্লা-হি ওয়াইন্না-ইলাইহি রা-জিঊন; অর্থাৎ আমরা আল্লাহর জন্য, এবং তাঁরই নিকট ফিরে যাব। উপর্যুক্ত হাদীসটি কুরআনে এই আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করেছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন; রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেন: যখন তোমাদের কারো জুতার দোয়াল ছিঁড়ে যায়, তখন সে যেন ইন্না-লিল্লা-হ পড়ে। কেননা এটাও বিপদের অন্তর্ভুক্ত। (মেশকাত)

এই হাদীস দ্বারা বুঝাগেল যে, কোন বিপদে আল্লাহর  উপর নির্ভর করা, সবর করা, এবং ইন্না-লিল্লাহ পড়া, মুমিনের কর্তব্য। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন; হে আদম সন্তান! যদি তুমি বিপদের প্রথম সময়ে সবর কর এবং সাওয়াবে আশা রাখ, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত আর কোন সাওয়াবে সন্তুষ্ট হবো না। (ইবনে মাজাহ)

 রাসূল (সাঃ) আরো বলেন: যে কোন মুসলমান পুরুষ বা নারী কোন বিপদে পড়বে, অতঃপর আল্লাহকে স্মরণ করবে, যদিও দীর্ঘ দিন পরে হয় এবং তজন্য ইন্না-লিল্লা-হ পড়বে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে তখন নতুন করে সাওয়াব দিবেন, যে দিন সে বিপদে পড়ে ছিল সে দিনের পরিমাণ সাওয়াব। (আহমদ) বুঝাগেল বিপদের কথা স্মরণ করে আল্লাহর প্রশংসা ও ইন্না-লিল্লাহ বললে, আল্লাহ সাওয়াব দান করেন।

মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি তা‘যিয়া প্রকাশ করা মুস্তাহাব ও মানবতার পরিচায়ক:
তা‘যিয়া অর্থ সবর ও ধৈর্য ধারনের উপদেশ দেওয়া। এ ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন; রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিকে সান্তনা দেয়, তার জন্যও বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির ন্যায় সাওয়াব রয়েছে(তিরমিযী ইবনে মাজাহ)

ইমাম তিরমিযী আরো বর্ণনা করেছেন; যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন সন্তান হারা  স্ত্রী লোককে সান্ত্বনা দিবে তাকে জান্নাতে একটি মূল্যবান ডোরদার কাপড় পড়ানো হবে। ( মেশকাত)

অতএব আসুন আমরা বিপদগ্রস্থ মানুষের প্রতি তা‘যিয়া প্রকাশ করি।

মৃতব্যক্তির পরিবারের জন্য খানা প্রেরণ করা মুস্তাহাব:

এ ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জা‘ফর (রাঃ) বলেন; যখন মুতা হতে আমার পিতা জা‘ফর ইবনে আবু তালেবের মৃত্যু সংবাদ পৌঁছলো, তখন রাসূল (সাঃ) আপন পরিবারকে বললেন; জাফরের পরিবারের জন্য খানা তৈরী কর। কেননা তাদের নিকট এমন দুঃসংবাদ পৌঁছেছে যা তাদেরকে খানা তৈরী করা হতে বিরত রাখবে। (তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

এই হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খানা তৈরী করা উচিৎ, (মুস্তাহাব) তবে তিন দিনের বেশি নয়।

মূল কথা হলো: মৃত ব্যক্তির জন্য নীরবে অশ্রু বিসর্জন দেওয়া নিষেধ নয়, কিন্তু চিৎকার করে রোদন করা, বিলাপ করা, অধিক অস্থিরতা প্রকাশ করা নিষেধ। অন্য দিকে মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা দেওয়া, শোক প্রকাশ করা, সবর করতে বলা মুস্তাহাব ও মানবতার পরিচায়ক। মৃত ব্যক্তির  পরিবারের জন্য খানা প্রেরণ করা মুস্তাহাব কিন্তু তিন দিনের বেশি নয়।
আসুন আমরা আলোচিত পন্থায় মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য শোক প্রকাশ করি এবং দোয়া করি আল্লাহ যেন প্রত্যেক পরিবারকে ধৈর্য ধারন করার তাওফীক দান করেন। আমীন

Related Post