ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদ : গুরুত্ব ও তাৎপর্য

isভূমিকা: পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহ সজ্জিত করা এবং সতর আবৃত করার মাধ্যম। ইসলামে পেশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। এর দ্বারা লজ্জা নিবারণের পাশাপাশি এটা ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রকৃতি অনুভব করা যায়।
পোশাকের গুরুত্ব: মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যেসব নে‘মত দান করেছেন, পোশাক তার মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ বলেন,
يَا بَنِيْ آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِيْ سَوْآتِكُمْ وَرِيْشًا، وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ
‘হে আদাম সন্তান! আমরা তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম। ওটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে (আ‘রাফ ৭/২৬)।পোশাক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا بَنِيْ آدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلاَ تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ-
‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক ছালাতের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর। আর খাও,পান কর কিন্তু অপচয় করো না। অবশ্যই তিনি অপচয়কারীদেরকে পসন্দ করেন না(আ‘রাফ ৭/৩১)। সুন্দর পোশাক পরিধান সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ .قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً. قَالَ انَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ .
‘যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল, মানুষ তো পসন্দ করে যে তার পোশাক সুন্দর হোক এবং তার জুতা সুন্দর হোক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। অহংকার হল হককে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা’।মুসলিম হা/৯১; আবু দাউদ হা/৪০৯২; তিরমিযী হা/১৯৯৯; মিশকাত হা/৫১০৮।
পোশাকের প্রকার : ইসলামী শরী‘আতে পোশাক তিন প্রকার। যথা- ওয়াজিব, মুস্তাহাব ও হারাম।
ওয়াজিব পোশাক : যে পোশাক সতর আবৃত করে, গরম ও শীত থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ক্ষতি থেকে দেহকে হেফাযত করে সে পোশাক ওয়াজিব।
عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ عَوْرَاتُنَا مَا نَأْتِى مِنْهَا وَمَا نَذَرُ قَالَ احْفَظْ عَوْرَتَكَ إِلاَّ مِنْ زَوْجَتِكَ أَوْ مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِذَا كَانَ الْقَوْمُ بَعْضُهُمْ فِى بَعْضٍ قَالَ إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ لاَ يَرَيَنَّهَا أَحَدٌ فَلاَ يَرَيَنَّهَا قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِذَا كَانَ أَحَدُنَا خَالِيًا قَالَ اللهُ أَحَقُّ أَنْ يُسْتَحْيَا مِنْهُ مِنَ النَّاسِ .
বাহয বিন হাকিম তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের আবরণীয় অঙ্গসমূহ কার সামনে আবৃত রাখব এবং কার সামনে অনাবৃত করতে পারি? তিনি বললেন, তোমার স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত সকলের সামনে তা আবৃত রাখ। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনেক লোক যখন পরস্পর একসাথে থাকে? তিনি বলেন, যতদূর সম্ভব কেউ যেন অন্যের গোপন অঙ্গের দিকে না তাকায়। রাবী বলেন, আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যখন নির্জনে থাকে? তিনি বলেন, লজ্জার ব্যাপারে আল্লাহ মানুষের চাইতে বেশী হকদার’।[আবু দাউদ হা/৪০১৭; ইবনু মাজাহ হা/১৯২০; তিরমিযী হা/২৭৬৯
মুস্তাহাব পোশাক : যে পোশাকে সৌন্দর্য আছে, তা মুস্তাহাব পোশাক।
عَنْ أَبِى الأَحْوَصِ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فِىْ ثَوْبٍ دُوْنٍ فَقَالَ أَلَكَ مَالٌ. قَالَ نَعَمْ. قَالَ مِنْ أَىِّ الْمَالِ. قَالَ قَدْ أَتَانِىَ اللهُ مِنَ الإِبِلِ وَالْغَنَمِ وَالْخَيْلِ وَالرَّقِيْقِ قَالَ فَإِذَا أَتَاكَ اللهُ مَالاً فَلْيُرَ أَثَرُ نِعْمَةِ اللهِ عَلَيْكَ وَكَرَامَتِهِ.
আবুল আহওয়াছ স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি নিম্নমানের পোশাক পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তা দেখে তিনি বললেন, তোমার কি ধন-সম্পদ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কী ধরনের সম্পদ? আমি বললাম, আল্লাহ আমাকে উট, ভেড়া, ঘোড়া ও দাস-দাসী দিয়েছেন। তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহ যখন তোমাদের ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তখন তোমার বেশ-ভূষায় আল্লাহর নেমতের নির্দশন ও করুণা প্রকাশ পাওয়া উচিত। (আবূদাঊদ হা/৪০৬৩; মিশকাত হা/৪৩৫২),
বিভিন্ন ইবাদতের সময়,জুমআ দুঈদ ও জনসমাবেশে সুন্দর পোশাক পরার গুরুত্ব অত্যধিক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدَ أَوْ مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدْتُمْ أَنْ يَتَّخِذَ ثَوْبَيْنِ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ سِوَى ثَوْبَىْ مَهْنَتِهِ.
‘তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে সে যেন তার পেশাগত কাজে ব্যবহৃত পোশাক ব্যতীত জুম‘আর দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক তৈরী করে’।[আবূদাঊদ হা/১০৭৪; ইবনু মাজাহ হা/১০৯৬
হারাম পোশাক : বিভিন্ন কারণে ইসলামে কতিপয় পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো হল-
১. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ মিশ্রিত পোশাক।

২. পুরুষের জন্য মহিলাদের পোশাক

৩. মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোশাক

৪. খ্যাতি ও বড়াই প্রকাশক পোশাক

৫. ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক

৬. আঁটসাঁট পোশাক প্রভৃতি।
১. পুরুষদের জন্য রেশমের কাপড় পরিধান করা : পুরুষদের জন্য রেশমের কাপড় পরা ও তার উপর বসা নিষিদ্ধ। এ মর্মে কয়েকটি হাদীছ নিম্নে উল্লেখ করা হল- ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ تَلْبَسُوا الْحَرِيْرَ فَإِنَّهُ مَنْ لَبِسَهُ فِى الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِى الآخِرَةِ- ‘তোমরা রেশম পরিধান করো না। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশম পরিধান করবে, সে আখিরাতে তা পরিধান করতে পারবে না।[সলিম হা/২০৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৪৪]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ওমর (রাঃ) এক সেট পুরু রেশমের পোশাক বিক্রয় হতে দেখলেন। অতঃপর তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এটা কিনুন, এ দ্বারা ঈদের জন্য ও প্রতিনিধি দলগুলোর জন্য সুসজ্জিত হোন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এ পোশাক শুধু তার জন্য, যার পরকালে এটা প্রাপ্য নেই। এরপর বেশ কিছু দিন কেটে গেল। তারপর একদিন রসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-এর নিকট রেশমের একটি জুববা পাঠালেন। তখন ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি বলেছেন, এটা সে ব্যক্তির পোশাক, যার পরকালে এটা প্রাপ্য নেই। তারপর আবার এটা পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ওটা আমি তোমার পরিধানের জন্য পাঠাইনি, পাঠিয়েছি যাতে তুমি ওটা বিক্রয় করে নিজের প্রয়োজন মিটাতে পার’।[বুখারী হা/৯৪৮, ৩০৫৪; মুসলিম হা/২০৬৮]
عَنْ حُذَيْفَةَ رضى الله عنه قَالَ نَهَانَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ نَشْرَبَ فِىْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَأَنْ نَأْكُلَ فِيْهَا، وَعَنْ لُبْسِ الْحَرِيْرِ وَالدِّيبَاجِ، وَأَنْ نَجْلِسَ عَلَيْهِ.
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে স্বর্ণ ও রেপ্যের পাত্রে পানাহার করতে এবং রেশমের কাপড় পরিধান করতে ও তার উপর বসতে নিষেধ করেছেন।[খারী হা/৫৮৩৭; মিশকাত হা/৪৩২১] তিনি বলেন, ওটা দুনিয়ায় তাদের জন্য (অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্যদের জন্য) আর আখিরাতে তোমাদের জন্য।[বুখারী হা/৫৬৩৩, ৫৮৩১; আবু দাউদ হা/৩৭২৩;]এসব হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, পুরুষের জন্য রেশম পরা হারাম।
২-রেশম পরা মহিলাদের জন্য বৈধ : রেশমের বস্ত্র পরিধান করা মহিলাদের জন্য হালাল। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم حُلَّةُ سِيَرَاءَ فَبَعَثَ بِهَا إِلَىَّ فَلَبِسْتُهَا فَعَرَفْتُ الْغَضَبَ فِى وَجْهِهِ فَقَالَ إِنِّى لَمْ أَبْعَثْ بِهَا إِلَيْكَ لِتَلْبَسَهَا إِنَّمَا بَعَثْتُ بِهَا إِلَيْكَ لِتُشَقِّقَهَا خُمُرًا بَيْنَ النِّسَاءِ.
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে একটা রেশমের পোশাক উপহার দেওয়া হল। পরে তিনি সেটি আমার নিকট পাঠিয়েন দিলেন। আমি সেটি পরলাম। এতে তাঁর চেহারায় অসন্তোষের চিহ্ন দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, ওটা তোমার নিকট এজন্য পাঠাইনি যে, তুমি পরবে। বরং এটা তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি ওটা টুকরো করে ওড়না বানিয়ে মহিলাদের মধ্যে বিতরণ করবে।[মুসলিম হা/২০৬৮; মিশকাত হা/৪৩২২।]
৩- মহিলাদের পোশাক পুরুষরা ও পুরুষদের পোশাক মহিলারা পরিধান করা :
মহিলাদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পুরুষদের পরিধান করা নিষিদ্ধ। তেমনি পুরুষদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের পোশাকের সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক ও মহিলাদের জন্য পরিধান করা হারাম। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষ এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীর প্রতি অভিসম্পাৎ করেছেন’।[. আবূদাঊদ হা/৪০৯৮; মিশকাত হা/৪৪৬৯] ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
‘রাসূল (ছাঃ) পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন’।[বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৯] ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে আরও বর্ণিত আছে,
لَعَنَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ، وَالْمُتَرَجِّلاَتِ مِنَ النِّسَاءِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারীবেশী পুরুষদেরকে এবং পুরুষবেশী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন।[বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৮।]
৪. খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি পোশাক : যে পোশাক অন্যান্য মানুষের চেয়ে খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পরা হয় তা হারাম।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ.
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় খ্যাতির পোশাক পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন’।[ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬; মিশকাত হা/৪৩৪৬]
৫. ভিন্ন ধর্মীয় কোন পোশাক পরিধান করা : ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা যাবে না। অর্থাৎ যে শোষাক অন্য কোন ধর্মের নিদর্শন প্রকাশ করে বা পরিচয় দান করে।
عن عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَأَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا-
আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আছ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার পরিধানে দু’টি রঙ্গিন কাপড় দেখে বললেন, ‘এটা কাফিরদের কাপড়। অতএব তা পরিধান করো না’।মুসলিম হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭]
৬. আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করা : যদি পরিধেয় পোশাক এরূপ হয় যে, আবৃত অংশের চামড়া বা হুবহু আকৃতি তার বাইরে থেকে ফুটে ওঠে তাহলে তাতে পোশাকের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। এরূপ পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,
عَنْ ضَمْرَةَ بْنِ ثَعْلَبَةَ أَنَّهُ أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهِ حُلَّتَانِ مِنْ حُلَلِ الْيَمَنِ فَقَالَ يَا ضَمْرَةُ أَتَرَى ثَوْبَيْكَ هَذَيْنِ مُدْخِلِيكَ الْجَنَّةَ. فَقَالَ لَئِنِ اسْتَغْفَرْتَ لِىْ يَا رَسُولَ اللهِ لاَ أَقْعُدُ حَتَّى أَنْزِعَهُمَا عَنِّى. فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِضَمْرَةَ بْنِ ثَعْلَبَةَ. فَانْطَلَقَ سَرِيْعاً حَتَّى نَزَعَهُمَا عَنْهُ.
যামরাহ ইবনু ছা‘লাবাহ (রাঃ) বলেন, তিনি এক জোড়া ইয়ামানী কাপড় পরিধান করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আগমন করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে যামরাহ! তুমি কি মনে কর যে তোমার এই কাপড় দু’টি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? যামরাহ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবে আমি বসার আগেই (এখনি) কাপড় দু’টি খুলে ফেলব। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আপনি যামরাকে ক্ষমা করে দিন। তখন যামরাহ দ্রুত গিয়ে তার কাপড় দু’টি খুলে ফেলেন।[মুসনাদ আহমাদ হা/১৯৪৯৪] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيْحَهَا وَإِنَّ رِيْحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ كَذَا وَكَذَا
‘দুশ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি দেখিনি। প্রথম শ্রেণী-যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি, তা দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী- ঐ সকল রমণী, যারা বস্ত্র পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারিণী এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে লম্বা গ্রীবাবিশিষ্ট উটের চুঁটির ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূর থেকেও পাওয়া যাবে’।[মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫২৪]ছাহাবী-তাবেঈগণ পুরুষের কামীছ (কামীছ বা পিরহান) চাদর ও পাগড়ির ক্ষেত্রে পাতলা কাপড়ের ব্যবহারে আপত্তি করেননি।
ইকরিমাহ বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর একটি পাতলা চাদর ছিল। আবীদাহ বলেন, আমি প্রখ্যাত তাবেঈ ফকীহ কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর ছিদ্দীককে একটি পাতলা স্বচ্ছ কামীছ বা জামা পরিহিত দেখেছি। আফলাহ বলেন, কাসেম ইবনু মুহাম্মাদকে একটি পাতলা চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। আনীস আবুল উরইয়ান বলেন, হাসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু আবী তালিব একটি পাতলা ও স্বচ্ছ পাগড়ি ও অনুরূপ একটি কামীছ পরিধান করতেন। জামাটি এত স্বচ্ছ ছিল যে, তার নিচের ইযার বা লুঙ্গি দেখা যেত।[ইবনু সা‘দ, আত-তাবাকাত ৫/১৯]
অতএব পুরুষের ফরয সতর আবৃত হলে বাকী দেহের জন্য পাতলা কাপড়ের পোশাক পরিধান আপত্তিকর নয়। তবে আঁটসাঁট ও সতর প্রকাশকারী পোশাক সর্বাবস্থায় বর্জনীয়

পোশাক পরিধান সম্পর্কে কতিপয় আদব :
ইসলামে পোশাক পরিধানের কিছু আদব রয়েছে। প্রত্যেক মুমিনকে তা মেনে চলা উচিত। এতে একদিকে যেমন সুন্নাত পালন হবে, অপরদিকে পোশাক পরিধানের জন্য ছওয়াবের অধিকারী হবে। এসব আদবের কতিপয় এখানে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. ডান দিকে থেকে পরিধান করা ও বাম দিক থেকে খোলা :
সকল ভাল ও কল্যাণময় কাজের মত পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রেও ডান দিক থেকে শুরু করা ইসলামী আদব বা শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন হাদীছের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, পোশাক-পরিচ্ছদ ডান দিক থেকে পরিধান করা এবং বাম দিক থেকে খোলা উত্তম। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِى تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُوْرِهِ وَفِى شَأْنِهِ كُلِّهِ.
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘নবী করীম (ছাঃ) জুতা ব্যবহার করতে, চুল-দাড়ি আঁচড়াতে, পবিত্রতা অর্জনে ও তাঁর সকল বিষয়ে ডান দিক থেকে শুরু করা পসন্দ করতেন’।[বুখারী হা/১৬৮;] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا لَبِسَ قَمِيْصًا بَدَأَ بِمَيَامِنِهِ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন জামা পরিধান করতেন, তখন ডান দিক থেকে শুরু করতেন’।[মিশকাত হা/৪৩৩০,] অপর একটি হাদীছে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ উল্লিখিত হয়েছে যেমন-
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا لَبِسْتُمْ وَإِذَا تَوَضَّأْتُمْ فَابْدَءُوْا بِأَيَامِنِكُمْ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা যখন পোশাক পরিধান করবে এবং যখন ওযূ করবে তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে’।[মিশকাত হা/৪০১,] জুতা পরিধানের ক্ষেত্রেও ডান দিক থেকে শুরু করার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ এসেছে।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا انْتَعَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِالْيَمِينِ وَإِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدَأْ بِالشِّمَالِ، لِتَكُنِ الْيُمْنَى أَوَّلَهُمَا تُنْعَلُ وَآخِرَهُمَا تُنْزَعُ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন জুতা পরিধান করবে তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে এবং যখন খুলবে তখন বাম দিক থেকে শুরু করবে। যাতে ডান পা প্রথমে আবৃত ও শেষে অনাবৃত হয়’।[বুখারী হা/৫৮৫৫; তিরমিযী হা/১৭৭৯; মিশকাত হা/৪৪১০।]
২. পোশাক পরিধানের দো‘আ :
ইসলামী জীবন-পদ্ধতির অন্যতম দিক সকল কর্মে হৃদয়কে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত রাখা ও তাঁর কাছে কল্যাণ, দয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করা। পোশাক পরিধানের সময়েও প্রার্থনা করতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهِ إِمَّا قَمِيصًا أَوْ عِمَامَةً ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهِ وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَهُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ.
আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নতুন পোশাক পরিধান করলে তার নাম উল্লেখ করতেন, জামা বা পাগড়ি যাই হোক। অতঃপর বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনারই সকল প্রশংসা, আপনিই আমাকে এই পোশাকটি পরিধান করিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ ও মঙ্গল প্রর্থনা করছি এরং এর উদপাদনের মধ্যে যত কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে তা প্রার্থনা করছি। আর আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি এর অকল্যাণ থেকে এবং এর উৎপাদনের মধ্যে যা কিছু অকল্যাণলকর রয়েছে তা থেকে’।[আবু দাউদ হা/৪০২০; তিরমিযী হা/১৭৬৭; মিশকাত হা/৪৩৪২,] পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দো‘আও বর্ণিত হয়েছে,الْحَمْد لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْر حَوْل مِنِّي وَلَا قُوَّة، ‘সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাকে বিনা শ্রমে ও শক্তি প্রয়োগ ব্যতীত এই পোশাক পরিধান করিয়েছেন এবং রূযী দান করেছেন’।[আবু দাঊদ হা/৪০২৩; মিশকাত হা/৪১৪৯।]
কাউকে নতুন পোশাক পরিহিত দেখলে দো‘আ করা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের রীতি বা সুন্নাত।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى عَلَى عُمَرَ قَمِيْصًا أَبْيَضَ فَقَالَ ثَوْبُكَ هَذَا غَسِيْلٌ أَمْ جَدِيْدٌ. قَالَ لاَ بَلْ غَسِيْلٌ. قَالَ الْبَسْ جَدِيْدًا وَعِشْ حَمِيْدًا وَمُتْ شَهِيْدًا.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-কে একটি সাদা জামা (বড় পিরহান) পরিহিত অবস্থায় দেখলে তিনি প্রশ্ন করেন, তোমার কাপড়টি কি ধোয়া না নতুন? তিনি উত্তরে বললেন, নতুন নয়; বরং ধোয়া কাপড়। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নতুন পোশাক পর, প্রশংসিতভাবে জীবন যাপন কর, শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ কর এবং আল্লাহ তোমাকে পৃথিবীতে এবং আখিরাতে পরিপূর্ণ শান্তি ও আনন্দ প্রদান করুন’।[ইবনু মাজাহ হা/৩৫৫৮;]
قَالَ أَبُو نَضْرَةَ فَكَانَ أَصْحَابُ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم إِذَا لَبِسَ أَحَدُهُمْ ثَوْبًا جَدِيدًا قِيلَ لَهُ تُبْلِى وَيُخْلِفُ اللهُ تَعَالَى.
আবূ নাযরাহ মুনযির ইবনু মালিক নামক তাবিঈ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের মধ্যে রীতি ছিল যে, তাঁদের মধ্যে থেকে কেউ নতুন পোশাক পরিধান করলে (তার শুভকামনা করে) বলা হ’ত, এই পোশাক তোমার দেহেই পুরাতন ও জীর্ণ হয়ে যাক এবং মহান আল্লাহ এর পরিবর্তে অন্য পোশাক তোমাকে দান করুন।[আবু দাউদ হা/৪০২০।] অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘ জীবন দান করুন, যে জীবনে এই পোশাক ও অনুরূপ আরো অনেক পোশাক জীর্ণ করার সুযোগ তুমি পাও।
عَنْ أُمِّ خَالِدٍ بِنْتِ خَالِدٍ قالت : أُتِيَ النَّبِيُّ بِثِيَابٍ فِيهَا خَمِيصَةٌ سَوْدَاءُ صَغِيرَةٌ، فَقَالَ : مَنْ تَرَوْنَ أَنْ نَكْسُوَ هَذِهِ؟ فَسَكَتَ الْقَوْمُ، قَالَ : ائْتُونِي بِأُمِّ خَالِدٍ فَأُتِيَ بِهَا تُحْمَلُ، فَأَخَذَ الْخَمِيصَةَ بِيَدِهِ فَأَلْبَسَهَا، وَقَالَ أَبْلِي وَأَخْلِقِي، البخاري-
উম্মু খালিদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট কিছু কাপড় নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে কিছু কালো নকশীদার ছোট চাদর ছিল। তিনি বললেন, আমরা এগুলো পরব, তোমাদের মত কী? উপস্থিত সকলে চুপ থাকল। তারপর তিনি বললেন, উম্মু খালিদকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাকে বহন করে আনা হ’ল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের হাতে একটি চাদর নিলেন এবং তাকে পরিয়ে দিলেন। এরপর বললেন, তুমি পুরাতন কর ও ছিঁড়ে ফেল (অর্থাৎ তুমি বহুদিন বাঁচ)। ঐ চাদরে সবুজ অথবা হলুদ রঙের নকশী ছিল। তিনি বললেন, হে খালিদের মা! وهٰذَا سَنَاهْ অর্থাৎ এটি কত সুন্দর! হাবশী ভাষায় সানাহ অর্থ সুন্দর।[বুখারী হা/৫৮২৩।]
দো‘আ মুমিন জীবনের অন্যতম সম্পদ। দো‘আ ইবাদত। মহান আল্লাহর দরবারে দো‘আ করলে তিনি খুশি হন। মুমিনের উচিত জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রেও মাসনূন দো‘আগুলি পাঠ করা। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দার করুন।

৩. পুরুষদের কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান না করা :
ইসবাল অর্থ ঝুলিয়ে দেওয়া, ঢেলে দেওয়া। শারঈ পরিভাষায় গোড়ালীর নিচে কাপড় ঝুলে পড়াকে ইসবাল বলে। এর বিধান দু’টি। (ক) অহংকার বশতঃ কেউ যদি এই কাজ করে তাহ’লে সকল আলেমদের অভিমত হ’ল সে জাহান্নামে যাবে। (খ) অসতর্কতা বশতঃ যদি ঝুলে যায় তাহ’লে গুনাহ হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ أَسْبَلَ إِزَارَهُ فِى صَلاَتِهِ خُيَلاَءَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِى حِلٍّ وَلاَ حَرَامٍ ‘যে ব্যক্তি ছালাতের মধ্যে অহমিকার সাথে তার ইযার ঝুলিয়ে পরিধান করবে, আল্লাহর সাথে হালাল বা হারাম কোন প্রকারের সম্পর্ক তার থাকবে না’।[আবু দাউদ হা/৬৩৭;]
বিভিন্ন হাদীছ থেকে জানা যায় যে, লুঙ্গি, পাজামা, জামা ইত্যাদি পায়ের পাতা পর্যন্ত বা মাটি পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরা তৎকালীন সমাজের একটি অতি প্রচলিত রীতি ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই রীতি পরিহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে একটি হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الإِزَارُ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ فَلَمَّا رَأَى شِدَّةَ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ قَالَ إِلَى الْكَعْبَيْنِ لاَ خَيْرَ فِيمَا أَسْفَلَ مِنْ ذَلِكَ. ‘ইযার (লুঙ্গি) পায়ের নালার মাঝামাঝি (অর্ধ সাক) পর্যন্ত পরতে হবে। মুসলমানদের জন্য বিষয়টি খুব কঠিন হয়ে পড়ল। তিনি যখন দেখলেন যে, মুসলমানদের জন্য বিষয়টি খুবই কষ্টকর তখন বললেন, পায়ের গিরা পর্যন্ত। এর নিচে কল্যাণ নেই’।[আহমাদ হা/১৩৬৩০;] অপর একটি হাদীছে এসেছে,
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيهِ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. قَالَ أَبُو بَكْرٍ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أَحَدَ شِقَّىْ إِزَارِى يَسْتَرْخِى، إِلاَّ أَنْ أَتَعَاهَدَ ذَلِكَ مِنْهُ. فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لَسْتَ مِمَّنْ يَصْنَعُهُ خُيَلاَءَ.
সালিম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকার বশতঃ নিজের পোশাক ঝুলিয়ে পরবে, আল্লাহ তার প্রতি ক্বিয়ামতের দিন (দয়ার) দৃষ্টি দিবেন না। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার লুঙ্গির এক পাশ ঝুলে থাকে, আমি তাতে গিরা না দিলে। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যারা অহংকার বশতঃ এমন করে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও’।[আহমাদ হা/৬২০৩; বুখারী হা/৫৭৮৪।] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِى النَّارِ.
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ইযারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে’।[বুখারী হা/৫৭৮৭;]

Related Post